কি কারণে ডায়াবেটিস হয় বিস্তারিতভাবে জেনে নিন
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে কি কারণে ডায়াবেটিস হয়। ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী মেটাবলিক রোগ যা শরীরে রক্তের Glucose বা শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি প্রধানত ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফলে ঘটে। ডায়াবেটিস সাধারনত ২ প্রকারের টাইপ ১ যেখানে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এবং টাইপ ২ যেখানে শরীর ইনসুলিন ব্যবহার করতে অক্ষম।
এর প্রধান উপসর্গগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস এবং দৃষ্টি সমস্যা উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘমেয়াদি অযত্নে এটি হৃদরোগ, কিডনির রোগ, স্নায়ুর সমস্যা এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো জাটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক জীবনধারা, পুষ্টিকর খাদ্যাভাস এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।
ভুমিকা
আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন,ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়, ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়, ডায়াবেটিস এর কারণ ও প্রতিকার, ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়, কি কারণে ডায়াবেটিস হয়, ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত, ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়।
ডায়াবেটিস কি ও কেন হয়
ডায়াবেটিস একটি সাধারন রোগ যা আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রার অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি করে। শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন না হওয়া বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারনে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিসের লক্ষন। ডায়াবেটিস মুলত ২ ধরনের হয়ে থাকে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস : এই ধরনের ডায়াবেটিসে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে আক্রমন করে ধ্বংশ করে ফেলে। এর ফলে শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না এবং রক্তের শর্করা বেড়ে যায়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারনত শিশু বা কিশোরদের মধ্যে দেখা দেয়, তবে যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস : টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হলেও ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এটি ইনসুলিন রেজিস্টেন্স নামেও পরিচিত। এর ফলে, শরীরের কোষে পর্যাপ্ত glucose প্রবাহিত হতে পারে না, ফলে রক্তের শর্করা বেড়ে যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারনত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এখন এটি যুবকদের মধ্যেও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডায়াবেটিস কেন হয়
ডায়াবেটিস হওয়ার কারনগুলো অনেকটা ব্যক্তির জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারন কারন হলো:
- বংশগত : যদি পরিবারের কোনও সদস্য ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তবে অন্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত ওজন : অতিরিক্ত শরীরের মেদ বা স্থুলতা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
- অল্প শারীরিক পরিশ্রম : শারীরিক পরিশ্রমের অভাবও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারন।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস : অতিরিক্ত চিনি, ফ্যাট বা প্রক্রিয়া করা খাবারের অতিরিক্ত সেবন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- বয়স : ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- পানির অভাব : শরীরে পানির অভাবও রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিসের লক্ষন
- অতিরিক্ত তেষ্টা।
- বারবার প্রস্রাব করা।
- অতিরিক্ত ক্ষুধা।
- অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া।
- ক্লান্তি বা অবসাদ গ্রস্থতা।
- ঘা সহজে না সারা।
- দৃষ্টির সমস্যা।
ডায়াবেটিসের প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
- সঠিক খাদ্যাভাস : স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন : শাকসবজি, ফলমুল, সম্পুর্ন শস্য ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন করা উচিত।
- বিবিধ ব্যায়াম : নিয়মিত ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রন : সঠিক ওজন বজায় রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- ওষুধ : টাইপ ১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ ব্যবহার করা হয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ, খাদ্য নিয়ন্ত্রন এবং শারীরিক পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপুর্ন।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
ডায়াবেটিস হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।এটি যদি নিয়ন্ত্রনে না থাকে, তবে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত সমস্যাগুলো সাধারনত ২ ভাগে ভাগ করা যায় যেমন : স্বল্পমেয়াদী সমস্যা ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা।
স্বল্পমেয়াদি সমস্যা
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া):
- ক্লান্তি, মাথা ঘোরা।
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা এবং বারবার মুত্রত্যাগ।
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া):
- মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা।
- অতিরিক্ত ঘাম, দেহ কাঁপা।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি।
ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস (DKA)
- রক্তে অতিরিক্ত শর্করা জমে গিয়ে টক্সিক অবস্থা সৃষ্টি করে।
- শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা এবং বমি হয়।
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা
- হৃদরোগ ও স্ট্রোক : রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনে না থাকলে হৃদপিন্ডের ধমনিতে চর্বি জমে হৃদরোগ বা স্ট্রোক হতে পারে।
- কিডনি সমস্যা (নেফ্রোপ্যাথি) : ডায়াবেটিস কিডনি কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং এটি কিডনি ফেলিউরের কারন হতে পারে।
- নার্ভের ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি) : হাত-পায়ে ঝিনঝিন অনুভুতি ও তীব্র ব্যথা বা অসাড়তা অনুভুত হয়।
- চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি) : চোখের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। ফলে অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে।
- পায়ের সমস্যা : ক্ষত শুকাতে দেরি হয় এবং ইনফেকশন ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ত্বকের সমস্যা : ইনফেকশন ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া : সংক্রমন ঝুঁকি বাড়ে এবং সাধারন ইনফেকশন থেকেও গুরুতর সমস্যা হতে পারে।
- অন্যান্য সমস্যা : স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যৌন স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে যেমন : ইরেকটাইল ডিসফাংশন।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রন
- নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা।
- সুষম খাদ্য গ্রহন।
- ওষুধ ও ইনসুলিন সময়মতো গ্রহন করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরন করা।
- ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রাখলে এসব জটিলতা এড়ানো সম্ভব।তাই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
ডায়াবেটিস এর কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যা রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়য়ার কারনে হয়। এর প্রধান করান এবং প্রতিকারের উপায় নীচে উল্লেখ করা হলো।
ডায়াবেটিসের কারন
- জেনেটিক কারন (বংশগত) : পরিবারের কারো ডায়াবেটিস থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা : অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও দীর্ঘসময় বসে থাকা বা অলস জবনযাপন করলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ওজন বৃদ্ধি ও স্থুলতা : অতিরিক্ত শরীরের ওজন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে।
- প্যানক্রিয়াসের কার্যক্ষমতা ঘাটতি : ইনসুলিন ঠিকমতো উৎপন্ন না হলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
- মানসিক চাপ ও স্ট্রেস : দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ ডায়াবেটিসের কারন হতে পারে।
- বয়সজনিত কারন : বয়স বাড়ার সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাব : স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বেশি ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস হতে পারে।
ডায়াবেটিস প্রতিকারের উপায়
- সুষম খাদ্যাভাস : ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন : শাকসবজি, ফলমুল (কম মিষ্টি), পুর্ন শস্য। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন : ডাল, চিনি ছাড়া দই, মাছ মুরগীর মাংস। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) খাবার যেমন : বাদাম, বীজ, ব্রাইন রাইস, ওটস। মিষ্টি ও উচ্চ-ক্যালোরি খাবার এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
- নিয়মিত ব্যায়াম : প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা। যোগ ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কার্যকর করা।
- ওজন নিয়ন্ত্রন : অতিরিক্ত ওজন কমানো ইনসুলিন কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা : রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত মনিটর করা। ডাক্তারের পরামর্শমতো ইনসুলিন বা ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
- মানসিক চাপ কমানো : নিয়মিত নামাজ পড়া, মেডিটেশন এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত পানি পান : দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা।
- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা : নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা করা। যেকোনো নতুন লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া।
ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরময়যোগ্য না হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। সুস্থ জীবনযাপন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস কি খেলে ভালো হয়
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন খাবার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। এমন খাবার খেতে হবে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে এবয় শরীরকে সুস্থ রাখে। নীচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
- ফাইবারযুক্ত খাবার : শাকসবজি যেমন : পাটশাক, পালংশাক, লালশাক, বেগুন, করলা। ফল যেমন : আপেল, জাম, পেয়ারা, বেরি জাতীয় ফল, শস্য যেমন : ব্রাউন রাইস, ওটস, চিড়া, ডাল যেমন : মসুর ডাল ও মুগ ডাল।
- প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার : চর্বি ছাড়া মাংস যেমন : মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া), মাছ। প্রতি সপ্তাহে ২-৩ টি ডিম খাওয়া যেতে পারে। বাদাম ও বীজ যেমন : কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিড। চিনি ছাড়া টক দই।
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) খাবার : কম GI যুক্ত খাবার ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায় না। যেমন : ডাল, বীজ, সবুজ শাকসবজি, টমেটো, গাজর, শশা ইত্যাদি।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি : অলিভ অয়েল, সরিষার তেল বা নারিকেল তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং বীজের তেল।
- পর্যাপ্ত পানি ও ভেষজ পানীয় : দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। চিনি ছাড়া গ্রিন টি বা লেবু পানি পান করুন।
- যে সকল খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত : মিষ্টি খাবার ও পানীয় যেমন : মিষ্টি, চকলেট, সফট ড্রিংকস। সাদা চাল, ময়দা এবং উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন : চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস। বেশি চর্বিযুক্ত খাবার যেমন : ভাজাপোড়া , প্রক্রিয়াজাত মাংস। অ্যালকোহল ও বেশি ক্যাফেইন।
ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস মেনে চললে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। সঠিক খাবারের পাশাপাশি ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোর উপায় গ্রহন করা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একটি ব্যক্তিগত ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা ভালো।
কি কারণে ডায়াবেটিস হয়
ডায়াবেটিস হওয়ার কারন বিভিন্ন। প্রধানত, এটি শরীরের ইনসুলিন নামক হরমোনের কার্যক্ষমতার উপর নির্ভর করে। ডায়াবেটিসের প্রধান কারনগুলো হলো:
- জেনেটিক বা বংশগত কারন : পরিবারের মধ্যে ডায়াবেটিস থাকলে এর ঝুঁকি বাড়ে। জেনেটিক কারন অনেক ক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুক্ত।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা : অতিরিক্ত উচ্চ-ক্যালোরি খাদ্য গ্রহন। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা অলস জীনযাপন ইত্যাদি।
- ওজন বৃদ্ধি ও স্থুলতা : শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি করতে পারে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- হরমোনজনিত সমস্যা : ইনসুলিন উৎপাদনের অভাব বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। হরমোন ভারসাম্যের সমস্যা যেমন : পলিসিস্টিক ওবারি সিন্ড্রোম - PCOS।
- স্ট্রেস ও মানসিক চাপ : দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ। স্ট্রেস হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।
- চিকিৎসা ও ওষুধ : কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের কারনে ডায়াবেটিস হতে পারে যেমন : স্টেরয়েড। প্যানক্রিয়াসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।
- বয়স : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস : মিষ্টি জাতীয় খাবার ও পানীয়ের অতিরিক্ত গ্রহন। ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবারের অভাব।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহন এবং ওজন নিয়ন্ত্রন জরুরি। যদি ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষন যেমন : অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ক্ষুধা মুত্রত্যাগ বৃদ্ধি দেখা দেয়। তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত
ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তের শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা নির্ধারন করা হয় নির্দিষ্ট কিছু সময়ে রক্ত পরীক্ষা করে। এই মাত্রাগুলি নিচে দেওয়া হলো:
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা (mg/dl)
- খালি পেটে : স্বাভাবিক ৭০ - ১০০ mg/dl, প্রিডায়াবেটিস ১০১ - ১২৫mg/dl, ডায়াবেটিস ≥ ১২৬ mg/dl
- খাওয়ার ২ ঘন্টা পর : স্বাভাবিক < ১৪০ mg/dl, প্রিডায়াবেটিস ১৪০ - ১৯৯ mg/dl, ডায়াবেটিস ≥ ২০০ mg/dl
- এচবিএ ওয়ানসি (HbA1c - গ্লাইকেটেড হিমোগ্লোবিন) : স্বাভাবিক < ৫.৭%, প্রিডায়াবেটিস ৫.৭% - ৬.৪%, ডায়াবেটিস ≥ ৬.৫%
- উল্লেখযোগ্য বিষয় : খালি পেটে পরীক্ষার জন্য ৮ - ১২ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। এচবিএ ওয়ানসি পরীক্ষা গত ২ - ৩ মাসের রক্তের Glucose গড় মাত্রা বোঝায় এবং এটি ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপুর্ন। স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে থাকা ডায়াবেটিস প্রতরোধ বা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
যদি রক্তের শর্করার মাত্রা উল্লেখিত সীমার বাইরে থাকে তবে তাৎক্ষনিক চিকিৎসাকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার জন্য জীবনযাত্রার ধরন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়। কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রনে সহায়ক হতে পারে। নীচে বিস্তারিতভাবে উপায়গুলো উল্লেখ করা হলো।
- শর্করা ও চিনি কমযুক্ত খাবার খান।
- সবুজ শাকসবজি, সম্পুর্ন শস্য, ফলমুল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমানে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- ভাজা-পোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সাদা চালের পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা লাল চাল এবং সাদা রুটির পরিবর্তে সম্পুর্ন গমের রুটি খান।
- খাবারে ফাইবারযুক্ত উপাদান বাড়ান, কারন এটি শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রন করা জরুরি।
- শরীরের বিএমআই (Body Mass Index) ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করুন। যেমন : হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার বা যোগ ব্যায়াম।
- বাড়ির কাজ বা হালকা ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে শরীর সক্রিয় রাখুন।
- সাপ্তাহিক ব্যায়ামের পরিকল্পনা করুন এবং তা মেনে চলুন।
পানীয়তেও সতর্ক থাকুন
- বেশি চিনি মেশানো পানীয় যেমন : সফট ড্রিঙ্কস বা মিষ্টি চা এড়িয়ে চলুন।
- পর্যাপ্ত পরিমানে পানে পান করুন, কারন এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- অ্যালকোহল ও ধুমপান এড়িয়ে চলুন, কারন এগুলো ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমান
- মানসিক চাপ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য:
- নিয়মিত নামাজ আদায় করুন।
- যেগব্যায়াম অনুশীলন করুন।
- মেডিটেশন বা ধ্যান করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুমান (প্রতিদিন ৭ - ৮ ঘন্টা)।
- শখ বা পছন্দের কাজে সময় দিন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
- প্রিডায়াবেটিস ধরা পড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, কারন ডায়াবেটিসে রুপান্তরিত হতে পারে।
- নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলুন।
বংশগত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকুন
- যদি পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনাকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।
- জীবনযাপনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আনুন এবং ঝুঁকি কমাতে উপরের পদক্ষেপগুলো অনুসরন করুন।
ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- যদি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে ওষুধের প্রয়োজন হয়, তবে তাৎক্ষনিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- কোনও প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখুন:
- উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিন।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- ঘুমের অভাব শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- প্রতিদিন রাতে নির্ধারিত সময়ে ঘুমাতে যান এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রনে সঠিক জীবনযাত্রার অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। উপরোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে রাখতে পারবেন। মনে রাখরেন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেই দীর্ঘমেয়াদে ভালো স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
লেখকের শেষকথা
ডায়াবেটিস হলে রোগীকে সচেতন জীবনযাপন করতে হবে। নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url