শরীরে ৫টি উপাদানের অভাবে যে রোগ হয়
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি যদি বিস্তারীত পড়েন তাহলে জানতে পারবেন শরীরে ৫টি উপাদানের অভাবে যে রোগ হয় সেই সম্পর্কে। শরীরের সঠিক কার্যকারীতা বজায় রাখতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন। আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, পটাসিয়াম এবং ফাইবারের ঘাটতির কারনে বিভিন্ন গুরুতর শারীরিক সমস্যা ও রোগ দেখা দিতে পারে, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রধান অন্তরায়।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন আয়রনের অভাবে কি রোগ হয়, কেন হয়, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আরোও জানতে পারবেন পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাবে কোন ধরনের রোগগুলো হয়, কি কারনে হয় এবং এই রোগ প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়।
আয়রনের অভাবে যে রোগগুলো হয়, কেন হয় এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
রোগগুলো নাম
আয়রনের অভাবে শরীরে প্রধানত রক্তল্পতা (Iron Deficiency Anemia) রোগটি দেখা দেয়।এর পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে যেমন:
- ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস।
- ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- শ্বাসকষ্ট
- মাথাব্যথা
- হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস
কেন আয়রনের অভাব ঘটে
আয়রন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন খনিজ, যা আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য প্রয়োজন। হিমোগ্লোবিন রক্তে অষ্কিজেন বহন করে। আয়রনের অভাব হলে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না, ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। নীচে আয়রনের ঘাটতির কারনগুলো দেওয়া হলো।
- খাদ্যতালিকায় যদি আপনার পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না থাকে তাহলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরন, অভ্যন্তরীন রক্তপাত (যেমন:আলসার বা পাইলস) বা কোনো দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরন হলে আয়রনের ঘাটতি হয়।
- গর্ভাবস্থায়, স্তন্যদানকালে, শৈশবে ও কৈশোরে বৃদ্ধি দ্রুত হওয়ার সময় আয়রনের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
- কিছু রোগ বা ওষুধের প্রভাবের কারনে দেহের আয়রন শোষনের ক্ষমতা কমে যায়।
আয়রনের অভাবজনিত রক্তসল্পতা প্রতিরোধের উপায়
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন
- প্রানিজ উৎস : লাল মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, ডিম।
- উদ্ভিজ্জ উৎস : পালংশাক, মেথিশাক, কলমিশাক, কাঁঠাল, বিটরুট, সয়াবিন, মসুর ডাল।
- শুকনো ফল : কাজু বাদাম, বাদাম, কিশমিশ।
- ভিটামিন সি খাবার গ্রহন : ভিটামিন সি আয়রন শোষনে সাহায্য করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে লেবু, কমলা, আমলকী বা ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়া ভালো।
- ক্যালসিয়াম এবং আয়রন আলাদাভাবে গ্রহন : দুধ বা ক্যালসিয়াম সমৃ্দ্ধ খাবার আয়রনের শোষন বাধাগ্রস্ত করে। তাই ক্যালসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো।
- ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি১২ গ্রহন : আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা চিকিৎসায় ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি১২ এর ভুমিকা গুরুত্বপুর্ন। এগুলো দেহে লোহিত কনিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহন : যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত আয়রন না পাওয়া যায়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ গ্রহন করা যেতে পারে।
- রক্তক্ষরন নিয়ন্ত্রন করা : অতিরিক্ত মাসিক রক্তক্ষরন বা অন্য কোনো কারনে রক্তক্ষরন হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আয়রনের মাত্রা পরিমাপ করা উচিত, বিশেষত যদি আপনি গর্ভবতী, শিশুর মা বা আয়রন ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন।
আয়রন আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপুর্ন উপদান, যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ও শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। আয়রনের অভাব দুর করতে খাদ্য তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ঘাটতি নির্নয় অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।
ক্যালসিয়ামের অভাবে যে রোগগুলো হয়, কেন হয় এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরে বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- Osteoporosis : হার্ট দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।
- Rickets : শিশুদের হাড় নরম ও বেঁকে যায়।
- Osteomalacia : প্রাপ্তবয়স্কদের হার্ট দুর্বল হয়ে যায়।
- Dental : দাঁতের ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
- Hypocalcemia : রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গিয়ে নার্ভ ও পেশীর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
কেন ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটে
ক্যালসিয়ামের অভাব মুলত শরীরের প্রয়োজনীয় পরিমান ক্যালসিয়াম না পাওয়ার কারনে হয়ে থাকে। নীচে কিছু প্রধান কারনগুলো উল্লেখ করা হলো।
- খাদ্যে ক্যালসিয়ামের অভাব : খাদ্য তালিকায় ক্যালমিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম থাকলে শরীরে ঘাটতি দেখা দেয়।
- ভিটামিন ডি এর অভাব : ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষনে সাহায্য করে। এর অভাবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়।
- বয়সজনিত প্রভাব : বয়স্কদের শরীর ক্যালসিয়াম শোষনে অক্ষম হয়ে পড়ে।
- হরমোনের পরিবর্তন : বিশেষত নারীদের মনোপোজের পর এস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে হাড় দুর্বল হতে পারে।
- অতিরিক্ত সোডিয়াম ও ক্যাফেইন গ্রহন : এগুলো ক্যালসিয়াম শোষনে বাঁধা সৃষ্টি করে।
- রোগের কারনে : কিছুরোগ যেমন: কিডনিরোগ, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া : কিছু ওষুধ শরীরে ক্যালসিয়াম শোষন কমিয়ে দেয়।
ক্যালমিয়ামের অভাব প্রতিরোধের উপায়
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন: দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার : দুধ, দই, পনির। সবুজশাক-সবজি : পালংশাক, ব্রকলি। ডিমের খোসার গুঁড়া, ছোট মাছ, বাদাম, আমন্ড, আখরোট, সয়াবিন ও টফু।
- ভিটামিন ডি এর পর্যাপ্ত সরবরাহ : ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষনে সাহায্য করে। যেমন : সুর্যলোকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট থাকতে হবে।
- ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যেমন : ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত মাছ যেমন : স্যামন , টুনা। প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহন। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও সোডিয়াম খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
- অ্যালকোহল ও ধুমপান এড়িয়ে চলা।
- পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ : যেমন : নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ানো ইত্যাদি।
- বিশেষ অবস্থায় অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম প্রয়োজন যেমন ; গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালীন সময়ে নারীদের ক্যালসিয়াম গ্রহন বাড়াতে হবে। মনোপজের পর নারীদের ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করা উচিত।
ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপৃর্ন। এর অভাব দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভাস, জীবনযাত্রার উন্নয়ন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহনের মাধ্যমে এই অভাব প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ফাইবারের অভাবে যে রোগগুলো হয়, কেন হয় এবং প্রতিরোধ করা যায়
ফাইবারের অভাবজনিত রোগ
ফাইবার হলো খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপকে সমর্থন করে। এর অভাবে নীচের রোগ ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য : হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়। ফলে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়।
- আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) : হজমতন্ত্রে অস্বস্তি, পেট ব্যথা এবং পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি : ফাইবারের অভাবে রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিস : ফাইবার কম থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- পাইলস : কোষ্ঠকাঠিন্যের কারনে মলত্যাগে সমস্যা হলে পায়ুপথে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
- ওজন বৃদ্ধি : ফাইবারের অভাবে দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভুত হয় না, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
- কলোরেক্টাল ক্যান্সার : খাবারে ফাইবার কম থাকলে অন্ত্রের ক্ষতিকর পদার্থ সঠিকভাবে বের হতে পারে না। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
কেন ফাইবারের অভাব ঘটে
- খাদ্যাভ্যাসে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের অভাব : শাকসবজি, ফল এবং শস্যজাতীয় খাবার কম খাওয়ার কারনে ফাইবারের অভাব দেখা দেয়।
- প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্য : ফাস্ট ফুড ও প্রসেসড খাবারে ফাইবার কম থাকে।
- পানি পান কম করলে : পর্যাপ্ত পানি না খেলে ফাইবার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
- অলস জীবনযাত্রা : শারীরিক কার্যকলাপ কম হলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
ফাইবারের অভাব প্রতিরোধের উপায়
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া : খাদ্যতালিকায় ফাইবারের পরিমান বাড়ানোর জন্য শাক সবজি যেমন: পালংশাক, কুমড়া, মুলা, ব্রকলি। ফলমুল যেমন: আপেল, কলা, কমলা ও পেঁপে। শস্য যেমন: লাল চাল, গমের আটা, ওটস। ডাল ও শিমজাতীয় খাবার যেমন: মসুর ডাল, ছোলা ও সয়াবিন। বাদাম ও বীজ যেমন : সূর্যমুখীর বীজ, আমন্ড ও আখরোট।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা : ফাইবার হজমে সাহায্য করে তখনই যখন আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। তাই পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন : ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো ফাইবারের অভাব সৃষ্টি করে।
- খাবারকে ভাগ করে খাওয়া : প্রতিদিনের খাবার তিন বেলা খাওয়ার বদলে ৫ থেকে ৬ বেলা ছোট ছোট ভাগে খাবার খান।এতে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
- শারীরিক কার্যকলাপ : নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- ধীরে ধীরে ফাইবার বাড়ানো : যদি আপনার খাদ্যতালিকায় হঠাৎ ফাইবার বাড়ানো হয়, তবে গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বাড়ান।
- খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য রাখা : ফাইবারের পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বো-হাইড্রেট এবং চর্বি সহ সব পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য রাখতে হবে।
ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। সুষম খাদ্য গ্রহন, সঠিক জীবনধারা অনুসরন এবং নিয়মিত পানি পান করার মাধ্যমে ফাইবারের অভাব দুর করা সম্ভব।
পটাসিয়ামের অভাবে যে রোগগুলো হয়, কেন হয় এবং প্রতিরোধের উপায়
পটাসিয়ামের অভাবে যে রোগগুলো হয়
পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ন খনিজ, যা শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে এবং পেশি, নার্ভ এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্রমে সহায়তা করে। পটাসিয়ামের অভাবে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রোগ দেখা দিতে পারে।
- মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দেয় এবং পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খিঁচুনী দেখা দেয়।
- পেশি সংকোচন বা খিঁচুনি হয়।
- অনিয়মিত হার্টবিটের ফলে হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক কার্যকলাপ হারিয়ে ফেলে।
- পটাসিয়ামের অভাবে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে ফলে উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে হয়।
- হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে পেট শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি হয়।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ ও দুর্বলতা দেখা দেয়।
- পটাসিয়ামের অভাবে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- পটাসিয়ামের অভাবে মনোযোগের ঘাটতি ও মনের অস্থিরতা দেখা দেয়।
কেন পটাসিয়ামের অভাব ঘটে
- খাদ্যতালিকায় পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের অভাব হলে।
- প্রচন্ড ঘাম হলে শরীর থেকে পটাসিয়াম বের হয়ে যায় ফলে পটাসিয়ামের অভাব হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া বা বমির কারনে পটাসিয়ামের অভাব হতে পারে।
- কিছু ওষুধ শরীর থেকে পটাসিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- ডায়াবেটিসের ফলে রক্তে পটাসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহন শরীরের পটাসিয়ামের স্তর হ্রাস করে।
- কিডনি বা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যার কারনে পটাসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে।
পটাসিয়ামের অভাব প্রতিরোধের উপায়
- পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া : খাদ্য তালিকায় পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যোগ কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ফলমুল জাতীয় খাবার যেমন:কলা, কমলা, অ্যাভোকাডো, আম ও তরমুজ। শাকসবজি যেমন: আলু, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া। ডাল ও বাদাম জাতীয় খাবার যেমন: মসুর ডাল, কাঠবাদাম। মাছ যেমন: সালমন ও টুনা মাছ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা : শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহন : যদি মুত্রবর্ধক বা অন্য কোন কারনে পটাসিয়ামের ঘাটতি হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পটাসিয়াম সাপ্লিমেন্ট বা বিকল্প চিকিৎসা গ্রহন করুন।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো : প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়ামের পরিমান বেশি থাকে যা পটাসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।তাই এসব খাবার কম খাওয়া উচিত।
- সুষম খাদ্য গ্রহন : খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সুষম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
- শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখা : নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ শরীরে পটাসিয়ামের স্তর বজায় রাখতে হবে।
পটাসিয়াম শরীরের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এর অভাব শরীরের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে। তাই পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে পটাসিয়ামের অভাব প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাবে যে রোগগুলো হয়, কেন হয় এবং প্রতিরোধের উপায়
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাবে যে রোগগুলো হয়
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে মুক্ত মৌল (Free Radicals) এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন রোগ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মুক্ত মৌল (Free Radicals) কোষের DNA ক্ষতিগ্রস্ত করে ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাবে ধমনীর প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা হৃদরোগের কারন হতে পারে।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ঘাটতিতে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায় এবং বলিরেখা দেখা দেয়।
- ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
- মস্তিষ্ক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যেমন: আলঝেইমার্স,পারকিনসনস।
- চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন:ম্যাকুলারডি জেনারেশন এবং পানিপড়া।
- ইমিউন সিস্টেম দুর্বর হয়ে পড়ে ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- অন্ত্রের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার হতে পারে।
কেন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটে
- খাদ্যাভ্যাসে ঘাটতি হলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটে তাই খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমানে ফল, শাকসবজি রাখতে হবে।
- অধিক পরিমানে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটে।
- ধুমপান ও অ্যালকোহল শরীরে Free Radicals এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটে।
- দুষন ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসলে যেমন: বায়ুদুষন ও কেমিক্যাল এক্সপোজার এর প্রভাবে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটে।
- দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব ঘটায়।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎপাদন প্রাকৃতিকভাবে কমে যায়।
- পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব হতে পারে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব প্রতিরোধের উপায়
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন : খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে হবে যেমন: বিভিন্ন ধরনের ফলমুল, শাকসবজি, বাদাম ও বীজ, চা ও পানীয়, ডার্ক চকলেট ও মশলা যেমন : হলুদ, দুরুচিনি, আদা।
- ধুমপান ও অ্যালকোহল বর্জন : ধুমপান এবং অ্যালকোহল Free Radicals এর পরিমান বাড়ায় যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অভাব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস দুর করা : প্রতিরাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। প্রয়োজন হলে মেডিটেশন, ইয়োগা এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেস কমাতে হবে।
- প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে : প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা এবং প্রাকৃতিক খাবার গ্রহন করুন।
- দুষন থেকে রক্ষা : দুষিত এলাকায় দীর্ঘসময় বসবাস করা এড়িয়ে চলুন। বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
- খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও খনিজ : ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। দই, ডিম ও মাছ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহন করুন।
- সাপ্লিমেন্ট গ্রহন : ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করা যেতে পারে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্যাভ্যাস উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক পদ্ধতিতে স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে অভাব প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি আমাদের দীর্ঘমেয়াদ সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
লেখকের শেষকথা
শরীরের পাঁচটি গুরুত্বপুর্ন উপাদান যেমন: আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, পটাসিয়াম ও ফাইবারের অভাবে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, যেমন: রক্তশুন্যতা, হাড়ের ভঙ্গুরতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হৃদরোগ। সুষম খাদ্যগ্রহন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই উপাদানগুলোর ঘাটতি প্রতিরোধে সহায়ক। প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার মুল চাবিকাঠি।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url