শরীরের ফাটা দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনযদিও এই রোগটি সারেনা তবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন সুস্থ থাকা যায়।তাই আজকের আর্টিকেলটিতে শরীরের ফাটা দাগ থেকে মুক্তির উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি এলার্জি জাতীয় খাবারগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে এই রোগ থেকে অনেক দুরে থাকবেন।
শরীরের ফাটা দাগ দূর করার উপায়

ভুমিকা

শরীর ফাটা এমন একটি রোগ যা সংক্রামক নয়। আপনি যদি কিছু উপসর্গ দেখেন তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার শরীর ফাটা রোগ হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে।আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন শরীর ফাটার প্রতিকার ও চিকিৎসা, ঘরোয়া উপকরন ব্যবহার করে কিভাবে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

শরীরের ফাটা দাগ দূর করার উপায়

একজন মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের শরীরের ফাটা দাগ তাদের সৌন্দর্য অনেকটাই মলিন করে দেয়। এই দাগ একবার দেখা দিলে সহজে দুর করা যায় না। এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায় নারীদের সন্তান প্রসবের পর। পেটে যখন বাচ্চা আসে তখন পেট বড় হয়ে যায়, ভুমিষ্ঠের পর পেট আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
আগের অবস্থা ফিরে আসলেও পেটে ফাটা দাগ থেকে যায়। পুরুষদেরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার যাদের ওজন বেশি ছিলো এখন কমিয়ে এনে সুন্দর ফিটনেস পেয়েছেন তাদেরও এই সমস্যা হতে পারে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহার করেও কোনো সমাধান পান না। এক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া উপায় সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে।

লেবুর রস ও বেকিং সোডা:লেবুর রস ও বেকিং সোডা ত্বকের ফাটা দাগ দুর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। প্রথমে লেবুর রস ও বেকিং সোডা একসাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর যেখানে ফাটা দাগ রয়েছে সেখানে ভালোভাবে লাগিয়ে মালিস করুন। কিছুক্ষন পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর সেখানে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

আমন্ড অয়েল ব্যবহার:ত্বকের দাগ-ছোপ দুর করতে আমন্ড অয়েল কার্যকর ভুমকা পালন করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই ত্বক ও চুলের যত্নে এই তেল ব্যবহার করে থাকেন। আপনি যদি নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করেন তাহলে সুফল পাবেন। 
আপনার ত্বক থেকে যদি দাগ দুর করতে চান তাহলে আমন্ড অয়েলের সাথে যেকোনো জিনিষ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তারপর ফাটা দাগের উপর লাগিয়ে নিন। এভাবে কয়েক মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন।

আপেন সিডার ভিনেগারের ব্যবহার: আপেল সিডার ভিনেগার এমন একটি তরল যা আপনার শরীরের ভেতর থেকেই উপকার করে না শরীরের বাইরে থেকেও উপকার করে। ত্বকের ফাটা দাগ দুর করতে এটি বেশ কার্যকর উপাদান। তাই একটি বোতলে আপেল সিডার ভিনেগার ভরে প্রতিদিন দাগের উপর স্প্রে করুন। এটি ঘুমাতে যাওয়ার আগে করলে বেশি ভালো হয়।

হলুদের ব্যবহার: ত্বকের যত্নে হলুদের কার্যকারীতা কে না জানে। হলুদের সাথে টক দই মিশিয়ে ফাটা দাগের উপর ব্যবহার করলে ব্যপক উপকার পাবেন। নিয়মিত যদি এই মিশ্রনটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে নিয়ে তাকে শুকিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আক্রান্ত স্থানে হলুদের ব্যবহারের পর ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন।

বুকের ফাটা দাগ দূর করার উপায়

বুকের ফাটা দাগকে বলা হয় স্ট্রেচ মার্ক সাধারনত কোলাজন বা ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়ার কারনে ত্বকে এই ধরনের ফাটা দাগ দেখা যায়।গর্ভধারনের সময় বা যখন ওজন বৃদ্ধি পায় তখন আমাদের ত্বক উপরের স্তরে প্রসারিত হয় তখন একটা সময় ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় তখন ত্বক ফেটে যেতে থাকে।

ক্রিম, লোশন ও জেল ব্যবহার: যখন থেকে বুকে ফাটা দাগ দেখবেন তখন থেকেই যদি ক্রিম, লোশন বা জেল ব্যবহার করা শুরু করেন, তাহলে দেখবেন ব্যবহারের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফাটা দাগ কমে যায়।

হায়ালুরোনিক এসিড: এই উপাদানটি ফাটা দাগ দুর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এটি যদি আপনারা নিয়মিত বুক মালিশ করেন তাহলে দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যে দাগ অনেকটা কমে গেছে।

ট্রেটিনোইন: এটি একটি রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ যা সমস্যার প্রথম দিকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। একটি গবেষনায় দেখা গেছে যারা ২৪ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতে একবার করে ট্রেটিনোইন ব্যবহার করে তাদের ফাটা দাগ অনেকটাই কমে গেছে।

অলিভ ওয়েল ও আরগন ওয়েল: যাদের বুকে ফাটা দাগ আছে, যাদের বাচ্চা হওয়ার পর তলপেট ও ব্রেস্ট্রের জায়গায় ফাটা দাগ দেখা যায় তারা যদি নিয়মিত অলিভ ওয়েল ও কয়েক ফোঁটা আরগান ওয়েল মিশিয়ে উক্ত জায়গায় কয়েকদিন ম্যাসাজ করেন তাহলে ভালো ফল পাবেন। এই মিশ্রনের ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য স্কিনের শুষ্কতা কমিয়ে দেয়।

কোমরের ফাটা দাগ দূর করার উপায়

নারী, পুরুষ কিংবা শিশু যে কেউ এই সমস্যায় পড়তে পারেন।তবে গর্ভবতী নারীদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ফলে শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। একবার কারো এই সমস্যা দেখা দিলে সহজে ঠিক হতে চায় না। তবে ঘরোয়া কিছু উপায়েও এই দাগ দুর করা যায়।

লেবু ও চিনি: লেবু ও চিনি একসাথে মিক্সড করে দাগের উপর ঘষতে হবে। এই মিশ্রনটি চার সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

লেবুর রস ও বেকিং সোডা: লেবুর রস ও বেকিং সোডা ত্বকের ফাটা দাগ দুর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। একই পরিমানের লেবুর রস ও বেকিং সোডা একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর ফাটা দাগে এই পেস্ট ব্যবহার করুন। কিছুক্ষন রাখার পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর সেই জায়গায় ময়শ্চারাইরাজ ব্যবহার করুন।

ডিমের সাদা অংশ: ডিম ফাটিয়ে একটি বাটিতে রাখুন তারপর কুসুম বাদ দিয়ে এর সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিন।তারপর ফাটা জায়গায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ফাটা জায়গায় অ্যালোভেরা জেল বেশ কিছুক্ষন লাগিয়ে রাখুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে এই দাগ হালকা হয়ে যাবে।

আলুর রস: যেকোনো দাগ দুর করতে আলুর রাস জাদুর মত কাজ করে। ফাটা দাগের উপর আলুর রস মাখিয়ে জায়গাটি ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।

হলুদ ও সরিষার তেল: সরিষার তেলের সাথে হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রনটি ফাটা দাগের উপর ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে তিনবার মিশ্রন লাগালে আস্তে আস্তে ফাটা দাগ হালকা হয়ে যাবে।

আমন্ড ওয়েল: আমন্ড ওয়েল ফাটা দাগ দুর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই ত্বক ও চুলের যত্নে আমন্ড ওয়েল ব্যবহার করে থাকে। নিয়মিত এর ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমন্ড ওয়েলের সাথে যেকোনো উপাদান মিশিয়ে শরীরে ব্যবহার করলে ফাটা দাগ রোধ করতে ব্যপক ভুমিকা রাখে।

বুকের ফাটা দাগ কেন হয়

আপনাদের মধ্যে যাদের কুশিং সিনড্রোম বা মারফোন সিনড্রম থাকে তাহলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাদের ব্রেস্ট এনলার্জমেন্ট সার্জারি হয়েছে তাদের এই সমস্যা হতে পারে।আবার যারা কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খান, হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যায়,যারা পোস্ট প্রেগন্যান্সিতে আছেন, পরিবারের কারো আগে থেকে এই সমস্যা থাকে তাহলে বুকের ফাটা দাগ হতে পারে।

শরীরের চামড়া ফাটার কারন

আমাদের শরীরে অনেক সময় আঁশযুক্ত চিড় চিড় ফাটা দাগের সমস্যা হয়ে থাকে এতে বলা হয় ইকথায়োসিস ভালগ্যারিস।এই রোগ সাধারনত ১ হাজারে ২/১ জনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে বা এর তীব্রতা বাড়ে। ত্বকের এই রোগটি জেনেটিক্যালি হয়ে থাকে। 

শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পরপরই এই রোগটি হয়ে থাকে তবে কিছুদিনের মধ্যে রোগটি সেরে যায়। পরবর্তীতে বয়স ৫ থেকে ৭ বছর হলে তা আবার দেখা দেয়। পুরুষ-মহিলা যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এই রোগে যারা আক্রান্ত হন তাদের শরীরের ত্বক খুব শুষ্ক হয়। পেটের নীচে, হাত ও শরীরের মধ্যেখানে আঁশযুক্ত চামড়া দেখা যায়। 
মেয়েদের নাভির নীচে, ‍নিতম্ব ও কোমরের পেছন দিকে ফাটা দাগ দেখা যায়। অনেকের এইগুলো জায়গা ছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও এই ফাটা দাগগুলো দেখা যায়। শরীরের যে স্থান আক্রান্ত হবে সে স্থানের মাছের শরীরের মত হবে অথবা লম্বা দাগযুক্ত সুক্ষ লাইনের মত হবে। ত্বকে চুলকানি হতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় দাগে ফাটল দেখা দেয়। 

এ সকল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যে সকল ব্যক্তি আক্রান্ত হন তারা মাঝ বয়সে চোখের সমস্যা বা শ্রবন শক্তিজনিত সমস্যায় পড়তে পারেন। আক্রান্ত ব্যক্তির খুশকি যেহেতু বেশি হয় সেহেতু কানের ভেতর খইলও বেশি হয় এবং স্বাভাবিকের চেয়ে লোমকুপ বেশি থাকে। এই সকল ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে কোন ভারসাম্য থাকেনা ফলে ঘাম কম হয়।

এদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন। এই রোগটি কোন সংক্রামক ব্যাধি নয় বরং এটি বংশগত। আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হলেও নখ দিয়ে চুলকানো যাবেনা এতে আশেপাশের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও সমস্যা আরোও জটিল হয়। চিকিৎসকগন Electro microscopic analysis করে রোগ নির্নয় করে থাকেন।

এই রোগটি কখনই একেবারে ভালো হয়ে যায় না। এটা যেহেতু জ্বিনগত ব্যপার সেহেতু এর কোন চিকিৎসা নেই। তবে আধুনিক লেজার স্কিংরাফি যা প্লাস্টিক সার্জারির একটি পদ্ধতি করলে চামড়ার মধ্যে থাকা ফাটা দাগ অনেকটা সেরে যায়। 

আপনি যদি নিয়মিত গোসলের পর ময়শ্চারাইজিং লোশন বা পানির সাথে গ্লিসারিনযুক্ত তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করা হলে সমস্যার অনেকটায় কমে যাবে। 
খাবার খাওয়ার ব্যপারে সাবধান থাকতে হবে যে খাবারগুলো চুলকানি বৃদ্ধি করে সেগুলো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কিছু ক্ষার জাতীয় সাবান ও ডিটারজেন্ট এরিয়ে চলতে হবে। গরম পানি দিয়ে কাপড় ধুতে হবে।ভেজা কাপড় বা কাপড় ধোয়ার পর সাবান লেগে আছে এমন কাপড় পড়া যাবেনা। সর্বপরি একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন শরীর ফাটা রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হলে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হয়। যদি সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন তাহলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩