পদ্মার ইলিশ মাছ চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে জেনে নিন

পান্তা ভাতের বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারীতভাবে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে বর্ননা করা হয়েছে পদ্মার ইলিশ মাছ চেনার উপায়গুলো নিয়ে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছের নাম ইলিশ। এই মাছ খায় না এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাধারণত বর্ষাকালে প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। এই মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ ও প্রোটিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
পদ্মার ইলিশ মাছ চেনার উপায়

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন পদ্মার ইলিশ কিভাবে চিনবেন, ইলিশ মাছ কত প্রকার, ইলিশ মাছের উপকারিতা ও সামান্য অপকারিতা, ইলিশ মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, জাটকা সংরক্ষন আইন, ইলিশ মাছের বিচরন ক্ষেত্র, ইলিশ মাছের জীবনচক্র ও প্রজনন আরোও জানতে পারবেন ইলিশ মাছ কি খায় ইত্যাদি সম্পর্কে।

পদ্মার ইলিশ মাছ চেনার উপায়

বাংলাদেশে সারা পৃথিবীর ৬০ শতাংশ ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্থান ও মিয়ানমারসহ নানা দেশে ইলিশের উৎপাদন হয়। সারা পৃথিবীর মধ্যে পদ্মার ইলিশ জগত বিখ্যাত। মুলত স্বাদের কারনে পদ্মার ইলিশের সুখ্যাতি বেশী। এই স্বাদ হওয়ার পেছনে মুল কারন হলো খাদ্যাভাস। পদ্মা, মেঘনা অববাহিকায় ইলিশ খাবার খেয়ে থাকে।

এছাড়া পানি প্রবাহের যে মাত্রা তার ফলে ইলিশ মাছের শরীরে চর্বি জমে এই চর্বির কারনে পদ্মার ইলিশ অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশী সুস্বাদু। ইলিশের জীবন চক্রের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, ইলিশ সমুদ্র থেকে এসে নদীতে ডিম ছাড়ার পর ইলিশের বাচ্চা আরাব সমুদ্রে ফিরে যায়। আবার যখন প্রজনন মৌসুম আসে অর্থৎ ডিম ছাড়ার সময় আসে তখন যেখানে তার জন্ম সেখানে ফিরে যায়।
যার কারনে সারা বছর ধরে পদ্মার ইলিশের সুখ্যাতি রয়েছে। সাগরের ইলিশ ও পদ্মার ইলিশ দুটোই টর্পেডো আকারের হয়ে থাকে তবে পদ্মার ইলিশ সাধারনত বেঁটে সাইজের পটলের মতো মাথা ও লেজ সরু পেট মোটা অর্থাৎ লেজের একটু উপর থেকে গোল হওয়া শুরু করবে।

নদীর ইলিশ মোটা ও বেঁটে হওয়ার কারন হলো, সমুদ্র থেকে ইলিশ যখন ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে তখন নদীর যে প্ল্যাংটন ও জলজ উদ্ভিদ ও প্রানী খায় তার জন্য। সমুদ্রের ইলিশ সরু ও লম্বা হয়ে থাকে। পদ্মার ইলিশের শরীর বেশ উজ্জল এবং গায়ের রং হবে রুপালি।কিন্তু সমুদ্রের ইলিশ তুলনামুলক কম উজ্জল।

কোন ইলিশের স্বাদ বেশী

ইলিশ যত বড় হবে তার স্বাদ তত বেশী হবে। আমরা বড় ইলিশকে সাধারনত পাকা ইলিশ বলে থাকি। সমুদ্র থেকে ইলিশ যখন স্রোতের বিপরীতে নদীর দিকে ঢুকে এবং নদী অববাহিকায় যে খাবার গুলো খায় তার জন্য শরীরে তেল জমে, এই তেলের কারনে স্বাদ বেশী লাগে। এছাড়া বর্ষাকালে যে ইলিশ পাওয়া তার স্বাদ বেশী থাকে।

ইলিশ মাছ কত প্রকার

ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha যা Clupeiformes গোত্রের। এর ইংরেজী নাম Hilsa shad এবং বাংলাদেশে এর নাম ইলশা, হিলসা, ইলিশ ইত্যাদি। ইলিশ মাছের দেহ চাপা ও পুরু মাথার উপরিতল পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে। শরীর রুপালী রংয়ের মাঝারী আঁশ দ্বারা আবৃত থাকে। এর দৈর্ঘ্য ৬০ সে.মি হয়ে থাকে। বড় আকারের একটি ইলিশের ওজন ২.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের থেকে দ্রুত বাড়ে তাই পুরুষ মাছের থেকে স্ত্রী মাছ বড় হয়। ইলিশ মাছ ১ থেকে ২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়।
  • পদ্মা ইলিশ (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে আসে)
  • চান্দিনা ইলিশ ( কখনও নদীতে আসেনা সমুদ্রে থাকে)
  • গুর্তা ইলিশ ( কখনও নদীতে আসেনা সমুদ্রে থাকে)

ইলিশ মাছের বিচরন ক্ষেত্র

সারা পৃথিবীতে ইলিশ ব্যপকভাবে বিচরন করে। তবে এদের বেশী দেখা যায় সমুদ্র, মোহনা ও নদীতে। পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভিয়েতনাম ও চীন সাগর এদের ব্যপক বিচরন রয়েছে।
শাতিল আরব, ইরান ও ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস, পাকিস্থানের সিন্ধু, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীসমূহ, মায়ানমারের ইরাবতী এবং বাংলাদেশের উপকুলীয় বিভিন্ন নদীসহ পদ্মা, মেঘনা ও কর্নফুলি নদীতে ইলিশ ব্যপকভাবে বসবাস করে। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী ইলিশ পাওয়া যায়।

ইলিশ মাছ কি খায়

ইলিশ মাছ সাধারনত নীল সবুজ শৈবাল, ডায়াটম, ডেসমিড, কোপিপোড, রটিফার ইত্যাদি প্ল্যাংটোন জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। এরা যে খাবার খেয়ে থাকে তা বয়স ও রিতুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। যখন এরা ছোট থাকে অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় উদ্ভিদ কনা ও বড় অবস্থায় বা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় প্রানীকনা খেয়ে থাকে। যারা বয়স্ক তারা এগুলো ছাড়া জৈব আর্বজনাও খেয়ে থাকে।

যখন এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে তখন কোন খাবার গ্রহন করে না বললেই চলে তবে ডিম ছাড়ার পর প্রচুর খাবার খেয়ে থাকে।

জাটকা সংরক্ষন আইন

ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার পর ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যে পোনার দৈর্ঘ্য হয় ১২ থেকে ২০ সেমি লম্বা হয় তখন এদের জাটকা বলে। মৎস্য সংরক্ষন আইন অনুযায়ী ১লা নভেম্বর হতে ৩০ শে জুন পর্যন্ত মোট ৮ (আট) মাস জাটকা ধরা, পরিবহন, বিক্রয় ও মজুদ রাখা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ জেল ২ বছর অথবা ৫০০০/-(পাঁচ হাজার) টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

ইলিশ মাছ ১৪ অক্টোবার থেকে ৩রা নভেম্বর পর্যন্ত ধরা নিষিদ্ধ কেন

এ সময় ইলিশ মাছ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করে থাকে।এই সময়টা এই মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংরক্ষনের জন্য গুরুত্বপুর্ন। প্রজনন রিতুতে সাধারনত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবার মাসের মধ্যে ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ে তাই নির্দিষ্ট একটি সময়ে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ করতে হয়।

ইলিশ মাছের জীবনচক্র ও প্রজনন

ইলিশ মাছের পোনা ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে।এরা বছরে ১ থেকে ২ বার প্রজননে অংশ নেয়। ইলিশ মাছের প্রজনন সংগঠিত হয়ে থাকে দক্ষিন-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহের শুরুর দিকে অর্থাৎ শীতের শুরুতে নভেম্বর মাসে। দ্বিতীয় প্রজননকাল শীতের শেষে অর্থাৎ জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত। 
এরা নদীর অগভীর ঘোলাজলে সন্ধ্যা ও ভোরের দিকে প্রজননে অংশ নিয়ে থাকে। একটি মা মাছ প্রজনন রিতুতে আড়াই থেকে ষোল লক্ষ ডিম দেয় যা নির্ভর করে ওজন, আকৃতি, প্রজননকাল ও স্থানের পরিবেশের উপর।

ইলিশ মাছের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা

বাঙালী ও ইলিশ একে উপরের পরিপুরক।এই মাছ বাঙালীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষাকালে বাঙালীর রসনায় তৃপ্তি মেটায় ইলিশ ভাজা, ইলিশের ভর্তা, সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, পান্তা ইলিশ, ইলিশের ডিম ইত্যাদিতে। ইলিশ মাছ পুষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয়।

ভারতের উড়িশা, বিহার ও আসামে বাঙালী সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসেবে ইলিশের ভুমিকা রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষেরা সামাজিক ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পয়লা বৈশাখ, জামাইষষ্ঠী ও পুজায় ইলিশের প্রচলন ব্যপক রয়েছে। দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই মাছ খেয়ে থাকে। বিশ্বে মাছ খাওয়ার তালিকায় স্যমন ও টুনার পর ইলিশ রয়েছে।

ইলিশের পুষ্টিগুন

শরীর গঠনে সহায়তা করে: ইলিশ মাছে রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন। ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে যা দৈনিক চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে থাকে। ইলিশ মাছের এই প্রোটিন শরীরের পেশী গঠন, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত ও হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।

এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: এই মাছে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ২.৫ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ও ত্বক উজ্জল ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয়।

শরীর সুরক্ষায় সহায়তা করে: এই মাছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই মাছে যে ভিটামিন-এ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। এ মাছে রয়েছে ভিটামিন-ডি যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও ক্যালসিয়াম শোষনে সহায়তা করে।
আরোও রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন-ই যা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

শরীরের ভারসাম্য রক্ষাকারী খনিজ পদার্থ: এই মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমানে খনিজ পদার্থ যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। এই মাছে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে। এর শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে।

ইলিশ মাছের উপকারিতা

১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে
  • প্রোটিন - ২৫ গ্রাম
  • ক্যলসিয়াম - ২০৪ মি.গ্রা.
  • ভিটামিন সি - ২৭ মি.গ্রা.
  • শর্করা - ৩.৩৯ গ্রাম
  • খনিজ - ২.২ গ্রাম
  • চর্বি - ১৯.৪ গ্রাম
  • আয়রন - ২ গ্রাম
এছাড়া আরোও রয়েছে উচ্চ পরিমানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড, নায়াসিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এই মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা কমায়, রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রন করে, ধমনীতে খারাপ কোলেস্টরল জমতে বাঁধা দেয়, ‍হার্টের স্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। এক গবেষনায় দেখা গেছে আপনি যদি সপ্তাহে ২ বার ইলিশ মাছ খান তাহলে হৃদরোগের ঝুুঁকি ৩৬ শতাংশ কমে যায়।

মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে: এই মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড স্মৃতিশক্তি উন্নত করে, বয়সের কারনে মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে। হতাশা ও উদ্বেগের লক্ষন কমায় ও শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে। এক গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে মস্তিষ্কের ক্ষয় ১৪ শতাংশ কমে যায়।

ব্যাথা কমায়: ইলিশ মাছে থাকা পুষ্টিগুন শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া আর্থারাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস ও অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়তা করে। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে ৪০ শতাংশ আর্থারাইটিসের সমস্যা দুর হয়।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: এই মাছে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ চোখের জন্য খুব উপকারী। এই মাছ খেলে রাতকানা রোগ দুর হয়, চোখের ছানি দুর হয়, চোখের শুষ্কতা দুর হয়। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে চোখের রোগ ৪০ শতাংশ কমে যায়।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী: ইলিশ মাছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ থাকায় ভ্রুনের মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে সহায়তা করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয়: ইলিশ মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন-ই ত্বকের কোষ পুর্নবিন্যাসে সহায়তা করে, ত্বকের নমনীয়তা বাড়ায়, একজিমা ও সোরায়সিসের লক্ষন কমায় ও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে ২০ শতাংশ বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা কমে যায়।

হাড় ক্ষয় রোধে সহায়তা করে: ইলিশ মাছের মধ্যে যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়, হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি কমায়, বৃদ্ধ ব্যক্তিদের হাড়ের শক্তি বজায় রাখে। নিয়মিত এই মাছ খেলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ , ভিটামিন-ডি এবং সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, রক্তে শ্বেত কনিকার উৎপাদন বাড়ায়, অ্যান্টিবডি তৈরি করে, ভাইরাস সংক্রমন রোধ করে, দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত এই মাছ খেলে সর্দি-কাশির ঝুঁকি ২৬ শতাংশ কমে যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে: ইলিশ মাছের মধ্যে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট ওজন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এছাড়া অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহন করার প্রবনতা কমে, মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, শরীরের ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করে। নিয়মিত এই মাছ খেলে ওজন কমানোর হার ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

ইলিশ মাছের অপকারিতা

ইলিশ মাছের অপকারিতার চেয়ে উপকারিতায় বেশী।তারপরেও কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। অনেকের অ্যালার্জি থাকায় ইলিশ খাওয়া তাদের জন্য খুব বিপদজনক। কারো যদি অ্যালার্জি থাকে তাদের ইলিশ মাছ না খাওয়ায় ভালো। কারন অ্যালার্জি রোগীদের ইলিশ খেলে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে যাদের কিডনির রোগ রয়েছে তাদের ইলিশ এড়িয়ে যওয়ায় উচিত।

ইলিশ মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনিতীতে ইলিশ মাছের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ইলিশ মাছ রপ্তানী করে বাংলাদেশ সরকার ৫০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এছাড়া ইলিশ মাছ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সহায়তা করে যেমন: ইলিশ মাছ শিকার, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণনের সাথে যারা জড়িত তাদের কর্মসংস্থান হয়।
এছাড়া অনেক পর্যটক ইলিশের স্বাদ গ্রহন করার জন্য বাংলাদেশে আসেন। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১২ শতাংশ যা খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করে।

তাজা ইলিশ চেনার উপায়

সাগর ও নদী থেকে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা হয়। এই দুই উৎসস্থলের মধ্যে নদীর ইলিশই বেশী সুস্বাদু। ইলিশ মাছ যত নরম হবে বুঝতে হবে মাছটি তত বেশী পুরোনো। ইলিশ মাছ কেনার সময় যদি দেখেন মাথা ও লেজ ঝুলে আঝে তাহলে বুঝবেন ইলিশ টাটকা নয়। তাই আপনারা যদি তাজা ইলিশ কিনতে চান তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
  • তাজা ইলিশের রং চকচকে রুপালী।
  • পিঠের যে কালো অংশ থাকে তা হবে সুরমা রংয়ের।
  • চোখ কালো সুরমা রংয়ের ও ফুলকা হবে লাল।
  • তাজা ইলিশ হবে শক্ত। ইলিশ মাছ বিক্রেতারা তাজা ইলিশ যেভাবে রাখেন সেভাবেই বাঁকা হয়ে থাকে।এই ধরনের ইলিশ দেখলেই বোঝা যাবে এটি তাজা ইলিশ।
  • মাছের শরীর পিচ্ছিলভাব থাকবে।
  • তাজা ইলিশ লোনা পানি থেকে ধরা হলে মাছে লবনাক্ত গন্ধ থাকবে।
  • মাছের গায়ে চাপ দিলে স্পঞ্জ করে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
  • তাজা মাছের গায়ে বা আশেপাশে মাছি বসবে।
বরফ দেয়া মাছ চেনার উপায়
  • মাছের চোখ ভেতরে ঢুকে থাকবে ও চোখ ঘোলা দেখাবে।
  • মাছের ফুলকায় লালচে ভাব থাকবে না বরং ফুলকাটি শুকনো দেখাবে এবং ফুলকার রং ধুসর ও বাদামি থাকবে।
  • মাছের শরীর থেকে ইলিশ মাছের তাজা গন্ধ থাকবে না।
  • অনেক দিনের পুরনো ইলিশ মাছে সতেজতা, উজ্জলতা ও চকচকে ভাব থাকবে না।
  • মাছের পেটে চাপ দিলে মুখ ‍ও ফুলকা দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসবে।

ইলিশ মাছের অপর নাম কি

ফিশবেইস নামক একটি ওয়েবসাইটে ইলিশ মাছকে বৈশ্বিকভাবে বলা হয় হিলসা শ্যাড ও আলোস হিলসা। বাংলাদেশে বলা হয় ইলিশ মাছ, পদ্মা ইলিশ, জাটকা ইত্যাদি। তবে ফিশবেইস ওয়েবসাইটে মোট ২৫ টি ভাষায় ইলিশের ১১০ টি স্থানীয় নাম সংরক্ষন করা হয়েছে।

ইলিশ ও সার্ডিনের মধ্যে পার্থক্য

ইলিশ

সার্ডিন ইলিশ

ইলিশের পেট ও পিঠ উভয় অংশই সমান বাঁকানো।

সার্ডিনের পেটের অংশ পিঠের অংশ থেকে বেশি বাঁকানো থাকে।

ইলিশ আকারে বড় হয় এরা ৭৫ সে.মি হয়ে থাকে।

সার্ডিন আকারে ছোট ও আকারে ৭ থেকে ২০ সে.মি হয়ে থাকে।

ইলিশের মাথার আকৃতি লম্বাটে ও অগ্রভাগ সুচালো

সার্ডিনের মাথার আকৃতি ছোট ও অগ্রভাগ ভোতা।

ইলিশ নাখের কাছে নিলে ইলিশ মাছের গন্ধ পাওয়া যায়।

সার্ডিনে সে গন্ধ পাওয়া যায় না।

ইলিশের চোখের আকৃতি সার্ডিনের থেকে ছোট।

সার্ডিনের চোখের আকৃতি ইলিশের থেকে বড়।

ইলিশের পিঠের পাখনার অগ্রভাগে ও পুচ্ছ পাখনার কিনারা অনেকটা সাদাটে।

সার্ডিনের পিঠের পাখনার অগ্রভাগ ও পুচ্ছ পাখনার কিনারা ঘোলাটে।

ইলিশের দাম বেশি কেন ?

ইলিশ মাছ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য বা জি.আই পণ্য হিসেবে অন্তভুক্তি ঘটে। রুপালী ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব একটি পণ্য। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্থানেও অল্প পরিমানে ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যে পরিমান মাছ উৎপাদিত হয় তার ১২ শতাংশই ইলিশ যা জিডিপিতে অবদান রাখছে ১ শতাংশ।
প্রতি বছর বাংলাদেশের জেলেরা ৬ লাখ টন ইলিশ ধরেন যার বেশীর ভাগ সমুদ্র থেকে আসে। বর্ষাকালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় আসে তাই এই সময় সবচেয়ে বেশী ইলিশ পাওয়া যায়। যেহেতু এই মাছ খাল, বিল, পুকুরে হয়না বা চাষ করা যায় না সেহেতু দামও বেশী থাকে।

এছাড়া বর্তমানে ইলিশ মাছ রপ্তানী করায় ও বাজারে সিন্ডিকেট থাকায় এবং আমাদের দেশে ইলিশ মাছের মজুদ নিতীমালা না থাকার কারনে কোল্ড ষ্টোরে বেশী মুনাফার লোভে ইলিশ ব্যবসায়ীরা অনেকদিন ধরে মজুদ রাখছে। যার ফলে ইলিশ মাছ সাধারন মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে চলে গেছে।

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন ইলিশ মাছের উপকারিতাগুলো নিয়ে এবং এটি নিয়মিত খেলে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে ইলিশ মাছ খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।

যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩