বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস হলে করনীয়
টাইফয়েড এর ক্ষতিকর দিক - টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে আলোচনা করা হয়েছে বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় - জন্ডিস হলে করনীয় এই সম্পর্কে। সাধারনত গ্রীষ্মকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি থাকে। এ সময় প্রচন্ড গরমে থাকে ফলে বাইরের দুষিত পানি ও শরবত খেলে জন্ডিসের ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন জন্ডিস হলে কি করবেন, বিলোরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, শিশুদের জন্ডিস হলে করনীয় কি, জন্ডিসের লক্ষন ও প্রতিকার, জন্ডিস হলে কি খেতে হয়, জন্ডিস হলে কোন খাবার খাওয়া যাবেনা ইত্যাদি। আজকের আর্টিকেলটিতে জন্ডিস নিয়ে আলোচনা করবো।
জন্ডিস হলে করনীয়
শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হলো লিভার। লিভার শরীরের খাদ্য বিপাকে সহায়তা করা ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন কাজে মুল ভুমিকা পালন করে। লিভার গঠিত হয় প্যারেনকাইমাল ও নন-প্যারেনকাইমাল কোষ দিয়ে। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের লিভারের ওজন ১.৫০ কেজি। প্রতি বছর আমাদের দেশে ১ লক্ষ মানুষ লিভারের রোগে মারা যায়।
বর্তমানে লিভারের রোগ বাড়তে আছে। মুলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, মানসিক চাপ, মদ্যপান , ধুমপান ছাড়াও সংক্রমন, ওষুধ, স্থুলতার কারনেও লিভারের রোগ হয়ে থাকে। লিভারের যে রোগগুলো হয়ে থাকে তা হলো ভাইরাল হেপাটাইসিস (জন্ডিস), লিভার সিরোসিস, লিভারের ফোঁড়া, পিত্তনালির রোগ, ফ্যাটি লিভার ও লিভঅর ক্যান্সার অন্যতম।
জন্ডিস কোন রোগ নয় রোগের লক্ষন মাত্র। নানা কারনে জন্ডিস হতে পারে। লিভারের প্রদাহকে সাধারনত জন্ডিস বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল ও ভাইরাসের কারনে লিভারের প্রদাহ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে লিভার প্রদাহের প্রধান কারন হেপাটাইটিস ই, হেপাটাইটিস এ, ও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। এর মধ্যে প্রথম ২ টি পানি ও খাদ্যবাহিত এবং তৃতীয়টি রক্তবাহিত।
হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের হয়ে থাকে। তবে হেপাটাইটিস ই ও বি সব বয়সের মানুষের হতে পারে।
জন্ডিস প্রতিরোধ
সর্বাবস্থায় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি পান করতে হবে। শরীর থেকে রক্ত নিতে হলে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। জীবানুমুক্ত ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। হেপাটাইটিস বি টিকা সকলেরই নেয়া উচিত। যারা সেলুনে শেভ করেন, তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্লেড বা ক্ষুর পুনরায় ব্যবহার না করা হয়। জন্ডিস হওয়ার পর টিকা নিয়ে কোন লাভ নেয়।
সুস্থ থাকা অবস্থায় টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে ১ টি, দ্বিতীয় মাসে ১ টি এরপর ১ বছর পর শেষ ডোজটি নিতে হয়। হেপাটাইটিস এ এর ক্ষেত্রে ১টি ডোজই যথেষ্ট। হেপাটাইটিস এ ও বি এর ক্ষেত্রে ৫ বছর পর বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া হয়।
জন্ডিসের চিকিৎসা ব্যবস্থা
জন্ডিস যেহেতু রোগ নয় তাই এর কোন ওষুধ নেই। বিলুরুবিনের পরিমান ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস সেরে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এর প্রধান চিকিৎসা। ব্যাথার ওষুধ হিসাবে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ অন্য কোন অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
জন্ডিস হলে সাবধানতা অবলম্বন
যিনি জন্ডিসে আক্রান্ত তিনি যেন অবশ্যই বাইরের খাবার পরিহার করেন। বিশেষ করে খুব সাবধানে পানি পান করতে হবে। পানি সব সময় ফুটিয়ে খেতে হবে। হেপাটাইটিস এ ও ই এর জন্য দায়ী পানিবাহিত ভাইরাসগুলো রাস্তার খাবারের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে।
বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের এ ব্যাপারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। গর্ভাবস্থার শেষ ৩ মাসে যদি হেপাটাইটিস হয় তাহলে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
জন্ডিস হলে যে সকল খাবার খাবেন
জন্ডিসের ভাইরাস লিভারের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তােই লিভারের ও পিত্তথলীর উপর কম চাপ পড়ে এই ধরনের খাবার খাওয়া উচিত যেমন:শরবত, ভাত, জাউভাত, সুজি, রুটি ইত্যাদি। চর্বিজাতীয় খাবার যেমন: ঘি, মাখন, যেকোন ভাজা খাবার বা ফাস্টফুড, গরু ও খাসির মাংস পরিতার করা উচিত।
জন্ডিস হলে বিশ্রাম যেভাবে নিতে হবে
পুর্ন বিশ্রামে থাকতে হবে এই সময় ভারী বা পরিশ্রমের কোন কাজ করা যাবেনা। যেহেতু জন্ডিসের ভাইরাস লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে সেহেতু পুর্ন বিশ্রাম না নিলে বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করলে জন্ডিসের মাত্রা আরোও বেড়ে জটিল আকার ধারন করে।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
রক্তে বিলোরবিনের ঘনত্ব ১.২ mg/dl এর নীচে থাকে। তবে রক্তে যদি বিলোরবিনের মাত্রা ১.২ mg/dl এর বেশি হয় বা ৩ mg/dl এর বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার জন্ডিস হয়েছে। রক্তে বিলোরবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়ে থাকে।আমাদের রক্তের লোহিত কনিকাগুলো এক সময় স্বাভাবিক নিয়মে ভেঙ্গে যায় এবং বিলোরবিন তৈরি করে।
যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে।অন্ত্র থেকে বিলোরবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। বিলোরবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলোরবিন বেড়ে যায় এবং জন্ডিস দেখা দেয়।
শিশুর জন্ডিস ও করনীয়
শিশু জন্মের ২ সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস হয়। সাধারনত এই জন্ডিসকে Philological জন্ডিস বলা হয়। এই জন্ডিস শিশুর কোন ক্ষতি করেনা বা কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। এমনিতেই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে যেতে পাবে।
ঠিক তখন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বাচ্চার ওজন যদি কম থাকে, মায়েদের ডায়াবেটিস থাকে, মায়েদের স্তনে দুধের পরিমান কম হয় ও শিশুর জন্মের পর যদি পায়খানা কম হয় তাহলে জন্ডিস বেড়ে যেতে পারে।
শিশুর জন্ডিসের প্রকারভেদ
শরীর সংক্রান্ত জন্ডিস: এটি একটি সাধারন জন্ডিস সাধারনত জন্মের ২৪ ঘন্টা পরে এই জন্ডিস হয়ে থাকে।এ জন্ডিসের মুল কারন হলো যেহেতু নবজাতকের লিভার পরিপক্ক হয়নি যারফলে বিলোরুবিনের বিকাশ ঘটেনি।
বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে জন্ডিস: সদ্যজাত শিশু যদি পর্যাপ্ত পরিমানে বুকের দুধ না পায় তাহলে জন্ডিস হতে পারে।
রক্তের গ্রুপের অসঙ্গতির কারনে জন্ডিস: মা ও শিশুর মধ্যে Rh বা ABO রক্তের প্রকারের কোন অসঙ্গতি ঘটে তাহলে জন্ডিস হতে পারে।
শিশু জন্ডিসের লক্ষন
শিশুর জন্ডিস হলে ত্বক হলুদ বর্ন ধারন করে। প্রথমদিকে মুখ হলুদ হয়ে যায় পরে চোখ, বুক, পেট ও পা হলুদ হয়ে যায়। জন্ডিস হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য শিশুকে আলতো করে কপাল বা নাকের চামড়ায় টিপ দেন। তারপর আপনার আঙ্গুলটি তুলে নিন যদি দেখেন তার চামড়া হলুদ বর্ন ধারন করেছে তাহলে বুঝতে হবে তার জন্ডিস হয়েছে। এছাড়া নিম্নলিখিত লক্ষনগুলি দেখেও জন্ডিস বোঝা যায়।
- শিশু খাওয়াতে সমস্যা হয়।
- শিশুর ঘুম বেশি হয়।
- শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
- শিশু যদি জোরে কাঁদে।
শিশুর জন্ডিসের কারন
- অভ্যন্তরীনভাবে রক্তক্ষরন হলে।
- লিভারের কার্যকারিতা কমে যায়
- শিশুর রক্তে সংক্রমন হয়।
- এনজাইজের ঘাটতি হয়।
- মায়ের নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ ও শিশুর পজিটিভ রক্ত।
- অপরিনত প্রসবের কারনে।
- রক্তে বিভিন্ন প্রদাহের কারনে।
- হােইপোথাইরেড রোগ
- যকৃত ও পিত্তনালীর জন্মগত জটিলতাজনিত কারন।
- জন্মগত ভাইরাস প্রদাহের কারন।
শিশুদের জন্ডিসজনিত জটিলতা
- শিশুদের জন্ডিসের চিকিৎসা সময়মতো চিকিৎসা না করলে মাথার বিলোরুবিনজনিত প্রদাহের কারনে প্রথমে খিঁচুনি ও পরে মৃত্যু হতে পারে।
- শিশুর যদি হাইপোথায়রেড ও পিত্তনালিজনিত সমস্যা থাকলে জন্ডিসের চিকিৎসা তাড়াতাড়ি করতে হবে।তা না হলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হয়ে যেতে পারে। এছাড়া পিত্তনালীজনিত সমস্যার কারনে যকৃত কার্যকারিতা হারিয়ে অকাল মৃত্যু হতে পারে।
শিশুর জন্ডিস চিকিৎসা
- শিশুর জন্ডিসের চিকিৎসা বয়স, বিলোরবিনের মাত্রা ও জন্ডিসের কারনের উপর নির্ভর করে। ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস এমনিতে সেরে যায়। জন্ডিস যদি হাত ও পায়ের তালুতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ফটোথেরাপি ও এক্সচেঞ্জ ব্লাড ট্রান্সফিউশন শুরু করতে হবে। যদি রক্তের প্রদাহ থাকে তাহলে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রয়োজন হয়।
- শিশুর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ ও মায়ের গ্রুপ নেগেটিভ হলে প্রসবের পর মাকে অ্যান্টি ডি ইমুউনোগ্লোবিন ইনজেকশন দিতে হবে।
- শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমানে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- বিলোরবিনের মাত্রা টক্সিং লেভেলে যাওয়ার পুর্বে বিলোরবিন চার্ট অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
- মায়ের টক্সোপ্লাজমা, রুবেলা এবং অন্যান্য গর্ভকালীন প্রদাহজনিত রোগের টিকা প্রদান ও চিকিৎসা করতে হবে।
জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার
বহু যুগ আগে থেকে এই রোগ পৃথিবীতে ছিল, যারফলে এই রোগ সম্পর্কে সকলেই পরিচিত। জন্ডিস প্রকৃতপক্ষে কোন রোগ নয় বরং রোগের লক্ষন মাত্র। রক্তে বিলোরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়ে থাকে।বিভিন্ন কারনে রক্তে বিলোরুবিন বেড়ে যায় যেমন: অতিরিক্ত রক্ত কনিকা ভেঙ্গে গেলে বিলোরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে জন্ডিস হয়।
বিপাকজনিত কোন সমস্যা হলে বিলোরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে জন্ডিস হতে পারে। এছাড়া পিত্তরস লিভার থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যাওয়ার পথে বাঁধা প্রাপ্ত হলে জন্ডিস হতে পারে।
জন্ডিসের কারন
- Hepatitis A, B, C ও E এর কারনে জন্ডিস হতে পারে।
- লিভার সিরোসিস হলে জন্ডিস হতে পারে।
- Hemolytic anemia যেমন: থ্যালাসেমিয়া হলে জন্ডিস হতে পারে।
- প্যারাসিটামল টক্সিসিটি, সনাতনী বা দেশজ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে জন্ডিস হতে পারে।
- জেনেটিক্যাল রোগে কারনে জন্ডিস হতে পারে।
- পিত্তনালীর পাথরের কারনে জন্ডিস হতে পারে।
- প্যানক্রিয়াস, লিভার, পিত্তনালী, পিত্তথলি ও খাদ্যনালিতে ক্যান্সার হলে জন্ডিস হতে পারে।
- অটো ইমিউন লিভার ডিজিজ হলে জন্ডিস হতে পারে।
জন্ডিসের লক্ষন
- জন্ডিস হলে চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়।
- খাবারে অরুচি, বমি ভাব, বমি হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- চুলকানি হতে পারে।
- পেট ব্যথা, পায়খানার রং সাদাটে বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- সবসময় জ্বর জ্বর ভাব অনুভুত হয়।
- শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়।
- ওজন কমে যায়।
- অনেক সময় রক্ত বমি হয়।
- কালো পায়খানা হতে পারে।
- পেটে চাকা অনুভুত হয়।
- পেটে পানি আসে ও শরীর ফুলে যায়।
জন্ডিস প্রতিরোধে করনীয়
- Hepatitis A, B, C ও E এর ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- শরীরে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে।
- ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
- মদ পান ও নশাদার দ্রব্য খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিরাপদ যৌন মিলন করতে হবে।
- সেলুনে সেভ করার সময় অবশ্যই নতুন ব্লেড ব্যবহার করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
জন্ডিস হলে রোগীর ওষুধ কি তা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারনা আছে, জন্ডিস হলে এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে যকৃত ও পিত্তথলীর উপর কোন চাপ না পড়ে। আপনি যদি অল্প অল্প করে একটু পরপর হালকা খাবার খেতে পারেন ও পুর্ন বিশ্রামে থাকেন তাহলে জন্ডিস সেরে যায়। জন্ডিস হলে যা খেতে হবে তা নীচে বর্ননা করা হলো।
মুলা :মুলা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি আমাদের দেশে দুই ধরনের মুলা পাওয়া যায় সাদা মুলা ও লালমুলা। এটা এমন একটি খাবার যা রান্না করে খাওয়া যায় আবার কাঁচাও খাওয়া যায় অথবা সালাতেও এটি ব্যবহৃত হয়।মূলা তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C ও ভিটামিন A থাকে। এই সবজির ব্যাপক ঔষধি গুন রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এই সবজিটি দারুন কাজ করে।
এছাড়াও এতে বিটা ক্যারোটিন থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আলসার ও বদহজম প্রতিরোধে সহায়তা করে ও ওজন কমাতেও এর তুলনা নেই।সাধারণত কিডনি ও পিত্তথলিতে যে পাথর হয় তা প্রতিরোধে সহায়তা করে এই সবজিটি। এতে ক্যারোটিন থাকায় চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে মূলা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
ফুলকপি:শীতের সবজি গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম পুষ্টিকর একটি সবজি। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A,B ও C রয়েছে ।এছাড়াও রয়েছে এতে উচ্চমাত্রায় আয়রন ,ফসফরাস ,পটাশিয়াম সালফার ।শরীরের রক্ত তৈরিতে আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা গর্ভবতী মা বাড়ন্ত শিশুদের জন্য একটি উপকারী সবজি ।
ফুলকপি কোলেস্টোরল মুক্ত সবজি হওয়ায় আমাদের শরীর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।এই সবজি মূত্রথলি এবং প্রোস্টেট, স্তন, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C থাকায় সর্দি,কাশি,জ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে ফুলকপি খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
বাঁধাকপি: এটিও একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শীতকালীন সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, মিনারেল,অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন C ও E। বাঁধাকপিতে যে ভিটামিন C রয়েছে তা হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। বয়স্ক মানুষ যারা বাঁধাকপি খায় তাদের হাড়জনিত সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে বাঁধাকপি খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
এটি ওজন কমাতেও সহায়তা করে কারণ বাঁধাকপি সালাত খেয়েই সারা বেলা থাকা যায়। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এই সবজিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় আলসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিম :আমিষের অন্যতম উৎস হলো এই সবজি।শিমের মধ্যে যে বীজ রয়েছে তার ডাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে আমিষ,খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শিমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় শরীরকে কোষ্ঠকাঠিন্য মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে শিম খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
শিম রক্তে ভালো কোলেস্টোরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টোরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। শিশুদের পুষ্টি জড়িত রোগ, মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধান এই সবজি সহায়তা করে ।শিমের ফুল সাধারণত রক্ত আমাশার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
গাজর: এই সবজিও অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু এবং আঁশযুক্ত খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে বিটাক্যারোটিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ।এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে । জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে গাজর খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
টমেটো: টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C আছে ।কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতেই এই সবজি ফলটি খাওয়া যায় বলে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। টমেটোতে যে ভিটামিন C আছে তা ত্বক ও চুলের রুক্ষতা দূর করে। বিভিন্ন চর্মরোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে ।
টমেটোতে লাইকোপেন নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে টমেটো খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
পালং শাক: এ সবজিটি অত্যন্ত উচ্চমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বহন করে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ,ফলিক এসিড ,আয়রন ,ফসফরাস রয়েছে তাই বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি সহায়তা করে ।
এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার ওভারিয়ান ক্যান্সার ,আর্থারাইটিস অষ্টিওপরোসিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে তোলে এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে পালং শাক খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
ব্রুকলি: এটি একটি কপি জাতীয় সবজি।এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড ফাইবার ও এন্টি অক্সিডেন্ট হয়েছে। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি সবজি। বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন রাতকানা,চোখের আরও বিভিন্ন রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে ব্রুকলি খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
ধনেপাতা: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন A ও C, ফলিক এসিড যা চুলের ক্ষয় রোধ করে। ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে ।এই সবজিতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ।এই সবজিটি শরীরকে চর্বিমুক্ত রাখতে সহায়তা করে ।এই সবজিতে কোন কোলেস্টেরল না থাকাই হার্টের রোগ থেকে মুক্তি।
এই সবজি ঠোট ফাঁটা, জ্বর, সর্দি ,কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখে। এটি একটি ওষুধি গুণসম্পূন্ন সবজি। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে ধনেপাতা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
আম: বাংলাদেশের এটি একটি জনপ্রিয় জনপ্রিয় ফল। এই ফল খায় না এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকেই আম পাওয়া যায় এবং মে মাসের শুরু থেকে আম পাকতে শুরু করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও সোডিয়াম। এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।ক্যান্সার কোষ কে মেরে ফেলে।
আমে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। আমে খেলে দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে।যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের কাঁচা আম খাওয়া উচিত ।এটি বাইন নামে এক ধরনের এসিড নিঃসরণ করে যা অন্ত্রের মধ্যে খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে হত্যা করে নতুন রক্ত উৎপাদনের সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে আম খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
কাঁঠাল: এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় ফল কাঁঠাল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় ১০০ গ্রাম কাঁঠালের রয়েছে ৯০ গ্রাম ক্যালরি খনিজ লবণের পরিমাণ ০.৯ গ্রাম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ডায়াবেটিকস রোগীদের কাঁচা কাঁঠাল খুব উপকারী । জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে কাঁঠাল খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
এছাড়াও রয়েছে থায়ামিন,রিবোফ্লেবিন,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,আয়রন,সোডিয়াম জিংক এবং নায়াসিন। এই ফলে ভিটামিন এ থাকায় এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এছাড়া এই ফলটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
লিচু: লিচু সাধারণত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। লিচুর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা টিউমার প্রতিরোধে সহায়তা করে এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি শর্করা আমিষ ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি আয়রন রয়েছে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে জাম খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
জাম: বমি বমি ভাব খাবারে অরুচি ইত্যাদি নিরাময়ে জামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জামে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ,আমিষ ,ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি ,ক্যারোটিন রয়েছে। এই ফল শরীরের হাড়কে মজবুত করে ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময় করতে সহায়তা করে । জাম ত্বককে ভালো রাখে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে জাম খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের মধ্যে এমন এক ধরনের নির্যাস আছে যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে।
পেয়ারা: পেয়ারা এমন একটি ফল যা বাংলাদেশে সারা বছরই পাওয়া যায়।একটি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৫১ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, শর্করা ১১.২০ গ্রাম ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আর ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে পেয়ারা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
সফেদা: সফেদায় প্রচুর পরিমাণে গ্লকোজ থাকে। এ ছাড়া এর মধ্যে যে ক্যালসিয়াম ,আয়রন রয়েছে তা হাড় দাঁতকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সফেদা অনিদ্রা,মানসিক টেনশন,উদ্বেগ,বিষন্নতা দূর করতে সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে সফেদা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ,ভিটামিন এ ,ভিটামিন সি, ই, ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস, কপার ,আয়রন সহ বহু প্রয়োজনীয় পুষ্টি এই ফলে রয়েছে।
তরমুজ: তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই ফলটি মানুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার,কলোন ক্যান্সার,ফুসফুসের ক্যান্সার,স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় গরমের দিনে মানুষ পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা পায় ফলে শরীর সুস্থ সতেজ থাকে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে তরমুজ খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।এছাড়া এর মধ্যে যে ক্যারোটিন রয়েছে তার চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে।
আমড়া: একটি ১০০ গ্রাম আমড়াতে রয়েছে ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি ১৫গ্রাম শর্করা, ১.১০ আমিষ ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম আয়রন ও ৮০০ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন ,৮৩.২০ শতাংশ পানি। এটি পিত্ত ও কফ নিবারক এবং রুটি বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া আমড়া কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে আমড়া খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
আমলকি: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এই ফলটি ঠান্ডা মৌসুমে সর্দি ,কাশি নিবারনে সহায়তা করে ।এছাড়া এই ফলটি রুচি বাড়াতে সহায়তা করে ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখে, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে আমলকি খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
বাতাবি লেবু: বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, থায়ামিন ,ক্যারোটিন ,আয়রন, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস ,পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে। পেশি শক্তির দুর্বলতা ও ব্যাথা বেদনা দূর করতে বাতাবিলেবু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
পেশির দুর্বলতা ও ব্যথা দূর করতে বাতাবি লেবু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে বাতাবি লেবু খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।এছাড়া এই ফলটি ওজন ও এসিডিটি কমাতে সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এ ফলটির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কামরাঙ্গা: কামরাঙ্গা ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল কমাতে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় স্কার্ভি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে কামরাঙ্গা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
গাব: গাবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ,কার্বোহাইড্রেট ,ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই ফলটি ওজন হীনতা ও লো প্রেসারে যারা ভুগছেন তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল ।এই ফলটি খেলে দুর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে গাব খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
প্রোটিন জাতীয় খাবার: মাছ, মুরগীর, ডাল পরিমাণ মত প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে। না হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে ।অনেকের ধারণা জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী মাছ ,মাংস জাতীয় খাবার খেতে পারেন না ।কিন্তু এটা ভুল ধারণা, মুরগির মাংস বা মাছ অনায়াসেই খাওয়া যায়।
সবজি জাতীয় খাবার: মিষ্টি আলু ,মিষ্টি কুমড়া ,মুলা, বিট ,গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পালং শাক জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই আদর্শ সবজি।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার: লেবু, বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে কারণ পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া আখের রস, ডাবের পানি পানির চাহিদা পূরণ করে। তবে অবশ্যই এই খাবারগুলো বাড়ীতে কিনে এনে খেতে হবে।
গোটা শস্য জাতীয় খাবার: গোটা সুস্থ জাতীয় খাবার যেমন: বাদাম, বাদামী চাল, রুটি, ওটস খাওয়া যেতে পারে। কারণ এই খাবারগুলো শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণ করেভ এছাড়াও গোটা শস্যে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ও ভিটামিন থাকে যা শরীর থেকে দূষিত টক্সিন বের করে দেয়।
পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দৈনিক অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।
চা পান: জন্ডিসের রোগী দৈনিক চা পান করতে পারেন। কারণ চায়ের মধ্যে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। চা লিভারের প্রদাহ কমিয়ে দেয়। হজমে সহায়তা করে ও জন্ডিস থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ খাবেন: পেঁয়াজকে টুকরো টুকরো কেরে কেটে গোলমরিচ গুঁড়া, বিট নুন ও লেবুর রসের সাথে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল খেতে হবে।
জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবে না
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন বলছেন জন্ডিস রোগীদের প্রথমে ভাজা এবং মশলাদার খাবার বাদ দিতে হবে। কারন ভাজা, পোড়া খাবার লিভারকে প্রভাবিত করে। জন্ডিস থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য যতটা সম্ভব সাধারন খাবার খেতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জাঙ্ক ফুড যেমন: বারগার, হট ডগ, পিজ্জা, মিষ্টি প্রভৃতি ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়।
কারন এগুলোতে কোন পুষ্টি থাকেনা। এছাড়া চিনি জাতীয় খাবার যেমন: বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত মিষ্টি খাওয়া যাবে না। কারন এগুলো লিভারে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। এছাড়া গরুর মাংশ, খাসির মাংশ জন্ডিসকালীন সময়ে না খাওয়ায় ভালো।দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন: ফূল ক্রিম দুধ, দই, ঘি, মাখন, পনির না খাওয়ায় ভালো এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে যা যকৃতের জন্য ক্ষতিকর।
জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব
আমাদের দেশে কারো জন্ডিস হলে নানা ধরনের গাছ গাছরার ওষুধ দিয়ে থাকে আবার নানা ধরনের কুসংস্কার মেনে জন্ডিস সারানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনভাবে এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক কাজ করা যাবেনা। কারন জন্ডিস কোন রোগ নয় বরং তা রোগের লক্ষন। এগুলোর মাধ্যমে আরোও রোগকে ডেকে আনা হয় শরীরে। তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন।
জন্ডিস টেস্ট নাম
জন্ডিস সনাক্ত করার জন্য সাধারনত সিরাম বিলোরুবিন টেস্ট করা হয়। এই টেষ্টে যদি বিলোরুবিনের মাত্রা ১.২ পর্যন্ত থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই যদি এই মাত্রার উপর উঠে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার জন্ডিস হয়েছে।
লেখকের শেষকথা
আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন জন্ডিসের লক্ষন, প্রতিকার, চিকিৎসা এবং কিভাবে এই রোগ ভালো করা যায় সেই সম্পর্কে।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url