কিভাবে মাল্টা চাষ করে কোটি টকা ইনকাম করবেন
শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়ার উপায় - কম বয়সে কোটিপতি হওয়ার উপায় সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে বর্ননা করা হয়েছে কিভাবে মাল্টা চাষ করে কোটি টকা ইনকাম করবেন সে সম্পর্কে। নীচে একটি ক্যলকুলেশান দেওয়া হয়েছে, এই ক্যালকুলেশানটি গুরুত্বের সাথে ফলো করলে আপনারা উপকৃত হবেন। যদিও এখানে ১ বিঘা জমির উপর লাভ নির্ধারন করা হয়েছে, যদি এটা ১০ বিঘা হয় তাহলে লাভের অংক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন মাল্টা চাষের একটি বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশান, টবে কিভাবে মাল্টা চাষ করতে হয়, মাল্টা গাছের রোগ ও প্রতিকার, মাল্টা গাছের চাষ পদ্ধতি, এই ফলের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু, এই ফলের চারা কোথায় থেকে কিনবেন, সার ব্যবস্থাপনা,রোপন পদ্ধতি, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি।
মাল্টা চাষে কোটি টাকা আয়ের ক্যালকুলেশান
১ম বছরে ১ বিঘাতে লাভ
১ বিঘাতে গাছ হয় =১২০ টি
১ম বছর ফলন =২০ কেজি অর্থাৎ ১২০ X ২০ =২,৪০০ কেজি যার দাম =২৪০০ X ১০০ (টাকা কজি দরে) = ২,৪০,০০০/- টাকা, ১ বিঘা মাল্টা বাগানে সর্বসাকুল্যে খরচ হয় (যার মধ্যে আছে সার, লেবার ও অন্যন্য) =২০,০০০/- টাকা, লাভ =২,৪০,০০০-২০,০০০=২,২০,০০০/- টাকা।
১ম বছরে ১ বিঘাতে লাভ =২,২০,০০০/- টাকা
২য় বছরে ১ বিঘাতে লাভ
১ বিঘাতে গাছ হয় =১২০ টি
২য় বছর ফলন =৪৫ কেজি অর্থাৎ ১২০ X ৪৫ =৫,৪০০ কেজি যার দাম =৫,৪০০ X ১০০ টাকা কেজি দরে = ৫,৪০,০০০/- টাকা, ১ বিঘা মাল্টা বাগানে সর্বসাকুল্যে খরচ হয় (যার মধ্যে আছে সার, লেবার ও অন্যন্য) =৩০,০০০/- টাকা, লাভ =৫,৪০,০০০-৩০,০০০=৫,১০,০০০/- টাকা।
২য় বছরে ১ বিঘাতে লাভ =৫,১০,০০০/- টাকা
(বিঃ দ্রঃ নিজের জমি থাকা সাপেক্ষে ক্যালকুলেশন করা হয়েছে। যদি জমি লিজ নিয়ে করতে হয় তাহলে লিজের টাকার পরিমান লাভের অংশ থেকে বাদ দিয়ে লাভ নির্ধারন করবেন)।
আমরা উপরোক্ত ক্যালকুলেশন থেকে বুঝতে পারলাম মাল্টা চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি বিনিয়োগ। আমাদের দেশে বেকার ছেলেরা অযথা চাকুরীর পিছে না ঘুরে মাল্টা চাষ করুন। যে সকল প্রবাসী ভাইয়েরা বিদেশে আছেন তারা পরিবার পরিজন ফেলে হাড়ভাঙ্গা খাটুনী খাটেন অথচ তার বিনিময়ে খুব কম অর্থই উর্পাজন করতে পারেন।
তাই বিদেশে না থেকে দেশে এসে নিজের জমি যদি থাকে তাহলে খুব ভালো আর যদি না থাকে তাহলে কম মুল্যে জমি লিজ নিয়ে দরকার হলে কয়েকজন মিলে ১০ থেকে ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাল্টা চাষ করে নিজেকে ও দেশটাকে স্বাবলম্বীর দিকে নিয়ে যান। তবে অবশ্যই আপনাদের বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাল্টা চাষ করতে হবে।
এই আর্টিকেলে কিভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাল্টা চাষ করবেন তার বিস্তারীত আলোচনা নীচে করা হয়েছে। অবশ্যই আর্টিকেলটি পড়বেন।
মাল্টা কমলা চাষ পদ্ধতি
কমলা ও বাতাবিলেবুর সংকর ঘটিয়ে এই ফল আবিষ্কার করা হয়েছে। সুগন্ধযুক্ত দারুন সুস্বাদু এই ফলটির আদি উৎপত্তিস্থল ভিয়েতনাম, দক্ষীন চীন ও উত্তর পশ্চিম ভারত। এই ফলটি সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি বিদেশি ফল। ইংরেজিতে এই ফলটিকে বলা হয় সুইট অরেঞ্জ। এই ফলটি রোগী ওষুধ হিসেবে ব্যাপক কার্যকর।
১০০ গ্রাম মাল্টায় রয়েছে
- ক্যারোটিন - ২০০ মি.গ্রা
- ভিটামিন সি - ৫০ মি.গ্রা
- শর্করা - ১২ মি.গ্রা
- আমিষ - ১ মি.গ্রা
- চর্বি - ০.২ মি.গ্রা
- ক্যালসিয়াম - ৪০ মি.গ্রা
- লৌহ - ০.৮ মি.গ্রা
- ভিটামিন বি১ - ০.১১৩ মি.গ্রা
- ভিটামিন বি২ - ০.০৪৬ মি.গ্রা
- খাদ্যশক্তি - ২০০ মি.গ্রা
মাল্টাতে প্রচুর পরিমানে ওষুধিগুন রয়েছে। জ্বর-সর্দি প্রতিরোধে মাল্টা জাদুর মত কাজ করে। মাল্টার খোসা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী তৈরি করা হয়। সারা পৃথিবীতে এই ফল খুব জনপ্রিয়। মাল্টার অভিযোজন ক্ষমতা কমলা লেবুর চেয়ে বেশী। সাধারনত পাহাড়ী এলাকায় মাল্টার চাষ ভালো হয়। মাল্টা চাষ হালকা লবন মাটিতে করলে ফলন ভালো হয় ও মিষ্টি হয়।
মাল্টা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু
মাল্টা চাষের জন্য শুষ্ক ও উঞ্চ জলবায়ু সবচেয়ে উত্তম। মাল্টা চাষে বায়ুর আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত মাল্টার গুনাগুনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বৃষ্টি বেশী হলে মাল্টা বেশী রসালে হয় ও খোসা পাতলা হয় ফলে গুনগতমান হয় নিম্ন। রোগ-বালাই, পোঁকা-মাকড়ের আক্রমন বেড়ে যায়। কিন্তু আবহাওয়া যদি শুষ্ক হয় তাহলে ফলের স্বাদ ও মান উন্নত হয়।
মাল্টা চাষের জন্য মাটি ব্যবস্থাপনা
সব ধরনের মাটিতে মাল্টা চাষ হয়। তবে ছায়ামুক্ত পানি নিষ্কাশিত হয় এমন উর্বর মধ্যম থেকে হালকা দো-আঁশ মাটি মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটিতে অম্লত্ব থাকতে হবে ৫.৫ থেকে ৬.৫। মাল্টাগাছ লবন ও উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যপক সংবেদনশীল। মাল্টা গাছের গোড়ায় পানি জমলে তা সহ্য করতে পারেনা ফলে গাছের ক্ষতি করে।
কোন জাতের মাল্টা চাষ করবেন
দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের মাল্টা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তবে বারি মাল্টা-১ বাংলদেশের জন্য সবচেয়ে বেশী চাষ উপযোগী জাত। এ জাতটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট যা খুব উচ্চফলনশীল। এ জাতের গাছের ডালপালাগুলো ছড়ানো ও ঝোপালো হয়ে থাকে। মধ্য ফাল্গুন (মার্চ) থেকে মধ্য চৈত্র (এপ্রিল) মাসের মধ্যে ফুল আসে।
ফল পাকে কার্তিক মাসে। এই মাল্টা দেখতে হয় সবুজ। তবে কিছুদিন রেখে দিলে যখন পরিপক্ক হয়ে যায় তখন কমলা বর্ন ধারন করে। ফলের নীচের দিকে ছোট আকারের গোলাকার চিহ্ন থাকে। একেকটি মাল্টার ওজন হয় ১৫০ গ্রাম। ফলের যে শাঁস হয় তা হালকা হলুদ বর্নের। প্রতিটি গাছে ফল ধরে ৩০০ থেকে ৪০০ টি। অর্থাৎ হেক্টর প্রতি গড় ফলন প্রায় ২০ টন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এফটিআইটি বাউ মাল্টা-১ নামে একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। প্রতিটি ফলের ওজন ১৭০ থেকে ২০০ গ্রাম। এর মিষ্টির মাত্রা হয় ১৭ থেকে ২১ টি.এস.এস। গাছ হয় ছোট আকৃতির।ফল রসালো, মিষ্টি ও বিঁচি কম হয়। এই জাতের মাল্টায় মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে ও সেপ্টেম্বর -অক্টোবার মাসে ফল পাকে।
মাল্টা চাষের জন্য কলম প্রকৃয়া
মাল্টার বংশবৃদ্ধি হয় বীজ ও অঙ্গজ পদ্ধতিতে। তবে অঙ্গজ পদ্ধতিতে কলম করলে ফলের মাতৃগুন বজায় থাকে, দ্রুত ফল ধরে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও অধিক ফলন হয়। তবে জোড় কলম ও চোখ কলমের মাধ্যমেও চারা উৎপাদন করা যায়। জোড় কলমের জন্য আদি জোড় বা রুটস্টক নির্বাচন করতে হয়। বাতাবি লেবুর চারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম।
তারপর মাতৃগাছ হতে সায় ন বা উপজোড় সংগ্রহ করে রুটস্টকের উপর স্থাপন করে গ্রাফটিং তৈরি করা হয়। আদি জোড়ের জন্য এক থেকে দেড় বছরের সুস্থ, সতেজ ও সোজা চারা প্রয়োজন হয়।সায়ন ও উপজোড়ের জন্য ২ টি চোখসহ ২/৩ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। তাহলে সায়নের সুপ্ত কুঁড়ি থেকে পাতা বের হবে।
যদি একাধিক ডাল বের হয় তাহলে ভালোটি রেখে বাঁকিগুলো কেটে ফেলতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে কলমের নীচের অংশে যেন কোন কুঁড়ি বা ডাল না থাকে। সাধারনত মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য ভাদ্র (মে-আগস্ট) মাস জোড় কলম করার উপযুক্ত সময়।
মাল্টা গাছের চারা কোথায় পাওয়া যায়
মাল্টা গাছের জন্য চারা অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। আপনি যদি মাল্টা চাষ করতে গিয়ে সব চাষ পদ্ধতি মেনে চললেন কিন্তু জাত নির্বাচনে ভুল করলেন তাহলে কাঙ্খিত ফলন পাবেন না। তাই যে সকল প্রতিষ্ঠান উন্নত মানের চারা উৎপাদন করে শুধু তাদের কাছ থেকে চারা কিনতে হবে। এইজন্য সরকারী হর্টিকালচার সেন্টারগুলো সবচেয়ে বিশ্বস্ত।
মাল্টা গাছের রোপন পদ্ধতি
ষড়ভুজ ও বর্গাকার উভয় পদ্ধতিতে মাল্টা গাছের চারা রোপন করা হয়। মাল্টার চারা সারা বছর রোপন করা যায়। তবে বর্ষা মৌসুম মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে উত্তম। চারা গাছ লাগানোর আগে প্রথমে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। এজন্য গর্তের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা (গভীরতা) হতে হবে ৭৫ সে.মি (৩০ ইঞ্চি)।
প্রতি গর্তে দিতে হবে
- গোবর সার বা জৈব সার - ১৫ কেজি
- কাঠের ছাই - ৫ কেজি
- টি. এস. পি - ২৫০ গ্রাম
- এম. ও. পি - ২৫০ গ্রাম
- বোরিক এসিড - ৫ গ্রাম
- চুন - ৫০০ গ্রাম
সব সারগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তে ভরে দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন পর গর্তে চারা রোপন করা হয়। গাছ লাগানোর পর চারটি খুঁটি দিয়ে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে যেন ঝড়ে না পড়ে যায়।
সার ব্যবস্থাপনা
গাছের প্রকৃত বৃদ্ধির জন্য ও কাঙ্খিত ফল পাওয়ার জন্য বছরে ৩ বার সার দেয়া দরকার। সার দিতে হবে বর্ষার আগে মধ্য ফাল্গন থেকে মধ্য চৈত্র্যের মধ্যে এবং মধ্য বৈশাখ হতে মধ্য জ্যৈষ্ঠের মধ্যে। বর্ষার পরে দিতে হবে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন মাসের মধ্যে। দুপুরের দিকে গাছের ছায়া যতটুকু পড়ে ততটুকু স্থানে ৬ ইঞ্চি গভীর করে মাটি কুপিয়ে ভালোভাবে সার দেয়া সবচেয়ে উত্তম।
তাছাড়া গাছের গোড়ার ১ ফুট ছেড়ে ৪ ফুট পরিমান বৃত্তাকারে অনুরুপভাবে কুপিয়ে দিলেও হবে। সার প্রয়োগ শেষ হলে সেচ দিতে হবে। গাছ যত বড় হবে খাবারের চাহিদাও তত বাড়বে। তাই বয়সভেদে জৈব ও অজৈব সার দেয়া প্রয়োজন।
বয়সভেদে সার প্রয়োগের সময়সীমা
- প্রথমবার: মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য চৈত্র মাসের মধ্যে (মার্চ মাসে)
- দ্বিতীয়বার:বর্ষার আগে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য জৈষ্ঠ্য মাসে (মে মাসে)
- তৃতীয়বার:বর্ষার পরে মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর মাসে)
বয়সভেদে সার প্রয়োগের পরিমান
মাল্টা চাষে আগাছা ব্যবস্থাপনা
মাল্টা বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। কারন আগাছা গাছের খাবার খেয়ে নেয়। ক্ষতিকর বিভিন্ন পোকার আক্রমন ও আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে। মাল্টা গাছে মালচিংয়ের ব্যবস্থা করত হবে এজন্য লতাপাতা, খড়কুটা ব্যবহার করতে পারেন। ফলে আগাছা জন্মাবে না এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
মাল্টা চাষে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা
গাছের খাদ্য তৈরিতে পানির ভুমিকা অপরিসীম। শীত মৌসুম ও খরা মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেয় সেই সময়ে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিক তেমনি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এই সময় যথাযথ প্রকৃয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাল্টা চাষে ফল পাতলাকরন প্রকৃয়া
কলম করা মাল্টা গাছে প্রথম বছরে প্রচুর ফল আসতে পারে। সমস্ত ফল যদি রেখে দেন তাহলে ফল হয় ছোট ও নিম্নমানের।একারনে প্রতি পুষ্প মঞ্জরীতে সুস্থ্য ও সবল দেখে দুটি ফল রেখে বাঁকীগুলো ছোট মার্বেল আকৃতি থাকা অবস্থায় ছাঁটাই করে দিতে হবে। গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য প্রথম বছর গাছে ফল না রাখায় ভালো।
মাল্টার ব্যাগিং ব্যবস্থাপনা
ফল ভালো রাখতে ব্যাগিং ব্যবস্থাপনা একটি উন্নত পদ্ধতি। এই ব্যাগের প্রতিটির মুল্য আড়াই থেকে তিন টাকা। এই ব্যাগগুলো চীন থেকে আনা হয় তবে আমাদের দেশেও এই ব্যাগ বর্তমানে উৎপাদন করা হচ্ছে। ফল ব্যাগং করলে ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফল পরিপক্ক হওয়ার আগে ছত্রাকনাশক যেমন:টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলিলিটার/১লিটারে প্রয়োগ করার পর ব্যাগিং করতে হবে। ব্যাগিং আরোও কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন: তীব্র সূর্যকিরণ থেকে রক্ষা করে। পাতার পাতার সাথে ফলের যে ঘর্ষন হয় তা থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ধরনের পাখি ও বাদুড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা করে। এতে ফলের উপর কোন স্পট পরেনা।
যার কারনে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। এই ব্যাগ দুই/তিন বছর ব্যবহার করা যায়। তবে দেশীয় পদ্ধতিতে পলিথিন, কাপড় কিংবা বাটার পেপার দিয়ে ব্যাগিং করা যেতে পারে।
বালাই ব্যবস্থাপনা
মাল্টা গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। মাল্টা গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সাইলিড পোকা। এছাড়াও রয়েছে পাতা সুরঙ্গ কারি পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা, খোসা পোকা ও উঁইপোকা ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের যে রোগ গুলো আছে তা হলো আগামরা রোগ, গ্রিনিং রোগ, ক্যাংকার রোগ ও আঠাঝড়া রোগ ইত্যাদি।
সাইলিড পোকা: এই পোকা গাছের পাতা, পাতার বোটা, কচি ডগা ও ফলের রস চুষে খেয়ে ফেলে। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। তারা যখন রস চুষে খায় তখন এ রসের মধ্যে গ্রিনিং রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। যার ফলে মিষ্টি আঠালো পদার্থ বের হয়। এই পোকা দমনের জন্য পোকাসহ আক্রান্ত পাতা বা ডাল অপসারণ করে দিতে হবে।
মে মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন: অ্যাডমায়ার বা ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা: এই পোকা যখন ছোট থাকে তখন মাল্টা পাতায় আক্রমণ করে। এরা রাতের বেলায় গাছের কচি পাতায় গর্ত খুঁড়ে আঁকাবাঁকা দাগ তৈরি করে। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলাই ভালো। তামাক নির্যাস ও সাবান গোলা পানি স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
আক্রমণ বেশি হলে ইটাপ ৫০ এসপি, ১.২০ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হয়।
ফলের মাছি পোকা: এই প্রকার আক্রমণে ফল নষ্ট হয়ে যায়। তাই সেক্স হরমোন ফাঁদ ব্যবহার করে এই পোকা দমন করা যেতে পারে।
মাকড়: এই ধরনের প্রকার আক্রমণে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। এক্ষেত্রে ভার্টিম্যাক অথবা ইকোম্যাক ১ মি.লি. হারে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মাল্টা গাছের রোগ
আগামরা রোগ: মালটা গাছের এই আগামোড়া রোগ হলে গাছের কোন এক ডাল আগা থেকে ক্রমে নিচের দিকে মরে যেতে থাকে। রোগটি প্রধানত হয়ে থাকে ছত্রাকের আক্রমণের কারণে। এই রোগ থেকে আক্রান্ত গাছ বাঁচাতে হলে আক্রান্ত ডালটি কেটে ফেলা উচিত এবং কাটা অংশে বোর্দো মিশ্রণ বা নোইন ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/লিটার অথবা কুপ্রাভিট ৭ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
গ্রিনিং রোগ: এই রোগে মালটা গাছ আক্রান্ত হলে পাতার মধ্যশিরা হলদে হয়ে যায় এবং শেষ পর্যায়ে গিয়ে হলুদ রং ধারণ করে। শিরা-উপশিরা গুলো ধীরে ধীরে গাড়ো সবুজ হতে থাকে শিরা দুর্বল ও পাতা কুকড়ে যায়। এটি সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগ। সাইলিড পোকা এর বাহক। এই রোগে কোন গাছ আক্রান্ত হলে তা পাশের গাছকেও আক্রান্ত করে ফেলে। তাই গাছটি তুলে ফেলায় ভালো।
ফল সংগ্রহ
মাল্টা যখন পরিপক্ক হয়ে যাবে তখন ফলটি পেড়ে সংগ্রহ করতে হয়। মাল্টা পাড়ার সময় যখন খেয়াল রাখতে হবে যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। ফলটি পাড়ার আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করতে হবে। তারপর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় দিয়ে মুছে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে হবে।
মাল্টা মিষ্টি করার উপায়
প্রতিটি গাছে ৪০/৫০ গ্রাম এম. ও. পি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে।তারপর বোরন ২ গ্রাম বা ১/২ চা চামচ ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৪ গ্রাম বা ১ চা চামচ ২ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। এতে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় ও ফল মিষ্টি হয়।
টবে মাল্টা চাষ পদ্ধতি
- টব - ১৮ ইঞ্চি
- গোবর বা কম্পোস্ট সার - ১০ কেজি
- ইউরিয়া সার - ১৫০ গ্রাম
- টি. এস. পি - ১০০ গ্রাম
- এম. ও. পি সার - ১০০ গ্রাম
- জিংক সালফেট - ১০ গ্রাম
- বোরিক এসিড - ৫ গ্রাম
উপরোক্ত সারগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন ফেলে রাখতে হবে। এরপর মাল্টা গাছের চারা রোপন করতে হবে। টবে মাল্টা গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রতি মাসে অন্তত ১ বার ১ চা চামচ পরিমান নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম বা মিশ্র সার ও ৫০০ গ্রাম গোবর ২ লিটার পানিতে গুলিয়ে গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দুরে প্রয়োগ করতে হবে।
এই প্রকৃয়াটি নিয়মিত বাস্তবায়ন করলে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকবে।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন কিভাবে মাল্টা চাষ করলে কোটি টাক আয় করতে পারবেন তার Tips & Tricks সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন ১ বিঘা জমি কাজে লাগিয়ে সময়ের ব্যবধানে কিভাবে কোটিপতি হবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url