বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি যদি বিস্তারীত পড়েন তাহলে জানতে পারবেন বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ সম্পর্কে। উত্তরাধিকার আইন মুলত মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তানোর যাবতীয় বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশের সম্পত্তি বন্টনের যে আইন রয়েছে তার মুল উৎস কোরআন ও হাদীস। নীচে আলোচনা করা হলো সম্পদের বন্টন নিয়ে।
বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কত অংশ মেয়েরা তার মায়ের অংশ থেকে পেয়ে থাকে, স্বামী যদি মারা যায় তাহলে সম্পত্তি কারা পাবে, ভাই মারা গেলে তার সম্পদ কারা পাবে, ছেলে না থাকলে সম্পদ কারা পাবে, আরোও আলোচনা করা হয়েছে বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ নিয়ে।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ

মুসলমানদের উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিধানগুলো কুরআন মজীদ ও হাদীসের আলোকে তৈরী করা হয়েছে। এই উত্তরাধিকার আইনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত হলেও মৃত ব্যক্তির মৃত ছেলের সন্তান-সন্তানাদির উত্তরাধিকার বিষয়ে আলোচনা করে, এমন একটি বিধান নিয়ে মুসলমান সমাজে প্রশ্ন ছিলো। কিন্তু এই বিষয়ে সংস্কার সাধনের চেষ্টা বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। 

শেষ পর্যন্ত ষাটের দশকে গোড়ার দিকে এ সংক্রান্ত বিধানটির সংস্কার সাধন করা হয়েছে।

উত্তরাধিকার আইনের উৎস ৭ টি
  • কুরআন (সুরা আন নিসা)
  • হাদীস (রাসুল (সাঃ) দৈনন্দিন জীবন যাপন এ উনার উক্তি, অভিমত, শিক্ষা, উপদেশ, অনুশাসন ও বানীর সংকলন বিষয়ক মন্তব্য)।
  • ইজমা (কুরআন ও হাদীসের আলোকে বরেন্য আলেমগনের ঐক্যমত)।
  • কিয়াস (ফলপ্রসু যুক্তির দ্বারা সমাধান)।
  • আরবীয় প্রথা (যা কুরআন ও হাদীস কর্তৃক নাকচ করা হয় নি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্রতন করা হয়েছে তা মুসলিম আইনের বিধি হিসেবে বর্তমান রয়েছে।
  • বিধিবদ্ধ আইন (শরীয়া আইন ১৯৩৭, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৭, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১, মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪)।
  • আদালতের সিদ্ধান্ত (দেশের উচ্চ আদালত কর্তৃক কোন জটিল বিষয়ের সিদ্ধান্ত ও মুসলিম আইনের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে)।

অংশীদারগন

কখনো উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন না

অবশিষ্টাংশগন

স্বামী

পিতা

পুত্র,কন্যা

স্ত্রী

স্বামী

পিতার পিতা

পিতা

মাতা

দাদা

মাতা

কন্যা

আপন ভাইয়ের পুত্র এবং এর নীচে

দাদা

পুত্র

আপন চাচার পুত্র এবং এর নীচে

দাদী বা নানী

স্ত্রী

পুত্রের পুত্র

কন্যা 


আপন ভাই

পুত্রের কন্যা

বৈমাত্রেয় ভাই

আপন বোন

আপন ভাইয়ের পুত্র

বৈমাত্রেয় বোন

পিতা

বৈপিত্রেয় ভাই

আপন বোন

বৈপিত্রেয় বোন

বৈমাত্রেয় বোন


আপন চাচা

বৈমাত্রেয় ভাইয়ের পুত্র এবং এর নীচে

কারা কত অংশ পাবে

মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক

ভাগের অংশের পরিমান

শর্তাবলী



স্বামী

১/২

যখন কোন সন্তান থাকবে না বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না।

১/৪

যখন কোন সন্তান থাকবে বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে।

                 

 স্ত্রী 

(যদি স্ত্রী একের অধিক হয় তাহলে সকলে সমান ভাগ পাবে) প্রাপ্ত সম্পদ ভাগ হয়ে যাবে।

১/৪

যখন কোন সন্তান থাকবে না বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না।

১/৮

যখন কোন সন্তান থাকবে বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে।

১/৬

যখন কোন সন্তান থাকবে বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে।






পিতা

১/৬ এবং রেসিডুয়ার বা আসাবা

যখন কোন ছেলে থাকবে না বা ছেলের কোন ছেলে থাকবে না, কিন্তু এক বা একাধিক মেয়ে থাকবে বা এক বা একাধিক ছেলের মেয়ে থাকবে।

রেসিডুয়ারী বা অসাবা

যখন কোন সন্তান থাকবে না বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না।

১/৬

যখন কোন সন্তান থাকবে বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে কিন্তু পিতা থাকবে না এবং নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না।






দাদা



১/৬ এবং রেসিডুয়ার বা আসাবা

যখন কোন ছেলে থাকবে না কিংবা ছেলের কোন ছেলে থাকবে না, কিন্তু এক বা একাধিক মেয়ে থাকবে বা এক বা একাধিক ছেলের মেয়ে থাকবে এবং পিতা ও নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না।


রেসিডুয়ারী বা অসাবা

যখন কোন সন্তন থাকবে না বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না এবং পিতা ও নিকটস্থ কোন দাদা থাকবে না।

১/৬

যখন কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকবে বা দুই বা ততোধিক ভাই বোন থাকবে।





মা


১/৩

যখন কোন সন্তান থাকবে না বা ছেলের কোন সন্তান থাকবে না বা ভাই বোনের সংখ্যা একের অধিক নয়।

স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাঁকী সম্পদের ১/৩

যখন পিতা এবং স্বামী বা স্ত্রী জীবিত তখন স্বামী বা স্ত্রীকে দেওয়ার পর বাঁকী সম্পত্তির ১/৩ মা থাকবে না।






দাদী


১/৬

যখন পিতা সম্পত্তি পাবে তখন দাদী সম্পত্তি পাবে না, তা চলে যাবে নানির কাছে।

একজন হলে ১/২ এবং একধিক হলে ২/৩ (প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে)।


পুত্র থাকলে কন্যা পুত্রের সাথে রেসিডুয়ারী হিসেবে আনুপাতিক হারে পাবে।



কন্যা

পুত্র : কন্যা = ২:১ অনুপাতে পাবে। (এই অনুপাতের সাথে পুত্র কন্যার সংখ্যা হিসাব করে অংশ বের করতে হবে।

পুত্র থাকবে।




পুত্রের কন্যা 

একজন হলে ১/২, একাধিক হলে ২/৩ (প্রত্যেক সমান ভাগ পাবে)

পুত্র, কন্যা ও পুত্রের পুত্র থাকবে না। 


১/৬

যদি ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ যদি কেবল একমাত্র কন্যা থাকে, তবে পুত্রের কন্যা পাবে।


আপন বোন

১ জন হলে ১/২ অংশ এবং একের অধিক হলে ২/৩ (প্রত্যেক সমান ভাগ পাবে)

পুত্র , কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা কেউই থাকবে না।





বৈমাত্রেয় বোন

১ জন হলে ১/২ অংশ এবং একের অধিক হলে ২/৩ (প্রত্যেক সমান ভাগ পাবে)

পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, আপন বোন, বৈমাত্রেয় ভাই, পিতা কেউ থাকবে না।


১/৬

যদি ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ যদি কেবল একমাত্র আপন বোন থাকে, তবে বৈমাত্রেয় বোন পাবে।


বৈপিত্রেয় ভাই

একজন হলে ১/৬, একাধিক হলে ১/৩ (প্রত্যেক সমান ভাগ পাবে)

পিতা থেকে উপরে পূর্ব পুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না।


বৈমাত্রেয় বোন

১ জন হলে ১/৬, একাধিক হলে ১/৩ (প্রত্যেক সমান ভাগ পাবে)

পিতা থেকে উপরে পূর্ব পুরুষ কেউই থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরি কেউই থাকবে না।


উত্তরাধিকারী হয়েও সম্পত্তি পাবে না
  • তিনি সম্পদ যার কাছ থেকে পাবেন তাকে খুন করেন।
  • ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন।
  • বিশেষ বিবাহ আইনে বিবাহ করেন।
ইসলামে উত্তরাধিকারীগনকে কখনও বঞ্চিত করা হয় না। ইসলাম ধর্মে ত্যাজ্য করার কোন নিয়ম নেই, তাই এর আইনগত কোন ভিত্তি নেই। ত্যাজ্য করলেও সম্পদ পাবে। অন্যদিকে ইসলামে পালক সন্তান বলে কিছু নেই। তাই পালক সন্তান উত্তরাধিকারীগনের মধ্যে পড়ে না। তবে তাকে দান করা যেতে পারে।

মেয়েরা মায়ের সম্পত্তির কত অংশ পায়

আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা ধারনা আছে যে, মায়ের সম্পত্তিতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি ভাগ পাবে। অর্থাৎ মা যদি মারা যায় তাহলে তার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সুত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি অংশের মালিক হয়। কিন্তু মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যাক্তি পুরুষ অথবা নারী যিনি হোন না কেন তার সম্পত্তিতে একইভাবে সম্পত্তির মালিক হবেন। 

মৃত নারীর যদি সন্তান থাকে তাহলে স্বামী পাবে ৪ ভাগের ১ ভাগ আর মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকে তাহলে স্বামী পাবে ২ ভাগের ১ ভাগ। সম্পত্তি স্বামীকে দেওয়ার পর বাঁকী সম্পত্তি ছেলে ও মেয়ের মাঝে ২:১ হারে বন্টন হবে। অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা অর্ধেক পাবে। যদি কোন মেয়ে না থাকে তাহলে বাঁকী পুরো অংশটুকু ছেলে পাবে।

১ জন মেয়ে ৩ ভাবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পায়
  • মৃত ব্যক্তির যদি ১ জন মেয়ে হয় তাহলে তাহলে ২ ভাগের ১ ভাগ পাবে অর্থাৎ অবশিষ্ট সম্পত্তির অর্ধেক মেয়ে পাবে।
  • মৃত ব্যক্তির যদি একাধিক মেয়ে হয় তাহলে সকলে ৩ ভাগের ২ ভাগ পাবে।
  • মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে ছেলে যে পরিমান পাবে মেয়ে তার অর্ধেক পরিমান পাবে।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ যদি মারা যায় তাহলে তার সম্মত্তির উপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র ও বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকার রয়েছে। এরা যদি না থাকে তাহলে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র, পিতা, মাতা, ভ্রাতুষ্পুত্ররা সম্পত্তির অংশীদারি হবেন। কিন্তু হিন্দু নারী মারা গেলে তার সম্পদ বন্টনের ২ টি নিয়ম রয়েছে।
  • কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সুত্রে কোন সম্পত্তি পেয়ে থাকেন তাহলে তিনি মারা গেলে সে সম্পত্তির উত্তরাধিকার সুত্রে যার কাছ থেকে পেয়েছিলেন তার কাছে বা তার নিকট আত্মীয়দের কাছে ফিরে যাবে।
  • উত্তরাধিকার ছাড়া অন্য কোনভাবে সম্পদ পেয়ে থাকলে সেই সম্পত্তির মালিকানার ধরন অনুযায়ী ভাগ বাটোয়ারা হবে।
১৯৩৭ সালে যে হিন্দু সম্পত্তি বন্টন আইন করা করা হয় তাতে বলা হয়েছে মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকার নয়। তবে বিধবা হওয়ার কারণে এবং সন্তান নাবালক থাকার কারণে শুধু বসত বাড়ীর অধিকারি হয়। দীর্ঘ ৮৭ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও হিন্দু আইনে কোন পরিবর্তন হয়নি। 

তবে বাংলাদেশে ২০২০ সালের ১লা আগষ্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষনা করে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পদে উত্তরাধিকারি হবেন। তবে প্রাপ্ত সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তর করা যাবে না শুধু ভোগ করা যাবে।

স্বামী মারা গেলে সম্পত্তি কে পাবে

আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তির সম্পদ কুরআন, হাদীস ও ইজমার উপর ভিত্তি করে উত্তরাধিকারদের মধ্যে বন্টন করা হয়ে থাকে। এই বন্টনকে ফারায়েজ বলা হয়। পবিত্র কুরআন মজিদের সুর আননিসাতে আল্লাহ সুবহানাহুয়াতায়ালা সম্পদ বন্টন কিভাবে করতে হবে তা বলে দিয়েছেন। তারপরেও সম্পত্তি বন্টন নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। তাই এই বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হলো।

স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অংশ

ইসলামি আইন অনুযায়ী একজন মারা যাওয়ার আগে কখনই তার সম্পদের উত্তরাধিকার তৈরি হয় না। অর্থাৎ জীবিত অবস্থায় সব সম্পত্তির মালিক তিনি নিজে। তিনি তার জীবদ্দশায় সম্পদ বিক্রি বা হেবা বা দান করতে পারেন।

২ ভাবে মৃত স্বামীর সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবে
  • স্বামী মারা যাওয়ার পর তার যদি সন্তান থাকে তাহলে মৃত স্বামীর সম্পদের ৮ ভাগের ১ ভাগ পাবেন স্ত্রী। যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী ও সন্তান থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তির সব স্ত্রীদের মধ্যে সম্পদের ৮ ভাগের ১ ভাগ সমানভাবে বন্টিত হবে।
  • আবার যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে কিন্তু সন্তান না থাকে তাহলে সম্পদ স্ত্রীগনের মধ্যে ৪ ভাগের ১ ভাগ সমান ভাগে বন্টিত হবে।

ভাই মারা গেলে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে

  • ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এই অবস্থায় যদি মারা যায় তাহলে তার ভাই বোনেরা ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
  • ভাই বিয়ে না করেই যদি অবিবাহিত অবস্থায় মারা যায় তাহলে তার ভাই বোনেরা ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
  • ভাই বিয়ে করেছে কিন্তু কোন সন্তান হয়নি এই অবস্থায় তিনি ও তার স্ত্রী মারা গেছেন, তাহলে তার ভাই বোনেরা ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
  • ভাই অবিবাহিত বা বিয়ে করেছে কিন্তু সন্তান হয়নি এই অবস্থায় তিনি ও তার স্ত্রী মৃত্যুবরন করেছেন বা করেননি ও তার কোন ভাই জিবীত নেই শুধু বোন রয়েছে সেইক্ষেত্রে মৃতব্যক্তির বোন বা বোনেরা ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবে।
  • মৃত ভাইয়ের কন্যা সন্তান আছে কিন্তু পুত্র সন্তান নেই, তাহলে মৃত ভাইয়ের উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ পাবেন।
উপরের আলোচনা থেকে জানা গেলো আপনার ভাই যদি বিয়ে করে কিন্তু সন্তান না থাকে, ভাই মারা যায় তাহলে আপনি উত্তরাধিকার হিসেবে মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি পাবেন। সন্তান না থাকার কারনে আপনার ভাইয়ের স্ত্রী সম্পত্তি থেকে ৪ ভাগের ১ ভাগ পাবে। বাঁকী ৪ ভাগের ৩ ভাগ অন্য ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হবে।
  • মৃত ভাইয়ের বাবা মা যদি জীবিত থাকে এবং মৃত ভাইয়ের কোন ছেলে বা নাতি বা নাতির ছেলে এইভাবে নীচের দিকে কেউ না থাকে তাহলে পাবে ৬ ভাগের ১ ভাগ নাতি নাতনি থাকলে দাদা পাবে ৬ ভাগের ১ ভাগ।
  • মৃত ভাইয়ের বাবা মা যদি জীবিত থাকে এবং মৃত ভাইয়ের কোন মেয়ে থাকে বা নাতনি থাকে বা নাতির মেয়ে থাকে তাহলে ৬ ভাগের ১ ভাগ পাবে আবার নাতনি বা নাতির মেয়েদেরকে দেওয়ার পর আসাবা বা রেসিডুয়ারি হিসেবেও বাবা সম্পদ পাবে। মৃত সন্তানের কোন সন্তান না থাকলে ২ বা ততোধিক ভাইবোন থাকলে মা ৩ ভাগের ১ ভাগ পাবেন।
  • মৃত সন্তানের কোন সন্তান না থাকলে অর্থাৎ নাতি নাতনি না থাকলে অথবা নীচের দিকে কেউ না থাকলে বাঁকী অংশীদারদের দেওয়ার পর অবশিষ্ট পুরোটাই বাবা পাবেন।
  • মায়ের ক্ষেত্রে মৃত সন্তানের বাবা থাকলে অর্থাৎ নিজের স্বামী থাকলে ও মৃত সন্তানের (ছেলে বা মেয়ে)স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকলে স্বামী বা স্ত্রীকে তাদের অংশ দেওয়ার পর ৩ ভাগের ১ ভাগ পাবেন।

ছেলে না থাকলে সম্পত্তি কে পাবে

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে সুন্নি আইন প্রয়োগ করা হয়। তাই আমাদের দেশে সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইনের প্রচলন রয়েছে। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে সন্তান না থাকে শুধু মেয়ে থাকে তাহলে সেই মেয়ে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। 

যদি ১ বা একাধিক মেয়ে থাকে ছেলে না থাকে তাহলে মেয়েরা মোট সম্পত্তির ৩ ভাগের ২ ভাগ পাবে। এই ২ ভাগ সম্পদ সব মেয়ের মধ্যে সমান অংশে বন্টন করা হবে। বাঁকি সম্পদ অন্যদের মধ্যে বন্টন হবে। ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি স্ত্রী বেঁচে না থাকে তাহলে মোট সম্পদের অর্ধেক মেয়েরাই পাবে। যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন তাহলে তার স্ত্রী মোট সম্পদের ৮ ভাগের ১ ভাগ পাবেন ও মেয়েরা সম্পদের অর্ধেক পাবে এবং বাঁকি সম্পদ অন্যরা পাবে। 

মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক মেয়ে থাকলে ও তার ভাই-বোন জীবিত না থাকলে ভাই বোনের ছেলেরা ক্রমানুসারে সম্পদের ভাগ পাবেন। যদি আপন ভাই না থাকে সৎভাই, সৎবোন থাকে কিংবা তারা বেঁচে থাকে সৎ ভাইয়ের পুত্র থাকে তাহলে তারা অবশিষ্টাংশ সম্পদের ভাগ পাবেন। তবে কেউ যদি বেঁচে না থাকে তবে পুরো সম্পদের ভাগ মেয়েরা পাবেন। 

যদি কোন ব্যাক্তি মনে করেন তার জীবদ্দশায় তার সম্পদের ভাগ মেয়েদের দিতে চান তাহলে মেয়েদের অনুকুলে উইন করে দিতে পারেন। তবে মেয়েদের পুরো সম্পদের ৩ ভাগের ১ ভাগের বেশি উইল করতে পারবেন না। যদি এর বেশি উইল করতে চান তাহলে উত্তরাধিকারদের সম্মতি লাগবে। উইলকারীর মৃত্যুর পর উইল কার্যকর হবে।

মায়ের সম্পত্তি বন্টন আইন বাংলাদেশ

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী আপনার মায়ের মৃত্যুর পর আপনার নানা নানি যদি বেঁচে থাকেন তাহলে মেয়ের সম্পত্তি থেকে প্রত্যেকে ৩ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ পাবেন। আপনার বাবা বেঁচে থাকলে ঐ সম্পত্তির ৪ ভাগের ১ ভাগ পাবেন। তাহলে নানা-নানি ও বাবা মিলে (১/৩ + ১/৪)= ১২ ভাগের ৭ ভাগ পাবে। 

অবশিষ্টাংশের উত্তরাধিকার হিসেবে আপনি বাঁকি অংশটুকু পাবেন।যার পরিমান ১২ ভাগের ৫ ভাগ।অর্থাৎ ১ হাজারের ৪১৬.৬৬৬ অংশ। আপনার বাবা যদি বেঁচে না থাকেন তাহলে নানা নানি সম্পত্তি পাওয়ার পর বাঁকি অংশটুকু আপনি পাবেন। অর্থাৎ নানা নানির ৩ ভাগের ১ ভাগ দেওয়ার পর অবশিষ্ট ৩ ভাগের ২ ভাগ সম্পদ আপনি পাবেন। 

যেহেতু এখানে আপনি আপনার মায়ের সন্তান ও উত্তরাধিকার হিসেবে রয়েছেন সেহেতু আপনার মামারা এই সম্পত্তির কোন ভাগ পাবেন না। ভিটেবাড়ির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন কিভাবে বাবার সম্পদ বন্টন কিভাবে করতে পারবেন তার Tips & Tricks সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন কারা সম্পদের অংশিদার কারা কত অংশ পাবে।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।

যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩