কিভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে কোটি টাকা ইনকাম করবেন

কিভাবে মাল্টা চাষ করে কোটি টকা ইনকাম করবেনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে বর্ননা করা হয়েছে কিভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে কোটি টকা ইনকাম করবেন সে সম্পর্কে। নীচে একটি ক্যলকুলেশান দেওয়া হয়েছে, এই ক্যালকুলেশানটি গুরুত্বের সাথে ফলো করলে আপনারা উপকৃত হবেন। যদিও এখানে ১ বিঘা জমির উপর লাভ নির্ধারন করা হয়েছে, যদি এটা ১০ বিঘা হয় তাহলে লাভের অংক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
কিভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে কোটি টাকা ইনকাম করবেন

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন ড্রাগন চাষের একটি বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেশান, টবে কিভাবে মাল্টা চাষ করতে হয়, ড্রাগন গাছের রোগ ও প্রতিকার, মাল্টা গাছের চাষ পদ্ধতি, এই ফলের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু, এই ফলের চারা কোথায় থেকে কিনবেন, সার ব্যবস্থাপনা,রোপন পদ্ধতি, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি।

ড্রাগন ফল চাষে কোটি টাকা ইনকামের ক্যালকুলেশান

প্রথম বছর

ক্রম

ড্রাগন গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন

টাকার পরিমান

জমি তৈরির খরচ ৪০০টাকা X ৫ কর্মদিবস 

          ২,০০০ টাকা

সিমেন্টের পিলার বসানোর জন্য গর্ত খোঁড়া বাবদ খরচ ৪০০ টাকা X ১০ কর্মদিবস

            ৪,০০০ টাকা

পিলার বসানোর খরচ ৪০০টাকা X ১০ কর্মদিবস

          ৪,০০০ টাকা

চারা লাগানোর গর্ত খোঁড়া ও সার দেওয়ার খরচ ৪০০ টাকা X ১০ কর্ম দিবস

          ৪,০০০ টাকা

গাছ পরিচর্যা সেচ ও শস্য সুরক্ষার খরচ ৪০০ টাকা X ৫০ কর্মদিবস

        ২০,০০০ টাকা

চারা লাগানোর খরচ ৪০০ টাকা X ৮ কর্মদিবস

          ৩,২০০ টাকা


মোট ৯৩ টি কর্মদিবস

        ৩৭,২০০ টাকা

চারা কেনার খরচ ‍১ বিঘায় ১৮০ টি গাছ রোপন করা যায় অর্থাৎ ১৮০ X ৩০০ টাকা (১০ শতাংশ মারা যাবে)

          ৫৪,০০০টাকা

কেঁচোসার ৪০০ কেজি X ১২ টাকা দরে

            ৪,৮০০ টাকা

নিমের খৈল ২০ কেজি X ৭০ টাকা দরে

            ১৪০০ টাকা

১০

রাসায়নিক সার 

          ১,০০০ টাকা

১১

লোহার ফ্রেমসহ সিমেন্টের পিলার ১৮০ টি X ৬০০ টাকা দরে

      ১,০৮,০০০ টাকা

১২

মোটর সাইকেলের পুরনো টায়ার ১৮০ টি X ১৫০ টাকা

        ২৭,০০০ টাকা

১৩

সিমেন্ট, বালি ইত্যাদি

          ৫,০০০ টাকা

১৪

গাছের সুরক্ষা ও অন্যান্য

      ৩০,০০০ টাকা


মোট খরচ

  ২,৬৮,৪০০ টাকা

দ্বিতীয় বছর

ক্রম

ড্রাগন গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন

টাকার পরিমান

মোটর সাইকেলের পুরনো টায়ার ১৮০ টি X ১৫০ টাকা

      ২৭,০০০ টাকা

কেঁচোসার ৪০০ কেজি X ১২ টাকা দরে

        ৪,৮০০ টাকা

২৫টি কার্যদিবস X ৪০০টাকা

        ১০,০০০টাকা

গাছের সুরক্ষা ও অন্যান্য

        ১০,০০০ টাকা


মোট খরচ

    ৫১,৮০০ টাকা


তৃতীয় বছর

ক্রম

ড্রাগন গাছের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরন

টাকার পরিমান

কেঁচোসার ৪০০ কেজি X ১২ টাকা দরে

        ৪,৮০০ টাকা

গাছের সুরক্ষা ও অন্যান্য

        ১০,০০০ টাকা

২৫টি কার্যদিবস X ৪০০টাকা

        ১০,০০০টাকা


মোট খরচ

    ২৪,৮০০ টাকা


১ বিঘা জমি =১৮০ টি পিলার বা গাছ অর্থাৎ ১ বিঘা জমিতে ১৮০ টি গাছ হয়

বছর

চাষের  খরচ

সাম্ভাব্য উৎপাদন X ১৮০ টি গাছ (কেজি)

ফলেরদাম

কেজিতে

উৎপাদন X দাম - চাষে খরচ

মুনাফা

১ম 

২,৬৮,৪০০

0

0

0

0

২য়

৫১,৮০০ 

২০X১৮০ =৩৬০০

১৫০ 

১৫০X৩৬০০-৫১৮০০-

২৬৮৪০০

২,১৯,৮০০/=

৩য়

২৪,৮০০

২৫ X ১৮০ =৪৫০০

১৫০

১৫০X৪৫০০- ২৪৮০০

৬,৭২,৫২০/=

৪র্থ

২৪,৮০০

৩০ X ১৮০ =৫৪০০

১৫০

১৫০X৫৪০০- ২৪৮০০

৭,৪৫,২০০/=

৫ম

২৪,৮০০

৩০ X ১৮০ =৫৪০০

১৫০

১৫০X৫৪০০- ২৪৮০০

৭,৪৫,২০০/=


(বিঃ দ্রঃ নিজের জমি থাকা সাপেক্ষে ক্যালকুলেশন করা হয়েছে। যদি জমি লিজ নিয়ে করতে হয় তাহলে লিজের টাকার পরিমান লাভের অংশ থেকে বাদ দিয়ে লাভ নির্ধারন করবেন)।
আমরা উপরোক্ত ক্যালকুলেশন থেকে বুঝতে পারলাম ড্রাগন চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি বিনিয়োগ। আমাদের দেশে বেকার ছেলেরা অযথা চাকুরীর পিছে না ঘুরে ড্রাগন চাষ করুন। যে সকল প্রবাসী ভাইয়েরা বিদেশে আছেন তারা পরিবার পরিজন ফেলে হাড়ভাঙ্গা খাটুনী খাটেন অথচ তার বিনিময়ে খুব কম অর্থই উর্পাজন করতে পারেন।

তাই বিদেশে না থেকে দেশে এসে নিজের জমি যদি থাকে তাহলে খুব ভালো আর যদি না থাকে তাহলে কম মুল্যে জমি লিজ নিয়ে দরকার হলে কয়েকজন মিলে ১০ থেকে ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ড্রাগন চাষ করে নিজেকে ও দেশটাকে স্বাবলম্বীর দিকে নিয়ে যান। তবে অবশ্যই আপনাদের বৈজ্ঞানিক উপায়ে ড্রাগন চাষ করতে হবে। 

এই আর্টিকেলে কিভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করবেন তার বিস্তারীত আলোচনা নীচে করা হয়েছে। অবশ্যই আর্টিকেলটি পড়বেন।

ড্রাগন ফলের জাত

  • লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া: এর খোসার রং লাল ও শাঁস সাদা। এই জাতের ড্রাগন ফল বাজারে বেশী দেখা যায়।
  • কোস্টারিকা ড্রাগন: খোসা ও শাঁস লাল বর্নের হয়ে থাকে।
  • হলুদ ড্রাগন ফল: এই জাতের ফলের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রংয়ের ও শাঁস সাদা রংয়ের হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাত

  • বারি ড্রাগন ফল - ১
  • বাউ ড্রাগন ফল - ১ (সাদা)
  • বাউ ড্রাগন ফল - ২ (লাল)
  • বাউ ড্রাগন ফল - ৩

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা এবং অপকারিতা

১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে পুষ্টির পরিমান
  • পানি - ৮০-৯০ গ্রাম
  • শর্করা - ৯-১০ গ্রাম
  • প্রোটিন - ০.১৫-০.৫ গ্রাম
  • আঁশ - ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি - ৩৫-৫০ গ্রাম
  • চর্বি - ০.১০-০.৬ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম - ৬-১০ গ্রাম
  • আয়রন - ০.৩-০.৭ গ্রাম
  • ফসফরাস - ১৬-৩৫ গ্রাম
  • ভিটামিন বি৩ - ০.২-০.৪ মি.গ্রাম
এছাড়া আরোও রয়েছে ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, থায়ামিন ও রিবোফ্লেবিন।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফলের ভেতরের অংশ সাদা এবং বেশ নরম যা চামচ দিয়ে খাওয়া যায় এর চারিদিকে বাদামের বীজ ছড়িয়ে থাকে। এই ফলটি সামান্য মিষ্টি স্বাদের ও রসালো বীজ থেকে বাদামের স্বাদ পাওয়া যায়। যেহেতু এই ফলটি মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ তাই এর উপকারীতা ব্যাপক।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: ড্রাগন ফল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।এতে পর্যাপ্ত পরিমানে ফাইবার থাকায় তা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।আপনি যদি নিয়মিত ড্রাগন ফল খান তাহলে ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: আপনি যদি নিয়মিত ড্রাগন ফল খান তাহলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এতে রয়েছে ক্যান্সারবিরোধী উপাদান। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ড্রাগন ফল কার্যকর ভুমিকা পালন করে। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। এছাড়াও এই ফল খেলে আলঝাইমার, পারকিনসন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

হজম শক্তি বাড়ায়: হজম শক্তি বাড়াতে ড্রাগন ফলের জুড়ি মেলা ভার। এই ফল শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই ফলে প্রচুর ফাইবার থাকায় তা পরিপাক তন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই হজমশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ড্রাগন ফলে রয়েছে বেটালাইন যা শরীরের খারাপ কোলেস্টরল দুর করে। ড্রাগন ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা হিমোগ্লোবিন তৈরীতে সহায়তা করে। এই হিমোগ্লোবিন ‍হৃদপিন্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে অষ্কিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।এছাড়া এর মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।

ত্বককে রাখে যৌবন দীপ্ত: ড্রাগন ফলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দুষন, স্ট্রেস ইত্যাদি কমিয়ে বার্ধক্য কমাতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি ত্বক উজ্জল রাখতে সহায়তা করে।

হাড় গঠনে সহায়তা করে: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়কে শক্তিশালী করে।বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা নিরাময়ে ও বার্ধক্যজনিত ব্যাথা প্রতিরোধে সহায়তা করে। যাদের হাড়ের রোগ আছে তারা যদি নিয়মিত ড্রাগন ফল খায় তাহলে হাড়ের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

আপনারা সকলেই জানেন প্রতিটি ফলের উপকারীতা যেমন আছে ঠিক তেমনি অল্প পরিমানে অপকারীতাও রয়েছে।ঠিক তেমনি ড্রাগন ফলেরও কিছু আপকারীতা রয়েছে। এই ফল যদি অতিরিক্ত পরিমানে খান তাহলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন:অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে অ্যালার্জি, ডায়রিয়া ও হাইপারটেনশন হতে পারে।

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত বাংলাদেশে আনা হয়। এটি একটি ক্যকটাস জাতীয় উদ্ভীদ। এই ফলের গাছে কোন পাতা হয়না। এই গাছ মূলত ১.৫ মিটার থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই বারি ড্রাগন ফল- ১ নামে একটি জাত উদ্ভাবন করেছে।

এ জাতটি দক্ষিন - পূর্ব এশিয়াতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ জাতের ড্রাগন ফল আকারে বড় হয়, পাকলে খোসার লাল বর্ন ধারন করে। শাঁস গাঢ় গোলাপী রংয়ের রসালো হয়। ফলের বীজ হয় ছোট ও ওজন ১৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম।

জমি নির্বাচন ও তৈরি

ড্রাাগন ফল চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হলো পানি নিষ্কাশিত হয় এমন উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি। জমিকে কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিতে হয়। মাদা তৈরি করার আগে ঘাস ও বিভন্ন ধরনের ছোট উদ্ভিদ জাতীয় আগাছা অপসারন করে নিতে হবে।

রোপন পদ্ধতি ও রোপনের সময়

সাধারনত সমতল ভুমিতে বর্গাকার ও ষড়ভুজাকার আকৃতিতে এবং পাহাড়ী জমিতে কন্টর পদ্ধতিতে কাটিং ড্রাগন ফল রোপন করা হয়।

মাদা তৈরি

প্রথমে উভয় দিকে ২.৫ - ৩ মিটার দুরত্বে ১.৫ মিটার X ১.৫ মিটার X ১ মিটার আকারের গর্ত করে খোলা অবস্থায় রাখতে হবে। গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর প্রত্যেকটি গর্তে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পচ গোবর সার, টি এস পি ২৫০ গ্রাম, এম ও পি ২৫০ গ্রাম, জিপসাম ১৫০ গ্রাম ও জিঙ্ক সালফেট ৫০ গ্রাম সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভারাট করে রেখে দিতে হবে। 
মাটিতে পানির পরিমান কম থাকে তাহলে পানি সেচ দিতে হবে। গর্ত ভারাট করার ১০-১৫ দিন পর প্রত্যেকটি গর্তে ৫০ সে.মি দুরত্বে ৪ টি ড্রাগন ফলের চারা রোপন করতে হবে। যেদিন চারা রোপন করবেন তার ১ মাস পর থেকে ১ বছর পর্যন্ত ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম েইউরিয়া সার দিতে হবে।

বংশবিস্তার

বীজের মাধ্যমে অথবা অঙ্গজ পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। তবে মাতৃ গুনাগুন বজায় রাখতে হলে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে গাছে ফল আসতে সময় লাগে এবং পুরোপুরি মাতৃ বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। তাই কাটিং বা অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করা সবচেয়ে ভালো। 
কাটিং বা অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করলে এর সফলতার হার একশ শতাংশ এবং ফলও তাড়াতাড়ি আসে। অঙ্গজ বা কাটিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত একটি গাছ থেকে ফল আসতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। সাধারনত কাটিং হিসেবে ৬ থেকে ৭ বছর বয়সী গাঢ় সবুজ শাখা হতে ২০ থেকে ৩০ সে.মি লম্বা কাটিং এই ফল চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়। 

কাটিং ৫০ ভাগ গোবর সার ও ভিটি বালুর মিশ্রন দ্বার পুর্ন করে ৮ X ১০ ইঞ্চি আকৃতির পলি ব্যাগের উপর স্থাপন করে ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হয়। ৩০ থেকে ৫০ দিন পর কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় ও কান্ডের প্রান্ত থেকে নতুন কুশি বের হয়। তখন এটি জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়।

চারা রোপন ও পরিচর্যা

গর্ত ভর্তির ১০ থেকে ১৫ দিন পর ৫০ সে.মি দুরত্বে টি চারা সোজাভাবে গর্তের মাঝখানে লাগিয়ে চারার চারিদিকে ভালোভাবে হাত দিয়ে চেপে বসিয়ে দিতে হবে।রোপনের পর পানি সেচ দিতে হবে। নিয়মিত পানি সেচ ও বেড়ার ব্যবস্থার করতে হবে। এই ফলের গাছ লতানো ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এইজন্য গাছ যাতে হেলে না পড়ে যায়। 
সে কারনে ৪ মিটার লম্বা সিমেন্টের খুঁটি পুঁতে তারসাথে আটকিয়ে দিতে হবে। চারা বড় হলে নারিকেলের রশি দিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। গাছ বড় হলে শিকড় বের হবে এবং খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে বড় হবে। 

প্রতিটি খঁটির সাথে মোটর সাইকেলে পুরাতন টায়ার শক্ত মোটা তারের সাথে আটকাতে হবে যাতে গাছের মাথা ও অন্যান্য ডগা টায়ারের ভিতর দিয়ে বাইরের দিকে ঝুলে থাকে। এই ধরনের ঝুলন্ত ডগায় ফল ধরার পরিমান বেশি হয়ে থাকে।

গাছে সার প্রয়োগ

গাছের বয়স

গোবর সার (কেজি)

ইউরিয়া সার (গ্রাম)

TSP (গ্রাম)

MOP (গ্রাম)

১-৩ বছর

৪০-৫০

৩০০

২৫০

২৫০

৩-৬ বছর

৫০-৬০

৩৫০

৩০০

৩০০

৬-৯ বছর

৬০-৭০

৪০০

৩৫০

৩৫০

১০ বছর ঊর্ধে

৭০-৮০

৫০০

৫০০

৫০০

আগাছা দমন

ড্রাগন ফলের গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমিকে আগাছামুক্ত রাখতো হয়। বর্ষার শুরুতে ও বর্ষর শেষে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বা চাষ দিয়ে আগাছা দমনের ব্যবস্থা করতে হয়।

পানি সেচ ও নিষ্কাশন

ড্রাগন ফলের গাছ খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটায় সহ্য করতে পারে না।চারার বৃদ্ধির জন্য খরা বা শুকনো মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। গাছে যখন ফুল ফোটা পর্যায়ে আসবে অর্থাৎ মটর দানার মত হবে তখন ১ বার এবং ১৫ দিন পর আর একবার পানি সেচ দিতে হবে। সার দেওয়ার পর সেচ দেওয়া ভালো। 

বর্ষার সময় খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে এই জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রুনিক ও ট্রেনিং

এই পদ্ধতি প্রয়োগি করলে ফল দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শাখা (ডগা) মোটা হয়ে বেড়ে উঠে। এক বছরে একটি গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে ও ৪ বছর বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছ ১৩০ টি শাখা তৈরি করতে পারে। তবে পর্যাপ্ত ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনার উপর শাখা প্রশাখা উৎপাদন নির্ভর করে। ট্রেনিং ও প্রুনিক করার পর ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

গবেষকরা দেখেছেন, বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের গাছ ১২ থেকে ১৮ মাস পর ফল ধারন করতে পারে। ফল সংগ্রহ করার পর ৪০-৫০ টি প্রধান শাখায় ১/২ টি করে সেকেন্ডারী শাখা উৎপাদনের জন্য অনুমোদন করা হয়। তবে ড্রাগন ফলের গাছের টারসিয়ারী ও কোয়াটরনারী প্রশাখা অনুমোদন করা হয় না। দিনের মধ্যভাগে প্রুনিক ও ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করা ভালো। 

বালাই ব্যবস্থাপনা

ড্রাগন গাছ ও ফলে পোকা মাকড়ের আক্রমন খুব কম হয়। তবে অনেক সময় কান্ড ও গোড়ায় পচা রোগ হয়ে থাকে। নীচে রোগগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলে।

কান্ড ও গোড়া পচা রোগ: সাধারনত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত গাছের কান্ড প্রথমে হলুদ হয় পরে কালো রং ধারন করে। পরে ঐ স্থানে পচন ধরে ও তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

প্রতিকার: আক্রান্ত স্থানটি কেটে ও পুড়িয়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। পরে ১ লিটার পানিতে কার্বেনডাজিম ১.৫ গ্রাম বা কপার অক্সি-ক্লোরাইড ৪ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

বাদামি রোগ: আক্রান্ত গাছের ডগা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে রোগ দমন করতে পারলে গাছ শুকিয়ে মারা যায়।

প্রতিকার: ড্রাগন ফল গাছে জাব পোকা ও দয়ে পোকা আক্রমন করে অনেকটা কান্ডপচা রোগের মতো। জাব পোকার বাচ্চা গাছের কচি শাখার রস চুষে খায়। ফলে আক্রান্ত শাখার ডগার রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায়। এই পোকা শাখার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ যা শুটি মোল্ড নামক ছত্রাক রোগ তৈরি করে। ১ লিটার পানিতে ইমিডাক্লোরোপিড ০.৫ মি.লি খুব ভালোভাবে মিশিয়ে গাছের উপর স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।

ফল সংগ্রহ ও ফলন

ফলের আকৃতি হয় গোলাকার থেকে ডিম্বাকার রং হয় উজ্জল গোলাপী থেকে লাল। ওজন হয় ২০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ও ৭ থেকে ১০ সে.মি চওড়া এবং ৮ থেকে ১৪ সে.মি লম্বা। ভেতরের পাল্প সাদা, লাল, হলুদ ও কালো রংয়ের হয়ে থাকে। পাল্পের মধ্যে কালো রংয়ের বীজ থাকে। ফলগুলো হালকা মিষ্টি যার মিষ্টতা টি. এস. এস/ব্রিক্স ১৬-২৪%।
দেখতে ড্রাগনের চোখের মত রং ও আকার হয়ে থাকে। ফলটির সামনের দিকে ও শেষের দিকে হালকা গর্তের মত এবং চামড়ার উপর আনারসের মত স্কেল থাকে। ১২ থক ১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫ থেকে ২০ টি ফল ধরে আর পুর্ন বয়স্ক একটি গছে ২৫ থেকে ১০০ টি ফল ধরে। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ২০ থেকে ২৫ টন।

ফল সংগ্রহের পর ব্যবস্থাপনা

ড্রাগন ফল নন ক্লাইমেটারিক হওয়ায় সংগ্রহের পর ইথিলিন উৎপাদন ও শ্বসনের হার কম হয়। যার কারনে ফল পরিপক্ক হওয়ার পরে সংগ্রহ করতে হয়। ফল ও স্পাইনলেটের রং লালচে বর্ন ধারন করলে ফল সংগ্রহ করত হয়। 

বাজারমুল্য পেতে হলে ফল লালচে বর্ন ধারন করা ৫-৭ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়। ফল গাছে পাকিয়ে সংগ্রহ করলে ফেটে যেতে পারে। এতে ফলের সংরক্ষনকাল ও স্বাদ কমে যায়, দ্রুত আর্দ্রতা হারায় এবং নষ্ট হয়ে যায়।

টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

ড্রাগন ফল একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। এই ফল সারা বছরই চাষ করা যায়।সব রিতুতে এই গাছের চারা রোপন করা যায়। তবে আপনি যদি ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করে ভালো ফলন পেতে চান তাহলে অবশ্যই এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপন করতে হবে। ছাদে বা টবে ড্রাগন ফল চাষ করত হলে ২০ ইঞ্চি আকৃতির ড্রাম বেছে নিতে হবে। 

কারন ড্রামে চারা ভালোভাবে শিকড় ছড়াতে পারে যাতে ফলন ভালো হয়। উৎকৃষ্ট মানের বেলে দোঁআশ মাটি সংগ্রহ করতে হবে। তারপর ৫০ গ্রাম পটাশ ও ৫০ গ্রাম টি এস টি সার দিয়ে মাটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে পানি দিতে হবে। 

সার মিশ্রিত মাটি ড্রামে ১০ থেকে ১২ দিন ফেলে রাখার পর খুন্তি দিয়ে খুচিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে তারপর আবার ৫ দিন ফেলে রেখে দিতে হবে।এরপর ভালো জাতের কাটিং ড্রামে রোপন করতে হবে।

টবে ড্রাগন ফল চাষের জন্য সেচ ও পরিচর্যা ব্যবস্থাপনা

আপনি যদি ড্রাগন ফল চাষে যত্ন না নেন তাহলে ভালো ফলন পাবেন না। ড্রাগন ফল গাছের খুব একটা রোগ বালাই হয়না। চারা লাগানোর পর ছাদের যেখানে রোদ আছে সেখানে ড্রামটি রাখতে হবে। এটি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ তাই বেশি পানির প্রয়োজন হয় না। টবে পানি দেওয়ার পর গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 
টবের বাড়তি পানি বের করে দেওয়ার জন্য টবের নীচে ছিদ্র করে দিতে হবে। টবে গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথেই খুঁটি বেঁধে দিতে হবে। ড্রাগন ফলের কাটিং রোপনের পর ১২ মাস থেকে ১৮ মাস পর ফল সংগ্রহ করতে পারবেন। গাছে ফুল ফোটার ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন কিভাবে মাল্টা চাষ করলে কোটি টাক আয় করতে পারবেন তার Tips & Tricks সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন ১ বিঘা জমি কাজে লাগিয়ে সময়ের ব্যবধানে কিভাবে কোটিপতি হবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।

যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩