কুরআন ও হাদিসের আলোকে কেয়ামতের আলামতসমূহ সম্পর্কে জেনে নিন
আল কুরআনে সুরাসমুহের সংক্ষিপ্ত বর্ননা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে আল কুরআন ও হাদিসের আলোকে কেয়ামতের আলামত সমুহের সংক্ষিপ্ত বর্ননা করা হয়েছে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তারা কেয়ামত সম্পর্কে কোন ধারন রাখেন না। আর্টিকেলটি পড়লে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। এতে আপনার মধ্যে কেয়ামত সম্পর্কে ভয় সৃষ্টি হবে।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কুরআন ও হাদিসে বর্নিত কেয়ামত সম্পর্কে। বর্তমানে মানুষের মধ্যে বেপরোয়ভাব চলে এসেছে কেয়ামত সম্পর্কে না জানার কারনে। আরো জানতে পারবেন কেয়ামতের ছোট ও বড় আলামত সমুহ সম্পর্কে এবং ঐ দিন আল্লাহ ছাড়া কোনো সুপারিশকারী থাকবে না।
কুরআনে বর্নিত কেয়ামত সম্পর্কে
তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন,অতঃপর তিনি এটাকে সৃষ্টি করবেন পুনর্বার এটা তার জন্য অতি সহজ। আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তারই এবং তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাবান (সূরা রুম-২৭, আম্বিয়া- ১০৪)
মানব সৃষ্টি অপেক্ষা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতো কঠিনতর কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না। (সূরা মুমিন-৫৭, আজাব-৩৩, ইয়াসিন-৮১ ,৮২)
প্রত্যেক দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি জমিনকে মৃত অবস্থায় দেখে। (সুরা হা মিম,আস সাজদাহ-৩৯)
কুরআনের বর্ণনা বাস্তব ঘটনা যা পুনরুত্থান সম্ভব হওয়ার সত্যতা বহন করে।(সূরা বাকারা-২৫৯)
প্রতিদান পাওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির পুনরুত্থান আবশ্যক। সুরা তাহা-১৫, নাহল-৩৮, ৩৯, ৪০, তাগা বুন-৭)
হাদিসে বর্নিত কেয়ামত সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন লোকদেরকে একত্রিত করা হবে খালি পা, নগ্ন দেহ এবং খাতনা বিহীন অবস্থায়। একথা শুনে আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষ এবং মহিলা একসাথেই উত্থিত হবে কি? তাহলে তো তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি নজর করে।
তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা তখনকার অবস্থা এত কঠিন ও ভীতিকর হবে যে, তারা একে অন্যের প্রতি নজর করবেনা। (মুসলিম-৬৯৩৪,তিরমিজি-৩৩৩২ বুখারী- ৬০৭০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের আলামত হলো ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে, জিনা বিস্তার লাভ করবে, মদ্যপান বিস্তার লাভ কররে, নারীদের আধিক্য ঘটবে, পুরুষদের সংখ্যা হ্রাস পাবে। এমনকি ৫০ জন মহিলার মাত্র একজন তত্ত্বাবধায়ক থাকবে। (তিরমিজি/ ২০০৮-আনাস ইবনে মালিক, বুখারী-৪৮৪২)
কেয়ামতের ছোট আলামত সমুহ
- চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া ।(সূরা কামার ১)
- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন ও মৃত্যুবরণ। (মুসলিম ৭১৪০)
- বাইতুল মাগদিস ফিলিস্তিন বিজয়। (বুখারী)
- ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী ১৩২৩)
- কেয়ামতের পূর্বে অনেক ফেতনার আবির্ভাব হবে। (বুখারী ৬৫৮৯ ,মুসলিম ২১৪)
- ভন্ড ও মিথ্যুক নবীদের আগমন হবে। (তিরমিজি ২২২১)
- হিজায থেকে বিরাট এক আগুন বের হবে। (বুখারী ৬৬২০)
- আমানতের খেয়ানত হবে। (বুখারী ৬০৩৯)
- দিনে দিলাম উঠে যাবে ও মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে। (বুখারী ৬৫৪১)
- অন্যায় ভাবে জুলুম নির্যাতনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। (মুসলিম ৬৩৪১)
- জেনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী ৯৮১)
- সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। (আল ইমরান ১৩০, মুসলিম ৩৯৪৮)
- গানবাজনা এবং গায়িকার সংখ্যা বেড়ে যাবে। (বুখারী ৫১৭৬)
- মদ পান হালাল মনে করবে। (বুখারী ৫১৭৬, ইবনে মাজাহ ৪০৩৪)
- মসজিদ নিয়ে লোকেরা গর্ব করবে। (আবু দাউদ ৪৪৯)
- দালান কোঠা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (বুখারী ৪৮)
- দাসী তার মনিবকে জন্ম দেবে। (বুখারী ৪৮)
- মারামারি ও হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী ৫৫৯৮)
- সময় দ্রুত চলে যাবে। (তিরমিজি)
- মুসলিমরা শিরকের লিপ্ত হবে। (বুখারী ১১৬১)
- ঘন ঘন হাট বাজার হবে। (মুসনাদ আহম্মদ)
- আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। (সূরা মুহাম্মদ ২২)
- লোকেরা কালো রং দিয়ে চুল দাড়ি রাঙাবে। (আবু দাউদ ৪১৫৫)
- কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী ১৩১৬)
- ব্যবসা বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে। (মুসনাদ আহমদ)
- ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে। (মুসনাদ আহমেদ)
- ভূমিধস ও চেহারা বিকৃতির শাস্তি দেখা দিবে। (মুসলিম ৭০২১)
- পরিচিত লোকদেরকে শুধুমাত্র সালাম দেয়া হবে। (মুসলিম ৬৭)
- বেপর্দা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। (মুসলিম ৫৩৯৭)
- মুমিনের স্বপ্ন সত্য হবে। (বুখারী ৬৫০৩)
- সুন্নাতি আমল সম্পর্কে গাফিলতি করবে। (বুখারী ৪৩১)
- মিথ্যা কথা বলার প্রচলন বৃদ্ধি পাবে। (বুখারী ৫৮২৬)
- মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার প্রচলন ঘটবে। (বুখারী ২৪৬৮)
- মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। (বুখারী ৪৮৪২)
- হঠাৎ মৃত্যু বরণ কারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। (সহীহুল জামে আসসাগীর হাদিস ৫৭৭৫)
- আরব উপদ্বীপ নদনদী এবং গাছপালা পূর্ণ হয়ে যাবে।(মুসলিম)
- প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে কিন্তু ফসল হবে না। (মুসনাত আহমেদ)
- ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় বের হবে। (মুসলিম ৭০০৮)
- ফেতনায় পতিত হয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবে। (বুখারী ৬৬৭১)
- কাহাতান গোত্র থেকে একজন সৎ লোক বের হবে। (বুখারী ৬৬১৯)
কেয়ামতের বড় আলামত সমুহ
- ইমাম মেহেদীর আগমন ঘটবে। (ইবনে মাজা ৪০৮২ - ৪০৮৮)
- দজ্জাল এর আগমন ঘটবে। (বুখারী ৬৬২৬, ৩০৯৪, মুসলিম ৭০৯৫)
- ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) এর আগমন ঘটবে। (সূরা নিসা ১৫৭ - ১৫৯,যুখরুখ ৬১, ইবনে মাজাহ ৪০৭৮)
- ইয়াজুজ মাজুজের আগমন ঘটবে। (সূরা কাহাফ ৯২- ৯৯, আম্বিয়া ৯৬- ৯৭ ,বুখারী ৬৬৩৭)
- তিনটি বড় ধরনের ভূমিধস হবে। (সূরা কাসাস ৪১, মুসলিম ৭০২১)
- বিশাল এক ধোঁয়ার আগমন ঘটবে। (সূরা দুখান ১০-১৫, মুসলিম ৭০২১)
- পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হবে। (মুসলিম ৬৬১৫)
- দাবাতুল আর্থ নামক এক অদ্ভুত জন্তুর আবির্ভাব ঘটবে। (সূরা নামল ৮২ )
কেয়ামতের সর্বশেষ আলামত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না তোমরা দশটি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধোঁয়া, দাজ্জাল, দাব্বাতুল আরদ, পশ্চিম দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া, মারিয়াম তনয় ঈসা (আঃ) এর অবতরণ, ইয়াজুজ মাজুজ এবং তিনবার ভূমিধ্বসে সে যাওয়া তথা পূর্ব প্রান্তের ভূমিধ্বস, পশ্চিম প্রান্তে ভূমিধ্বস ।
এবং আরব উপদ্বীপে ভূমিধসের কথা উল্লেখ করলেন। এ নিদর্শন সমূহের পর এক অগ্নি প্রকাশিত হবে যা তাদেরকে ইয়েমেন থেকে তাড়িয়ে নিয়ে আসরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাবে। (মুসলিম ৭০২১ হুযায়ফ ইবনে আসীদ আল গিফারী (রাঃ) থেকে বর্নিত।
কেয়ামতের দিন সুপারিশকারী
হে বিশ্বাসীগণ আমি তোমাদেরকে যে উপজিবীকা দান করেছি তা হতে সেদিন সমাগত হওয়ার পূর্বে ব্যয় করো। যেদিন ক্রয়-বিক্রয় বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই, আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী। (সূরা বাকারা ২৫৪)
আকাশে যত মালাইকা/ফেরেশতা রয়েছে তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম ২৬)
যাকে অনুমতি দেয়া হয় সে ছাড়া আল্লাহর নিকট কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না। অতঃপর যখন তাদের অন্তর হতে ভয় বিদুরিত হবে তখন তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ঃ তোমাদের রব কি বলবেন? তদুত্তরে তারা বলবে, যা সত্য তিনি তাই বলেছেন। তিনি সমুচ্চ, মহান। (সুরা সাবা ২৩)
এ বিষয়ে অন্যান্য সূরার আয়াতসমূহ দেখুন। (জুমার ৪৪, নাবা ৩৮, আম্বিয়া ২৮, তওবা ৮০)
কেয়ামতের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত লাভকারী ব্যক্তি হবে সে, যার হাদিসের প্রতি আগ্রহ বেশি এবং যে খাঁটি অন্তরে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” বলে। (বুখারী ৯৯ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
বর্তমান সমাজের আলেমরা বলেন যে, রাজা বাদশাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে, যেমন মন্ত্রী সুপারিশের প্রয়োজন হয় অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য আউলিয়াদের সুপাররিশের প্রয়োজন হবে না? এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রমাণ করে আল্লাহ গুনাগুন মানুষের গুনাগুনের মতই (নাউজুবিল্লাহ)।
তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং তারা তার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। (সূরা আম্বিয়া ২৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি শিরক বর্জন করে তাওহীদের ওপর জীবন কাটিয়েছে আমার সুপারিশ তার জন্য উপকারী হবে। (মুসলিম ৩৮৭)
বিভিন্ন আয়াত থেকে জানা যায় যে, নুহ (আঃ)নিজ পুত্রের, ইব্রাহিম (আঃ) নিজ পিতার,লুত (আঃ) স্বীয় স্ত্রীর, মোঃ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মুশরিক চাচা আবু তালিবের জন্য সুপারিশ করবেন না। দুনিয়ায় মুনাফিকদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দুআ গ্রহন করা হয়নি। মানুষ সাধারণত বিভিন্ন উপায়ে পরস্পরকে সাহায্য করে থাকে।
কোন প্রকারেই মানুষ মানুষের জন্য কেয়ামতের দিন কনোরূপ সুপারিশ বা সাহায্য করতে পারবে না। না আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে না বন্ধুর সাহায্যের মাধ্যমে আর না কোন সুপারিশকারীর সুপারিশের মাধ্যমে। বরং সকল সুযোগই ঐদিন বন্ধ থাকবে। আল্লাহ ব্যতীত সাহায্য প্রার্থনার স্থল আর কোথাও নেই।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন আল কুরআন ও হাদিসে বর্নিত কেয়ামত সম্পর্কে। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url