কেনো সুরা-মূলক রাতে না পড়ে ঘুমাবেন না বিস্তারীত জেনে নিন
ইমান ও ইসলাম বিনষ্টকারী কু-সংস্কারগুলো সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে বর্ননা করা হয়েছে কেন সুরা-মূলক রাতে না পড়ে ঘুমাবেন না সম্পর্কে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম সুরা মুলক না পড়ে কখনোই ঘুমাতেন না। কেউ যদি এই সুরা প্রতি রাতে পড়ে তাহলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে এবং তাকে কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে না।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন সুরা-মূলক সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখিত বর্ননাগুলো, এছাড়া আরোও জানতে পারবেন যে, এই আর্টিকেলে সুরা-মুলক এর বাংলা উচ্চারন দেয়া হয়েছে, যারা কোরআন মজিদ পড়তে জানেন না তাদের জন্য বেশ উপকারী হবে। তবে অবশ্যই কোরআন মজিদ শিখে আরবি উচ্চারনের সহায়ক হিসেবে বাংলা উচ্চারন রাখবেন।
এছাড়া এই আর্টিকেলে এই সুরার নামকরনের কারন, নামকরনের সময়কাল ও বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারীত আলোচনা কর হয়েছে।
সুরা-মূলক সম্পর্কে তিরমিজী হাদিস
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোন এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একটি লোক সূরা আল-মূলক পাঠ করছেন। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো।
তারপর তিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল আমি একটি কবরের উপর তাবু খাটায়। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারে যে, একটি লোক সূরা আল-মূলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসল্লাম বললেন: এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে। (তিরমিজী : ২৮৯০)
আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিস করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মূলক। ( তিরমিজী : ২৮৯১)
জারির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম সূরা আলিফ লাম-মীম তানয়ীল ও সূরা “তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মূলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। ( তিরমিজী : ২৮৯২)
সূরা-মূলক এর বাংলা উচ্চারন
বিসমিল্লাহীর রাহমানীর রাহীম
- তাবা-রাকাল্লাযী বিয়দিহিল মূলকু ওয়া হুওয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর’।
- আল্লাযী খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়-তা লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহসানু আমালাওঁ ওয়া হুওয়াল ‘আযীযুল গাফুর’।
- আল্লাযী খালাকা সাব‘আ সামা-ওয়া-তিন তিবা-কান মা-তারা-ফী খালকির রাহমা-নি মিন তাফ-উত ফারজি ‘ইল বাসারা হাল তারা-মিন ফুতুর।
- সুম্মার জি‘ইলবাসারা কাররাতাইনি ইয়ানকালিব ইলাইকাল বাসারু খা-সিআওঁ ওয়া হুওয়া হাসীর।
- ওয়া লাকাদ ঝাইয়ন্নাস সামাআদ্দুনইয়া-বিমাসা-বীহা ওয়াজা‘আলনা -হা-রুজুমাল লিশশায়া-তীনি ওয়া আ’তাদনা লাহুম ‘আযা-বাসসা‘ঈর।
- ওয়া লিল্লাযীনা কাফারুবিরাব্বিহিম ‘আযা-বুজাহান্নামা ওয়বি ‘সাল মাসীর।
- ইযাউলকূফীহা- সামি‘উ লাহা-শহাীকাওঁ ওয়াহিয় তাফুর।
- তাকা - দুতামাইয়াঝুমিনাল গাইজি কুল্লামাউলকিয়া ফীহা- ফাওজুন সাআলাহুম খঝানাতুহাআলাম ইয়া’তিকুম নাযীর।
- কা-লূবালা-কাদ জাআনা - নাযীরুন ফাকাযযাবনা-ওয়া কুলনা-মানাঝঝালাল্লা-হু মিন শাইযিন ইন আনতুম ইল্লা-ফী দালা-লিন কাবীর।
- ওয়া কা-লূলাও কুন্না-নাসমা‘উ আও না‘কিলুমা-কুন্না-ফীআসহা-বিস সা‘ঈর।
- ফা‘তারাফূবিযামবিহিম ফাসুহক্বললিঅসহা-বিস সা‘ঈর।
- ইন্নাল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আজরুন কাবীর।
- ওয়া আসিররুকাওলাকুম আবিজহারুবিহী ইন্নাহূ‘আলমিুম বিযা-তিসসুদুর।
- আলা-ইয়া‘লামুমান খালাকা ওয়া হুওয়াল্লাতীফূল খাবীর।
- হুওয়াল্লাযী জা‘আলা লকুমুল আরদা যালূলান ফামশূফী মানা-কিবিহা-ওয়া কুলুমির রিঝকিহী ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
- আ আমিনতুম মান ফিসসামাই আইঁ ইয়াখসিফা বিকুমুল আরদা ফাইযা-হিয়া তামুর।
- আম আমিনতুম মান ফিসসামাই আইঁ ইউসিলা ‘আলাইকুম হা-সিবান ফাসাতা‘লামূনা কাইফা নাযী।
- ওয়া লাকাদ কাযযাবাল্লায়ীনা মিন কাবলিহিম ফাকাইফা কা-না নাকী।
- আওয়ালাম ইয়ারাও ইলাত্তাইরি ফাওকাহুম সাফফা-তিওঁ ওয়াইয়াকবিদন।মিইউমসিকুহুন্না ইল্লাররাহমা-নু ইন্নাহূবিকুল্লি শাইয়িম বাসীর।
- আম্মান হা-যাল্লাযী হুওয়া জুনদুল্লাকুম ইয়ানসুরুকুম মিন দূনিররাহমা-নি ইনিল কাফিরুনা ইল্লা-ফী গুরুর।
- আম্মান হা-যাল্লাযী ইয়ারঝকুকুম ইন আমসাকা রিঝকাহূ বাল্লাজ্জুফী ‘উতুওবিওয়া নুফূর।
- আফামাইঁ ইয়ামশী মুকিব্বান ‘আলা-ওয়াজহিহী আহদা আম্মাইঁ ইয়ামশী সাবি ইয়ান ‘আলা-সিরা-তিমমুসতাকীম।
- কুল হুওয়াল্লাযীআনমাআকুম ওয়া জ‘আলা লাকুমুসসাম‘আ ওয়াল আবসা-রা ওয়াল আফইদাতা কালীলাম মা-তাশাকুরুন।
- কুল হুওয়াল্লাযী যারাআকুম ফিল আরদিওয়া ইলাইহি তুহশারুন।
- ওয়া ইয়াকুলুনা মাতা-হ-যাল ওয়া‘দুইন কুনতুম সা-দিকীন।
- কুল ইন্নামাল ‘ইলমু‘ইনদাল্লা-হি ওয়া ইন্নামাআনা নাযীরুম মুবীন।
- ফালাম্মা-রাআওহু ঝুলফাতান ছীআত ঊজুহুল্লাযীনা কাফারুওয়া কীলা হা-যাল্লাযী কুনতুম বিহী তাদ্দা‘ঊন।
- কুল আরাআইতুম ইন আহলাকনিয়াল্লা-হু ওয়া মাম্মা‘ইয়া আও রাহিমানা-ফামাইঁ ইউজীরুল ক-ফিরীনা মিন ‘আযাবিন আলীম।
- কুল হুওয়াররাহমা-নুআ-মান্না-বিহী ওয়া‘আলাইহি তাওয়াক্কালনা-, ফাসা‘লামূনা মান হুওয়া ফী দালা-লিম মুবীন।
- কুল আরাআইতুম ইন আসবাহা মাউকুম গাওরান ফামাইঁ ইয়া‘তীকুম বিমাইম মা‘ঈন।
সূরা-আল মূলক এর বাংলা অর্থ
পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লার নামে শুরু করছি।
- বরকতময় তিনি যার হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব। আর তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
- যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালি, অতিশয় ক্ষমাশীল।
- অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
- আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি।আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আজাব।
- আর যারা তাদের রবকে অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব। আর কতই না নিকৃষ্ট সেই প্রত্যাবর্তনস্থল !
- যখন তাদের তাতে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা তার বিকট শব্দ শুনতে পাবে। আর তা উথলিয়ে উঠবে।
- ক্রোধে তা ছিন্ন ভিন্ন হওয়ার উপক্রম হবে। যখনই তাতে কোনো দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরিরা তাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোনো সতর্ককারি আসেনি’ ?
- আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বরন্ত আগুনের অধিবাসিদের মধ্যে থাকতাম না’।
- অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। অতএব, ধ্বংশ জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসিদের জন্য।
- নিশ্চই যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।
- আর তোমরা তোমাদের কথা গোপন করো অথবা তা প্রকাশ করো, নিশ্চয়ই তিনি অন্তর সমূহে যা আছে সে বিষয়ে সম্যক অবগত।
- যিনি সৃষ্টি করেছেন , তিনি কি যানেন না? অথচ তিনি অতি সুক্ষদর্শী, পূর্ন অবহিত।
- তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরন কর এবং তাঁর রিজিক থেকে তোমরা আহার করো।আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান।
- যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদেরসহ জমিন ধসিয়ে দেওয়া থেকে কি তোমরা নিরাপদ হয়ে গেছ, অতঃপর আর্কস্মিকভাবে তা থর থর করে কাঁপতে থাকবে।
- যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের উপর পাথর নিক্ষেপকারি ঝোড়ো হাওয়া পাঠানো থেকে তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো, তখন তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিলো আমার সতর্কবানী?
- আর অবশ্যই তাদের পুর্ববর্তীরাও অস্বীকার করেছিলো। ফলে কেমন ছিলো আমার প্রত্যাখ্যান (এর শাস্তি)?
- তারা কি লক্ষ্য করেনি তাদের উপরস্থ পাখিদের প্রতি, যারা ডানা বিস্তার করে ও গুটিয়ে নেয়? পরম করুণাময় ছাড়া অন্য কেউ এদের স্থির রাখে না। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর সম্যক দ্রষ্টা।
- পরম করুণাময় ছাড়া তোমাদের কি আর কোনো সৈন্য আছে, যারা তোমাদের সাহায্য করবে? কাফেররা শুধু তো ধোঁকায় নিপতিত।
- অথবা এমন কে আছে, যে তোমাদের বিজিক দান করবে যদি আল্লাহ তাঁর রিজিক বন্ধ করে দেন? বরং তারা অহমিকা ও অনীহায় নিমজ্জিত হয়ে আছে।
- যে ব্যক্তি উপুড় মুখের উপর ভর দিয়ে চলে সে কি অধিক হেদায়াতপ্রাপ্ত না কি সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল হয়ে সরল পথে চলে?
- বলো,‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তকরণসমূহ দিয়েছেন। তোমরা খুব অল্পই শোকর করো’।
- বলো, ‘তিনিই তোমাদের জমিনে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে’।
- আর তারা বলে,‘সে ওয়াদা কখন বাস্তবায়িত হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
- বলো,‘এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই নিকট। আর আমি তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র’।
- অতঃপর তারা যখন তা আসন্ন দেখতে পাবে, তখন কাফেরদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে এবং বলা হবে,‘এটাই হলো তা, যা তোমরা দাবি করছিলে’।
- বলো,‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি’? যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গে যারা আছে, তাদের ধ্বংস করে দেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তাহলে কাফেরদের যন্ত্রনাদায়ক থেকে কে রক্ষা করবে’।
- বলো ,‘তিনিই পরম করুণাময়। আমরা তাঁর প্রতি ইমান এনেছি এবং তাঁর উপর তাওয়াক্কল করেছি। কাজেই তোমরা অচিরেই যানতে পারবে কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে’।
- বলো,‘ তোমরা ভেবে দেখেছো কী, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদের বহমান পানি এনে দিবে’?
সূরা-আল মূলক নমাকরনের কারণ
সূরার প্রথম আয়াতাংশ এর আল মূলক শব্দটিকে এ সূরার নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
সূরা-আল মূলক নাযিল হওয়ার সময়কাল
এ সূরাটি কোন সময় নাযিল হয়েছিলো তা কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায় না। তবে বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গী থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সুরাটি মক্কী জীবনের প্রথম দিতে অবতীর্ন সুরাসমুহের অন্যতাম।
সূরা-আল মূলকের বিষয়বস্তু
এ সুরাটিতে একদিকে ইসলামী শিক্ষার মুল বিষয়সমুহ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে যেসব লোক বেপরোয়া ও অমোনোযোগী ছিলো তাদেরকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সজাগ করে দেয়া হয়েছে। মক্কী জীবনের প্রথম দিকে নাযিল হওয়া সুরা সমুহের বৈশিষ্ট্য হলো, তাতে ইসলামের গোটা শিক্ষা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম কে নবী করে পাঠানোর উদ্দেশ্য সবিস্তারে নয়।
বরং সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে তা ক্রমান্বয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় বদ্ধমুল হয়েছে।সেই সাথে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব ও অমনোযোগিতা দুর করা,তাকে ভেবে চিন্তে দেখতে বাধ্য করা এবং তার ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
১ থেকে ৫ নং আয়াতের ব্যাখা
১ থেকে ৫ নং আয়াতে মানুষের এ অনুভুতিকে জাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, যে বিশ্বলোকে সে বাস করছে তা এক চমৎকার সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় সাম্রাজ্য। হাজারো তালাশ করেও সেখানে কোনো রকম দোষ-ত্রুটি, অসম্পুর্ণতা কিংবা বিশৃংঙ্খলা সন্ধান পাওয়া যাবে না। এক সময় এ সাম্রাজ্যের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। মহান আল্লাাহই একে অস্তিত্ব দান করেছেন।
এর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও শাসনকার্যের সমস্ত এখতিয়ার নিরংকুশভাবে তাঁরই হাতে। তিনি অসীম কুদরতের অধিকারী। এর সাথে মানুষকে একথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, এ পরম জ্ঞানগর্ভ ও যুক্তি সঙ্গত ব্যবস্থার মধ্যে তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং এখানে তাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার শুধু সৎকর্ম দ্বারাই সে এ পরীক্ষার সফলতা লাভ করতে সক্ষম।
৬ থেকে ১১ নং আয়াতের ব্যাখা
৬ থেকে ১১ নং আয়াতে আখেরাতে কুফরীর যে ভয়াবহ পরিনাম তা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে মানুষকে জানিয়ে দেয় হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নবীদের পাঠিয়ে এ দুনিয়াতেই সে ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন।
এখন তোমরা যদি এ পৃথিবীতে নবীদের কথা মেনে নিয়ে নিজেদের আচরণ ও চাল-চলন সংশোধন না করো তাহলে আখেরাতে তোমরা নিজেরাই একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, তোমাদের যে শাস্তি দেয় হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তোমরা তার উপযোগী।
১২ থেকে ১৪ নং আয়াতের ব্যাখা
১২ থেকে ১৪ নং আয়াতে এ পরম সত্যটি বোঝানো হয়েছে যে, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে বেখবর থাকতে পারেন না। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য প্রত্যেকটি কাজ ও কথা এমনকি তোদের মনের কল্পনাসমুহ পর্যন্ত অবগত।
তাই নৈতিকতার সঠিক ভিত্তি হলো, মন্দ কাজের জন্য দুনিয়াতে পাকড়াও করা মতো কোনো শক্তি থাক বা না থাক এবং ঐ কাজ দ্বারা দুনিয়াতে কোনো ক্ষতি হোক বা না হোক, মানুষ সবসময় অদৃশ্য আল্লাহর সামনে জবাবদিহির ভয়ে সব রকম মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। যারা এ কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করবে আখেরাতে তারাই বিরাট পুরস্কার ও ক্ষমা লাভের যোগ্য বলে গণ্য হবে।
১৫ থেকে ২৩ নং আয়াতের ব্যাখা
১৫ থেকে ২৩ নং আয়া পরপর কিছু অবহেলিত সত্যের প্রতি ইংগিত দিয়ে সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার আহবান জানানো হয়েছে। এগুলোকে মানুষ দুনিয়ার নিত্য নৈমিত্তিক সাধারণ ব্যাপর মনে করে সন্ধানী দৃষ্টি মেলে দেখে না। বলা হয়েছে, এ মাটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখো। এর ওপর তোমরা নিশ্চিন্তে আরামে চলাফেরা করছো এবং তা থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় রিযিক সংগ্রহ করছো।
আল্লাহ তায়ালাই এ যমীনকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। তা না হলে যেকোনো সময় এ যমীনের উপর ভুমিকম্প সংঘটিত হয়ে তা তোমাদেরকে মাটির সাথে মিশেয়ে দিতে পারে। কিংবা এমন ঝড়-ঝঞ্ঝা আসতে পারে যা তোমাদের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেবে। মাথার উপরে উড়ন্ত পাখীগুলোর প্রতি লক্ষ্য করো। আল্লাহই তো ওগুলোকে শুন্যে ধরে রাখেন।
নিজেদের সমস্ত উপায় উপকরনের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করে দেখো।আল্লাহ যদি তোমাদের শাস্তি দিতে চান তাহলে এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারে ? আর অল্লাহ যদি তোমাদের রিযিকের দরজা বন্ধ করে দেন, তাহলে এমন কে আছে, যে তা খুলে দিতে পারে? তোমদেরকে প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেয়ার জন্য এগুলো সবই প্রস্তুত আছে।
কিন্তু এগুলোকে তোমরা পশু ও জীব-জন্তুর দৃষ্টিতে দেখে থাকো। পশুরা এসব দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষ হিসেবে আল্লাহ তোমাদেরকে যে শ্রবন ও দৃষ্টিশক্তি এবং চিন্তা ও বোধশক্তি সম্পন্ন মস্তিষ্ক দিয়েছেন, তা তোমরা কাজে লাগাও না। আর এ কারনেই তোমার সঠিক পথ দেখতে পাও না।
২৪ থেকে ২৭ নং আয়াতের ব্যাখা
২৪ থেকে ২৭ আয়াতে বলা হয়েছে যে, অবশেষে একদিন তোমাদেরকে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে। নবীর কাজ এ নয় যে, তিনি তোমাদেরকে সেদিনটির আগমনের সময় ও তারিখ বলে দেবেন। তার কাজ তো শুধু এতটুকু যে, সেদিনটি আসার আগেই তিনি তোমাদের সাবধান করে দেবেন। আজ তোমরা তার কথা মানছো না।
বরং ঐ দিনটি তোমাদের সামনে হাজির করে দেখিয়ে দেয়ার দাবী করছো। কিন্তু যখন তা এসে যাবে এবং তোমরা তা চোখের সামনে হাজির দেখতে পাবে তখন তোমরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।
২৮ ও ২৯ নং আয়াতের ব্যাখা
২৮ ও ২৯ নং আয়াতে মক্কার কাফেরদের কিছু কথার জবাব দেয়া হয়েছে। এসব কথা তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের বিরুদ্ধে বলতো। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম কে অভিশাপ দিতো এবং তাঁর ঈমানদারদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য বদ দোয়া করতো।
তাই বলা হয়েছে যে, তোমাদেরকে সৎপথের দিকে অহবানবারীরা ধ্বংস হয়ে যাক বা আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুক তাতে তোমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন কি করে হবে ? তোমরা নিজের জন্য চিন্তা করো। আল্লাহর আযাব যদি তোমাদের উপর এসে পড়ে তাহলে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে ?
যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং যাঁরা তাঁর উপরে তাওয়াক্কল করেছে তোমরা মনে করছো তারা গোমরাহ হয়ে গেছে।কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন প্রকৃত গোমরাহ কারা তা প্রকাশ হয়ে পড়বে।
সর্বশেষে মানুষের সামনে একটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে এবং সে সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে দেখতে বলা হয়েছে মরুভুমি ও পর্বতময় আরব ভুমিতে যেখানে তোমাদের জীবন পুরোটাই পানির উপর নির্ভরশীল, পানির এসব ঝরনা ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে।
এসব জায়গায় পানির উৎসগুলো যদি ভূগর্ভের আরো নীচে নেমে উধাও হয়ে যায় তাহলে আর কোন শক্তি আছে, যে এ সঞ্জীবনী ধারা তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে ?
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন সুরা মুলকের ফযিলত সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন এই সুরা না পড়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম কখনোই ঘুমাতেন না । তাই প্রতি রাতে এই সুরা পড়ে ঘুমালে তা আপনার জন্য কবরে নাজাতের ওসীলা হবে ইনশাআল্লাহ। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url