দাঁতের হলুদ ভাব কিভাবে দুর করবেন জেনে নিন
ত্বক ফর্সায় গাজরের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনারা বিস্তারীত পড়েন তাহলে জানতে পারবেন দাঁতের হলুদ ভার কিভাবে দুর করা যায় সেই সম্পর্কে। আপনি যদি ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করেন তাহলে তাতে ময়লা জমে। আর এই ময়লা থেকে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে যদি আপনি দাঁতের যত্ন না নেন তাহলে দাঁত হলুদ হয়ে যায় ও দাঁতে কালো দাগ পড়ে।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে দাঁতের পাথর দুর করা যায়, কিভাবে দাঁতের হলুদ ভাব দুর করে সাদা করা যায়, আমাদের দেশের গ্রাম গঞ্জের মানুষেরা এখনও ঘরোয়া উপায়ে দাঁত পরিষ্কার করে থাকে যা খুবই কার্যকর বলে বিবেচিত হয়েছে, এছাড়া আরোও জানতে পারবেন কালো দাগ দুর করার টিপসগুলো সম্পর্কে।
দাঁতের হলুদ দাগ দুর করার উপায়
সুন্দর হাসির স্বার্থকতা তখনই বজায় থাকে যখন দাঁত থাকে পরিষ্কার ধবধবে সাদা।আপনার দাঁতে যদি হলদেটে ভাব থাকে তাহলে জনসম্মুখে আসলে খুব অস্বস্তিতে পড়তে হয়। তাই সকলেই আশা করেন যেন তার দাঁত থাকে ধবধবে সাদা। বিশেষজ্ঞদের মতে দাঁতে হলুদ ভাব হয়ে মুলত জীবাণুর কারনে। জীবানু ধ্বংশ করতে পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নিমগাছের ডাল: দাঁতের হলুদ ভাব দুর করতে নিমগাছের ডাল জাদুর মত কাজ করে। আপনি যদি প্রতিদিন নিমগাছের ডাল দিয়ে দাঁত মাজেন তাহলে কয়েকদিনের মধ্যে দাঁতের হলুদ ভাব দুর হয়ে যাবে। নিমের ডালে অনেক জীবাণুনাশক গুন রয়েছে যা জীবানু ধ্বংশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কলার খোসা:আমরা সাধারনত কলার খোসা খেয়ে ফেলে দেয়, কিন্তু কলার খোসার উপকার যদি জানেন তাহরে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। কারন কলার খোসা দাঁতকে সাদা ধবধবে করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।আপনি যদি কলার খোসা দিয়ে দাঁত ঘষেন তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে দাঁতের হলুদাভ ভাব দুর হয়ে গেছে।
স্ট্রবেরি: এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি দাঁতে ঘষলে দাঁত ঝকঝকে সাদা হয়ে উঠে।এটির মধ্যে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুন রয়েছে তা হলদেটে ভাবকে সহজেই দুর করে দেয়।
সরিষার তেল:সর্ষের তেলের মধ্যে লবন দিয়ে তা দাঁতে ঘষলে হলুদ ভাব দুর হয়।আধা চামচ সরিষার তেলে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে মিশ্রণটি যদি দাঁতে নিয়মিত ঘষা যায় তাহলে দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যে দাঁত ঝকঝকে সাদা হয়ে গেছে।
দাঁতের পাথর দূর করার উপায়
দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত যদি দাঁতের যত্ন না নেন তাহলে আরো বড় কোন সমস্য দেখা দিতে পারে। দাঁতের অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো দাঁতে পাথর হওয়া। দাঁতে পাথর হলে হলুদ বা বাদামি বর্ন ধারন করে পরবর্তিতে আস্তে আস্তে কালচে হয়ে যায়। দাঁতের এই কালচে হওয়াকে দাঁতে পাথর বলা হয়।
দাঁতে পাথর জমার কারন
আমাদের অসচেতনতার কারনে দাঁতে পাথর হয়ে থাকে। আমরা যদি নিয়মিত মুখের ভেতরটা পরিষ্কার না করি তাহলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মুখের ভেতরে থাকা জীবাণু, খাদ্য কণা ও থুতুর মধ্যে থাকা প্রোটিন মিলে প্লাক তৈরি করে। এই প্লাক যদি আপনি ঠিকমতো পরিষ্কার না করেন তাহলে মিনারেলসের সঙ্গে মিশে স্তরের উপর স্তর জমা হয় যা শক্ত পাথর তৈরি করে।
দাঁতে পাথর কাদের বেশি হয়
আপনাদের মধ্যে যাদের মিষ্টি ও আলু খাওয়ার প্রবণতা বেশি তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যারা ময়দার তৈরি খাবার বেশি খায় তাদেরও দাঁতে পাথর হতে পারে।আবার যারা ধুমপান বা তামাক জাতীয় দ্রব্য চিবিয়ে খায় বা নেশা করে তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে।
দাঁতে পাথর থেকে মুক্তির উপায়
আপনাকে সারাদিনে কমপক্ষে দুইবার দাঁত মাজতে হবে। প্রতিদিন দাঁত মাজবেন অন্তত দুই মিনিট করে। আপনার টুথ ব্রাশটি তিন মাস পর পরিবর্তন করতে হবে। ট্রথ ব্রাশটি Fluoride যুক্ত কিনা সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, কেনার সময় Fluoride যুক্ত টুথপেষ্ট কিনা তা নিশ্চিত হয়ে তারপর কিনবেন।
দাঁতে পাথর জমলে কি করবেন
আপনাদের মধ্যে অনেকেই দাঁতে পাথর জমাকে খুব একটি গুরুত্ব দেন না।আবার অনেকেই গুরুত্ব দিলেও কি করবেন তা নিয়ে খুব হতাশার মধ্যে থাকেন। তাই হতাশার মধ্যে না থেকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ে পাথর দুর করার কিছু নিয়ম আছে তা মেনে চললে কিছুটা উপসম পেতে পারেন।
বেকিং সোডার মিশ্রন: বেকিং সোডা, ডেন্টাল পিক, লবণ, হাইড্রোজেন পারক্সাইড, পানি, টুথব্রাশ, কাপ ও অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ নিতে হবে।তারপর কাপে ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। গরম পানিতে টুথব্রাশ ভিজিয়ে বেকিং সোডা ও লবনের মিশ্রণ দিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। তারপর কুলকুচি করে নিতে হবে।
আধাকাপ গরম পানির সাথে এককাপ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মিশিয়ে সেই পানি মুখের মধ্যে এক মিনিট ধরে রাখতে হবে। তারপর আধা কাপ পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিতে হবে। ডেন্টাল পিক দিয়ে দাঁতের হলুদ দাগ ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। তবে মাড়ির যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়ার রাখতে হবে।
স্ট্রবেরি ও টমেটোর ব্যবহার: স্ট্রবেরি ও টমেটো দাঁতের দাগ দুর করার এক অনন্য মাধ্যম। দাঁতের দাগ দুর করতে স্ট্রবেরি অথবা টমেটো দাঁতে ঘষে নিয়ে ৫ মিনিট রাখুন দেখবেন দাগ নরম হয়ে আসছে। তখন বেকিং সোড়া ও উসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন: লেবু, পেঁপে ও কমলালেবু ব্যবহার করা যেতে পারে।
দাঁত পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায়
ঝকঝকে সাদা দাঁত আর্কষনীয় হাসির একমাত্র উপকরন। ব্যক্তিত্বের অন্যতম হাতিয়ার সাদা দাঁত। হলদেটে দাঁত আপনার ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। তাই ঝকঝকে সাদা দাঁতের কোন বিকল্প নেই। এটা চাইলেই আপনি হাতের কাছে থাকা কিছু উপকরন দিয়ে করতে পারেন। এরজন্য আপনাকে অতিরিক্ত খরচ করার দরকার নেই। নীচে ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নারিকেল তেল: প্রাচীন ভারতে নারিকেল তেল মুখে নিয়ে কিছুক্ষন রাখার পর কুলকুচি করে দাঁত পরিষ্কার করা হতো ঠিক আমরা যেভাবে মাউথওয়াশ ব্যবহার করে থাকি তার অনুরুপ। সাম্প্রতিক এক গবেষনায় দেখা গেছে নারিকেল তেল দাঁতা সাদা করতে ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এই তেল দাঁতে দাগ জমতে বাঁধা দেয় ও মাড়ির রোগ উপসম করে।
স্ট্রবেরি: আপনার মনে হতে পারে স্ট্রবেরি তো একটি সুস্বাদু ফল এটি দিয়ে আবার কিভাবে দাঁত সাদা করা যায়। আশ্চর্যহলেও সত্য স্ট্রবেরি চুর্ন দিয়ে যদি দাঁত ব্রাশ করেন তাহলে এর এসিটিক উপাদান ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই ২/৩ টি স্ট্রবেরি চুর্ন করে কয়েকদিন ব্রাশ করলে মুখের এসিডিটি দুর করে দাঁতকে নানা ধরনের ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করবে।
বেকিং সোড়া ও লেবুর রস: লেবুতে উচ্চমাত্রার সাইট্রিক এসিড থাকায় তা দাঁত সাদা করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। তবে শুধুমাত্র লেবু ব্যবহার করলে তা ক্ষতির কারন হতে পারে।তাই ১ চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তৈরি পেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।
কাঠকয়লা: কাঠকয়লা দাঁতা সাদা করতে জাদুর মত কাজ করে। আমাদের দেশে গ্রাম বাংলায় এখনো কাঠ কয়লা ব্যবহার করা হয় দাঁত পরিষ্কার করার জন্য। অক্সিজেন ও ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে মিশে কাঠকয়লা তৈরি হয় ফলে এতে অতিশয় শোষনকারী বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে যা দাঁত সাদাকারক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
আমরা যে চা, কফি খেয়ে থাকি তাতে ট্যানিন থাকে যা দাঁতে জমা হয়ে দাগ তৈরি করে। এই ট্যানিনকে পরিষ্কার করতে কাঠকয়লা কার্যকর ভুমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন কাঠকয়লা গুঁড়ো ব্রাশে নিয়ে দাঁত মাজলে কয়েকদিনের মধ্যে সাদা হয়ে যাবে।
কমলার খোঁসা: দাঁত সাদা করতে কমলার ভেতরের সাদা অংশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে। কারন এর মধ্যে থাকা অ্যালবেডো লিমোনিন যা প্রাকৃতিকভাবে পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। অনেক টুথপেষ্টে কমলার খোসার এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়। কমলার এই সাদা অংশটি এসিডিক নয় ফলে দাঁতের ড্যামেজের ভয়ও কম থাকে।
তুলসী পাতা ও সরিষা তেল: তুলসি পাতা ও সরিষার তেলের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল , অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য দাঁতকে সাদার করতে ও মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। তাই তুলসি পাতা শুকিয়ে বা কাঁচা তুলসি পাতা বেটে এতে সরিষার তেল মিশিয়ে ব্রাশের লাগিয়ে সপ্তাহখানেক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি-ব্যকটেরিয়াল গুনাগুন বজায় থাকায় তা দাঁত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। তাই দাঁতের দাগ দুর করতে ১ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করলে মাড়ির ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ হবে ও নিঃশ্বাসে আসবে সজীবতা।
হলুদের গুড়া: হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্ট-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা দাঁতের মাড়ির রোগের চিকিৎসায় কার্যকর ভুমিকা পালন করে। হলুদের গুঁড়া দাঁতের দাগ দুর করে দাঁতকে সাদা করে তোলে । ১ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া আঙ্গুল দিয়ে দাঁতে ঘুষুন, তারপর পরিষ্কার টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন এবং মুখ ধুয়ে ফেলুন।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন দাঁতের হলুদ ভাব কিভাবে চিরতরে বিদায় দিবেন তার কার্যপ্রনালী সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন দাঁতের হলুদ ভাব রোধে বিভিন্ন Tips & Tricks অবলম্বন করে কিভাবে উপকৃত হবেন। আপনি যদি নিয়মিতভাবে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলেন তাহলে আপনারা দাঁতের হলুদভাব থেকে মুক্তি পাবেন।
উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url