ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন

শরীর ঠান্ডা রাখতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে ইসবগুলের ভুসি জাদুর মতো কাজ করে। তবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের সমাজে বিভিন্ন কথা প্রচলিত আছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন খাওয়ার আগে এই খাবারটি খেলে এর প্রকৃত উপকার পাওয়া যায়।ইসবগুলের ভুসি পানিতে মিশিয়ে খেতে হয়।তবে দীর্ঘক্ষন ভিজিয়ে রাখলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ভুমিকা

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তরিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ইসবগুলের ভুসি কি নিয়মে খাবেন সেই সম্পর্কে। আরোও আলোচনা করা হয়েছে ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি কিভাবে খাবেন, ইসবগুলের ভুসির উপকারিতাগুলো কি কি, গর্ভাসস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়মগুলো কি কি ও অতিরিক্ত খেলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো কি ইত্যাদি সম্পর্কে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম 

এটি এমন একটি উদ্ভিদ যাকে একবর্ষজিবী উদ্ভিদ বলা হয়ে থাকে। এটি ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। বীজ বপনের ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে ও ১১০ থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল তোলার উপযোগী হয়।ইরান, ভারত, পাকিস্থানে ব্যাপকাভাবে এটি চাষ করা হয়। 
এই উদ্ভিদের যে বীজ রয়েছে তার বাইরের ত্বক ও এর সংলগ্ন নীচের স্তরে দুটি একসাথে আলাদা হয়ে আসে যা আমরা ইসবগুলের ভুসি বলে থাকি।

খাওয়ার নিয়ম: আমরা অনেকে জানি ইসবগুলের ভুসি রাতে ভিজিয়ে খেতে হয়। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ইসবগুলের ভুসি খেলে মলের পরিমান বাড়ে ও মলের মধ্যে পানি ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ইসবগুলের ভুসি ১-২ চা চামচ ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। এই খাবারটি খাওয়ার সাথে সাথে পেটে ফুলে যায়। 

এটি প্রোবায়োটিক হিসেবেও খাওয়া যায় ২ চা চামচ ভুসি ১৫ মিলিলিটার টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি ডায়ারিয়ার জন্য খুবই উপকারি।কোষ্ট কাঠিন্য রোধে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যায়।

প্রতিদিন কতটুকু ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন

আপনি যদি একটু বেশি পরিমানে ইসবগুলের ভুসি খান তাহলে তা শরীরের উপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। ইসবগুল প্রতিদিন ১ টেবিল চামচ করে ৩ বার খাওয়া যেতে পারে। তবে এটি অবশ্যই পানিতে গুলিতে খেতে হবে ও পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে।

ইসবগুল ভুসির উপকারিতা

আমাদের সকলের কাছে পরিচিত এই ইসবগুলের ভুসি। এর নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো আমরা এই খাবারটি খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেতে চাই না। অথচ এটি আমাদের শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকার ভুমিকা পালন করে। আপনি যদি নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খান তাহলে ছোট বড় অনেক অসুখ থেকে মুক্তি পাবেন।

ইসবগুলের পুষ্টিগুন

১ টেবিল চামচ ইসবগুলে রয়েছে
  • ক্যালোরি - ৫৩ শতাংশ
  • ফ্যাট - ০ শতাংশ
  • সোডিয়াম - ১৫ শতাংশ
  • শর্করা - ১৫ শতাংশ
  • ক্যালসিয়াম - ৩০ শতাংশ
  • আয়রন - ০.৯ শতাংশ
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে: অনেকের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ইসবগুল কার্যকর ভুমিকা পালন করে। আপনি যদি এটি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এটি সকাল ও বিকাল খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কোষ্ঠকাঠিন্য মারাত্মক একটি অসুখ। এই অসুখটিকে সাধারন বলে মনে করা হলেও আসলে তা নয়। আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে তা শরীরের ভেতর স্বাভাবিক নানা ক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করে। যারফলে বিরুপ প্রভাব পড়ে পুরো শরীরে। এই ধরনের সমস্যা হলে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।
আপনি যখন ইসবগুলের ভুসি খাবেন তখন তা প্রথমে পাকস্থলীতে যায় এরপর ফুলে ভেতরের সব বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে ২ চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি গুলিয়ে খেতে পারেন। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।

গ্যাস্ট্রিক দুর করে: আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দুর করতে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এই খাবারটি গ্যাস্ট্রিকের জন্য দায়ী হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে তৈরি হতে বাঁধা দেয়। আপনি যদি নিয়মিত ১ গ্লাস ঠান্ডা দুধে ২ চা চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খান তাহলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাবেন।

ডায়ারিয়া প্রতিরোধ করে: ইসবগুলের ভুসি ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে জাদুর মতো কাজ করে। এটি দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে ডায়ারিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দইয়ের মধ্যে যে প্রোবায়োটিক থাকে যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে। ইসবগুল তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়ারিয়া দ্রুতই সেরে উঠে। 
আপনার যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে দিনে ২ বার ভরা পেটে ৩ টেবিল চামচ দই ও ২ চা চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খান তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

হার্ট ভালো রাখে: আপনি যদি আপনার হার্ট ভালো রাখতে চান তাহলে অবশ্যই ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারন এই খাবারে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলো কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এই খাবারটি পাকস্থলীর দেয়ালে এক ধরনের পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। 

যা খাদ্য হতে কোলেস্টরল শোষনে বাধা দেয় যা রক্তের সিরাম কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এছাড়া এটি রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টরল সরিয়ে দিতে কাজ করে। যা রক্তের ধমনীতে ব্লক সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।

গর্ভাবস্থায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম 

গর্ভকালীন অবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। এই কারণে গর্ভবতী মহিলারা কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এই খাবার প্রাকৃতিকভাবে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহয়তা করে। ইসবগুলের ভুসি যদি নিয়মিত খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় আপনারা প্রতিদিন রাতের বেলা ঘুমানোর আগে ইসবগুলের ভুসি খাবেন। এজন্য ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি নিয়ে হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশ্রিত করে কিছুক্ষন পর খেয়ে নেবেন। এছাড়া আপনার যদি চান তাহলে দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এভাবে যদি ১ সপ্তাহ ধরে খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে।

ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাদ্যনালি পরিষ্কার করে ও শরীরের চর্বি কমায়।আপনি যদি প্রতিদিন খাবারের পর ইসবগুলের ভুসি খান তাহলে শরীরে কোলেস্টরেল মাত্রা কমে যায়। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি নিয়মিত ১ থেকে ২ চামচ ২৪০ মিলি পানির সঙ্গে মিশিয়ে খান তাহলে রক্তে Glucose এর মাত্রা কমে যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীরা দইয়ের সাথে ইসবগুল খাওয়া থেকে দুরে থাকবেন। এছাড়া ওজন কমানোর জন্য ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি ২৪০ মিলিলিটার পানি ও ১/২ চামচ লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে নিশ্চিত আপনার ওজন কমবে।

ইসবগুল সেবনে সর্তকতা

আপনি যদি অতিরিক্ত ইসবগুল খান তাহলে ক্ষুধমন্দা ও ডায়রিয়া হতে পারে। অতিরিক্ত ইসবগুল খেলে তা ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।তাই ওষুধ সেবনের ২ ঘন্টা আগে অথবা ২ ঘন্টা পরে সেবন করতে হবে।ইসবগুল দীর্ঘক্ষন ভিজিয়ে রাখলে পানি শোষন করে ফুলে যায়।ফলে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং গলায় আটকে মারাত্মক বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে ইসবগুলের ভুসি খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩