অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারীতভাবে জেনে নিন

সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনপৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।যদিও এই রোগটী নিরাময় হয় না, তবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন সুস্থ থাকা যায়।তাই আজকের আর্টিকেলটিতে অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে পারেন এবং পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে এই রোগ থেকে অনেক দুরে থাকবেন।
অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারীতভাবে জেনে নিন

ভুমিকা

অ্যালার্জি এমন একটি রোগ যা সংক্রামক নয়। আপনি যদি কিছু উপসর্গ দেখেন তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার অ্যালার্জি হয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে। আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন এলার্জি
জাতীয় খাবারগুলো কি কি, কোন কোন খাবারে এলার্জি নেই।

এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা

বর্তমান পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন।এই এলার্জিক সমস্যা সৃষ্টি হয় নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়ার কারনে।এই এলার্জিজনিত সমস্যা হালকা ও তীব্র হতে পারে এবং এর মধ্যে চামড়ায় প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
এলার্জি হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা সাধারণত ক্ষতিকর না হয়ে কিছু জিনিসকে ক্ষতিকর ভেবে আক্রমন করে।এই জিনিসগুলোকে অ্যালার্জেন বলা হয়।যুক্তরাষ্ট্রের FDA এর মতে অ্যালার্জি সম্পূর্নরুপে নিরাময় করা যায় না।

এলার্জির কারণ
  • এলার্জির ঝুঁকি অনেকাংশে জিনগত। যদি আপনার পরিবারে এলার্জি থাকে তাহলে আপনারও এলার্জি হতে পারে।
  • আপনি যদি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসেন তাহলে এলার্জি হতে পারে যেমন: ধুলো, পরাগ, পোষা প্রানীর পশম,ছত্রাক ও কিছু খাবার অ্যালার্জির কারন হতে পারে।
  • ধুমপান, দূষণ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এলার্জির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

যে সকল খাবারে অ্যালার্জি থাকে

দুধ:প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি খাবার। তবে অনেকের মধ্যে দুধ খেলে অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে।বিশেষ করে গরুর দুধে এই অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হয়ে থাকে। ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২ শতাংশ শিশুর মধ্যে গরুর দুধে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। তবে ৩ বছরের উপরে ও বয়স্কদের মধ্যে এই অ্যালার্জিজনিত সমস্যা কম থাকে।

ডিম: দুধের মতো ডিমও একটি পুষ্টিকর খাবার। তবে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ডিম খেলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।অধিকাংশ শিশু ‍দুধের মতোই ডিম খেলে অ্যালার্জিতে ভুগে। সাধারনত ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিনের মধ্যে অ্যালার্জি থাকে। যদি ডিম খেলে অ্যালার্জি হয় তাহলে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

বাদাম: বাদাম খেতে সকলেই পছন্দ করে। বিভিন্ন ডেজার্টে যদি আপনি একমুঠো বাদাম দেন তাহলে তা খেতে খুব ভালো লাগে। তাই বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন: কাজু, পেস্তা, আমন্ড ও আখরোটে অ্যালার্জি হতে পারে।তবে এই সব বাদামের মধ্যে চিনা বাদাম বেশি জনপ্রিয়। শিশুদের মধ্যে চিনা বাদামে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।

খোসা জাতীয় মাছ: খোসা জাতীয় মাছ বলতে আমরা চিংড়ি, কাঁকড়া, ওয়েস্টার ও শামুুককে বুঝে থাকি। পৃথিবীর প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে এই জাতীয় মাছ খেলে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।

গম বা গমের আটার তৈরি খাবার: ভাতের পরপরই আটা দিয়ে তৈরি খাবার আমাদের প্রধান খাদ্যের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু গমের আটার রুটি, পাউরুটি খেলে অ্যালার্জি অনেকের মধ্যেই দেখা দেয়। শিশুদের যদি গমে অ্যালার্জি হয়ে থাকে তাহলে বার্লি বা অন্যান্য শস্যদানা খেতে দিতে হবে।

সয়াবিন জাতীয় খাবার: সয়াবিন খেলে বড়দের কোনো সমস্যা হয়না।তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সয়াবিন খেলে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে। সাধারনত সয়া বড়ি, সয়া মিট ও সয়া মিল্কে অ্যালার্জি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দশ বছর বয়সের পর থেকে কমে আসে।
মাছ: অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু মাছে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।আবার অনেকের ক্ষেত্রে স্যালমন , টুনা ও ম্যাকরেল জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খেলে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।আপনাদের মধ্যে কারো যদি মাছে অ্যালার্জি হয়ে থাকে তাহলে তা এড়িয়ে চলায় ভালো।

কোন কোন খাবারে এলার্জি নেই

প্রতিটি মানুষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। কোনো কারনে সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিলে অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা হতে পারে। এই কারনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, বিভিন্ন পুষ্টি ও খনিজ পদার্থের সরবরাহ প্রয়োজন। তাই পুষ্টিবিদরা প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলতে নিয়মিত খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে বলেন।

দই: অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে দইয়ের মধ্যে।শরীরে তা গেলে ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমন রোধ করতে সাহায্য করে।দই সাধারনত প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টি-অ্যালর্জেটিক। একজিমা জাতীয় চর্মরোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে দই উপকারী।

ভিটামিন সি যুক্ত ফল: আপেল, কমলা, তরমুজ স্ট্রবেরি ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল।এই ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলগুলি প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে।ত্বকের র‌্যাশ,চুলকানির মতো অ্যালর্জি জাতীয় সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসব ফল।

বায়োফ্ল্যাভনয়েড সমৃদ্ধ খাবার: এটি একটি বিশেষ ধরনের উপকারী রাসায়নিক উপাদান। এই উপাদানটি মুলত ফলে বা গাছের ছালে বেশি পরিমানে থাকে।আপেল,পেঁয়াজ চায়ের মতো বায়োফ্লেভনয়েড সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রন করে।

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: কাজুবাদাম, বাদাম,কুমড়ার বীজ কলার মতো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে।

ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার: কাঠবাদাম, সূর্যমুখীর বীজের মতো খাদ্য গামা-টোকাফেরল থাকে, যা অ্যালার্জি সংঘটিত ব্যাকটেরিয়া বিরুদ্ধে লড়াই করে।

কোন কোন ডালে এলার্জি আছে

অ্যালার্জি খুব কমন একটি সমস্যা।প্রায় প্রতিটি পরিবারে অ্যালার্জি আক্রান্ত রোগী দেখতে পাওয়া যায়। একেক মানুষের একেক খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে যেমন কারো দুধে অ্যালার্জি হতে পারে কারো ফলে ও কারো ধুলোবালিতে আবার কারো সবজিতে।সবজির মধ্যে টমাটো, বেগুন,ফলের মধ্যে আনারস ও কলাতে অ্যালার্জি হতে পারে।

মসুর ডাল: ডালের মধ্যে মসুর বাঙ্গালীদের সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু আপনাদের অনেকেই জানেন না মসুর ডালে এলার্জি হতে পারে।যাদের মসুর ডাল খাওয়ার পর অ্যালার্জি হয় তাদের শরীরে লাল লাল র‌্যাশ দেখা দেয়।

খেসারির ডাল: খেসারির ডালেও অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তবে এই ডাল খেসারির চেয়ে কম অ্যালার্জিযুক্ত। যারা অ্যালার্জির সমস্যায় রয়েছেন তাদের েএই ডাল এড়িয়ে চলায় উচিত।

মুগ ডাল: এই ডালটিতেও অ্যালার্জি রয়েছে। এটি গ্রাম বাংলার বাঙ্গালীদের সুপবিচিত একটি খাবার।যদি কারো অ্যালার্জি থাকে তবে এই ডাল খুব কম পরিমানে খাওয়াই ভালো।

এলার্জি জাতীয় সবজি

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শাক সবজি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। শাক সবজিতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। শাক সবজিতে যে পুষ্টিগুন রয়েছে তা অন্য কোনো খাবারে পাওয়া যায় না। তাই সকল ব্যক্তিকে প্রতিদিন শাক সবজি খাওয়া উচিত। নীচে অ্যালার্জি জাতীয় শাক সবজির তালিকা দেওয়া হলো।

কচু শাক: কচুর শাক খেলে চোখের সমস্যা, রক্তে কোলেস্টরলের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তবে কচু শাক খেলে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তাদের কচুশাক না খাওয়ায় ভালো।

লাউয়ের শাক: লাউ শাক পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ একটি খাবার। এর মধ্যে যে পুষ্টি উপাদানগুলো তা গর্ভবতিদের জন্য খুবই উপকারী। এই শাকের পুষ্টি উপাদান মস্তিষ্ক সতেজ ও ঘুম ভালো হতে সহায়তা করে।তবে যার এই শাকে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের না খাওয়ায় ভালো।

মিষ্টি কুমড়ার শাক: আমাদের দেশের মানুষ মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়ার শাক খুব পছন্দ করে। এই শাকের মধ্যে রয়েছে ব্যপক পরিমানে আয়রন। এছাড়া দৃষ্টি শক্তি ভালো, দাঁতকে মজবুত রাখতে ও ত্বক সুন্দর রাখতে ও চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে যাদের এই শাকে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের এই শাক না খাওয়ায় ভালো।

পালং শাক: পালং শাক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই শাকের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো হাড় মজবুত করে চুল পড়া সমস্যা সমাধানে ব্যাপকভাবে কাজ করে। তবে কারো যদি এই শাকে অ্যালার্জি থাকে তাহলে তাদের না খাওয়ায় ভালো।

পুঁই শাক: পুঁই শাক অত্যন্ত সুস্বাদু একটি শাক। এই শাকের পুষ্টিগুন অনেক।এই শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এই শাক খেলে রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে।তবে পুঁইশাকে অনেকের অ্যালার্জি রয়েছে।তাই যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের এই শাক না খাওয়ায় ভালো।

এলার্জি জাতীয় মাছ

সাধারনত মাছে অ্যালার্জির প্রভাব কম থাকে।তবে কিছু কিছু মাছ খেলে হালকা চুলকানি এবং আমবাত ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।মাছের অ্যালার্জি বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে।তেলাপিয়া হলো এক ধরনের মিঠা পানির মাছ।এই মাছকে তুলনামুলকভাবে কম অ্যালার্জিযুক্ত মাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তেলাপিয়া মাছে অ্যালার্জির লক্ষনগুলি হালকাভাবে দেখা দিতে পারে যেমন:চুলকানি, আমবাত, ত্বকে ফুসকুড়ি ইত্যাদি।পুটি মাছ খেলে অনেকের মধ্যে অ্যালার্জি হতে পারে।পুটি মাছের অ্যালার্জির কিছু সাধারন লক্ষন রয়েছে যেমন:বমি বমি ভাব,আমবাত,পেট ব্যাথা, ডায়ারিয়া, চোখ চুলকানি, হালকা মাথাব্যাথা।

এই মাছের অ্যালর্জির মুল কারন হলো প্রোটিন, সংক্রামক পদার্থ ও জৈবিক উপাদানগুলি যা মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া করে এলার্জি সৃষ্টি করা। অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে আরোও যে মাছগুলো রয়েছে সেগুলো হলো টুনা, স্যালমন, ম্যাকারেল, সার্ডিন, ইলিশ, ক্যাটফিশ, ট্রাউট, শার্ক, কার্প, কই, চিংড়ি, ভেটকি, বোয়াল মাছ ও চিতল মাছ ইত্যাদি।

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা সম্পর্কে।যদি সঠিক নিয়মে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন তাহলে এই অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাবেন।

আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩