গরম থেকে বাঁচতে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে গরম থেকে বাঁচতে ডাবের পানির উপকারিতাগুলো নিয়ে। বাইরের সৌন্দর্য চর্চার পাশাপশি দেহের ভেতরের অংশেরও যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।এ জন্য আমাদের প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। ডাবের পানি হলো সেই সুষম ও পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের ভেতরে ও বাইরে দুটো দিকই সুস্থ রাখে।
ভুমিকা
আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন ডাবের পানির বিস্ময়কর উপকারি দিকগুলো নিয়ে যা আমরা এতোদিন জানতান না। জানতে পারবেন গর্ভবতী মায়েরা এই ডাবের পানি খেলে কিভাবে উপকৃত হবেন। আরোও জানতে পারবেন ডাবের পানি খাওয়ার নিয়মগুলো ও এই পানি কখন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
ডাবের পানির উপকারিতা
ডাব একটি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি ফল। আপনার শরীরে যদি পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াসের অভাব হয় তাহলে চিকিৎসকরা ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন । আপনার যদি ডায়রিয়া বা কলেরা রোগ হয় তাহলে ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হতে পারে যা দেহ থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থ বের করে দেয় যার ফলে শরীরে পানি ও খনিজ পদার্থের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। ডাবের পানি অনেকাংশে এগুলোর অভাব পুরন করে।
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে।তাই আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি খান তাহলে কোষ্ঠাকাঠিন্য থেকে মুক্ত থাকবেন।
- শরীরে পানি শুন্যতা দুর করতে ডাবের পানির জুড়ি মেলা ভার।নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে।
- আপনার ইউরিনে যদি কোন রকম ইনফেকশন থাকে তাহলে নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ইনফেকশন দুর হবে।
- ডাবের পানি পান করলে আপনার কিডনি সুস্থ থাকবে।
- আপনাদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিক রোগী তারা যদি নিয়মিত ডাবের পানি পান করে তাহলে রক্তে Glucose এর মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
- ডাবের পানিতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন থাকায় তা রুপচর্চায় জাদুর মত কাজ করে। আপনি যদি ডাবের পানি মুখে নিয়মিত মাখেন তাহলে ত্বকের তৈলাক্ততা, ব্রন ও রোদে পোড়া কালো দাগ থেকে মুক্তি পাবেন।
- নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে এবং হার্ট অ্যাটার্কের ঝুঁকি কমে যাবে।
- আপনার যদি মনে হয় নির্দিষ্ট বয়সের আগে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাচ্ছে কিংবা তারুন্য হারিয়ে যাচ্ছে তাহলে দেরি না করে আজ থেকেই ডাবের পানি পান করা শুরু করেন এবং খাওয়ার সাথে সাথে মুখে ডাবের পানি দিয়ে মাসাজ করেন। তাহলে উক্ত সমস্যা থেকে অচিরেই মুক্তি পাবেন।
- এই জাদুকরি পানি নিয়মিত পান করলে দাঁতের মাড়ির রোগ এবং ঠান্ডা লাগা থেকে মুক্ত থাকবেন।
- নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরের সব ক্লান্তি দুর হয়ে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- ডাবের পানি পানে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও শরীরের স্বাভাবিক ওজন ঠিক রাখতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
- ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে পেট গ্যাসমুক্ত থাকে ও বুক জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ ও সি থাকায় এই পানি নিয়মিত খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।
- ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম থাকায় নখের ভঙ্গুরতা দুর করে নখের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- ডাবের পানিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় নিয়মিত এই পানি পান করলে ঠোঁট ফাঁটা, ঠোঁটের কালচে ভাব দুর হয় ও চোখের নিচের কালো দাগ দুর হয়।
- ডাবের পানিতে থাকা বিভিন্ন খনিজ ও মিনারেল আপনার ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।
- ডাবের পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকায় তা হাড়ের মজবুত গঠনে সহায়তা করে।
- ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল শরীরেকে আর্দ্র ও শীতল করে।বিভিন্ন যুদ্ধকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর লোকদের ডাবের পানি খাওয়ানো হতো যাতে তাদের শরীরে আর্দ্রতা বজায় থাকে।
- আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানে খান তাহলে পেটে কোনো ক্ষুধা অনুভব করবেন না অর্থাৎ ক্ষুধার প্রবনতা কমে আসে,এতে করে খাওয়ার প্রবনতা কমে যায়।ফলে ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
- ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে শরীর থাকে সুস্থ, সবল ও প্রানবন্ত।
- ডাবের পানিতে ডাই-ইউরেটিক উপাদান থাকায় তা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি পান করার উপকারিতা
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্য ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপুর্ন।তাই গর্ভবতী মাকে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে খুব সচেতন থাকতে হয়। গর্ভাবস্থায় ডায়েটের ক্ষেত্রে একাধিক বিষয়ের উপর নজর রাখতে হয়। এই সময় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের প্রয়োজন হয়।
যা ডাবের পানিতে উক্ত ভিটামিন ও খনিজ পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। গর্ভবস্থায় ডাবের পানি পান কররে শরীরে পানির ভারসাম্যতা স্বাভাবিক থাকে।তাই গর্ভবতী নারীদের তৃতীয় মাস থেকে ডাবের পানি খাওয়ানো উচিত।
- গর্ভবতী মাকে যদি ডাবের পানি খাওয়ান তাহলে শিশুর মস্তিষ্ক ভালো থাকবে।যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু দুজনের জন্যই ভালো।গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১ গ্লাস করে ডাবের পানি খাওয়াতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের ব্লাড প্রেসার সব সময় নিয়ন্ত্রনে রাখা খুব জরুরী। তাই তাকে ডাবের পানি খাওয়ানো উচিত এতে তার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং বুক জ্বালা থেকে মুক্তি পাবে।
- গর্ভাবস্থায় সকালের দিকে একটু দুর্বলতা অনুভুত হয়।তাই এই সময় প্রতিনিয়ত ডাবের পানি খাওয়ালে দুর্বলভাব কেটে যায়।
- ডাবের পানিতে ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি এসিড ও ফাইবার থাকায় তা মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- সব সময় কচি ডাব খাওয়া উচিত।কারন ডাবের বয়স যত বেশি তত বেশি পরিমান চিনি তাতে থাকবে যা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- ডাব কাটার সাথে সাথে পুরো পানি পান করে নিতে হবে।
- আপনি যেকোনো সময় ডাবের পানি খেতে পারেন তবে খুব রোদ থেকে এসে সাথে সাথে ডাবের পানি পান না করায় উচিত।কারন এতে করে যাদের ঠান্ডা লাগার প্রবনতা আছে তাদের সর্দি লেগে যেতে পারে। তাই একটু থেমে শরীর ঠান্ডা করে খেতে হবে।
- ডাবের পানিতে কোনো কিছু যেমন:লবন, চিনি, গুড় ইত্যাদি না মিশিয়ে খেতে হবে।
ডাবের পানির পুষ্টি উপাদান
- পানি - ৯৫%
- ক্যালসিয়াম - ০.৬৯%
- পটাসিয়াম - ০.২৫%
- ফসফরিক এসিড - ০.৫৬%
- ম্যাগনেশিয়াম - ০.৫৯%
- নাইট্রোজেন - ০.০৫%
- আয়রন - ০.৫%
- চিনি - ০.৮০%
- আঁশ - ০.৬২%
- প্রোটিন - ০.৭২%
- চর্বি - ০.২০%
ডাবের পানি কখন খাওয়া ঠিক নয়
ডাবের পানি অপকারিতার চেয়ে উপকারি গুনই বেশী। তবে যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত গ্রহন করলে তা যেকারো জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। ডাবের পানিও অতিরিক্ত সেবন করলে তার কিছু খারাপ দিক রয়েছে।তাই ডাবের পানি ঐ যৌক্তিক পরিমান খাওয়া উচিত যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।তাই নির্দিষ্ট পরিমান ডাবের পানি আমাদের নিয়মিত পান করা উচিত।
- ডাবের পানিতে চিনির পরিমান কম থাকলেও এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালোর রয়েছে যা আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমান ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীদের পানা করা উচিত নয় কারন তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- ডাবের পানিতে সোডিয়াম থাকায় তা অতিরিক্ত পরিমান গ্রহন করতে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করলে ডায়ারিয়া হতে পারে।
- যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি পান করা উচিত।
- যাদের অতিরিক্ত ঠান্ডাজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের কোনোভাবেই অতিরিক্ত ডাবের পানি খাওয়া উচিত নয়।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন অতিরিক্ত গরমে ডাবের পানি পান করার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে ডাবের পানি খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url