পেঁয়াজ কেনো খাবেন বিস্তারীতভাবে জেনে নিন
গরম থেকে বাঁচতে ডাবের পানির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতাগুলো নিয়ে। বাইরের সৌন্দর্য চর্চার পাশাপশি দেহের ভেতরের অংশেরও যত্নের প্রয়োজন রয়েছে।এ জন্য আমাদের প্রতিদিন এই পুষ্টিকর খাবারটি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। পেঁয়াজ হলো সেই পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের ভেতরে ও বাইরে দুটো দিকই সুস্থ রাখে।
ভুমিকা
আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন পেঁয়াজের বিস্ময়কর উপকারি দিকগুলো নিয়ে যা আমরা এতোদিন জানতান না। আরোও জানতে পারবেন কিভাবে পেঁয়াজ খেলে উপকৃত হবেন।তবে কিছু ক্ষতির দিকও রয়েছে তবে তা খুবই অল্প পরিমানে।তাই আসুন নীচে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা করি।
পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা
পেঁয়াজ হলো সর্বজনবিদীত একটি সুস্বাদু খাবার। পেঁয়াজ প্রাকৃতিকভাবে ভেষজ উপাদানে ভরপুর।আমাদের দেশের মানুষেরা পেঁয়াজ কাাঁচা অথবা রান্না দুই অবস্থাতে খেয়ে থাকে। পেঁয়াজের কোনো অংশই খাওয়া থেকে বাদ পড়েনা এর সবুজ গাছ ও কলি আমরা রান্না করে খেয়ে থাকি। পেয়াঁজের কলির সাথে লবন মাখিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পেঁয়াজের পুষ্টি উপাদান সমুহ
- ভিটমিন বি১ (থায়ামিন)
- ভিটামিন বি২(রিবোফ্লেবিন)
- ভিটামিন বি৩(নায়াসিন)
- ভিটামিন বি৫(প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন বি৯(ফোলেট)
- ভিটামিন সি
পেঁয়াজ শরীরে শক্তি যোগায় ও এটির ভিটামিনের গুনাগুন দেহকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে।হার্টের কার্যক্ষমতা ও কার্ডিওভাসকুলার ফাংশন ঠিকঠাক রাখতে সহায়তা করে।
উপকারিতা:
হজমশক্তি বৃদ্ধি: আপনাদের মধ্যে যাদের মধ্যে হজমের সমস্যা আছে তারা যদি প্রতিদিন ১ টি করে পেঁয়াজ খান, তাহলে এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম হজমের গতিকে তরান্বিত করবে। যার ফলে দ্রুত খাবার হজম হবে।
রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রন করে
নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে। আর রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক মতো থাকলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনাও কমে যাবে।
বিভিন্ন সংক্রমন থেকে মুক্তি পেতে করনীয়
পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কার্মিনেটিভ, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থ রয়েছে যা শরীরের সংক্রমন প্রতিরোধে সহয়তা করে। এছাড়া পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি, কাশি, গলা ব্যাথা, জ্বর ও অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দাঁতের সংক্রমন রোধ
পেঁয়াজ দাঁতের সংক্রমন প্রতিরোধেও কার্যকর ভুমিকা পালন করে। আপনি যদি পেঁয়াজ চিবিয়ে খান তাহলে দাঁতের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা জীবানুগুলো মরে যায়। ফলে দাঁত থাকে সুস্থ ও সবল।
চুল পড়া রোধ করে
চুল পড়া রোধে ও চুল বৃদ্ধিতে পেঁয়াজ কার্যকর ভুমিকা পালন করে।পেঁয়াজের প্রচুর পরিমানে সালফার থাকে যা চুল পড়া রোধে সহায়তা করে। বিশেষ করে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে ও প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হার্টের সমস্যা রোধে সহায়তা করে
আপনাদের মধ্যে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা যদি প্রতিদিন ২ চামচ পেঁয়াজের রস খান তাহলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন। প্রতিদিন খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজের সালাত রাখবেন যা হার্টের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে কার্যকর ভুমিকা পালন করবে।
হাঁপানির সমস্যা রোধে সহয়তা করে
আপনাদের মধ্যে যাদের হাাঁপানির সমস্যা আছে তারা যদি দুইবেলা ১ চা চামচ পেঁয়াজের রস খান তাহলে হাঁপানির সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন। বিশেষ করে রাতের বেলা ১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচের চার ভাগের ১ ভাগ হলুদের গুঁড়া, ১ চা চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে হাাঁপানি জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন।
প্রস্রাব ধারনক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে
আপনাদের মধ্যে যাদের প্রস্রাবের সমস্যা আছে অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ আসলে আর দাড়িয়ে থাকতে পারেন না ফোঁটা ফোঁটা বেরিয়ে যায়, তারা যদি ১ চা চামচ পেঁয়াজের রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে ৪ সপ্তাহ খেলে প্রস্রাবের ধারনক্ষমতা বাড়ে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া থেকে মুক্তি যাওয়া যায়।
অর্শ থেকে মুক্তি দেয়
আপনাদের মধ্যে যাদের অর্শ রোগ রয়েছে, এই অর্শের কারনে অনবরত রক্ত পড়তে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ১ চা চামচ পেঁয়াজের রস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের সবজির সাথে সালাত ও পেঁয়াজ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর হয় এবং পায়ু পথের যেকোনো সমস্যা সমাধান হয়।
হিট স্ট্রোক থেকে মুক্তি দেয়
অত্যধিক গরমে হঠাৎ করে পানি খেলে সর্দি লেগে যেতে পারে।এ সময় খাবার অথবা সালাদের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে পিপাসা কম লাগবে এবং হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
হেঁচকি উঠলে তা উপসমে সাহায্য করে
হঠাৎ করে হেঁচকি উঠলে ১ চা চামচ পেঁয়াজের রস ২ চা চামচ পানি মিশিয়ে ২ থেকে ৩ বার একটু একটু করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে।
কানে পুঁজ রোধ করে
অনেক বাচ্চাদের কানে ঘা হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হয়, এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস একটু গরম করে ১ থেকে ২ ফোঁটা কানে দিলে ঘা সেরে যায়। এটি কানের পুঁজের উপসমে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
বমি বমি ভাব দুর করে
আপনি যদি বমি বমি ভাব অনুভব করেন তাহলে ৪/৫ ফোঁটা পেঁয়াজের রস ১ কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
বিষফোড়া ফাটাতে সাহায্য করে
পেকে যাওয়া ফোড়ার উপর পেঁয়াজের রস একটু গরম করে লাগিয়ে দিলে ওই বিষফোঁড়া ফেটে যাবে।
মাথাব্যাথা দুর করে
সর্দি জ্বর হলে মাথাব্যাথা হয়, তাই এই সময় ২ থেকে ৩ ফোঁটা পেঁয়াজের রস নাকে টানলে তৎক্ষনাৎ মাথা ব্যাথা কমে যায়।
মুখের ইনফেকশন দুর করে
মুখের ভিতর যদি আপনার কোনো রকম ইনফেকশন হয়ে থাকে বা কোনো রোগ হয়ে থাকে তাহলে আপনি যদি ১ থেকে ২ টি করে কাাঁচা পেয়াজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে তা খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়ে যায়।
চোখের জ্যোতি বাড়ায়
নিয়মিত পেঁয়াজের রস সেবন করলে যাদের দৃষ্টি শক্তির সমস্যা আছে তা অচিরেই ঠিক হয়ে যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে
কাঁচা পেঁয়াজে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম রয়েছে যা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ খাওয়ার কিছু সমস্যা
পেঁয়াজ খাওয়ার অপকারিতার চেয়ে উপকারি গুনই বেশী। তবে যেকোনো জিনিস অতিরিক্ত গ্রহন করলে তা যেকারো জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। পেঁয়াজও অতিরিক্ত সেবন করলে তার কিছু খারাপ দিক রয়েছে।তাই পেঁয়াজ ঐ যৌক্তিক পরিমান খাওয়া উচিত যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।তাই নির্দিষ্ট পরিমান পেঁয়াজ আমাদের নিয়মিত খাওয়া উচিত।
অ্যালার্জি দেখা দেয়
আপনাদের মধ্যে যাদের শরীরে অ্যালার্জি আছে তাদের পেঁয়াজ খাওয়াটা মোটেই নিরাপদ নয়।কারন অ্যালার্জির অন্যতম উৎস হলো পেঁয়াজ। এটি খাওয়ার ফলে চোখে লালভাব দেখা দেয়, চুলকানি হয়, শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় ও শরীর জ্বলে।
চোখের সমস্যা
পেঁয়াজের রসের মধ্যে রয়েছে সালফিউরিক এসিড যা চোখে লাগলে চোখ থেকে পানি বের হয় ও চোখ লাল হয়ে যায়।
মুখে দুর্গন্ধ হয়
যে সব মানুষের মুখ থেকে গন্ধ বের হয় তার মুল কারন হচ্ছে অতিরিক্ত পেঁয়াজ ভক্ষন।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে পেঁয়াজ খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url