গরুর মাংশের বিস্ময়কর ১৫ টি উপকারীতা সম্পর্কে জেনে নিন

দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে গরুর মাংশের বিস্ময়কর উপকারীতাগুলো নিয়ে।মার্কিন ও ব্রিট্রিশ গবেষকার বলছেন চর্বিমুক্ত ও পরিমিত গরুর মাংশ খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য মোটেও ঝুঁকিপুর্ন নয়। তবে চর্বিযুক্ত গরুর মাংশ ও অপরিমিত গ্রহন দেহের জন্য ক্ষতিকর।তাই নিয়ম মেনে গরুর মাংশ খাওয়া আমাদের সকলের উচিত।
গরুর মাংশের বিস্ময়কর ১৫ টি উপকারীতা সম্পর্কে জেনে নিন

ভুমিকা

গবেষকরা বলছেন গরুর মাংশ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পুরন হয় এবং হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় গরুর মাংশ অতুলনীয়। তাই আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন গরুর মাংশ কেন খাবেন, গরুর মাংশের উপকারীতাগুলো কি কি ও গরুর মাংশ কিভাবে খাবেন ইত্যাদি নিয়ে।

গরুর মাংশ কেন খাবেন

এতে রয়েছে প্রোটিন: গরুর মাংশ এমন এক ধরনের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা হাড়, ত্বক ও তরুনাস্থি গঠনে সহায়তা করে এবং চর্বিহীন পেশির ঘনত্ব অর্জনে সহয়তা করে।১৫০ গ্রাম গরুর মাংশে রয়েছে ৪৬ গ্রাম প্রোটিন। গরুর মাংশে চর্বি যত কম থাকবে প্রোটিন তত বেশি থাকবে। 
চর্বিহীন পেশীর ঘনত্ব, ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকে সুরক্ষা দেয়, অসুস্থতা ও রোগ সারাতে সহয়তা করে।হাড় মজবুত ও সুস্থ রাখে। পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার সম্ভবনা কমিয়ে দেয়।

এতে রয়েছে মিনারেল: গরুর মাংশ বিভিন্ন ধরনের মিনারেলের অন্যতম সেরা উৎস। গরুর মাংশ এমন একটি খাবার যাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমানে মিনারেল। ১৫০ গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংশে রয়েছে ৭২ গ্রাম জিংক, ৫২ গ্রাম সেলেনিয়াম, ৩৮ গ্রাম ফসফরাস, আয়রন ২৬ গ্রাম, ১৮ গ্রাম পটাসিয়াম ও ১০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম। 

এই সকল মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, স্মৃতিভ্রম রোগের ঝুঁকি কমায়, হাঁড় ও দাঁতকে মজবুত করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে, রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে ও মাইগ্রেনের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও গরুর মাংশে এই সকর মিনারেল থাকায় আয়রনের ঘাটতি রোধে সহায়তা করে ও রক্তশুন্যতা দুর করে। গরুর মাংশে ক্যালসিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজও রয়েছে।

এতে রয়েছে ভিটামিন: ১৫০ গ্রাম গরুর মাংশে রয়েছে ৮২ গ্রাম ভিটামিন বি১২, ৫০ গ্রাম ভিটামিন বি৩, ৩৬ গ্রাম ভিটামিন বি৬, ১৮ গ্রাম ভিটামিন বি২ ও ১৪ শতাংশ ভিটামিন বি৫। এছাড়া গরুর মাংশে রয়েছে ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে। ভিটামিন বি গরুর মাংশে পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায়। তাই এই মাংশ নিয়মিত খেলে আপনাদের ত্বককে করবে প্রানবন্ত, ঘুম স্বাভাবিক হয়, মেজাজ নিয়ন্ত্রনে থাকে, মনুষিক সমস্যা, মানসিক বিষন্নতা ও স্নায়ুকোষ পুনর্গঠিত করে।

এতে রয়েছে ট্রান্স ফ্যাট: Conjugated Linoleic Acid কে ট্রান্স ফ্যাট বলা হয় যা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়। আপনাদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা আছে যে ট্রান্সফ্যাট মানে ক্ষতিকর ফ্যাট, কিন্তু গবেষনায় দেখা গেছে এই Conjugated Linoleic Acid ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে। 
এটি শরীরের চর্বি কমিয়ে দেয়। আর এই Conjugated Linoleic Acid এর প্রধান উৎস হলো গরুর মাংশ।

এতে রয়েছে ক্রিয়েটিন: এটি এমন একটি সাপ্লিমেন্ট যা আমাদের শরীরের Exercise Performance কে বৃদ্ধি করে পেশির গঠন ও বিকাশে সহায়তা করে এবং পেশিকে করে তোলে বলিষ্ঠ ও শক্তিবহুল। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংশে রয়েছে ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্রিয়েটিন।

গরুর মাংশের বিস্ময়কর উপকারীতা

গরুর মাংশে এমন কিছু উপকারীতা রয়েছে যা অবাক করার মতো। এই মাংশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।তাই প্রতিদিন একজন মানুষকে ওজন অনুযায়ী লাল মাংস গ্রহন করতে হবে। যেমন:একজন মানুষের যদি ৫০ কেজি ওজন হয় তাকে ৫০ গ্রাম লাল মাংস খেতে পারে।তবে কারো যদি কিডনি বা অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে পরিমান কম করে খেতে হবে।

১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে
  • পানি-৬৭%
  • ক্যালোরি-১৮০গ্রাম
  • প্রোটিন-২১গ্রাম
  • চর্বি-১৪গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম-৬ মি.গ্রা
  • লৌহ-২.৩ মি.গ্রা
  • ভিটামিন বি১-০.০৮মি.গ্রা.
  • ভিটামিন বি২-০.২৬মি.গ্রা
  • নায়াসিন-৮.২মি.গ্রা

উপকারিতা

  1. গরুর মাংশে এমন ৯ টি পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন যেমন: প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন ও রিবোফ্লেভিন।
  2. গরুর মাংশ শুধু শারীরিক বৃদ্ধি নয় বরং বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন ও রক্ত বৃ্দ্ধিতেও ভুমিকা রাখে।
  3. গরুর মাংশে যে খনিজ লবনগুলো রয়েছে যেমন: ‍জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম ও বিপুল পরিমানে আয়রন যা শরীরকে সুস্থ রাকতে সহয়তা করে।
  4. গরুর হাড়. কলিজা ও মগজ থেকে আমরা যে প্রোটিন পায় তা আমাদের হাড় ও মাংশপেশীকে সুস্থ রাখতে সহয়তা করে।
  5. গরুর মাংশে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জিংক রয়েচে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  6. শিশুদের শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর মাংশের কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে এই খাবারটি কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
  7. গরুর মাংশ আয়রনের এক দারুন উৎস তাই আমাদের সপ্তাহে অন্তত একবার গরুর মাংশ খাওয়া উচিত।
  8. আমাদের শরীরের পেশীতে “কারনোসাইন” এক ধরনের উপাদান খুবই প্রয়োজন, এই উপাদান তৈরি হয় বেটা-অ্যালানাইন থেকে।আর এই বেটা অ্যালানাইন পাওয়া যায় গরুর মাংশে।
  9. আপনি যদি মাংশ পেশী গঠন করতে চান তাহলে প্রানীজ আমিষ খুবই প্রয়োজন। কারন এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যমাইনো এসিড।এজন্য গরুর মাংশকে বলা হয় Complete protin. আপনি যদি এই প্রানীজ প্রোটিন পরিমিত পরিমানে গ্রহন না করেন শরীরের পেশী ক্ষয় হতে থাকবে। এই অবস্থাকে বল হয় ”স্যারকোপেনিয়া”।
  10. যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের পেশীতে বাড়তি শক্তি যোগান দিতে হয়। আর এই শক্তির যোগান দেয় কারনোসাইন নামের একটি উপাদান। কারন কারনোসাইন পরিমান মতো শরীরে না থাকলে শরীর অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর এই কারনোসাইন তৈরি হয় বেটা-অ্যালানাইন থেকে। গরুর মাংশে বেটা-অ্যালানাইন রয়েছে যা থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে বেট-অ্যালানাইন তৈরি হয়।
  11. আপনার শরীরে যদি লোহিত কনিকার পরিমান কমে যায় তাহলে রক্ত শুন্যতা দেখা দেয় যাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া।ফলে বক্তে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় আয়রনের ঘাটতির কারনে। প্রানীজ আমিষের মধ্যে গরুর মাংশই আয়রনের সবচেয়ে বড় উৎস।
  12. গরুর মাংশে রয়েছে উপকারী বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা পরিমিত মাত্রায় ও নিয়মানুযায়ী খেলে তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
  13. গরুর মাংশে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় যা হৃৎপিন্ডের জন্য উপকারী।
  14. গরুর মাংশে রয়েছে ক্রিয়েটাইন যা পেশী শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  15. গরুর মাংশে রয়েছে ডায়েটারি কোলেস্টরল, যা রক্তের কোলেস্টরল বাড়ায় না বরং নতুন কোষ গঠনে সহয়তা করে।

গরুর মাংশ কিভাবে খাবেন

আপনারা গরুর মাংশকে ব্যপক দোয়ারোপ করে থাকেন বিভিন্ন রোগের জন্য, কিন্তু এটা মোটেও সঠিক নয়। কারন গরুর মাংশে অনেক উপকারী দিক রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন নিম্নক্তো উপায়ে যদি গরুর মাংশ খেতে পারেন তাহলে এর প্রকৃত পুষ্টি পাবেন।
  • কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংশ খেতে হবে।
  • পাতলা ঝোল বা কম মশলা দিয়ে গরুর মাংশ খেলে তা হবে খুবই স্বাস্থ্যকর।
  • গরুর মাংশের সাথে লাউ, পেঁপে অথবা আলু মিশিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকার।
  • অলিভ ওয়েল বা অন্য কোনো তেল ব্যবহার করে রান্না কলে খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী।

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন গরুর মাংশের উপকারিতাগুলো নিয়ে এবং এটি নিয়মিত খেলে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে গরুর মাংশ খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।

যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩