পান্তা ভাতের বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারীতভাবে জেনে নিন
জিরো ফিগার বানানোর উপায় - ফিগার ঠিক রাখার উপায় সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে পান্তা ভাতের বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে ধান উৎপন্ন হয় সেসব অঞ্চলে ভাত খাওয়ার প্রবনতা খুব বেশি এবং ঐসব দেশে ভাত পানিতে ভিজিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার সংস্কৃতি চালু আছে।তাই আজকের আর্টিকেলটি পড়লে বুঝতে পারবেন পান্তা ভাতের স্বাস্থ্যগুন।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কি বিস্ময়কর খাবার এই পান্তা ভাত।আরোও জানতে পারবেন এই খাবারের পুষ্টিগুন সম্পর্কে, পান্তা ভাতের উপকারিতা গুলো কি কি, কিভাবে পান্তা ভাত তৈরি করতে হয়, পান্তা ভাতের পুষ্টি বাড়ানোর জন্য কি ধরনের উপায় গ্রহন করবেন, কিভাবে এই খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে।
পান্তা ভাতে বিস্ময়কর উপকারিতা
বহুকাল আগে থেকে আমাদের দেশের মানুষ পান্তা ভাত খেয়ে থাকে। সকালের নাস্তায় প্রায় প্রতি বাড়িতেই পান্তা খাওয়া হতো। শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষের মধ্যে পান্তা খাওয়ার প্রচলন বেশী।ভারতের পুষ্টিবিদ শ্বেতা শাহ পান্তা ভাতের উপর গবেষনা করে এর উপকারিতা নিয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য প্রদান করেছেন যা নীচে আলোচনা করা হলো।
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুন
পান্তা ভাত মাইক্রোফ্লোরা সমৃদ্ধ একটি খাবার যা প্রো-বায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এই খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বাড়ায়, ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে, অন্ত্রের সংক্রমন রোধ করে, চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়। পান্তা ভাতে থাকা ইলেকট্রোলাইট সকল ধরনের ক্লান্তি, দুর্বলতা ও ডিহাইড্রেশন নিরাময়ে কাজ করে।
পান্তা ভাতে আরোও রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পদার্থ, মেটাবোলাইট যেমন: ফেনোলিক্স, ফ্ল্যাভন, ভিটামিন ই, ফাইটোস্টেরল, লিনোলিক অ্যাসিড ইত্যাদি। এর ভালো ব্যাকটেরিয়া কোলেষ্টরল কমাতে, পেরিস্টালসিস উন্নত করতে এবং ডায়ারিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।
পান্তা ভাত স্বাস্থ্যকর কেন
- ১০০ গ্রাম সাধারন ভাতে আয়রন রয়েছে ৩.৫ মিলিগ্রাম ও পান্তা ভাতে রয়েছে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম অর্থাৎ ২১ গুন বেশি।
- ১০০ গ্রাম সাধারন ভাতে ক্যালসিয়াস রয়েছে ২১ মিলিগ্রাম ও পান্তা ভাতে রয়েছে ৮৫০ মিলিগ্রাম অর্থাৎ ৪০ গুন বেশি।
- পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও জিংকের পরিমানও বহুগুন বেশি রয়েছে পান্তা ভাতে।
- পান্তা ভাতে রয়েছে পর্যাপ্ত মিনারেল যেমন:আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিংক ইত্যাদি। আর যে ভিটামিনগুলো রয়েছে তা হলো ভিটামিন-বি৬, বি১২ ও ভিটামিন-কে।
- পান্তা ভাতে পটাসিয়াম বেড়ে ৮৩৯ মিলিগ্রাম হয় যা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমান কমে যায় এবং জিংকের পরিমান বেড়ে যায় যা যেকোনো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
- সকালের নাস্তার জন্য পান্তা ভাত খুবই আদর্শ একটি খাবার।কারন পান্তাভাত শরীরের অম্ল ও ক্ষারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
- পান্তা ভাত ভিটামিন বি৬ ও বি১২ এর খুব ভালো উৎস যা রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে।
- পান্তা ভাত যদি লাল চালের ভাত হয় তাহলে তার পুষ্টিগুন আরও বেশি হয়, সাদা চালের পান্তা থেকে আবার বসা ভাত অর্থাৎ মাড় না ফেলে যে ভাত রান্না করা হয় সেই ভাতের পান্তার পুষ্টিগুন মাড় ফেলা ভাতের থেকে বেশি হয়।
পান্তা ভাতের উপকারিতা
গবেষনায় দেখা গেছে, আপনি যদি নিয়মিত পান্তা ভাত খান তাহলে এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি১২ শরীরের ক্লান্তি দুর করতে সহায়তা করে। যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুব উপকারী খাবার। পান্তা ভাত অন্ত্রের জন্য খুব উপকারী খাবার।এর মধ্যে যে প্রোবায়োটিক রয়েছে তা গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টাইনাল সমস্যা নিরাময়ে সহয়তা করে।
পান্তা ভাতের প্রস্তুত প্রনালী
আগের দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান্তা ভাত তৈরি করতে হয়।পরদিন পান্তা ভাতের সাথে লবন মিশিয়ে খাওয়া হয়।তবে পান্তা ভাতের সাথে ভাজা মাছ, ডালের বড়া, ডিম ভাজা ও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা দিয়ে খেলে বেশ সুস্বাদু লাগে।অনেকে আবার শুধু পোড়া মরিচ আর পেঁয়াজ পান্তা ভাতে ম্যাশ করে খেয়ে থাকে।
পান্তা ভাতের পুষ্টি বাড়ানোর উপায়
পান্তা ভাত নিজেই একটি পুষ্টিকর খাবার যা অন্যান্য খাবারের সঙ্গে যোগ করে খাওয়া যেতে পারে।কিন্তু আমরা যদি এই খাবারের সাথে পুষ্টিকর খাবার যোগ করি যেমন:শাক-সবজি, বাদাম, ডাল ও কিছু মুরগির মাংস তাহলে এই খাবারটি আরও বেশি পুষ্টিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই এই ভাবে খাবারটি তৈরি করলে তা হবে মহা পুষ্টিকর একটি খাবার।
পান্তা ভাতের বিভিন্ন গুন
- পান্তাভাতে ফার্মেন্টশন (গাঁজন) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ফলে এতে ভিটামিন বি১২ এর মাত্রা বেড়ে যায়।এতে ক্লান্তি দুর হয়। কিছু ক্ষেত্রে অনিদ্রা দুর করতেও সহায়তা করে।
- বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন পান্তাভাত পি এইচ ব্যালেন্স করতে সহায়তা করে। আলসার রোগীদের জন্য পান্তা ভাত মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
- পান্তা ভাতে ফারমেন্টেশন সংঘটিত হয়ে ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে। পান্তা ভাত দুগ্ধবতী মায়েদের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- পান্তা ভাত পেটে ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ তৈরি করে ফলে কোষ্টকাঠিন্য দুর হয়।
- পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমান কম থাকে, অন্যদিকে পটাসিয়াম যথেষ্ট পরিমানে থাকে।যা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
- পান্তা ভাতে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পরিমান প্রায় নেই বললেই চলে।তাই এই খাবারটি যদি নিয়মিত খান তাহলে তা ওজন কমাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।
- পান্তা ভাতে প্রচুর কোলাজেন তৈরি হয় যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যার ফলে ত্বক হয় মসৃন, ফর্সা, উজ্জল ও টানটান।
- পান্তা ভাতে কিছু রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ রয়েছে যা কোলেস্টরল কমাতে সহায়তা করে।
- এই খাবারে অনেক উপকারি ব্যাকটেরিয়া আছে যা প্রোবায়োটিকের কাজ করে এবং সারাদিন কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়।
ভাত ও পান্তার গুনাগুনের মধ্যে পার্থক্য
পান্তা ভাতের পুষ্টিগুন ভাতের চেয়ে বেশি থাকে।নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। ভাতের চেয়ে পান্তায় সোডিয়ামের পরিমান তুলনামুলক কম থাকায় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।ভাত যদি অধিক সময় পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায় তাহলে তা পচে যায়।কিন্তু পান্তা ভাতে যদি পানি দিয়ে রেখে দেওয়া যায় তাহলে তা ফারমেন্টেশন বা গাজন হয়ে ব্যাক্টেরিয়া বা ইস্ট শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক এসিড তৈরি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে পান্তা ভাত
আপনি যদি অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন এবং অনিয়মিতভাবে খাবার গ্রহন করেন তাহলে গোপনেই আপনার শরীরে রোগ বালা বাসা বাঁধবে যা আপনি জানতেই পারবেন না।ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার প্রধানতম কারন হলো অনিয়মিত খাদ্যাভাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা।
আপনার রক্তে যদি ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পায় তাহলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। চোখ, কিডনি, লিভার ও হার্টে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না থাকলে প্রানঘাতীও হতে পারে।আপনাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা দরকার।
সাধারনত ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও টাইট-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে অগ্নাশয় থেকে একেবারে ইনসুলিন তৈরি হয় না, অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে অগ্নাশয় খুব কম পরিমানে ইনসুলিন তৈরি করে।ডায়াবেটিস রোগীদের ভাত খেতে নিষেধ করা হয় কারন এতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
গবেষনায় দেখা গেছে ডায়াবেটিস রোগীদের গরম ভাতের পরিবর্তে পান্তা ভাত খাওয়ানো হয় তাহলে তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন পান্তা ভাত শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যই উপকারী নয় বরং এই ভাত খেলে দীর্ঘক্ষন পেট ভরা থাকে, শরীরে এনার্জী বৃদ্ধি করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
লেখকের শেষকথা
আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন কি বিস্ময়করভাবে পান্তা ভাত আমাদের উপকার করে।নিয়মিত এই খাবারটি খেলে শারীরিক খুবই উপকৃত হবে বলে আশা করি। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url