ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারীতভাবে জেনে নিন
টাইফয়েড এর ক্ষতিকর দিক - টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে। এছাড়া আরোও আলোচনা করা হয়েছে টাইফয়েড জ্বর হলে করনীয় কি?বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যপক উন্নতি ঘটায় বিভিন্ন ধরনের জ্বর এখন সাধারন রোগে পরিনত হয়েছে।কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে এই জ্বর সহজেই সেরে যায়।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি বিস্তারীত পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কি কারনে ঘন ঘন জ্বর হয় এই জ্বরের লক্ষনগুলো কি, শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কি কারন, ঘন ঘন জ্বর হলে কি করতে হবে,কাঁপুনী দিয়ে জ্বর আসলে কি করতে হবে ও ভাইরাস জ্বরের লক্ষন কি এবং ভাইরাস জ্বর নিরাময়ে কি ব্যবস্থা করতে হবে তা আলোচনা করা হয়েছে।
ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারনে জ্বর হতে পারে, তবে সবচেয়ে সাধারন বিষয় হলো ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়া অথবা সর্দি-কাশির কারনে জ্বর হওয়া। এছাড়া এগুলোর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারনে ব্যাকটেরিয় বা ভাইরাসের আক্রমন হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। আবার প্রটোজোয়া বা ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারনেও জ্বর হতে পারে।
যেকোনো ধরনের ম্যালিগনেন্সি বা ক্যান্সারের কারনেও জ্বর হতে পারে। টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেশন হলে, মাসিকের কারনে, আর্কষিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে।করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া হলেও জ্বর হতে পারে।
ঘন ঘন জ্বর হওয়া কিসের লক্ষণ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে শরীরে নানা ধরনের অসুখ বাসা বাঁধে। যার ফলস্বরুপ ঘন ঘন জ্বর হয়। মুলত জ্বর আসলে কোনো রোগ নয় রোগের উপসর্গ মাত্র।সাধারনত বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন:করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের আক্রমনের কারনে জ্বর হয়ে থাকে।
শিশুর ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারণ
ভাইরাসের আক্রমনে শিশুরা জ্বরে ভুগে থাকে। জ্বর শরীরের একটি প্রতিরোধমুলক প্রতিক্রিয়া।ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর তার বিরুদ্ধে শরীর লড়াই করে থাকে জ্বরের মাধ্যমে। তবে এই জ্বর যদি ঘন ঘন হয় তবে তা ভয়ের কারন হতে পারে। এজন্য আমাদের খুব ভালোভাবে জানা দরকার শিশু অন্য কোনো সমস্যায় আক্রান্ত কিনা।
- জন্মগতভাবে মুত্রতন্ত্রের যদি ত্রুটি থাকে এবং প্রশাবে সংক্রমন হয় তাহলে জ্বর আসতে পারে।
- শিশু যদি বারবার জ্বরে ভোগে একদম সেরে না যায়, তাহলে শিশুর জটিল কোনো রোগ যেমন:কিডনি, ক্যান্সার আছে কিনা তা দেখতে হবে।
- কিছু কিছু রোগ আছে যা বারবার আক্রমন করলে জ্বর দীর্ঘমেয়াদী করে তুলতে পারে যেমন:যক্ষা, ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড জ্বর।
- যেসকল শিশু প্রায়ই ঠান্ডা, সর্দি ও কাশিতে ভোগে, তাদের বেশির ভাগ কান পাকা ও সাইনাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হয় বারবার।
ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়
জ্বর কোনো রোগ নয় রোগের লক্ষন মাত্র।আপনার শরীরের তাপমাত্রা তখনই বাড়বে যখন আপনি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হবেন।আমাদের শরীরে আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিরোধক দেয়াল রয়েছে যা জীবানুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করেন। আমরা জ্বর নিয়ে নানা ধরনের নিয়ম মেনে চলি, যা পুরোপুরি সঠিক নয়।
গোসল করা: আপনাদের মধ্যে অনেকে ধারনা পোষন করেন যে, জ্বর হলে গোসল করা যাবে না।কিন্তু এটি সম্পুর্ন ভুল ধারনা। জ্বর হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং দেহে প্রান চাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। সাধারনত ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করলে ভালো হয়।
তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা ঠিক নয়।কারন এতে ত্বকের নীচে রক্ত জালিকা সংকুচিত হয়ে যায়, কাঁপুনি হয়।যদি গোসল করলে সমস্যা মনে হয় তাহলে বিকল্প হিসেবে ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেতে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
বরফ ও জলপট্টির ব্যবহার: প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে জ্বর হলে জলপট্টির প্রচলন আছে।তবে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে গেলে বগলের নীচে ও কুঁচকিতে বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে।এসকল স্থানে রক্তনালিগুলো অপেক্ষাকৃত প্রসস্থ। ফলে এই অবস্থায় ঠান্ডা প্রয়োগ করলে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়।
আপনি যদি বরফের খন্ড গামছা বা কাপড়ে পেঁচিয়ে উল্লিখিত স্থানে কিছুক্ষন চেপে রাখলে দ্রুত তাপমাত্রা কমে যায়। এভাবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখা যেতে পারে।
বিশ্রাম: জ্বর হলে ঘুম বা বিশ্রাম খুবই প্রয়োজন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী দিনেও বিশ্রাম দরকার।
পানি পান: কারো জ্বর হলে পানিশুন্যতার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।শরীরের তাপমাত্রা যত বাড়বে পানিশূন্যতার হার তত বেশি বাড়বে। এছাড়া জ্বরের সময় ক্ষুধামন্দা ও বমি এ দুটি পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। পানিশূন্যতার কারণে মাংসপেশিতে চিবানো বা ব্যথা অনুভুত হয়। এর ফলে রক্তচাপ ও প্রশ্রাব কমে যেতে পারে।
বাচ্চাদের ঘন ঘন জ্বর হলে করণীয়
বাংলাদেশের অনেক শিশু জন্মের পর থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম। হালকা ঠান্ডা কিংবা গরম পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিশু এই জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে ভোগে। এই আর্টিকেলটিতে ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারন উল্লেখ করা
- শিশুর জ্বর হলে বাবা মায়ের কষ্টের অন্ত থাকেনা এবং দিনের পর দিন অভিভাবকগন উদ্বিগ্নতার সাথে দিন কাটায়। জ্বর একটি স্বাভাবিক অসুখ ও অন্য কোনো অসুখের সতর্কবার্তা।তাই শিশুর জ্বর হলে ঘাবড়ে না গিয়ে কিভাবে জ্বর কমানো যায় তার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
- শিশুর জ্বর আসার প্রাথমিক লক্ষন হলো স্বাভাবিকের চেয়ে শরীর বেশি গরম হয়ে যাবে, চোখ-মুখ লাল হবে এবং অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে থাকে।শিশুর বারবার পিপাসা লাগবে।এসময় শিশুর কানের ব্যাথা, গলা ব্যাথা, ফুসকুড়ি বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
- শিশু যে ঘরে থাকে সেই ঘরটি ঠান্ডা রাখতে হবে।আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দরজা-জানালা বন্ধ করে কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন, যা কখনই করা যাবেনা। শিশুর জ্বর হলে তাকে খোলামেলা কক্ষে রাখতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত আলো, বাতাস চলাচল করতে পারে।
- শিশুকে হালকা পোশাক পরিয়ে রাখবেন। সম্ভব হলে জামা খুলে রাখতে পারেন। এতে জ্বর দ্রুত কমে যাবে। শিশুকে পোষাক পরালে সেটি যেন সুতি কাপড় হয়।
- জ্বরের সময় শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে পারলে ভালো হয়। শরীর যেন কোনোভাবেই পানি শূন্য হয়ে না পড়ে।শিশুকে তরল খাবার খেতে দিতে হবে যেমন: ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি।
- সাধারনত জ্বর হলে শরীর স্পঞ্জিং করা হয়ে থাকে। তবে শিশুর জ্বর কমাতে স্পঞ্জিং না করাই ভালো।কারন এতে শিশুর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং সেইসাথে তাপমাত্রাও বেড়ে যেতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ওষুধ দেওয়া যাবেনা। কারন এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই ঘরোয়া প্রচেষ্টায় যদি শিশুর জ্বর না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার কারণ
- ম্যালেরিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং শরীর ঘামে, মাথা ও পেট ব্যাথা করে, বমি হয়।
- ফুসফুসের ইনফেকশন বা নিউমোনিয়া হলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
- কিডনির ইনফেকশনের কারনেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
- পিত্তথলীর ইনফেকশনের কারনে কাাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার
যেকোনো আবহাওয়াতে ভাইরাস জ্বর হতে পারে।তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। এই ভাইরাস জ্বর ছোঁয়াচে হয়ে থাকে। ফলে এই রোগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে।তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যায়।
লক্ষন
- হঠাৎ করে জ্বর আসে এবং তা ৭ থেকে ৮ দিন ধরে এই জ্বর থাকে।
- শরীরের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যায়।
- প্রচন্ড মাথা ব্যাথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করে।
- বেশিরভাগ সময় সর্দি-কাশি থাকে।
- এই জ্বর হলে পেট ব্যাথা, বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে।
- হাত, পা অসহ্য ব্যাথা অনুভুত হয়।
- এই জ্বরে মুখ বিস্বাদ, বমি বমি ভাব ও ক্ষুধা মন্দা হয়ে থাকে।
- গলায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভুত হয়।
প্রতিকার
- এক্ষেত্রে জ্বর কমানোর ও শরীরে ব্যথা কমার ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
- জ্বর নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য শরীর,হাত ও পায়ে স্পঞ্জ করতে হবে।কোনোভাবেই জ্বর বাড়তে দেওয়া যাবেনা।
- স্বাভাবিকভাবে খাওয়া, দাওয়া করতে হবে।শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।প্রচুর ফলমুল খেতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।
লেখকের শেষকথা
আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন ঘন ঘন জ্বর হওয়ার কারনগুলো কি কি। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url