আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এসি কেনার আগে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা তথ্য বিশ্লেষন করে মেশিন বা অ্যাপ্লিকেশনকে মানুষের চিন্তাশক্তির মতো উপযোগী করে গড়ে তোলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি অ্যালগরিদম ও মেশিন লার্নিং সুবিধা কাজে লাগিয়ে থাকে। 
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
যা বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষন করে ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে থাকে। মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় তখন বিরতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বিরতির প্রয়োজন নেই।

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি? এর প্রকারভেদ এর জনক কে? কোথায় এবং কিভাবে এই আর্টিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করবেন অর্থাৎ এর সুবিধগুলো কি কি।আরও জানতে পারবেন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কিছু অসুবিধা রয়েছে যা এই আর্টিকেল পড়লে আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টি আমাদের কাছে ছিলো এক সময় কাল্পনিক একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছে। এর প্রধান কারন হলো বিশ্বের মানুষ ডিজিটাল জগতে এমনভাবে ঢুকে গেছে য, অভাবনীয় পরিমান ডাটা আমাদের হাতে চলে এসেছে। 
এই ডাটাকে প্রক্রিয়া করার জন্য কম্পিউটারও আমাদের হাতের নাগালে।এই তথ্যকে প্রক্রিয়া করার জন্য বিজ্ঞানী প্রযুক্তিবিদগন এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে।অর্থাৎ প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিনকে বুদ্ধিমান করে তোলাই হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

এটি হলে এক ধরনের সফটওয়্যার টেকনোলজি যা রোবট বা কম্পিউটারকে মানুষের মতো কাজ করায় বা ভাবায়।যেমন: যে কারো কথা বুঝতে পারা, সিদ্ধান্ত নেওয়া ও দেখে চিনতে পারা ইত্যাদি। এটি নিউরাল নেট নামে পরিচিত।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় C/C+, JAVA, MATLAB, PZTHON, SHRDLU, PROLOG, LISP, CLISP, R ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়। 

প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে ডেভেলপারগণ তাদের পছন্দসই প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রকারভেদ

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যা আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
NARROW Ai (Weak Ai) : এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সমস্যার সমাধান ও কাজ করে থাকে। বর্তমানে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশী।

ARTIFICIAL GENERAL INTELLIGENCE (Strong Ai) : যখন কোনো মেশিন অথবা কম্পিউটার মানুষের মতো কাজ করতে সক্ষম হবে তখন তাকে Strong Ai বল হবে।

SUPER INTELLIGENCE : এটি এমন একটি বুদ্ধিমত্তা হবে যা কিনা সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষের ক্ষমতাকেও অতিক্রম করবে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তা অনুভুত হয়।এই সময় ব্রিটিশ গনিতবিদ অ্যালান টুরিং এবং নিউরোলজিস্ট গ্রে ওয়াল্টার বুদ্ধিমান মেশিন এবং তার বিভিন্ন সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারনা দেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কোড ভাঙার প্রয়োজন পড়ে। যা অ্যালান টুবিং কাজটি করে দেখান।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের ক্ষেত্র সমুহ বা সুবিধাগুলো

বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন কৃত্রিম মেধার সুবাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের থেকে ভালো সেবা দিতে পারবে এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।এই প্রজন্মের মানুেষেরা স্মার্টফোনে এ.আই প্রযুক্তি নির্ভর গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা সিরি কে ব্যবহার করছে। চ্যাটিং করার জন্য আর কষ্ট করে টাইপ করতে হচ্ছে না।মুখে বলে দিলেই অ্যাসিস্ট্যান্ট তা লেখায় রুপ দিয়ে দিচ্ছে। 
ইংরেজি, ফরাসি কিংবা বাংলায় যে ভাষাতেই হোক না কেনো। বন্ধুর নাম বলে, ফোন করো বলে দিলেই ফোন কানেক্ট করে দিচ্ছে।

স্মার্ট গাড়ি ও ড্রোন: চালকা ছাড়াই এ.আই দিয়ে গাড়ি চালানোকে সম্ভব করেছে মার্কিন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা টেসলা। এ.আই নির্ভর এই গাড়ি বুঝতে পারে কিভাবে কখন ব্রেক মারতে হয়, কিভাবে রাস্তার লেন বদলাতে হয়, কিভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে হয়। এই গাড়ি নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করে কিভাবে ঘুরতে হয় ও ম্যাপ ব্যবহার করতে হয়। 

বর্তমানে এই ধরনের ৫০ হাজার টেসলার গাড়ি আমেরিকার রাস্তায় চলছে।আবার অ্যামাজন ও ওয়ালমার্টের মতো বহুজাতিক কম্পানিগুলো তাদের পন্য পৌঁছানোর জন্য ড্রোন ব্যবহার করছে।

সোশ্যাল মিড়িয়া আপডেট: একের পর এক আপডেট চলে আসছে যখন আমরা ফেসবুক, ট্যুইটার ,ইনস্টাগ্রাম ও শেয়ার চ্যাটের মতো মিড়িয়াগুলো ব্যবহার করছি। এগুলো সবই সম্ভব হচ্ছে এ, আই এর মাধ্যমে। আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা ও মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে কাস্টমাইজড আপডেট পাঠাতে থাকে এ. আই প্রযুক্তি।

মিউজিক ও মিডিয়া: যারা স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স বা ইউটিউব ব্যবহার করে তার পুরো সিদ্ধান্তই নেয় এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কারন একটি গান শুনতে শুনতে বা কোনো শিল্পীকে খোঁজার সময় রিলেটেড গান বা শিল্পী চলে আসে। ঠিক একইভাবে পাবজি, সি. এস গো বা ফোর্টনাইট সহ সব উন্নত ভিডিও গেমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সফলভাবে করা হচ্ছে।

অনলাইন বিজ্ঞাপন: কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শুধুমাত্র ইন্টারনেট সার্চকারী ব্যক্তিদের উপর নজর রেখে তল্লাশি করছে তাই নয় গ্রাহকদের পছন্দ ও অপছন্দ বিচার করে সেইমতো তাদের সামনে বিজ্ঞাপন হাজির করে। ফলে বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিজ্ঞাপনের ব্যবসা ২৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

নেভিগেশন এবং ট্রাভেল: গুগল ম্যাপ পুরোটাই চালিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা।গুগল যখন অ্যাপেল বা অন্য কোনো সংস্থার ম্যাপ ব্যবহার করে আমরা ক্যাব বুকিং করি, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রাস্তার সেই সময়ের যানজট বা ভাড়া সম্পর্কে আমাদের জানায়।

ব্যাংক পরিসেবা: ব্যাংকিং সেক্টরেও বর্তমানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা যখন কোনো একটি লেনদেন করি তখন তৎক্ষনাৎ যে এস. এম. এস বা ইমেল অ্যালার্ট পাই, সেটি সম্পুর্ন পরিচালিত হয় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা। ঠিক এইভাবে গ্রাহকের সকল লেনদেন, বিনিয়োগে সুরক্ষার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজ করে চলেছে।

স্মার্ট হোম ডিভাইস: নিত্যদিনের ব্যবহার যোগ্য সকল স্মার্ট হোম ডিভাইসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের ব্যবহার্য পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সেই প্রযুক্তি নিজেই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সেটিংস পরিবর্তন করছে এবং গ্রাহক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো গুগলের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, স্মার্ট টিভি, স্মার্ট রেফ্রিজারেটর, স্মার্ট এসি, স্মার্ট মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি।

নিরাপত্তা ও নজরদারি: কৃত্রিম নজরদারির ক্ষেত্রে ড্রোন হলো সবচেয়ে অভুতপুর্ব আবিষ্কার।এছাড়া নজরদারির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পয়েন্টে লাগানো হাজার হাজার ক্যামেরা থেকে লক্ষ লক্ষ তথ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্লেষন করা একমাত্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেই সম্ভব।
বিজনেস ম্যানেজমেন্ট: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা আজকের বিশ্ব জনপ্রিয় সব অনলাইনে কেনাকাটায় ই-কমার্স ব্যবহার করছে। অনেক পন্যের মধ্য থেকে বেছে বেছে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী সামনে তুলে ধরছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা, মেলামেশা ইত্যাদি বুঝে ব্যক্তি বিশেষের জন্য আপডেট পাঠাতে থাকে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের ক্ষেত্র সমুহে অসুবিধাগুলো

এতো এতো সুবিধার পরও বিশ্বজোড়া কিছু বিতর্ক বা অসুবিধা রয়ে গেছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে আইটি বা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কর্মী চাকুরি সঙ্কটে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।Mackinslay Global Institute তার সমীক্ষায় জানিয়েছে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয়তার ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের ৪০ থেকে ৮০ কোটি লোক চাকুরি হারাবে। 

প্রায় ৩০ থেকে ৭৫ কোটি মানুষকে বেছে নিতে হবে অন্যকাজ। ঠিক একইভাবে ৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে কম্পিউটার আগমনের সময় কাজ হারানোর ভয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিলো কম্পিউটা ফোবিয়া। তবে সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে প্রযুক্তির বদল কর্মসংস্থান কমানোর চেয়ে সৃষ্টি করেছে বেশি। 

কারন স্বয়ংক্রিয়তার ফলে যখন একটি নির্দিষ্ট কাজ দ্রুত, সহজ ও সস্তা হয়ে যায় তাখন সেই কাজের বাকি দিকগুলো সম্পন্ন করতে প্রয়োজন হয়ে পড়ে আরো বেশি মানবসম্পদের। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলে তৈরি হবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নতুন নতুন চাকুরি। নিম্ন ও মধ্য দক্ষতার মতো বা Blue বা White caller job শেষ হয়ে যাবে। তৈরি হবে উচ্চ দক্ষতার চাকুরি।

লেখকের শেষকথা

বন্ধুগণ এতক্ষণে আপনারা জেনে গেছেন আর্টিফিসিয়ালে ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার সম্পর্কে। একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ কাজ দ্রুত করার পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে নতুন অনেক বিষয় শিখতে পারে।আগের তথ্য বিশ্লেষন করে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। 

এই প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো একটি কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চিন্তা শক্তি, আচরনের আদলে জটিল সমস্যার সমাধান করা।তাই মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা থাকায় সাইবার নিরাপত্তা, গেমস, নকশা, স্মার্ট গাড়ি, ডেটা সেন্টার ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন খাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি চাহিদা ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপরের আর্টিকেল থেকে যদি আপনি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩