মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় কি তা জেনে নিন

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় কি সেই সম্পর্কে।বর্তমানে মশার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে, এই প্রানিটিকে কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না।মশা নিধনের জন্য যে কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করা হয় তা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাই আজকের আর্টিকেলটিতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর ওষুধ তৈরি করা যায়।আপনার যদি গোয়ালঘর থাকে এবং সেখানে গবাদিপশু রাখেন তাহলে কিভাবে ওষুধ তৈরি করবেন যা দিয়ে মশা তাড়াতে পারবেন। কর্পুর ও রসুনের গন্ধ মশারা সহ্য করতে পারেনা।

তাই কিভাবে এই উপাদানগুলো দিয়ে মশা তাড়াবেন তার বিশদ ব্যাখ্যা এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে।

মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় কি

মশা হলো যন্ত্রনাদায়ক একটি পতঙ্গের নাম। এই প্রানীটি এতই যন্ত্রনাদায়ক যে এর উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ট। এই প্রানিটি ব্যপক রোগজীবানুর সংক্রমন ঘটায়। এই মশা অনেক সময় মানুষের মৃত্যেুর জন্য দায়ী।মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস রোগ প্রভৃতি ছড়িয়ে পড়ে।
স্প্রে, কয়েল , অ্যারোসল ব্যবহার করেও মশা তাড়ানো সম্ভব হয় না।আবার এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার করলে শরীরের ব্যপক ক্ষতি করে। যখন স্প্রে, কয়েল , অ্যারোসলের ব্যবহার ছিলোনা তখন মানুষেরা প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করতেন। নীচে প্রাকৃতিক উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার

লেবু ফালি করে কেটে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিন।লেবুর মধ্যে পুরোটা লবঙ্গ ঢুকিয়ে লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে।এরপর লেবুর টুকরোগুলো একটি প্লেটে রেখে ঘরের কোনায় রেখে দিন।এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব থেকে বেশ কয়েকদিন মুক্ত থাকতে পারবেন।

নিমের তেল 

মশা তাড়াতে নিমের কোনো তুলনা হয় না। ত্বকের জন্য নিমের তেল খুবই উপকারী।তাই একসাথে দুটো উপকার পেতে নিমের তেল ব্যবহার করতে পারেন।সম পরিমান নিমের তেল ও নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন তাহলে মশা আপনার শরীরে বসবে না এবং ত্বকের অ্যালার্জি ও ইনফেকশন জনিত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন।

পুদিনার ব্যবহার

ছোট একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ আঁটি পুদিনা পাতা রেখে খাবার টেবিলে রেখে দিন। ৩ দিন অন্তর অন্তর পানি চেঞ্জ করে দেবেন। Journal of bio-resource technology এর গবেষনা অনুযায়ী তুলসীর মত পুদিনা পাতারও মশা দুর করা ক্ষমতা রয়েছে।পুদিনা পাতার গন্ধ শুধুমাত্র মশা দুর করে না পোকামাকড়ও ঘর থেকে বের করে দেয়।

টবে লেমন গ্রাস লাগান 

লেমন গ্রাসে “সাইট্রোনেলা অয়েল” রয়েছে যা থেকে এক ধরনের শক্তিশালী সুগন্ধ বের হয়। এই সুগন্ধের কারনে মশারা ধারে কাছেও আসতে পারে না। লেমন গ্রাস দেখতে খুব সুন্দর হয়। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় লেমন গ্রাস রেখে দিবেন তাহলে মশা ঘরে ঢুকতে পারবে না। এই পদ্ধতিতে মশামুক্ত থাকবেন দীর্ঘদিন।

ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো

প্রতিদিন ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরের আনাচে, কানাচে দরজার সামনে, জানালায় উক্ত মিশ্রনটি রেখে দিলে মশার হাত থেকে মুক্ত থাকা যায়।

হলুদ বিদ্যুতিক আলো

মশার উৎপাত কমাতে ঘরের বিদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলফোনে জড়িয়ে দিন।ফলে আলো হলুদ হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে,কারন মশা হলুদ আলো সহ্য করতে পারে না।মশারা সাধারনত সব লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। LED Light, হলুদ “বাগ লাইট” বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী।

চা-পাতা পোড়ানো

চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন।এই চা-পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করান।শুকনো চা পাতা পোড়ানো যে ধোঁয়া হবে তা ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যায়।

নিমপাতার ধোঁয়া

শুকনো নিমপাতা পোড়ানো ধোঁয়া মশা তাড়াতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।

ক্যাটনিপ অয়েল

ক্যাটনিপ অয়েল শরীরে মেখে মশা কখনেই শরীরে বসে না কারন এতে আছে নিপিটালাকটন নামক পদার্থ যা মশা তাড়াতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।

কালো, নীল ও লাল কাপড় এড়িয়ে চলুন 

মশারা সাধারনত কালো, নীল ও লাল রং এর দিকে বেশী আর্কষীত হয়। তাই পারত পক্ষে এই রংগুলোর বদলে রাতের বেলা হালকা রংয়ের কাপড় পড়লে মশার উপদ্রব থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

কর্পুরের ব্যবহার 

কর্পুরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আশে পাশের ফার্মেসীগুলোতে কর্পুর ট্যাবলেট পাওয়া যায়, ট্যাবলেট কিনে নিয়ে ৫০ গ্রামের কর্পুর ট্যাবলেট একটি ছোট পাত্রে রেখে পাত্রটি পানি দিয়ে পুর্ন করতে হবে, এরপর পাত্রটি ঘরের কোনে রেখে দিতে হবে।তাহলে দেখবেন তাৎক্ষনিকভাবে মশা গায়েব হয়ে গেছে। দুই তিন দিন পরপর পানি পরিবর্তন করুন। 
আগের পানিটুকু না ফেলে এই পানি দিয়ে ঘর মুছতে পারেন। এই পানি দিয়ে ঘর মুছলে পিঁপড়ার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন।

সুগন্ধি ব্যবহার করুন

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আতর বা সুগন্ধি কিংবা লোসন ব্যবহার করলে মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায় মশা আপনার শরীরে বসবে না। কারন মশারা সুগন্ধি সহ্য করতে পারে না।

রসুনের স্প্রে

রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে অনন্য ভুমিকা পালন করে। ৫ ভাগ পানিতে ১ ভাগ রসুনের রস মিশিয়ে মিশ্রনটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসকল স্থানে মশা কামড়ায় সেসকল স্থানে স্প্রে করলে মশারা আপনার ধারে কাছেও আসবে না।

তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়

আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। সাধারনত শীতের শুরুর দিকে বা গরমের শুরুর দিকে মশার প্রার্দুভাব বাড়তে থাকে।মশা তাড়াবার জন্য আমরা কয়েল, ধুপ ব্যবহার করে থাকি যাদের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো সিগারেটের ধোঁয়ার চেয়েও ক্ষতিকর।কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের রান্না ঘরেই রয়েছে এই সকল উপাদান।
যা দিয়ে সহজেই মশা তাড়ানো যায়। এইজন্য প্রয়োজন কয়েকটি রসুন, তেজপাতা গুঁড়া ,কর্পুর ও সরিষার তেল।মশা তাড়ানোর প্রক্রিয়াটি কীভাবে তৈরী করবেন তার স্টেপ বাই স্টেপ নীচে আলোচনা করা হলো। এই মিশ্রনটি বাড়ির সব কোনা গুলোতে রেখে দিবেন তাহলে দেখবেন মশার উপদ্রব বেশ নিয়ন্ত্রনে এসেছে। এই মিশ্রনটি নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
প্রথমে একটি মাটির প্রদীপ নীতে হবে। এই প্রদীপের মধ্যে ১ চামচ রসুন বাটা দিন তারপর এরসাথে সামান্য তেজপাতা গুঁড়া ও কর্পুর মেশান।এরপর পুরো মিশ্রনটির উপর সরিষার তেল ঢেলে দিন। এমনভাবে তেল ঢালতে হবে যেন প্রদীপটি পুরোটাই তেলে ডুবে থাকে। তারপন এর সাথে একটি সলতে যোগ করতে হবে।সলতেটিতে আগুন জ্বালিয়ে দিন, দেখবেন মশা পালিয়েছে।

গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়

মাছ ধরার নেট জাল দিয়ে মশারি বানিয়ে গোয়ালঘর ঘিরে তার ভিতর গবাদিপশু রাখলে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।মশারি দিয়ে পুরো গোয়ালঘর দিন রাত ঢেকে রাখা হয় মশার উপদ্রব থেকে বাাঁচার জন্য। এছাড়া অনেকে মশা তাড়াতে গরুর শরীরে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করছেন যদিও এতে গৃহস্থ ক্ষতিগ্রস্ত হন। 

গোয়ালের চারপাশে তারপিন তেল স্প্রে ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আরাব ইনসেক্টিসাইড সম্বলিত বিভিন্ন প্রিপারেশন বাজারে রয়েছে যা গোয়ালঘরে ব্যবহার মশা মারা যায়। এছাড়া সাইরোমাজিন সম্বলিত কিছু প্রিপারেশন রয়েছে যা খাদ্যের সাথে ব্যবহার করলে মশার ডিম ও লার্ভা মারা যায়। 

তবে ভেটোরোনারি বিশেজ্ঞরা বলছেন মশারি পদ্ধতি গোয়ালঘরের মশা তাড়াবার জন্য সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় বলে মনে করেন।

কর্পূর দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় 

কর্পুরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আশে পাশের ফার্মেসীগুলোতে কর্পুর ট্যাবলেট পাওয়া যায়, ট্যাবলেট কিনে নিয়ে ৫০ গ্রামের কর্পুর ট্যাবলেট একটি ছোট পাত্রে রেখে পাত্রটি পানি দিয়ে পুর্ন করতে হবে, এরপর পাত্রটি ঘরের কোনে রেখে দিতে হবে। তাহলে দেখবেন তাৎক্ষনিকভাবে মশা গায়েব হয়ে গেছে। দুই তিন দিন পরপর পানি পরিবর্তন করুন। 

আগের পানিটুকু না ফেলে এই পানি দিয়ে ঘর মুছতে পারেন। এই পানি দিয়ে ঘর মুছলে পিঁপড়ার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবেন।

মশা তাড়ানোর লাইট

LED-UV লাইট এর শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি নির্গত করে যা মশা, মৌমাছি ও মাছি এবং উড়ন্ত পোকামাকড়কে দমন করতে সহায়তা করে। এই লাইটের নীল আলো কয়েক মিনিট এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে উড়ন্ত পোকামাকড় মেরে ফেলে।দুটি UV আলোর বাতি ব্যবহার করলে মশা, মাছি ও মথ নিয়ন্ত্রনে সহয়তা করে।

রসুন দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়

বর্তমানে মানুষ মশার উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ঘরে বাইরে সব জায়গাতে মশার প্রভাব রয়েছে।রোগ জীবানু বহনকারী মশার কামড়ে জ্বর ও এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।মশা থেকে মুক্তি পেতে আমরা মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করে থাকি।কিন্তু এগুলো শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।কয়েল ও স্প্রের গন্ধে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
তবে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে রসুনের ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার মধ্যে রসুনের কয়েকটি কোয়া ছেড়ে কিছুক্ষন ফুটাতে হবে। এরপর সেই পানি পুরো ঘরে ছিটিয়ে দিতে হবে। দেখবেন নিমিষেই মশা পালিয়ে গেছে।

মশা মারার ঔষধের নাম

মশার ওষুধ বাজারজাত করার জন্য অবশ্যই কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের Plant Protection Wing থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এই সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী ৪৫০ এর বেশি বিভন্ন ব্র্যান্ডের মশার ওষুধ পাওয়া যায় প্রায় ৮০ টির বেশি প্রতিষ্ঠান এই ওষুধ আমদানি ও বাজারজাত করছে।

বাংলাদেশে মশার কয়েল ও স্প্রেতে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ডেল্টামেথ্রিন ও ইমিপোথ্রিননের মত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। বিশ্ব সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী মশা তাড়ানোর স্প্রে ঘরে ছিটানোর পর সে ঘরে পরবর্তী ২০ মিনিট থাকা নিষেধ।অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন মশার কয়েল মশার স্প্রের চেয়ে বেশী ক্ষতিকর।

কারন মশার কয়েল সারারাত ধরে জ্বালিয়ে রাখার ফলে যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় তা দ্বারা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের অসুখ হতে পারে।

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন মশা তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়গুলো নিয়ে।তাহলে আশা করা যায় আপনারা যদি উপরোক্ত নিয়ম-অনুযায়ী মশা তাড়ানোর ওষুধ তৈরি করতে পারেন তাহলে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবেন।

উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩