খাঁটি ঘি চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

দুর্বল হার্ট সবল করার উপায় - হার্টের সমস্যা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করা হয়েছে খাঁটি ঘি চেনার উপায়গুলো সম্পর্কে।রান্নার স্বাদ বাড়াতে কিংবা গরম ভাতে অথবা মজার আইটেম বানাতে আমাদের দেশে ব্যপকভাবে ঘি এর প্রচলন রয়েছে।এছাড়া রুপচর্চাতেও ঘিয়ের বহুল ব্যবহার বিদ্যমান। অনেকেই আছেন যারা দুধ খেতে পারেন না তাদের জন্য ঘি হতে পারে অন্যতম উৎকৃষ্ট বিকল্প।
খাঁটি ঘি চেনার উপায়

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে খাঁটি ঘি চিনবেন, খাঁটি ঘিয়ের প্রকারভেদগুলো নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। খাঁটি ঘিয়ের উপকারিতা, খাঁটি ঘিয়ের দাম কত, খাঁটি ঘিয়ের উপকারিতা, খাঁটি ঘি কোথায় পাওয়া যায়, কিভাবে ঘি দিয়ে রুপচর্চা করা যায়, প্রতিদিন কি পরিমানে খাবেন তা আলোচনা করা হয়েছে।

এছাড়া কি নিয়ম মেনে খাবেন এবং অতিরিক্ত খেলে শরীরের উপর কি ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। তাই আসুন আর্টিকেলটি নিয়ে আলোচনা করি।

খাঁটি ঘি চেনার উপায়

অতীতে গরম ভাতের সাথে ঘি খাওয়ার প্রবনতা বাঙালীদের মধ্যে চিরাচরিত অভ্যাস ছিল। কিন্তু বর্তমানে খাঁটি ঘিয়ের অভাবে এই অভ্যাস আস্তে আস্তে বাঙালীদের মধ্যে থেকে চলে যাচ্ছে। আগের যুগের মানুষেরা বলতো তাদের সময় যে গাওয়া ঘি পাওয়া যেত তার স্বাদই ছিল আলাদা। এই স্বাদ দীর্ঘক্ষন ধরে মুখে লেগে থাকতো। ঘি দিয়েই একথালা ভাত খাওয়া হয়ে যেত। 
আজকাল বোতলে যে ঘি পাওয়া যায় তাতে স্বাদ খুব একটা থাকেনা। অনেক ব্র্যান্ড কম্পানীর ঘি রয়েছে যেগুলো খেয়ে খুব একটা স্বাদ পাওয়া যায় না।অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা ঘিয়ের মধ্যে ডালডা, রিফাইন তেল ও বাটার অয়েল মিশিয়ে দিচ্ছে।আজকাল আবার ভেজাল দুধ দিয়েও ঘি তৈরী করা হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাড়িতে রাখা শিশির বোতলে যে ঘি আমরা সংরক্ষন করি তাতে বোতলের নীচে একটা আস্তরন পড়ে আর এই আস্তরনের উপরে তৈলাক্ত আবরন পড়ে। কিন্তু ঘি যদি খাঁটি হয় তাহলে এমনটা হবে না। বরং ঘি তরল থাকবে। 

তাই ঘি যদি বাড়িতে তৈরি করে নেওয়া যায় তাহলে সেটি ভালো হয়।কিন্তু যদি বাড়িতে তৈরি করা না যায় দোকান থেকে কেনার প্রয়োজন হয় তাহলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করে ঘি কিনবেন।
  • ১ চামচ ঘি একটি পাত্রে নিয়ে গরম করলে যদি তাৎক্ষনিকভাবে গলে যায় এবং গাঢ় বাদামি রং ধারন করে তবে বুঝতে হবে ঘি খাঁটি। এটা যদি তার ঠিক উল্টা হয় অর্থাৎ গলতে দেরি হয় এবং হলুদ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে ঘি খাঁটি নয়।
  • ১ চামচ ঘি হাতের তালুতে নিয়ে ঘষা দিলে হাতের ত্বকের সাথে গলে মিশে যায় তাহলে বুঝতে হবে ঘি খাঁটি।যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে ঘি খাঁটি নয়।
  • একটি কাাঁচের বোতলে অল্প পরিমান ঘি নিন তারপর বোতলটিকে গরম পানির পাত্রে বসিয়ে গরম করুন। বোতলের সব ঘি যখন গলে যাবে তখন তা ফ্রিজে রেখে দিন। যদি দেখেন ঘি এক লেয়ারে জমে গেছে তাহলে বুজতে হবে ঘি খাঁটি। কিন্তু যদি দুই লেয়ারে জমে অর্থাৎ দুটি আলাদা লেয়ার দেখতে পান তাহলে বুঝবেন ঘিয়ে নারিকেল তেল মেশানো আছে।
  • প্রথমে ১ চামচ ঘি নিন তারপর ঘি এর উপর দুই ফোঁটা আয়োডিন সলিউশন মিশিয়ে নিন, যদি দেখেন আয়োডিন বেগুনি রং ধারন করেছে তাহলে বুঝবেন ঘিয়ে ভেজাল আছে।
  • ১ চামচ ঘি একটি বোতলে রাখুন তারপর এক চিমটি চিনি এর মধ্যে দিন। এরপর বোতেলের মুখ বন্ধ করে খুব জোরে ঝাঁকুনী দেন এবং ৫ মিনিট বোতলটি স্থির অবস্থায় রেখে দিন। কিছুক্ষন পর দেখবেন বোতলের নীচে লাল রংয়ের আস্তরন পড়েছে কিনা, যদি দেখেন লাল রংয়ের আস্তরন পড়েছে তাহলে বুঝবেন ঘিয়ে ভেজাল আছে।

খাঁটি ঘি এর প্রকারভেদ

খাবারের স্বাদ বাড়াতে বাঙালীদের মধ্যে ঘিয়ের প্রচলন সেই প্রাচীন রাজা বাদশাহদের আমল থেকে চলে আসছে।ঘি শুধুমাত্র নিজেই সুস্বাদু একটি খাবার নয় বরং সকল খাবারের স্বাদ বাড়াতে ঘিয়ের মুন্সিয়ানার প্রসংশা না করে পারা যায় না। বিরিয়ানী থেকে শুরু করে পোলাও, খিঁচুড়ি ও গরম ভাতে ঘি থাকলে তার স্বাদ দশগুন বেড়ে যায়। 

ঘি যেমন খাবারের স্বাদ বাড়ায় ঠিক তেমনি পুষ্টিগুনেও ভরপুর।বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে খাঁটি গরুর দুধ থেকে স্নেহ পদার্থকে আলাদা করে ঘি প্রস্তুত করা হয়। তবে দুধ থেকে ঘি তৈরির আলাদা কিছু পদ্ধতি রয়েছে।ঘি তৈরির পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, আমরা সাধারনত এই দুই শ্রেনীর ঘি সম্পর্কে খুব ভালো মতো অবগত আছি যেমন: সরের ঘি ও বাটার ঘি।পুষ্টিগুনের দিক থেকে সরের ঘি ও বাটার ঘি প্রায় সমান। তবে প্রস্তুত প্রনালী ও গঠনগত দিক থেকে বৈচিত্র্য রয়েছে।

সরের ঘি

প্রাচীন বাংলার পুরোনো ও পরম্পরাগত পদ্ধতিতে সরের ঘি তৈরি করা হয়। খাঁটি গরুর দুধ জ্বাল করতে করতে যখন ঘন হয়ে আসে তখন চুলার জ্বাল বন্ধ করে ঠান্ডা করতে দেওয়া হয়। দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে তার উপর মোটা সর পড়ে, এই সর উপর থেকে তুলে নেওয়া হয়। একই পদ্ধতিতে কয়েকবার দুধ জ্বাল দিয়ে সর তোলা হয় যতক্ষন না পর্যন্ত সর পাতলা হয়ে আসে। 
সরের ঘি
সরের ঘি
এভাবে সর জমিয়ে রেখে জ্বাল দিয়ে দুধের স্নেহ পদার্থ আলাদা করা হয়। এই আলাদা করা স্নেহ পদার্থটি মুলত সরের ঘি। সরের এই ঘি খুব সুস্বাদু ও কড়া ঘ্রানযুক্ত হয় ।সরের ঘি তৈরী করতে অনেক সময় লাগে এবং উৎপাদন কম হয় তাই এর দাম খুব বেশী হয়ে থাকে।

সরের ঘি এর বৈশিষ্ট্য

জমাটবদ্ধ অবস্থায় সরের ঘি কিছুটা দানাদার হয়ে থাকে এবং রং হয় হলুদ ও সোনালি বর্নের।এই ঘিয়ের স্বাদ অন্যান্য ঘিয়ের তুলনায় একটু বেশি হয়ে থাকে ঘ্রানও বেশ তীব্র।বিভিন্ন ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার এই ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়।বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরির পর এই ঘি যদি খাবারের উপর ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে খাবারের স্বাদ দশগুন বেড়ে যায়।

বাটার ঘি

সরের ঘি ও বাটার ঘি তৈরির পদ্ধতিতে পার্থক্য রয়েছে। বাটার ঘি তৈরি করা হয় সরাসরি দুধ ক্রিম আলাদা করে সেই ক্রিম থেকে।খাঁটি গরুর দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করে সেই ক্রিমকে জ্বাল দিয়ে দুধের স্নেহ পদার্থ আলাদা করে বাটার ঘি তৈরি করা হয়। বাটার ঘি তৈরি করতে উচ্চ তাপামাত্রার প্রয়োজন হয়। এতে বাটারের তেল ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে আসে। 
বাটার ঘি
বাটার ঘি
তারপর প্রোটিনগুলো হাঁড়ির নীচের দিকে জমা হতে থাকে। উপরে ভেসে উঠা তরল স্নেহ পদার্থ আলাদা করে ঢেলে নেওয়া হয় আর এটাই হচ্ছে বাটার ঘি। বাটার ঘি খুব সহজেই তৈরি করা যায় এবং এই ঘি প্রচুর পরিমানে উৎপাদন করা যায়।তাই বেশিরভাগ মানুষ এই ঘি ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া সরের ঘি এর তুলনায় বাটার ঘি এর দাম তুলনামুলক কম হয়ে থাকে।

বাটার ঘি এর বৈশিষ্ট্য

বাটার ঘি তুলনামুলকভাবে বড় দানা যুক্ত হয়ে থাকে।এই ঘি সরের ঘি এর মত হালকা দানাদার হয় না।বাটার ঘি এর রং হয় হালকা সাদা থেকে হালকা হলুদ বর্নের এবং ঘ্রান ও স্বাদ সরের ঘি এর তুলনায় কম হয়।মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে বাটার ঘি ব্যবহার করা হয়। তবে সব খাবার তৈরিতে বাটার ঘি ব্যবহার করা যায়, বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাটার ঘি ব্যবহার হচ্ছে।

খাঁটি ঘি এর দাম কত

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভেদে ১ কেজি সরের ঘি এর দাম ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। এই দামের অনুপাতের নীচে কিনলে সরের ঘি ভ্যাজাল হবে।ঠিক তেমনি বাটার ঘিও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে।তবে সরের ঘিয়ের তুলনায় বাটার ঘিয়ের দাম কিছুটা কম যেমন: এর দাম ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

খাঁটি ঘি এর উপকারিতা

স্বাস্থ্যের জন্য সরের ঘি কিংবা বাটার ঘি উভয়েই খুব উপকারি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই মনে করতে পারেন ঘি যেহেতু ফ্যাট জাতীয় খাবার তাই এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এই ধারনা সম্পুর্নরুপে ভুল। আপনি যদি নিয়মিত খাঁটি ঘি খেতে পারেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।নীচে ঘিয়ের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  • হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে কিংবা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ঘি খেতে হবে।কারন এই ঘিয়ের মধ্যে থাকা মনো-স্যাচুরেটেড ও পলি-স্যাচুরেটেড ফ্যাট হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ফলে হার্ট থাকে সুস্থ ও সবল।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ঘি খাওয়া উচিত। বাড়ন্ত বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে ঘি খাওয় খুব জরুরি কারন ঘিয়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি এবং ভিটামিন কে যা ব্রেনের উন্নয়নে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
  • ত্বক ও চুলের সুস্থতায় ঘি অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এতে থাকা ভিটামিন এ, বি ও কে চুল ও ত্বককে রাখে আর্দ্র, সিল্কি ও প্রানবন্ত।
  • ঘিয়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।নিয়মিত ঘি খেলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই খাবারটি চোখের রেটিনার সঠিক গঠনে সহায়তা করে ও চোখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • ঘি রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। তাই যারা নিয়মিত ঘি খান তাদের উচ্চরক্তচাপ হয়না বা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমে যায়।
  • ঘি এর মধ্যে থাকা এসেনসিয়াল ফ্যাট শরীরের ক্ষতিকর ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে। যাদের মধ্যে ভুল ধারনা আছে যে ঘি খেলে ফ্যাট বৃদ্ধি পায় তারা অনায়াসেই ঘি খেতে পারেন। যারা ডায়েট করে থাকেন তাদের জন্য ঘি আদর্শ একটি খাবার হতে পারে।
  • আপনি যদি নিয়মিত ঘি খান তাহলে ক্যান্সারের ঝুুঁকি থেকে মুক্তি পাবেন। ঘি মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অষ্কিডেন্ট যা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং শরীরকে কর্মক্ষম করে তোলে।
  • ঘি এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টি-অষ্কিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • তাই সুষম খাবার হিসেবে ঘি একটি অপ্রতিদন্দী খাদ্য যা নিয়মিত এক চামচ করে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।আর ঘিয়ের মধ্যে যে ফ্যাট আছে তা শরীরের কোনো ক্ষতি করেনা। তবে এই খাবারটি অবশ্যই ভেজালমুক্ত হতে হবে।তাই যখন ঘি কিনবেন তখন অবশ্যই এই আর্টিকেলে উল্লেখিত মানদন্ডগুলো দিয়ে মেপে তারপর কিনবেন।

খাঁটি ঘি কোথায় পাবো

আমরা সকলেই জানি পাবনার ঘি বিখ্যাত। পাবনার ঘি মুলত ব্রিটিশ আমল থেকেই বিখ্যাত।পাবনার ঘি পুরো পাবনা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।যেকোনো খাবারের সাথে ঘি খাওয়া পাবনা বাসীর একটি পুরোনো সংস্কৃতি।তাই নির্দ্বিধায় পাবনার ঘি খেতে পারেন।

ঘি দিয়ে রুপচর্চা

আমরা সাধারনত প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদান দিয়ে রুপচর্চা করে থাকি।মধুর পরেই ঘি দিয়ে রুপচর্চা করা হয়।নীচে রুপচর্চার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
  • মানুষের হজম শক্তি ঠিক থাকলে শরীরে সঠিক মাত্রায় পুষ্টিগুন পৌঁছায়।শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টি পৌঁছালে তার প্রভাব শরীরের উপর পড়ে। আর যেহেতু ঘি খেলে হজম শক্তী বাড়ে সেহেতু পুষ্টি শরীরে ঠিকমতো পৌঁছায় যাতে ত্বকের উজ্জলতা বাড়ে।
  • আপনাদের অনেকের ত্বক শুষ্ক থাকে।এই শুষ্কতা দুর করতে পানির সাথে ঘি মিশিয়ে নিয়মিত ত্বক ম্যাসেজ করলে কয়েকদিনের মধ্যে ত্বকের শুষ্কতা দুর হয়।
  • যাদের ঠোঁটে কালো দাগ রয়েছে তারা যদি এই দাগ দুর করতে চাই তাহলে হাতের আঙ্গুলে ঘি লাগিয়ে ঠোঁট ম্যাসাজ করলে কিছুদিনের মধ্যে কালো দাগ দুর হয়।
  • চোখের নীচে কালো দাগ চেহারার সৌন্দর্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারন এই কালোদাগ চেহারার আসল গুনাগুন নষ্ট করে দেয়।তাই এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য ঘি ব্যবহার করতে পারেন।ঘুমানোর আগে আঙুলে ঘি লাগিয়ে কালো দাগের উপর লাগিয়ে দিতে হবে।পরদিন সকালে পানি দিয়ে ধুঁয়ে নিতে হবে তাহলে চোখের নীচে কালো দাগ অল্পদিনের মধ্যে দুর হবে।
  • আপনি যদি চেহারায় সজীবতা ফিরিয়ে আনতে চান তাহলে ঘি, মাখন ও দুধ একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে যদি নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে চেহারায় সজীবতা বৃদ্ধি পাবে এবং চেহারাতে উজ্জলতা ফিরে আসবে।
  • চুলের আগা ফেটে যাওয়া দুর করতে প্রতিদিন গোসলের আগে চুলের আগায় ঘি লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন।তারপর পানি দিয়ে ধুঁয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ঘি ব্যবহার করলে চুলের আগা ফেটে যাওয়া সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবেন।
  • তারুন্য ধরে রাখতে ঘি এর ভুমিকা অতুলনীয়।প্রতিদিনের খাবারে যদি ঘি রাখতে পারেন তাহলে এর প্রভাব ত্বকের উপর পড়বে।কারন ঘি এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা বলিরেখা ও বার্ধক্য প্রতিরোধে সহয়তা করে।

ঘি খাওয়ার নিয়ম

দুধ থেকে যত ধরনের খাবার তৈরি হয় তার মধ্যে ঘি সবচেয়ে বেশী পুষ্টিকর, এই খাবারটিকে উচ্চমানের সুপারফুড বলা হয়। ঘি খাওয়ার পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ভারতীয় উপমহাদেশে ঘি ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির পর ঘি এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে পুষ্টিবিদগন নিশ্চিত হন।
তাই ঘি এর পুষ্টিগুনের উপর ভিত্তি করে পুষ্টিবিদগন নির্ধারন করেছেন কিভাবে ঘি খাবেন যা এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। ঘি খাওয়ার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় হলো খালি পেটে খাওয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ১ চামচ ঘি খেলে পাকস্থলী পরিষ্কার থাকে। এই সময় যদি ঘি খান তাহলে শরীর তা সহজে শোষন করে নেয় এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। 
খাঁটি ঘিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে।Cambridge University এর জার্নালের তথ্য মতে খাঁটি ঘিয়ের মধ্যে ৩২ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।তাই উপমহাদেশে খালি পেটে ঘি খাওয়ার একটা রেওয়াজ আছে।

আবার অনেকেরই সকালে খালি পেটে ঘি খাওয়ার পাশাপাশি রাতের বেলা খালি পেটে ঘি খাওয়ার অভ্যাস আছে। তবে মোদ্দাকথা হলো খালি পেটে ঘি খেলে এর সর্বচ্চো উপকার পাওয়া যায়।

প্রতিদিন কি পরিমান ঘি খাওয়া উচিত

ঘি হলো উচ্চমাত্রার ফ্যাট জাতীয় খাবার তাই এই খাবারটি ইচ্ছে মতো খেলে হবেনা। অতিরিক্ত পরিমানে খেলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।সাধারনত বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর ভিত্তি করে ঘি খাওয়া উচিত। পুষ্টিবিদগন বলেন, অল্প বয়সে নিয়মিত ঘি খেলে বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না। তাই কোন বয়সে কি পরিমান ঘি খাওয়া উচিত তা নীচের চার্টে দেখানো হলো।

বয়স

ঘি খাওয়ার পরিমান

প্রাপ্ত বয়স্ক (নারী ও পুরুষ)

প্রতিদিন ২ টেবিল চামচ

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী

প্রতিদিন ৩ টেবিল চামচ

৭ থেকে ২৪ মাসের শিশু

প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টেবিল চা চামচ

৩ থেকে ৯ বছরের শিশু

প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টেবিল চা চামচ

১০ থেকে ১৭ বছরের কিশোর ও কিশোরি

প্রতিদিন ৩ টেবিল চা চামচ পরিমান

ঘি বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়

ঘি হলো অত্যন্ত উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যা স্বস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি করে।কেউ যদি অসুস্থ অবস্থায় এই খাবার গ্রহন করে তাহলে তার কোনো সমস্যা হয় না।তবে অতিরিক্ত খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে।কারন অতিরিক্ত গ্রহনের ফলে শরীরে চর্বির পরিমান বেড়ে যায় ফলে শরীর মুটিয়ে যায়।নীচে ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
  • পেটের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে
  • শরীরের ওজন বেড়ে যায়
  • রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে যায়
  • শরীরে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বৃদ্ধি পায়
  • শরীরে চর্বির মাত্রার তারতম্য ঘটায়

লেখকের শেষকথা

আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন খাঁটি ঘিয়ের উপকারিতাগুলো নিয়ে তাই এই খাবারটি আপনি যদি নিয়মিত খান তাহলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন। উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।

যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩