প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
বন্ধুরা আজকে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।কিন্তু আপনাদের অনেকেই জানেন না এই ভাতাগুলো কি।ফলে সমাজের দরিদ্র মানুষগুলো বঞ্চিত হচ্ছে এই সুবিধাগুলো থেকে।নীচে এই বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
ভুমিকা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে হয়। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য যে সকল কাগজপত্র গুলো প্রয়োজন সে কাগজপত্র গুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার ফরমটি কিরুপ তার একটা ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীদের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য একটা জরিপ পরিচালনা করেছেন।সেই জরিপে প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে বিস্তারীতভাবে বর্ননা করা হয়েছে। আবার প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য যারা উপযুক্ত এবং যারা উপযুক্ত নন তাদের কয়েকটি মানদন্ড নির্ধারন করেছেন তা নিয়ে এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের কি পরিমান ভাতা দেওয়া তা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
প্রতিবন্ধী ভাতার অনলািইন আবেদন করার নিয়মগুলো নিম্নরুপ
- সমাজসেবা অধিদপ্তরের https://mis.bhata.gov.bd/onlineApplication লিংকে প্রবেশ করে তথ্যাদি প্রদান করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন ও সুবর্ন নাগরিক কার্ডের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। যখন আবেদন করবেন তখন অবশ্যই প্রতিবন্ধী ভাতার আবেদন ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিবেন।
- আপনার ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরের সুপারিশ ও স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজপত্র সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।আপনার কম্পিউটার অথবা মোবাইল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করতে পারবেন।আবেদন করার সময় কখনই যেন ভুলভ্রান্তি না হয় এই বিষয়টা খুব নজরে রাখতে হবে।
প্রতিবন্ধী আবেদন ফরম |
আবেদন করার সময় নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন: সার্ভারের কোন সমস্যার কারনে লগইন করতে দেরি হতে পারে বা “সিস্টেম উন্নয়নের কাজ চলছে” অথবা “সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত” এই ধরনের লেখা আসতে পারে। তবে একটু অপেক্ষা করলে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট |
প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য বধ্যতামুলক কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আপনার ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলরের সুপারিশ ও স্বাক্ষর সম্বলিত কাগজপত্র সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (১৮ বছরের উর্ধ্বে হলে)
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৮ বছরের নীচে হলে)
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিচয়পত্র (সুবর্ন নাগরিক কার্ড)
- মোবাইল নম্বর (যেটি চালু আছে বিকাশ/নগদ সহ)
- অবশ্যই প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করতে হলে উপরোক্ত কাগজগুলো থাকতে হবে।
প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য যারা উপযুক্ত
প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের জন্য বেশকিছু যোগ্যতা নির্ধারন করা হয়েছে। এই যোগ্যতাগুলোর মধ্যে পড়লে তাদের ভাতা প্রদান করা হবে। যেমন:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রতিবন্ধী হতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী সমাজসেবা কার্যালয় হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র গ্রহন করতে হবে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা হতে এবং স্থানীয় ঠিকানা থেকে ভাতার জন্য আবেদন করতে হবে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা হতে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র নিতে হবে।
- মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩৬ হাজার টাকার নীচে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগন আবেদন করতে পারবেন।
- আবেদনকারীর যেকোনো ব্যক্তির বয়স অবশ্যই ৬ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে।
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য যারা উপযুক্ত নয়
নিম্নলিখিত তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে সাধারনত প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করা হয়। আপনি অন্য কোন উপায়ে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদন করলে তা বাতিল বলে গন্য হবে।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সরকারের অন্য কোন কর্মসুচীর আওতায় সেবা গ্রহন করলে।
- সরকারি কোন কর্মচারী হলে অথবা সরকারি কোন পেনশন বা ভাতা ভুক্ত হলে।
- কোনো সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা থেকে প্রতিবন্ধী আর্থিক সহায়তা পেলে।
- মাথাপিছু বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকার উর্ধ্বে হলে।
- প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ৬ বছরের নিচে হলে আবেদন করতে পারবেন না।
প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নির্ধারনে জরিপ কার্যক্রম
জীববৈচিত্রের একটি অংশ হলো প্রতিবন্ধিতা। সব প্রতিবন্ধীদের অনেক সময় দেখা যায় না। আবার কোন কোন সময় প্রতিবন্ধিতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। ধারণা করা হয় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন। গবেষনায় দেখা গেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশিরভাগ অংশই দারিদ্রতার শিকার ও নিম্ন আয়ভূক্ত।
বর্তমানে এটা সময়ের দাবি যে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর দারিদ্রতা নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। দারিদ্র্যতা বিমোচন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানে পরিকল্পিত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ।
এই লক্ষ্যে প্রতিবন্ধিতার ধরন চিহ্নিতকরন, মাত্রা নিরুপন ও কারন নির্দিষ্টপুর্বক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সঠিক পরিসংখ্যান নির্নয় করা। তাই দেশব্যাপী “প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরন জরিপ কর্মসুচী”গ্রহন করা হয়।দেশব্যাপী প্রসারের পুর্বে পদ্ধতিগত কার্যকারিতা নির্ভুল করার লক্ষ্যে পাইলটভিত্তিতে এ জরিপ মে ২০১২ এ শুরু হয়।
২০১১-২০১২ অর্থ বছরে পাইলটভিত্তিতে গোপালগঞ্জ জেলা এবং জামালপুর সদর, বরুড়া (কুমিল্লা), পবা (রাজশাহী), মোড়েলগঞ্জ (বাগেরহাট), বরিশাল সদর, চুনারঘাট (হবিগঞ্জ) ও ফুলবাড়ি (দিনাজপুর) উপজেলা সর্বমোট ১২ টি উপজেলা ও দুইটি ইউসিডিতে জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়।
আরোও পড়ুনঃ ব্যাংকে চাকরির জন্য কি পড়তে হবে জেনে নিন
২০১২-১৩ অর্থবছরে পাইলটভিত্তিতে জরিপ পরিচালিত উপজেলা ব্যতীত দেশের অবশিষ্ট এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।১লা জুন ২০১৩ থেকে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয় এবং ১৪ নভেম্বর ২০১৩ প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্বস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত ডাক্তার এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্রের কনসালট্যান্ট কর্তৃক জরিপের আওতাভুক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধিতার ধরন ও মাত্রা নিরুপনের কাজ শুরু হয়।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাদপড়া প্রতিবন্ধীদেরকে জরিপভুক্ত এবং ডাক্তার কর্তৃক শনাক্ত করনের কাজ চলমান রয়েছে।ডাক্তার কর্তৃক শনাক্তকৃত প্রতিবন্ধিব্যক্তিগনের তথ্যসমুহ যথাযথভাবে সংরক্ষন এবং সংরক্ষিত তথ্যের আলোকে প্রতিবন্ধীব্যক্তিগনের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ চলছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় ওয়েববেজড সফটওয়্যারের মাধ্যমে উক্ত তথ্যভান্ডারে প্রতিবিন্ধী ব্যাক্তিগনের তথ্যসমুহ সন্নিবেশিত হবে।
প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচির উদ্দেশ্যে
- বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পরিবার/ব্যক্তির সংখ্যা নির্ধারণ।
- দেশে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিবন্ধন এবং পরিচয় পত্র প্রদান।
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছবিসহ তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ প্রস্তুত করে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি সকল প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ব্যবহার উপযোগীকরণ।
- সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি/প্রকল্পের সঠিকভাবে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যভুক্ত করা এবং লক্ষ্যভুক্তির কৌশল সহজ স্তর করা।
- প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিত করা।
প্রতিবন্ধকতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি একটি চলমান কার্যক্রম যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এখনো প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপের আওতাভুক্ত হন তারা নিম্নোক্ত সাক্ষাৎকার অনুসূচি ডাউনলোড করব যথাযথভাবে পূরণ করে নিকটস্থ সমাজসেবা কার্যালয় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
প্রতিবন্ধী জরিপ ফরম
আগের আইন অনুযায়ী অর্থাৎ ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে যে আইন করা হয় তাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা নির্ধারন করা ছিল ২০০টাকা। পরবর্তীতে এটা বেড়ে ৭৫০ টাকায় উন্নীত হয়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতা ২০২৪ সালে প্রতিবন্ধীদের প্রদান করা হয় ৮৫০ টাকা। এই টাকা প্রদান করা হয় বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে। ফলে টাকা উঠাতে সুবিধাভোগীদের কোন সমস্যা হয় না।
লেখকের শেষকথা
আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন প্রতিবন্ধীদের জন্য অনলাইনে কিভাবে আবেদন করতে হয়। আরোও জানতে পেরেছেন প্রতিবন্ধী সংক্রান্ত সরকারি নিতীমালাগুলো সম্পর্কে । উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url