সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
বন্ধুরা,আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে আলোচনা করা হয়েছে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আরোও আলোচনা করা হয়েছে সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে। ডিম এমন একটি খাবার যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ যা শরীর গঠনে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিভাবে সিদ্ধ ডিম খেতে হয়। রাতে কিভাবে ডিম খেলে উপকার পাবেন। খালি পেটে ডিম খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে,এই আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা হাাঁসের ডিম খেতে চান না।কিন্তু হাঁসের ডিমের অনেক উপকার রয়েছে যা এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার নিয়ম
উচ্চমাত্রার প্রেটিন, পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার হচ্ছে ডিম। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকল বয়সী মানুষের জন্য সিদ্ধ ডিম খুব উপকারী। এই সুস্বাদু খাবারটিকে গরীবের প্রোটিন বলে অভিহিত করা হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত সুস্থ থাকতে হলে প্রতিটি মানুষকে সিদ্ধ ডিম খেতে হবে।একটি ডিমের ওজন সাধারনত ৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।যাতে থাকে ৭৭ ক্যালোরি এবং ৬.৩ গ্রাম উচ্চমাত্রার প্রোটিন।
ডিম এমন একটি খাবার যা একটি খেলে দীর্ঘ সময় কোনো ক্ষিদে লাগেনা। তবে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই নিয়ম অনুসরন করে যদি কেউ সিদ্ধ ডিম খায় তাহলে সে এই খাবার থেকে পরিপুর্ন পুষ্টি পাওয়া সম্ভব হবে। নীচে নিয়মগুলো দেওয়া হলো।
- ফ্রিজে সিদ্ধ ডিম ১ সপ্তাহ ভালো থাকে। ফ্রিজে যদি সিদ্ধ ডিম রাখা সম্ভব না হয় তাহলে তা ৩ ঘন্টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলে এই ডিম না খাওয়ায় ভালো।
- সিদ্ধ করা ডিম ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নীচে রাখলে তা ভালো থাকে।তবে সিদ্ধ ডিম যদি খোসা সহ রাখেন তাহলে তা বেশ কিছুদিন ভালো থাকবে। খোসা ছাড়ানো ডিম যতই ফ্রিজে রাখুন তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- USA এর Centers for diseases control & prevention নামক একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, পৃথিবীতে যে সকল খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় তার মধ্যে সিদ্ধ ডিম অন্যতম। তাই গবেষনা সংস্থাটি বলছে সিদ্ধ করা ডিম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেয়ে ফেলা উচিত।
- আপনারা যখন ডিম সিদ্ধ করতে পানিতে দেন তখন খেয়াল রাখবেন ডিম সিদ্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথে গরম পানি থেকে ডিম উঠিয়ে তা ঠান্ডা পানিতে দিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং ঠান্ডা হয়ে গেলে তা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
- সিদ্ধ ডিমে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপাদন হওয়ার কারনে তা ফ্রিজে রাখলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই এটিকে এয়ার টাইট পাত্রে রেখে ফ্রিজে রাখা উচিত।
রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত ডিম খাওয়ার অভ্যাস করলে অবশ্যই আপনি শারীরিকভাবে ফিট থাকবেন। ডিমকে প্রোটিনের আধার বলা হয়। ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ যা মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। বেশিরভাগ মানুষ সকালের নাস্তায় ডিম খেতে ভালোবাসেন। আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। নীচে রাতে ডিম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- ডিমের মধ্যে ট্রিপটোফেন নামে এক ধরনের উপাদান আছে যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে মনকে শান্ত রাখে ও শরীরের হরমোনকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
- ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমানে মেলাটোনিন রয়েছে। এই মেলাটোনিন স্নায়ু কোষের কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয় ফলে ঘুম ভালো হয়।
- ডিমের মধ্যে ভিটামিন ডি থাকায় শরীরের হাড় শক্ত হয় ও মস্তিষ্কের কোষগুলি থাকে সুস্থ ও সতেজ।রাতের বেলা ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেষ্টরল HDL এর মাত্রা বাড়ে। সকালে সুর্যের আলোর সংস্পর্শে আসরে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন করে।
- আপনারা যদি রাতে ডিম খান তাহলে তা ওজন কমাতে ২ ভাবে কাজ করে। প্রথমত আমাদের শরীরে যে পাকস্থলী আছে তার গতি বাড়িয়ে দেয়।দ্বিতীয়ত দীর্ঘক্ষন ধরে শরীরে প্রোটিন সঞ্চিত থাকে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং বেশী খাওয়ার প্রবনতা কমে যায়।এছাড়া ডিম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে ও পেশি গঠনে সহয়তা করে।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডিমের ভুমিকা অনস্বীকার্য।নিয়মিত ডিম খেলে প্রেসার কমে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।এই খাবারটি শিশুদের মেধা বিকাশ ও শরীর গঠনে সাহায্য করে।আপনাদের অনেকেই আছেন যারা কুসুম বাদ ডিম খান অথচ গবেষকরা বলছেন প্রতিদিন কুসুমসহ অন্তত ২ টি ডিম খাওয়া যেতে পারে।
ডিমের পুষ্টি পুরোপুরি পেতে ভাঁজা খাওয়ার চেয়ে হাফ কিংবা ফুল বয়েল ডিম খেতে হবে।ডিম পেশি ও হার গঠনে সহায়তা করে। একজন মানুষ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারে,তবে ডিমের কুসুম দুই তিনটি খেলে কোন সমস্যা হবে না ।
তবে বয়স যদি ৪০ পার হয়ে যায় তাহলে তিনি সপ্তাহে দুটো ডিম খেতে পারবেন তবে ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ সপ্তাহে চার দিন খেতে পারবেন।
১ টি ডিমে রয়েছে
- ক্যালোরি-১৪৩ এনার্জী
- কার্বোহাইড্রেট-০.৭২গ্রাম
- প্রোটিন-১২.৫৬গ্রাম
- চর্বি-৯.৫১গ্রাম
- ফসফরাস-১৯৮ মি.গ্রা
- পটাসিয়াম-১৩৮ মি.গ্রা
- জিংক-১.২৯ মি.গ্রা
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা
- সিদ্ধ ডিম পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি খাবার।ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন রয়েছে তা খুবই উচ্চমান সম্পুর্ন যা শরীরের টিস্যু তৈরি ও মেরামতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত একটি করে ডিম খেলে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পুরন হয়। এই খাবারটি শরীরের কোষের কার্যক্রমকে ঠিক রেখে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
- ডিমের মধ্যে রয়েছে লুটেইন ও জিয়াক্স এনথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা চোখের ছানি পড়া ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে সহায়তা করে।আপনি যদি নিয়মিত ডিম খান তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল মস্তিষ্কের স্নায়ুকে সুস্থ রেখে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে ও মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সহায়তা করে।
- ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও উচ্চমাত্রার প্রোটিন যা পেশি গঠনে সহয়তা করে পেশির শক্তি বাড়ায় ও কর্মক্ষম করে তোলে।
- ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ ও সেলেনিয়াম যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডিম দীর্ঘ
- সময় পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা অনুভুত হয় না।এছড়া এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড ও ভালো কোলেষ্টরল যা ধমনীতে রক্তের গতি স্বাভাবিক রাখে।
- একটি গবেষনায় জানা গেছে ডিমের কুসুম রক্তে ভালো কোলেষ্টরল এর মাত্রা বাড়ায় ও খারাপ কোলেষ্টরল এর মাত্রা কমায়।তবে যাদের রক্তে LDL এর মাত্রা বেশি তাদের জন্য দৈনিক কোলেষ্টরল গ্রহনে মাত্রা ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম কিন্তু ডিমের কুসুমে রয়েছে ১৮৫ থেকে ১৮৭ মিলিগ্রাম কোলেষ্টরল তাই যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন।
- Harvard school of public health এর গবেষনা অনুযায়ী প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় না।যারা ডায়াবেটিস ও কোলেষ্টরল বৃদ্ধিজনিত রোগে ভুগছেন তারা সপ্তাহে ১ থেকে ৩ টির বেশি ডিমের কুসুম না খাওয়ায় ভালো।
- ডিমে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের ত্বক ও কোষের ফ্রি র্যাডিকেলকে ধ্বংশ করে দেয়। যার ফলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারেনা।
- সাধারনত ব্যায়াম করলে পেশি ব্যাথা করে তাই ব্যায়ামের পর একটি ডিম খেলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- শরীরে যদি কোলাইনের অভাব হয় তাহলে লিভারের সমস্যা হতে পারে।ডিমে ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম কোলাইন থাকায় তা লিভারকে ভালো রাখে।
- ডিমের মধ্যে থাকা জিঙ্ক আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এই খাবারটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সালফার, ভিটামিন ও খনিজ যা চুলকে রাখে ঘন, কালো, সিল্কি ও প্রানবন্ত। এছাড়া এতে রয়েছে বি-কমপ্লেক্স যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ডিমের সাদা অংশের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে।
সিদ্ধ ডিম খাওয়ার অপকারীতা
আপনাদের মধ্যে যারা অ্যালর্জিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাবেন। কারন ডিমের সাদা অংশে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। আবার সিদ্ধ ডিমের কুসুম খেলে গলায় অ্যালর্জি হতে পারে। সিদ্ধ ডিম অনেকের হজম হতে চায়না। যাদের পাকস্থলীতে জারক রস উৎপাদন কম হয় তাদের জন্য ডিম হজম করা খুব কষ্টকর।
এক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের ডিম খাওয়ার ব্যাপারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারন গর্ভবতী মহিলাদের পেট খারাপ হয়ে যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে তা বাচ্চার জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। যাদের কোলেষ্টরল বৃদ্ধি জনিত সমস্যা আছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ডিম খাবেন নতুবা কোলেষ্টরল বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে।
ডিমের সাদা অংশ বা কুসুম কোনটায় অধিক পরিমানে খাওয়া ঠিক নয়।কারন তা অনেকের আর্থ্রারাইটিসের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস হলেও অতিরিক্ত পরিমানে ডিম খেলে শরীর মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সকালে খালি পেটে সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা
ডিম এমন একটি খাবার যা ছোট বড় সকলেই খেতে খুব ভালোবাসে।ডিম দিয়ে নান পদের খাবার তৈরি হয় যেমন: ডিমের অমলেট, ডিম ভুনা, ডিমের কোরমা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদরা বলছেন, সকালের নাস্তায় যদি আপনি নিয়মিত একটি করে ডিম খান তাহলে সারাদিন আপনার কর্মক্ষেত্রে থাকবেন কর্মচঞ্চল, চনমনে ও প্রানবন্ত। প্রতিদিন ডিম খেলে ক্ষুদা কম লাগবে।
ডিমকে বলা হয় শক্তির ভালো উৎস। ডিমের মধ্যে যে ভিটামিন রয়েছে তা থেকেই মুলত শক্তি উৎপাদিত হয়। ডিমের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে শক্তিতে রুপান্তরিত করে। তাই আপনি যদি নিয়মিত সকালে ডিম খান তাহলে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যেতে পারবেন।নিয়মিত ডিম খেলে শিশুদের দাঁত ও হাড় শক্ত হয়।
গর্ভাবস্থায় মহিলারা নিয়মিত ডিম খেলে সন্তানের জন্য তা খুব উপকার হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
ডিম কিভাবে খেলে উপকার বেশি
ডিম এমন একটি খাবার যা স্বল্প মুল্যে অধিক পুষ্টি প্রদান করে থাকে। কিছু ভুল ধারনার কারনে আমরা এই খাবারটি থেকে পরিপুর্ন পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হই। পুষ্টিবিদেরা বলে থাকেন ডিমের মধ্যে এমন কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীর গঠনে মুল ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই ডিম থেকে পরিপুর্ন পুষ্টি পেতে এটা কিভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে।
সেদ্ধ ডিম VS আধা সেদ্ধ ডিম
আপনাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন আধা সিদ্ধ ডিমে হয়তো বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে পুষ্টিবিদগন এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল প্রমান করেছেন। কারন ডিমে সালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আধাসিদ্ধ ডিমের মধ্যে জীবিত অবস্থায় থাকে।ফলে বমি, ডায়রিয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। তাই পুরো সিদ্ধ ডিম খাওয়ায় শরীরের জন্য উপকারী।
কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
আপনাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন কাঁচা ডিম থেকে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। অনেকে ব্যায়াম করার পর শক্তি বৃদ্ধির আশায় কাাঁচা ডিম খেয়ে থাকেন যা পুরোপুরি ভুল একটা ধারনা। কাাঁচা ডিমের মধ্যে এভিডিন নামক এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে যা ডিমের মধ্যে থাকা বায়োটিন নামক ভিটামিন বি গ্রুপের ভিটামিন থেকে বঞ্চিত করে।
কারন যখন কেউ ডিম খায় তখন ডিমের মধ্যে থাকা এভিডিন ও বায়োটিনের মিশ্রন পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হয়না। ফলে শরীরে বায়োটিনের অভাব ঘটে।বায়োটিনের অভাবে ত্বকের প্রদাহ,চুলপড়া, ওজন হ্রাস, জিহ্বার রুক্ষতা ইত্যাদি হতে পারে।
ভাজা কিংবা পোঁচ খেতে পারেন
ডিম সিদ্ধ করে খাওয়ায় সবচেয়ে উত্তম ও স্বাস্থ্যকর পন্থা। তবে মাঝে মাঝে ডিম ভাজা খেতে পারেন।তবে খেয়াল রাখতে হবে ডিম ভাজতে গিয়ে যেন বেশি তেল ব্যবহার করা না হয়। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো “ওয়াটার পোঁচ” পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ভাজার জন্য তেলের বদলে পানি ব্যবহার করা হয়।
এজন্য প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে তারপর ডিম ফাটিয়ে সেই ফুটন্ত পানিতে ডিমের কুসুম সহ সাদা অংশ ছেড়ে দিলে তা ধীরে ধীরে পোঁচে পরিনত হয়। এই পদ্ধতিতে ডিম পোঁচ করলে খেতে খুব সুস্বাদু হয়।
হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডিমকে সকল পুষ্টির আধার বলা হয়। কিন্তু মুরগির ডিম সহজে পাওয়া গেলেও হাঁসের ডিম সহজলভ্য নয়। মুরগির ডিমের থেকে হাঁসের ডিমের স্বাদ একটু বেশি তুলনায় বড় আকারের, গন্ধ তুলনামুলকভাবে বেশি আঁসটেযুক্ত হয়ে থাকে। হাঁসের ডিমের খোশা মুরগির ডিমের তুলনায় মোটা ও শক্ত হয়। হাঁসের ডিম কোন প্রকার ফ্রিজে না রেখে ৬ সপ্তাহ খাওয়া যায়।
উপকারিতা
- হাসেঁর ডিমে ক্যালোরির পরিমান বেশি থাকে। যারা ব্যায়াম করেন তাদের প্রচুর ক্যালোরির প্রয়োজন।তাই ব্যায়ামের পর আপনি যদি একটা হাঁসের ডিম খান তাহলে আপনার শরীরে পর্যাপ্ত শক্তির যোগান দিতে যথেষ্ট।
- প্রোটিনের একটি আদর্শ উৎস হলো হাঁসের ডিম। হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে যা শরীরের হাড় গঠনে সহায়তা করে। দাঁত মজবুত করে ও শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে।
- হাঁসের ডিমের মধ্যে রয়েছে ভালো কোলেষ্টরল যা হার্টে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ফলে হার্ট ভালো থাকে।
- হাঁসের ডিমের মধ্যে রয়েছে লুটেন ও কেরোটিনয়েড যা বৃদ্ধ বয়সে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়া থেকে রক্ষা করে ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়।
- হাঁসের ডিমে বেশি পরিমানে আয়রন থাকায় মেয়েদের অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।তাই মেয়েদের পিরিয়ডের সময় একটি করে হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত।
- হাঁসের ডিম কোলেষ্টরল নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এই খাবারটি খারাপ কোলেষ্টরলকে নিয়ন্ত্রন করে ভালো কোলেষ্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- হাঁসের ডিমে প্রচুর পরিমানে জিঙ্ক থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।ফলে সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে মুক্ত থাকা যায়।
- হাঁসের ডিম খেলে দীর্ঘক্ষন কোন ক্ষুধা লাগেনা। ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করার প্রয়োজন হয় না এতে শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকে।
অপকারিতা
- তুলনামুলকভাবে হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের তুলনায় দাম অনেক বেশি। যা অনেকেই কিনে খাওয়ার সামর্থ্য রাখেনা।
- অতিরিক্ত পরিমাণে হাঁসের ডিম খেলে প্রেসার বেড়ে যেতে পারে কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়তে পারে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে তাই যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের হাঁসের ডিম না খাওয়ায় ভালো।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন সিদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন আপনি যদি নিয়মিতভাবে ডিম খান তাহলে নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
আরোও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url