বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে - বয়স্ক ভাতা আবেদনের বয়স
প্রতিবন্ধী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়মবন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারীতভাবে আলোচনা করা হয়েছে বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে।আরোও আলোচনা করা হয়েছে বয়স্ক ভাতা আবেদনের বয়স কত।সরকারের এই বয়স্ক ভাতা প্রদান করার মুল উদ্দেশ্য সিনিয়র সিটিজেনদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং সমাজে যেন তারা আর্থিকভাবে কারো মুৃখাপেক্ষী না থাকে তার ব্যবস্থা করা।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কি কি প্রয়োজন হয় বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে। বয়স্ক ভাতার আবেদন করার নিয়ম ও কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়,কত বয়স হলে বয়স্ক ভাতার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বয়স্ক ভাতা পেতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে, কতো টাকা বয়স্ক ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয় ,বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদনের যাচাই প্রক্রিয়া কিভাবে করতে হবে ও বয়স্ক ভাতা পেতে কিভাবে মোবাইলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে
বয়স্ক, দুস্থ, কর্মহীন অসহায় মানুষদের আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করার জন্য সরকারের এটি একটি আর্থিক কর্মসূচী। এই ভাতা দেওয়ার মুল উদ্দেশ্য হলো এই সকল মানুষদের সামাজিকভাবে আর্থিক নিরাপত্তার অধীনে আনা। এই ভাতা প্রাপ্তির জন্য সাধারনত অনলাইন মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।আবেদন সম্পুর্ন করে প্রিন্ট বের করতে হবে।
তারপর স্থানীয় এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান ও পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা মাঠ কর্মী বা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হয়। এই আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা হয় সরকারের নির্দিষ্ট কিছু মানদন্ডের ভিত্তিতে। কার্তৃপক্ষ কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর যদি এই মানদন্ডের অধীনে থাকে তাহলে তাকে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হয়।
বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করতে হলে ওয়েবসাইটে গিয়ে বয়স্ক ভাতার আবেদন ফরম পুরন করতে হবে। আবেদন পত্রটি পুরন করার পর স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার কাউন্সিলের স্বাক্ষর নিতে হবে। এরপর তা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।
আবেদন করার সময় নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন: সার্ভারের কোন সমস্যার কারনে লগইন করতে দেরি হতে পারে বা “সিস্টেম উন্নয়নের কাজ চলছে” অথবা “সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত” এই ধরনের লেখা আসতে পারে। তবে একটু অপেক্ষা করলে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন।
১ম ধাপ: লিংক:http://mis.bhata.gov.bd/online application । গুগল ক্রম থেকে এই লিংকে ক্লিক করে ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে।সাইটে ঢুকার পর নিম্নে উল্লিখিত ছবির মতো একটি পেজ আসবে। এই পেজের বয়স্ক ভাতার অংশটি সিলেক্ট করতে হবে।
২য় ধাপ
- NID কার্ডের নম্বর লিখতে হবে।
- জন্ম তারিখ সিলেক্ট করতে হবে।
- যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৩য় ধাপ
- NID কার্ড থেকে আবেদনকারীর কিছু তথ্য স্বয়ংক্রীয়ভাবে পুরন হবে।
- যেগুলো স্বয়ংক্রীয়ভাবে পুরন হবে না সেগুলোর তথ্য সঠিকভাবে লিখতে হবে।
৪র্থ ধাপ
৪র্থ ধাপে আবেদনকারীকে অতিরিক্ত কিছু তথ্য প্রদান করতে হয়।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- বৈবাহিক অবস্থা
- পরিবারের সদস্য সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা ও হিজড়া)
- পেশা
- বার্ষিক আয়
- স্বাস্থ্যগত বা কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্য
- সরকারি বা বেসরকারি আর্থিক সুবিধার তথ্য
- বাসস্থান তথ্য
- ভুমির পরিমান
৫ম ধাপ:এই ধাপে আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা,ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা, জেলা ও বিভাগ অর্থাৎ যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে হয়। এরপর টাকা উত্তোলনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকউন্ট নম্বর দিতে হয় যেমন: ব্যাংকের নাম (বিকাশ অথবা নগদ)।এই জন্য আপনারমোবাইল নম্বরটি বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্ট হতে হবে।
অবশ্যই মোবাইলটি নিজের অথবা পরিবারের কোন সদস্যের হতে হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ অথবা নগদ যেকোনো অ্যাকাউন্ট আসতে পারে যেটি আসবে সেটি পুরন করতে হবে।যদি অ্যাকাউন্ট খোলা না থাকে তাহলে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে হবে।খেয়ার রাখতে হবে আবেদন Submit করার পর কোন তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না।
৬ষ্ঠ ধাপ: এই ধাপে আবেদন করার যে যোগ্যতাগুলো আছে সেই সম্পর্কিত বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে হবে।সব তথ্য পুরন করার পর একবার রিভিশন করে নিবেন যাতে কোনো ভুলভ্রান্তি না থাকে।যদি আপনি মনে করেন সব ঠিক আছে তাহলে সংরক্ষন নামক বাটনে চাপ দিয়ে আবেদনটি Submit করুন।
আবেদনটি Submit করার পর Print option ও PDF File Save অপশন আসবে। Print ক্লিক করে কপি বের করে রাখবেন অথবা PDF File এ Save করে দোকান থেকে কপি বের করে নিবেন।
৭ম ধাপ: Print করা কপি আপনি যেখানে থাকেন সেখানকার ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান অথবা পৌর কাউন্সিলরের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে সমাজসেবা অফিসে জমা দিবেন।
বয়স্ক ভাতার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ঃ
- ভোটার আইডি কার্ড
- মোবাইল নম্বর (বিকাশ অথবা নগদ)
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
বয়স্ক ভাতা আবেদনের বয়স
বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য ৬৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে এবং মহিলাদের জন্য ৬২ বছর বয়সের উর্ধ্বে হতে হবে।
বয়স্ক ভাতা আবেদন করার জন্য যে সকল যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন
- সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন/জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।
- বয়োঃবৃদ্ধা অসহায় দুস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহিতা মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
- দুস্থ অসহায় প্রায় ভূমিহীন বিধবা বা স্বামী নিগৃহিতা এবং যার ১৬ বছর বয়সের নিচে দুইটি সন্তান রয়েছে তিনি ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
- দুস্থ-দরিদ্র বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ তারা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
- আবেদনকারীর বার্ষিক গড়া আয় অনূর্ধ্ব ১২ হাজার টাকা হতে হবে।
- বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
যাদের জন্য বয়স্ক ভাতা গ্রহনযোগ্য নয়
- সরকারি কর্মচারী পেনশনভোগী হলে।
- দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে।
- অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারী অনুদান/ভাতা পেলে।
- কোনো বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যানমুলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান/ভাতা পেলে।
বয়স্ক ভাতা মাসে কত টাকা
বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা প্রদান করা হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল সরকার এর পরিমানটি আরোও বৃদ্ধি করার জন্য কাজ করছে। তবে পুর্বে এই ভাতার পরিমান কম ছিলো যা পরে বাড়ানো হয়।
- ২০০৯/১০ অর্থবছরে ছিলো - ২৫০ টাকা
- ২০১০/১১ অর্থবছরে বাড়ানো হয় - ৩০০ টাকা
- ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে বেড়ে হয় - ৫০০ টাকা
যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছে।
বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন যাচাই প্রক্রিয়া
- প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের উর্দ্ধে হতে হবে।তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
- যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম অর্থাৎ সম্পুর্নরুপে কর্মক্ষমতাহীন তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভুমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রধিকার দিতে হবে।
- সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- ভুমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতিত কোন ব্যক্তির জমির পরিমান ০.৫ একর বা তার কম হলে তিনি ভুমিহীন বলে গন্য হবে।
বয়স্ক ভাতার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং খোলার নিয়ম
করোনাকালীন সময় থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন অনুদান, ত্রান ও ভাতা প্রদান করে আসছে।ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমেছে এবং ভাতা বন্টনের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঝামেল থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে।আপনি যখন অনলাইনে আবেদন করার পর ফরমটি সাবমিট করবেন।
তারপর থেকে আবেদনটি বাছাই কমিটি দ্বারা যাচাই বাছাই করার পর ভাতার টাকা বয়স্ক ভাতা গ্রহনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
বয়স্ক ভাতা চালু হয় কোন সালে
১৯৯৮ সাল থেকে এই কার্যক্রম চালু করা হয়। এটি করার মুল উদ্দেশ্য ছিলো যাতে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত হয়। পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।আর্থিক এই অনুদানের সুবাদে যেন তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।সর্বশেষে তাদের চিকিৎসা ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
লেখকের শেষকথা
আশা করছি ,উপরের আর্টিকেলটি আপনারা খুব ভালো মতো পড়েছেন। ফলে আপনারা জেনে গেছেন বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে কিভাবে আবেদন করতে হয়। আরোও জানতে পেরেছেন বয়স্ক ভাতা সংক্রান্ত সরকারি নিতীমালাগুলো সম্পর্কে । উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url