ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস - ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিন
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস নিয়ে।আরোও আলোচনা করা হয়েছে ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস ইসলাম সম্পর্কে।প্রাচীন কাল থেকে এই উৎসবটি পালন করা হয় ইউরোপে।কয়েকটি ঘটনা ও কালের বিবর্তনে ভ্যালেন্টাইন ডে এর বর্তমান রুপ এসেছে।বাংলাদেশে এই দিবসটি আসে ১৯৯৩ সালের দিকে।
ভুমিকা
আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে প্রকৃত কাল্পনিক ইতিহাস সম্পর্কে।কিভাবে ইউরোপ জুড়ে এটি প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলাদেশে এই দিবস আসার পর সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব কিভাবে পড়েছে।কেনো ইসলাম এই ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে থেকে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে। এই দিনে আরোও কি কি ঘটনা ঘটেছিল যা আমরা জানিনা।
ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস
Valentine's Day এর ইতিহাস খুবই প্রাচীনতম ইতিহাস। এটির উৎপত্তি হয়েছে মূলত ১৭০০ বছর আগে পৌত্তলিক রোমকদের মাঝে একটা প্রচলিত “আধ্যাত্মিক ভালবাসার” উৎসব থেকে। এই পৌত্তলিক উৎসবের সাথে কিছু কল্পকাহিনী জড়িত ছিল। যা পরবর্তীতে রোমান খৃষ্টানদের মাঝেও প্রচলিত হয়। পৌত্তলিক রোমের পৌরানিক কাহিনীতে বর্নিত কিছু কল্পকাহিনী রয়েছে।
যার অন্যতম হচ্ছে রোমিউলাস নামে এক ব্যক্তি একদা নেকড়ের দুধ পান করে অসীম সাহস ও জ্ঞানের অধিকারী হন এবং প্রাচীন রোম প্রতিষ্টা করেন।এই পৌরানিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ১৫ই ফেব্রুয়ারী রোমানরা উৎসব পালন করতো। এদিনে বিচিত্র সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো যেমন: দুজন শক্তিশালী যুবক গায়ে কুকুর ও ভেড়ার রক্ত মাখতো।
তারপর দুধ দিয়ে ধুয়ে ফেলার পর এই দুজনকে সামনে নিয়ে বের করা হতো দীর্ঘ পদযাত্রা।দুই যুবকদের হাতে চাবুক থাকতো যা দিয়ে তারা পদযাত্রার সামনে দিয়ে অতিক্রম কারীদেরকে আঘাত করতো।রোমক রমণীদের মধ্যে কুসংষ্কার ছিলো যে তারা যদি এই চাবুকের আঘাত গ্রহন করে তাহলে তারা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পাবে।রোমানরা খৃষ্টধর্ম গ্রহনের পরেও এই উৎসব উদযাপন করতো।
কিন্তু তাদের পৌত্তলিক ধর্ম পাল্টে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করার পর এই উৎসবকে ভিন্ন এক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে ঘটনাকে ভিন্নরুপ দান করে। ইতিহাসে দুইজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় এদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি শান্তি ও প্রেমের বাণী প্রচার করতেন। তার স্মরণে রোমান খ্রিস্টানরা এই উৎসব পালন করতেন।
তবে কালের পরিক্রমায় আধ্যাত্মিক ভালবাসার এই উৎসবটি জৈবিক কামনা ও যৌনতার উৎসবে রুপান্তরিত হয়। খৃষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই প্রথার বিলুপ্তি ঘোষনা করেন কারণ তারা দেখেছিলেন এই প্রথা ছিল ধর্ম বিরোধী, সমাজবিধ্বংসী ও ব্যভিচার বিস্তারকারী। তবে ১৮ ও ১৯ শতকে তা পুনরায় চালু হয়।ক্যাথলিক বিশ্বকোষে Valentine's Day সম্পর্কে ৩ টি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
এছাড়া আরোও কিছু ঘটনার বর্ননা রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কিছু বইয়ে।
প্রথম কাল্পনিক ঘটনা: রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস এর আমলে একজন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে ধর্মযাজক ছিলেন।তিনি ছিলেন খুব সামাজিক, সদালাপি, শিশুপ্রেমিক ও খৃষ্টধর্ম প্রচারক। কিন্তু শাসকশ্রেনী রোমানরা ছিলেন পৌত্তলিক। শাসকশ্রেনী তাকে খৃষ্টধর্ম বাদ দিয়ে পৌত্তলিক ধর্ম গ্রহন করার কথা বলেন, কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তা প্রত্যাখান করেন।
ফলে তাকে কারাবরন করতে হয়।রোমান সম্রাটের খৃষ্টধর্ম ত্যাগ করে পৌত্তলিক ধর্ম গ্রহন করার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখান করায় ২৭০ খৃষ্টাব্দের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয় আদেশ লংঘনের দায়ে সম্রাটের আদেশে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যেুদন্ড প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় কাল্পনিক ঘটনা: সাম্রাজ্যবাদী, রক্তলোলুপ রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের এক বিশাল সেনাবাহিনী প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সেনা সংকট দেখা যায়। কিন্তু তার সেনাবাহিনীতে কেউ যোগদান করতে আগ্রহী ছিলো না।সম্রাট লক্ষ্য করেন যে বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত যুবকেরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল থাকে।
তাই তিনি যুবকদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে নিষেধাজ্ঞা দিলেন। যাতে তার সেনাবাহিনীকতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এই ঘোষণায় তরুণ, তরুণী ও যুবক যুবতী ক্ষেপে উঠে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে এক ধর্ম যাজকও সম্রাটের এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেননি। প্রথমে তিনি ভালোবেসে সেন্ট মারিয়াস বিয়ের মাধ্যমে রাজার এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ পরিচালনা করতে থাকেন।এক সময় সম্রাট ক্লডিয়াসের কানে যায় এবং সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে হাত পা বেঁধে ধরে নিয়ে এসে সম্রাটে সামনে হত্যা করা হয়।ধারনা করা হয় সেই তারিখটি ছিলো ২৭০ খৃষ্টব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী। বলা হয় ঐদিনে শোঁকগাথায় আজকের Valentine's Day.
অন্য আরেকটি বর্ণনামতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাশক্ত যুবক যুবতীদের অনেকে প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেকতে আসতো ও ফুল উপহার দিতো। বিভিন্ন উদ্দীপনামুলক কশা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখার চেষ্টা করতো। সেখানকার জনৈক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেতো।
তারা অনেকক্ষন ধরে বসে গল্প করতো এবং প্রান খুলে কথা বলতো। একটা পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আধ্যাত্বিক চিকিৎসার মাধ্যমে অন্ধ মেয়েটিকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়।
ভ্যালেন্টািইনের এই ভালোবাসা ও দেশের যুবক যুবতীদের তার প্রতি ভালবাসার কথা সম্রাটের কানে যায়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারী ফাঁসি দেওয়ার মধ্যদিয়ে মৃত্যেুদন্ড কার্যকর করে।
তৃতীয় কাল্পনিক ঘটনা: রোমের এই উৎসব গোটা ইউরোপ জুড়ে পালিত হেতো।যদিও সেসময় সেখানে খৃষ্টানদের আধিপত্য প্রতিষ্টা হয়েছিল।ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় ইউরোপের সকল যুবকরা মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি বাক্সে জমা করতো।তারপর ঐ বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলতো।
যার হাতে যে মেয়ের নাম উঠতো সে মেয়ের সাথে পুর্ন এক বছর ধরে প্রেম করতো।তারা সেই মেয়ের নামে চিঠি লিখতো।চিঠির বিষয় ছিলো “প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরন করছি”।বছর শেষ হলে এই সম্পর্ক পরিবর্তন বা নবায়ন করা হতো।এই রিতীটি কিছু খৃষ্টান পাদ্রীদের চোখে পড়লে তারা একে সমুলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভাবলো।
তাই শুধুমাত্র নাম পাল্টে দিয়ে একে খৃষ্টান ধর্মের মোড়ক দেওয়া হয় এবং ঘোষনা করা হয় এখন থেকে এই পত্রগুলো সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে প্রেরন করতে হবে।তারা প্রচার করতে শুরু করলো এটা খৃষ্টান ঐতিহ্য।যাতে কালের বিবর্তনে এটা খৃষ্টান ধর্মের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
চতুর্থ কাল্পনিক ঘটনা: দেবতাদের রানী জুনো এর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারী প্রাচীন রোমে ছুটি পালন করা হতো।রোমানদের মধ্যে একটা কুসংষ্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস ছিলো যে জুনোর ইশারা ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হবে না।তাই ১৪ ফেব্রুয়ারী ছুটির দিনে লুপারকালিয়া ভোজের উৎসবে হাজারো যুবক মেলায় র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে সঙ্গী বছাই করতো।
এই উৎসবে উপস্থিত তরুনীরা তাদের নাম লেখা কাগজের স্লিপে জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলতো।যুবকেরা যে স্লিপে লেখা যে মেয়ের নাম উঠতো সেই মেয়েটিকে কাছে টেনে নিতো।
পঞ্চম কাল্পনিক ঘটনা: রোমানদের সবচেয়ে বড় প্রভু “জুয়ােইবেতার” এবং তাদের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রন করতো ‘আতরিত” নামক একজন দেবতা।এই বিশ্বাসে রোমানরা বিশ্বাসি ছিল। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তাদের সস্পর্কে। সে উত্তরে বলেছিলো এগুলো ছিল মানব রচিত প্রভু।প্রকৃত প্রভু হলো “ঈসা মাসীহ”।
এই কারনে তৎকালীন রোমান সম্রাট ২৬৯ খৃষ্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারী তাকে ফাঁসি দেয়।
ষষ্ঠ কাল্পনিক ঘটনা: বলা হয়,খৃষ্টান ধর্মের প্রথমদিকে রোমের কোন একটা গীর্জার সামনে ভ্যালেন্টাইন নামক দুইজন পাদ্রীর মাথা কর্তন করা হয় নৈতিক চরিত্র বিনষ্টের অপরাধে।এই ঘটনা ঘটে ১৪ ফেব্রুয়ারী।ভক্তরা তাদের শহীদ আখ্যা দেয়।রোমান ইতিহাসে শহীদদের তালিকায় এই দুইজনের নাম আছে।
এদের একজনকে রোমে অন্যজনকে ৬০ মাইল দুরবর্তী স্থানে ইন্টারমনায় বা বর্তমানের টারনি নামক স্থানে শহীদ করা হয়। ইতিহাসবিদ দ্বারা এই ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়া না হলেও দাবী করা হয় ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের “ক্লাউডিয়াস দ্যা গথ” এর আমলে নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়। ৩৫০ খ্রিস্টাব্দে রোমে তাদের সম্মানে রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করা হয়।
ভুগর্ভস্থ সমাধিতে একজনের মৃতদেহ আছে বলে অনেকে ধারণা পোষন করে থাকে।আরও অন্য এক তথ্য থেকে জানা যায়,রোমে শহীদ ইন্টারমনা গীর্জার বিশপকে ইন্টারমনা ও রোমে একই দিনে স্মরন করা হয়ে থাকে।
সপ্তম কাল্পনিক ঘটনা: ৮২৭ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন ব্যক্তি রোমের এক গির্জার পোপ নির্বাচিত হয়েছি। তিনি তার জাদুকরি চারিত্রিক মাধুর্য ও মোহময় সুন্দর ব্যবহার দিয়ে অল্পদিনের মধ্যে রোমবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৪০ দিন দায়িত্ব পালন করার পর তার জীবনাবসান ঘটে।
প্রিয় পোপের মৃত্যুর পর তার স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারি রোমবাসী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনেকের মতে এই ভাবেই ভ্যালেন্টাইনস ডে এর সূচনা হয়। প্রাচীনকালে রোমানরা নেকড়ে বা উপদ্রব থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে লুপার কালিয়া নামে একটি ভোজের অনুষ্ঠানের আয়োজন করত এই ১৪ই ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠানের দিন তরুণরা গরুর চামড়া দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করতো।
মেয়েরাও উৎসবে মেতে উঠতো। ভ্যালেন্টাইন নামের কোন বিশিষ্ট বিশপ প্রথমে এর উদ্বোধন করেন সেই থেকে এর নাম হয়েছে ভ্যালেন্টাইন ডে। রোমানরা ৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন জয় করে এই কারণে ব্রিটিশদের মধ্যে অনেক রোমান অনুষ্ঠানের প্রভাব দেখা যায়। অনেক গবেষক এবং ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন অনুষ্ঠানের একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন।
ভালোবাসা দিবস উদযাপন শুরু
“ভ্যালেন্টাইন্স ডে” এর ইতিহাস থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় ১৪ই ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন প্রেমের পুজারী ভালবাসার বাণী বিনিময়ের মূর্ত প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হয়। মোটামুটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে প্রচলনের এটাই প্রাচীন ইতিহাস।এ দিবসের ইতিহাসে বর্ণিত লটারির বিষয়টি পরবর্তীতে পোপ গ্যালাসিয়াস কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
তাই এই দিবসকে খ্রিস্টীয় স্বাদ দিতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে নামের আবরন দিয়ে আবৃত করা হয়।মজার ব্যাপার ১৪ শতকের আগে ভ্যালেন্টাইন দিবসের সাথে ভালবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না।বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জেওফ্রে চসার তার "The Parliament of fowls" কবিতায় পাখিকে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে কল্পনা করেছেন।
মধ্যযুগে ফ্রান্সে ও ইংল্যান্ডে বিশ্বাস করা হতো ফেব্রুয়ারী মাস পাখিদের প্রজননের মাস।চসার তার কবিতায় লিখেছেন For this was of St. Valentine's day, when every fowl cometh there to choose his mate. মুলত চসারের এ কবিতার মাধ্যমে ’ভ্যালেন্টািইন ডে’ এর মধ্যে ভালোবাসা জিনিসটি ঢুকে যায় এবং আস্তে আস্তে তা বিস্তার লাভ করে।
পঞ্চম শতাব্দী অর্থাৎ ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই এই দিনটিতে কবিতা,ফুল,উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে প্রিয়জনকে বিশেষ স্মরন করা হয়।ইংল্যান্ডের মানুষ ১৪শ শতাব্দীর শুরু থেকে ভ্যালেন্টাইন দিবস উদযাপন শুরু করেছে। ইতিহাসবিদগনের অভিমত ভ্যালেন্টাইন দিবসে ইংল্যান্ডে প্রিয়জনের কাছে কবিতার চরন প্রেরণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের প্রথা শুরু হয়।
ফরাসি বংশভূত অর্লিন্স এর ভিউক, চার্লসকে ১৪১৫ সালে অজিনকোর্টের যুদ্ধে ইংরেজরা গ্রেপ্তার করে এবং ইংল্যান্ডে এনে কারাবন্দি করে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন দিবসে এ ডিউক তার স্ত্রীর কাছে ছন্দময় ভাষায় লন্ডন টাওয়ারের কারাগার থেকে চিঠি লেখেন। ইংল্যান্ডে সেই থেকে ভ্যালেন্টাইনস দিবস উদযাপন শুরু হয়।
বাংলাদেশে কিভাবে এই ভ্যালেন্টাইন ডে আসলো
সাংবাদিক শফিক রেহমান ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে পরিচিত ভালোবাসা দিবসকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রথম পরিচিতি ঘটান।তার তেজগাঁওয়ের অফিসে কেউ চাকুরীর জন্য গেলে চাকুরী প্রার্থীর মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে যেতে হতো।এজন্য তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়।এই ধারনাকে সামনে রেখে তিনি তার অফিসের সামনের সড়কটির নামকরণ করেন Love Lane.
বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেলে তার এ প্রচারনার কারনে এ দিবসটি বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।শফিক রেহমান ব্যক্তিগত কারনে লন্ডনে বসবার করতেন।সেখানে তিনি দেখেন লাল গোলাপ,বিভিন্ন ধরনের বেলুন ও নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে যান্ত্রিক জীবন থেকে বের হয়ে এসে কিভাবে দিবসটিকে উদযাপন করছে।
এই বিষয়টি তার কাছে খুব ভালো লাগে এবং দেশে ফিরে ১৯৯৩ সালে যায়যায়দিন পত্রিকায় ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল লেখেন। তারপর থেকেই বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবসের রং।
বাংলাদেশে কিভাবে এই ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন করা হয়
এই দিবসে কপোত কপোতিরা রাজধানীসহ সারা দেশের বড় বড় শহরগুলোতে একে অপরের প্রতি ভালবাসা প্রকাশে মাতোয়ারা থাকে।পার্ক, রেঁস্তোরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডর, টিএসসি, ওয়াটার ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, বকুলতলা, আশুলিয়াতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ঢল নামে।ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষ্যে অনেক তরুন দম্পতিও আসে এসব জায়গায়।
ঢাকার পাঁচ তারা হোটেল গুলোর বলরুমে আয়োজন করা হয় ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে তারুণ্যের মিলনমেলা। ভালোবাসা দিবসকে স্বাগত জানাতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলরুমকে সাজান বর্নাঢ্য সাজে।সেখানে অনুষ্ঠিত হয় লাইভ কনসার্ট,ডিনার ও উদ্দাম নৃত্য।আমাদের দেশের এক শ্রেনীর তরুন তরুনী,যুবক যুবতী এমনকি বুড়ো বুড়ি এই নৃত্যে অংশ গ্রহন করেন।
বিশ্বয়ের ব্যাপার তারা এইসব জায়গায় আসে ভালোবাসা বিলাতে অথচ তাদের নিজেদের ঘর সংসারে ভালোবাসা নেই।
ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস ইসলাম
বর্তমান ব্যাপক তথ্য প্রবাহ ও স্যাটেলাইটের প্রভাবে মুসলিম সমাজ এই অপসংস্কৃতি অনুসরন করা শুরু করেছে।নিজেদের উৎকৃষ্ট মানের কৃষ্টি কালচার, স্বকীয়তা ,স্বাতন্ত্র ও ধর্মীয় অনুশাসনকে বাদ দিয়ে এইসব প্রগতিশীলতার নামে অপসংস্কৃতিকে গ্রহন করেছে।তাই মুসলিমরা আজ নামে মুসলিম কর্মে তারা অমুসলিম।
অথচ রাসুল (সাঃ) এই সকল অপসংস্কৃতি গ্রহন করার ব্যাপারে বহুপুর্বে নিষেধ করে গেছেন।রাসুলের জনৈক সাহাবী আবু অকেদ (রাঃ) বলেন,খায়বার যাত্রা করার সময় পৌত্তলিকদের একটি গাছ অতিক্রম করছিলেন।তারা এই গাছটিকে “জাতু আনওয়াত” বলা হতো।এর উপর তীর আটকিয়ে রাখা হতো।এটি দেখে রাসুল (সাঃ) কে কয়েকজন সাহাবী বললেন।
আমাদের জন্য এরকম একটি “জাতু আনওয়াত” নির্ধারন করে দিন।রাসুল (সাঃ) ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন তোমরাতো মুসা (আঃ) এর জাতির মতো কথা বলছো।তারা বলেছিলো আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন,তাদের প্রভুর মতো।আমি নিশ্চিত,আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি,তোমরা পুর্ববর্তীদের আচার অনুষ্ঠানের অন্ধঅনুকরন করবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরন করবে,সে ব্যক্তি সেই জাতির অর্ন্তভুক্ত একজন বলে গন্য হবে।মানুষের অন্তর অত্যন্ত অনুকরন প্রিয়, তারপরেও মনে রাখতে হবে ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে এটা খুব গর্হিত ও নিন্দিত।বিশেষ করে অনুকরন যদি আক্বীদা, ইবাদত,ধর্মীয় আলামত বিরোধী আর অনুকরনীয় ব্যক্তি বা জাতি যদি হয় বিধর্মী ও বিজাতী।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় মুসলমানরা ধীরে ধীরে নিজস্ব ধর্মীয় অচার,অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসকে ভুলে গিয়ে বিজাতীদের আদর্শ , আচার, অনুষ্ঠান অনুকরন অনুসরন করছে।তাই ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস গ্রহন করা এবং তা পালন করা গর্হিত অপরাধ।মনে রাখতে হবে আমাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা নির্দিষ্ট একটি দিনে নয়।
৩৬৫ দিনই আমরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা অন্তরে পোষন করি। ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বলেছেন, কাফেরদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাদের শুভেচ্ছা জানানো একটি কুফরী কাজ। এই ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। যেমন তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে আপনি তাদের শুভেচ্ছা জানালেন এ বাক্যগুলো কুফরি বাক্য না হলেও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তা হারাম।
কারণ এর অর্থ হলো একজন লোক ক্রশ, মুর্তিকে সেজদা করছে আর আপনি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। এটা একজন মদ্যপ ও হত্যাকারীকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়েও জঘন্য অপরাধ। আমাদের মধ্যে অনেকেই অবচেতন মনেই এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছি। অথচ আমরা জানতেই পারি না যে এটা কত বড় অপরাধ।
এভাবে শিরক ও কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আল্লাহর শাস্তিতে নিপতিত হচ্ছি। সাহাবীগণ সব সময় মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট থাকতেন। কিন্তু আমরা তার উল্টোটা করছি। তাই যারা আল্লাহর কালিমায় বিশ্বাসী তাদের উচিত মুসলমানদের ভালোবাসা এবং বিধর্মীদের আচার আচরনকে পরিহার করা এতেই আমাদের কল্যাণ নিহিত।
এই দিনটি উদযাপন কোন স্বভাব সিদ্ধ ও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বরং একজন ছেলেকে একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার ব্যাপারে পাশ্চাত্যের এই কালচার আমদানিকৃত। আমরা জানি তারা সমাজকে চারিত্রিক পদস্খলন ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না।যার কুৎসিত চেহারা আজ আমাদের সামনে স্পষ্ট।
তাদের এই আশালীন কালচারের বীপরিতে মুসলিমদের অনেক শালীন আচার অনুষ্ঠান রয়েছে।একটা সময় ছিল যখন মুসলিম সমাজে নিতী নৈতিকতার মুল্য ছিল অপরিসীম।শুদ্ধতা ও লজ্জাশীলতা ছিল এই সমাজের অলংকার।কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে রাস্তায় বের হওয়ার চেয়ে পিঠে বিশাল ভার বহন করা ছিল অনেক বেশি সহজ ব্যাপার।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তা চিন্তায় করা যেতো না। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে আমরা কোথায় চলে এসেছি।ভ্যালেন্টাইন্স এর মত দিবস বেলেল্লা ও বেহায়পনা আমাদের সহজ, সরল, পূর্ণবান, নিষ্কলঙ্ক মানুষগুলোকে বিপদগামী করে দিয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কি কি দিবস
পহেলা ফল্গুন: ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আমাদের দেশে শুধুমাত্র বিশ্ব ভালবাসা দিবসই পালন করেনা নয় বরং এ দিনটি বসন্তের প্রথম দিন।
সুন্দরবন দিবস:২০০১ সালের ১৪ই ফেব্রেুয়ারী সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেলনের আওতায় খুলন বিশ্ববিদ্যালয়,খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রুপান্তর ও পরশেন উদ্যোগে এবং দেশের আরোও ৭০ টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহনে প্রথম প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সেই সম্মেলনে ১৪ ই ফেব্রুয়ারীকে ”সুন্দরবন দিবস” ঘোষনা করা হয়।
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস:আপনি যদি এই দিবসের পটভুমি জানতে চান তাহলে আপনাকে যেতে হবে ১৯৮২ সালে।সে সময় ক্ষমতায় ছিলেন সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং তার শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ।তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষিত শিক্ষানিতীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলেন।
সে বছর ১৭ ই সেপ্টেস্বর ওই শিক্ষানিতীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যমত্য পোষন করেন।তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ছিল ওই শিক্ষানিতীর বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পুর্বঘোষিত একটি কর্মসুচী।কিন্তু সেখানে পুলিশ গুলি করলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সেদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।তবে মৃতদেহ পাওয়া যায় মাত্র ২ জনের।আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাঁকি মৃতদেহগুলি গুম করে ফেলে।সেদিন থেকেই এই দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী পালিত হয় “স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস”।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে।এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন ইসলামের সাথে কেন এটি সাংঘর্ষিক। এই আজব সংস্কৃতির প্রভাবে সমাজ কোন দিকে যাচ্ছে সে সম্পর্কে।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url