বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহ - বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমুহ সম্পর্কে। আরোও আলোচনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান সমুহগুলো নিয়ে।এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমন করলে আপনার জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে এবং পৃথিবীটিকে মহান রাব্বুল আলামিন যে কত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন তা জানতে পারবেন।
বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহ - বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান

ভুমিকা

আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন গোটা পৃথিবীর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো সম্পর্কে।এই ঐতিহাসিকতার পেছনে লুকিয়ে থাকা গল্পগুলো আপনাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া আমাদের এই বাংলাদেশটি যে কত সুন্দর সে তার বিশদ বর্ননা পাবেন। এই ভ্রমনের দ্বারা আমাদের দেশ সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারনা হবে।

বিশ্বের ৫ টি দর্শনীয় স্থান সমূহ

জ্ঞান বিকাশের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভ্রমন করা।পৃথীবিতে অনেক আশ্চর্যজনক, ঐতিহাসিক ও মনোরম পরিবেশযুক্ত, মনকে মোহিত করার মতো জায়গা আছে যা দেখে অবাক না হয়ে পারবেন না।মনের সকল বিষাদ দুর করতে এই সকল জায়গায় বেড়াতে গেলে মনের মধ্যে জমে থাকা দুঃখ,কষ্ট সব দুর হয়ে যাবে।

ভারতের তাজমহল

পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম হলো এই তাজমহল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার ৩য় পত্নী মমতাজ মহলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ১৬৩১ সালে এই স্মৃতি সৌধটি তৈরী করেন। এটি নির্মিত হয় শ্বেতপাথর দিয়ে যা মুঘল স্থাপত্য কলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। পারস্য, ইসলামি ও ভারতীয় এই তিন ঐতিহ্য মিলে নির্মিত হয়েছে এই তাজমহল। 
তাজমহল
এই সৌধটি তৈরী করতে সময় লেগেছিলো প্রায় ১৬ বছর অর্থাৎ (১৬৩১ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত)।ওস্তাদ আহমদ লাহৌরি ছিলেন এই আজব স্থাপত্য কলার স্থপতি।কয়েক সহস্য শিল্পীর নিপুন হাতের সাহায্যে তিনি এটি নির্মান করেন।এটি ১৯৮৩ সালে সাংস্কৃতিক সম্পত্তির অধীনে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এটিকে স্বীকৃতি দেয়।

৪২ একর জমির উপর যমুনা নদীর তীরে এই সৌধটি অবস্থিত। সৌধটি অষ্টভুজাকার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এর চারকোনে চারটি মিনার রয়েছে। সমাধিটি আবস্থিত ভুগর্ভস্থ কক্ষের কেন্দ্র স্থলে। সমাধিটির উপরে নয়নাভিরাম একটি গম্বুজ রয়েছে। নিপুন হাতের অঙ্কিত ক্যালিওগ্রাফি দ্বারা লেখা সৌধের গায়ে, যা সকলকে অভিভুত করে।

ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার

ফ্রান্সের প্যরিসে এই টাওয়ারটি অবস্থিত। এই টাওয়ারটি পুরোটাই নির্মিত হয়েছে লোহা দিয়ে। এর উচ্চতা ৩২০ মিটার বা ১০৫০ ফুট।১৮০৩৮ খন্ড ছোট বড় লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরী হয়েছে এই টাওয়ারটি।১৮৮৯ সাল থেকে পরবর্তী ৪০ বছর যাবৎ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ছিলো এটি। এই টাওয়ার নির্মান করতে সময় লাগে ২ বছর, ২ মাস, ২ ‍দিন।
আইফেল টাওয়ার
যাতে শ্রমিক কাজ করে ৩০০ জন। ফরাসি বিপ্লবের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্যারিসে সেইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় এটি নির্মিত হয়। পর্যটকদের আর্কষনের মুল কারন হচ্ছে সুর্য যখন ডুবে যায় তার প্রতি ৫ মিনিট পর ২০০০০ বাল্বের আলোক ছটা পরে যা ঐ এলাকাকে এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলা ভুমিতে পরিনত করে।

মিশরেরর পিরামিড

প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিশরের রাজারা তাদের স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষন করে রাখার জন্য পিরামিড নির্মান করেন যা সপ্তশ্চর্যের তালিকায় ২০০৭ সালে ৭ জুলাই এটি স্থান পায়।এই তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে গিজার পিরামিডগুলো।মিশরের প্রচীনতম পিরামিডগুলো আবিস্কৃত হয়েছে মেমফিসের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত সাক্কারা নামক জায়গায়। 
পিরামিড
এই পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো তৃতীয় রাজবংশের আমলে নির্মিত জোসারের পিরামিড। মিশরে যতগুলো পিরামিড আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো কায়রো শহরের উপকন্ঠে গিজায় অবস্থিত। গিজার পিরামিডগুলো সবচেয়ে বড়, পুরোনো ও আর্কষনীয়। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেন এগুলো খ্রিস্টপুর্ব প্রায় ৫ হাজার বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। 

প্রায় ৪৮১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পিরামিডগুলো ৭৫৫ বর্গফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত।

আমেরিকা স্ট্যাচু অব লিবার্টি

স্ট্যাচু অব লিবার্টি অবস্থিত আমেরিকা বা U.S.A তে। এই মুর্তিটি নির্মান করা হয়েছিল মুলত আমেরিকা ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে। এই স্থপনাটি মুলত এক নারীর অবয়ব রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে গড়া যে সবুজ রঙের ঢিলে ঢালা গাউন পড়ে আছে।ফ্রান্সের দুই স্থপতি এই স্থাপত্য কলার মুল কারিগর প্রথম জনের নাম স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি।
স্টাচু অব লিবার্টি
যিনি ভাষ্কর্যটির বাইরের দিকটি নকশা করেন আর স্থপতি গুস্তাভ আইফেল যিনি ভেতরের দিকটি নকশা করেন।আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পুর্তি উপলক্ষে ফ্রান্স এই ভাষ্কর্যটি ১৮৮৬ সালে আমেরিকাকে উপহার দেয়।প্রতিবছর ৩৫ লক্ষ পর্যটক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখার জন্য আসে।

ইস্টার দ্বীপ, চিলি

এই দ্বীপটিকে পৃথিবীর নিঃসঙ্গ দ্বীপ বলা হয়। চিলির উপকুল থেকে ৩৬০০ কিলোমিটার দুরে দ্বীপটি অবস্থিত।এই দ্বীপটি প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত চিলির মালিকানাধীন। রহস্যময় দ্বীপটি ১৭২২ সালে ইস্টার সানডের দিনে আবিষ্কার করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ইস্টার দ্বীপ। ইউনেস্কো এই দ্বীপটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 
ইস্টার দ্বীপ
এই দ্বীপে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে পাথরের তৈরী অসংখ্য ভাষ্কর্য। এই দ্বীপটি ৩ টি আগ্নেয়গিরি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই দ্বীপের সবচেয়ে বড় আর্কষন হলো বৃহদাকার সাতটি ভাষ্কর্য। এই ভাষ্কর্যগুলোকে বলা হয় নেভেল অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এই ভাষ্কর্যগুলির একেকটির উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট। স্থানীয় অধিবাসিরা এগুলোকে মোয়াই বলে। 

এই মুর্তিগুলো বয়স প্রায় ৩০০ বছর কিন্তু আজ পর্যন্ত এগুলোর রহস্য কেউ বের করতে পারেনি।

বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান সমূহ 

প্রাচীনকালে এই পৃথিবীতে বহু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল আবার কালের বিবর্তনে হারিয়েও গেছে। এই সভ্যতাগুলোর মধ্যে থাকা সভ্য ও জ্ঞানী মানুষগুলো তাদের মেধা, মনন ও নিপুন হাতের দক্ষতা দিয়ে গড়ে তুলেছিল অসাধারণ কিছু স্থাপনা। যার সৌন্দর্য ও নির্মাণ কৌশল আজও মানুষকে বিস্ময়াভূত করে তোলে। যা ভ্রমন পিপাসুদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত।

চীনের প্রাচীর

এই প্রাচীর তৈরি হয়েছে পাথর ও মাটি দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬০০ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়। এই ধরনের প্রাচীর অনেকগুলো তৈরি করা হয়েছিল তবে ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট এর অধীনে যে প্রাচীন নির্মিত হয় তাই সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। 
চীনের প্রচীর
মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য এই চীনের প্রাচীর। প্রাচীরের উচ্চতা ১৫থেকে ৩০ ফুট চওড়া ৩২ ফুট। এবং দৈর্ঘ্য ৮৮৫১ কিলোমিটার। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই থেকে শেষ হয়েছে লোপ নুর নামক স্থানে।কথিত আছে ১২ জোড়া ঘোড়া একসঙ্গে এই প্রচীরের উপর দিয়ে চলতে পারতো।

ইতালি,রোম

পৃথিবীতে যত বিখ্যাত শহর রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এই প্রাচীন রোম। পাশ্চাত্য সভ্যতা গঠিত হয়েছিলো এই প্রাচীন রোমকে ঘিরে। এই শহরটি খ্রিষ্টপুর্বাব্দ ৭৫৩ শতকে আবিষ্কৃত হয়। এই রোম শহর ইউরোপের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থস্থান। রোমন সভ্যতা খুব নামকরা একটি সভ্যতা।
রোম
প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতি মিলে রোমান সভ্যতার নগরী গড়ে উঠে। প্রাচীন রোমের গ্ল্যাডিয়েটররা এক সময় গোটা পৃথিবীকে শাসন করতো। তাই ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরপুর এই শহরে ঘুরে বেরিয়ে অনায়াসেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

অ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিন মেরু

পৃথিবীর সর্ব দক্ষিনে অবস্থিত এই মহাদেশ। এই মহাদেশের আয়তন ১ কোটি ৪০লাখ বর্গকিলোমিটার। এতো বিশাল আয়তনের এই মহাদেশটি ৯৮ শতাংশ অঞ্চল প্রায় ১.৯ কিলোমিটার পুরু বরফে ঢাকা।এই মহাদেশের ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই তারিখের দিনটি ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান যার তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস যা আজও রেকর্ড হয়ে আছে। 
অ্যান্টার্কটিকা
৯০ শতাংশ বরফ এই মহাদেশে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। এখানকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টির নাম “মাউন্ট ভিনশন” যার উচ্চতা প্রায় ১৬০৫০ ফুট।এতো কঠিন আবহাওয়তেও বিভিন্ন জীবের অস্তিত্ব রয়েছে যেমন: বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক, শৈবাল, মস ও লিভারওর্ট। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পেঙ্গুইন পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে পেট্রেল, অ্যালবাট্রস পাখি। 

উপকুলে দেখা যায় নীল তিমি, সীলসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রানী। এখানে যারা বসবাস করে তাদেরকে এস্কিমো বলে।

সান্তরিনি,গ্রিস

বিজ্ঞানিদের ধারনা লক্ষ বছর আগে ইজিয়ান সাগরে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা জমে এই দ্বীপটির জন্ম হয়েছে। এই দ্বীপটির নামকরন কারা হয়েছে সাধু আইরিনির নামানুসারে। সান্তরিনি দ্বীপটি গ্রিসের অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত একটি দ্বীপ। এই দ্বীপটি মুল ভুমি থেকে ২০০ কিলোমিটার দুরে ইজিয়ান সাগরে অবস্থিত।এর আর্কিটেকচারাল বৈশিষ্ট্য পর্যটকদের মুল আর্কষন। 
সান্তরিনি
এই দ্বীপের ঘরবাড়ি উপর থেকে নীচে নীল সাদার মিলনে তৈরী করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে এই দ্বীপে ভ্রমনের সবচেয়ে আদর্শ সময়।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জিম্বাবুয়ে 

এই জলপ্রপাতটি জিম্বাবুয়ে সীমান্ত দিয়ে জিম্বাজি নদীর ধার দিয়ে অবস্থিত। ১০৮ মিটার উচ্চতা ও ১৭০৩ চওড়া এই জলপ্রপাতের প্রতি সেকেন্ডে ৯৩৫ ঘনমিটার জল নীচে গিয়ে পড়ে। এই জলপ্রপাতটি ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে।জল পড়ার এই আওয়াজটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় “মোজি ওয়া তুনিয়া” যার অর্থ হলো বজ্রের ধোঁয়া।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
এই জলপ্রপাতের ফলে সৃষ্ট জলীয় বাষ্পের যে মেঘ তৈরী হয় তা ৪০০ মিটার উচ্চতায় ভাসতে থাকে এবং এই মেঘ ৫০ কিলোমিটার দুর থেকে দেখা যায়। এখানকার জলীয় বাষ্পের আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হয় যা শুধু দিনে নয় রাতের বেলাতেও দেখা যায়।এই জলপ্রপাতের নামকরন করা হয় ১৮৫৫সালে রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে।

এই নামকরনের মুলে রয়েছেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ।

বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা কারনে পর্যটকটা ভ্রমন করে থাকেন।ভৌগলিক অবস্থা, আবহাওয়ার কারনে একটি দেশ আরেকটি দেশ থেকে ভিন্নতর হয়।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের উপর ভিত্তি করে পর্যটকটা তাদের ভ্রমনের তালিকা নির্ধারন করেন। তাছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও রহস্যে ঘেরা বৈচিত্র্যময় স্থান গুলোর ব্যাপারে মানুষের কৌতুহলের অবকাশ নেই। 

জ্ঞান অন্বেষন ও আবিষ্কারের নেশায় মানুষ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। তাই প্রকৃতি খুলে দিয়েছে তার সৌন্দর্যের আবরন। আর এই সৌন্দর্যের অপরুপ সুধা পান করতে দিনে দিনে দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষ ছুটে আসছে মৌমাছির মতো।আজকের আর্টিকেলটি সেই সব সুধা পানকারিদের জন্য।

মাচুপিচু,পেরু

আপনার কি কখনো ইনকা সভ্যতার নাম শুনেছেন ? ইনকা হলো সেই সভ্যতার নাম যারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর, প্রাচীনতম ও সমৃদ্ধ। সেই বিস্ময়কর নগরীর নাম ছিলো মাচুপিচু যার অর্থ হলো পর্বতের চুড়া যা সাধারনত দক্ষিন আমেরিকার প্রাচীন জাতি কেচুয়ারা ব্যবহার করতো। এই শহরটি দক্ষিন আমেরিকার পেরুতে একটি পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত। 
মাচুপিচু
যা বেশিরভাগ সময় মেঘের আড়ালে থাকে।এই নগরীটি ইনকা সভ্যতার ইনকাদের গুরুত্বপুর্ন সাংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। স্প্যানিশরা নগরীটি দখর করলে তা পবিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়।পরবর্তীতে হিরাম বিনহাম ১৯১১ সালে নগরীটি পুনরায় অবিষ্কার করেন।

ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এই নগরীটিকে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ” হিসেবে ঘোষনা করে এবং ২০০৭ সালে পৃথিবীর সপ্তম আশ্বর্যের মর্যাদা লাভ করে।

মায়া নগর তিকাল, গুয়েতামালা

মধ্য আমেরিকার গুয়েতামালার গহীন বৃষ্টিবনে গড়ে উঠেছে এই মায়া নগরী।এই মায়া নগরী প্রায় ৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। মায়া ভাষায় তিকাল শব্দের অর্থ হলো কন্ঠস্বরের স্থান। মায়া সভ্যতা খুবই প্রাচীন এবং বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। 

এই সভ্যতায় খ্রিস্টিয় ষষ্ট ও সপ্তম শতকে ৩০০ এর বেশি প্রাসাদ, উপাসনালয়, প্রধান চত্বর, আবাসিক এলাকা ও খেলার মাঠ নিয়ে গড়ে উঠেছিলো।সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্রভুমি ছিলো এই নগরী। মায়ারা যখন এই নগরী ছেড়ে গেলো তারপর তা হাজার বছর ধরে পড়ে থাকার পর বৃষ্টিবনে পরিনত হয়। 
মায়া নগর
পরবর্তীতে স্প্যানিশ সরকারের তত্ত্বাবধানে ১৯৪৮ সালে এই নগরীকে আবার বৃষ্টিবন থেকে বের করে আনা হয়।বর্তমানে এটি গুয়েতামালা সরকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই নগরীর ২২০ বর্গমাইল বৃষ্টি বন এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলা হয়েছে।ইউনেস্কো এই নগরীকে ১৯৭৯ সালে “হিউম্যান হেরিটেজ” হিসেবে ঘোষনা করে।

পেত্রা নগরী, জর্ডান

প্রায় ২০০০ বছরের পুরোনো এই নগরীকে পাথরের নগরী বলা হয়।কারন নগরীর সকল স্থাপনা পাথরের তৈরী। এই আজব নগরী দেখতে অসংখ্য পর্যটক আসেন এই নগরী দেখতে। জর্ডানের দক্ষিন পশ্চিমের গ্রাম ওয়াদি মুসার পুর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই নগরী।৪০০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপুর্বাব্দ পর্যন্ত এই নগরী ছিলো নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী।
পেত্রা নগরী
এই পেত্রা নগরীর আনাচে কানাচে অনেক গুহা রয়েছে যা মানুষেরা এক সময় যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতো।এই নগরীতে একটি মন্দির আছে যার নাম “খাজনেত ফেরাউন” মন্দির যা পেত্রা নগরীর সব প্রাচীন দালানগুলোর মধ্যে বিখ্যাত। এই মন্দিরটিকে ফারাওদের ধনভান্ডার বলা হতো।

সুইজারল্যান্ডের একজন পরিব্রাজক লুডিগ বারখাট ১৮১২ সালে ইতিহাসের পাতায় মলিন হয়ে যাওয়া এই নগরীকে পুনরায় আবিষ্কার করেন। ইউনেস্কো এটিকে ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা দেয়।

স্টোন হেঞ্জ, ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে নব্য প্রস্তর যুগে নির্মিত স্টোনহেঞ্জ একটি প্রাগৈতিহাসিক স্তম্ভ অবস্থিত। এটি সমতল ভুমিতে খাড়া পাথরের তৈরি আজব ও বিস্ময়কর স্থাপনা।অনেক বিশেষজ্ঞের মতামত এটি ৪ হাজার বছর আগে কোন সমাধিস্থলের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো এই স্থাপনাটি।আবার অনেকে বলেন এটি মন্দির হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
স্টোন হেঞ্জ
স্টোনহেঞ্জের সবচেয়ে বড় পাথর “সারসনের” ওজন ২৫ টন এবং গড় উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। ছোট পাথরগুলো ভেজালে বা ভাঙলে নীলচে আভা দেখা যায়। ছোট পাথরগুলোর ওজন প্রায় ৪ টন হয়ে থাকে। এই ছোট পাথরগুলোকে বলা হয় Blue Stone.এই স্তম্ভটি যে শুধু ইংল্যান্ডের কাছেই গর্বের তা নয় বরং এটি সমগ্র পৃথিবীর গৌরবের একটি অংশ।

কলোসিয়াম, ইতালি

কলোসিয়াম একটি বড় উপবৃত্তাকার ছাদবিহীন মঞ্চ যা ইতালির রোম শহরে অবস্থিত। এই মঞ্চটি মুলত নির্মিত হয়েছিলো রোমান সাম্যাজ্যের গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইয়ের স্থান হিসেবে।৫০ হাজার ধারন ক্ষমতা সম্পুর্ন এই গ্যালরিটি তৈরি করা তৎকালীন সময়ের হিসেবে বিস্ময়কর একটি অবদান হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
কলোসিয়াম
প্রাচীন এই রেমান সাম্রাজ্যের এই বিস্ময়কর গ্যালারিটি তৈরি হয়েছিলো পাথর এবং কংক্রিট ব্যবহার করে। এই গ্যালারিটি ৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত যার দৈর্ঘ্য ১৮৯ মিটার এবং প্রস্থ ১৫৬ মিটার। ৮০ টির মতো প্রবেশদ্বার রয়েছে এই গ্যালারিতে। রোমান সাম্রাজ্যের সকল নাগরিক বিনা মুল্যে প্রবেশ করতেন এই নগরীতে।

ইউনেস্কো ১৯৯০ সালে এটিকে ওয়াল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষনা করে এবং ২০০৭ সালে মানুষের তৈরি আধুনিক সপ্তাশ্চার্যের মর্যাদায় আসীন করে।

বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান 

“এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভুমি” কবির এই কবিতায় বলে দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এই অপরুপ সৌন্দর্যের সুধা পান করতে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয় সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ছুটে আসে।

আমাদের এই দেশে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই, তবুও আজকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

সুন্দরবন

বঙ্গোপসাগরের উপকুলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভুমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অর্ন্তভুক্ত। সুন্দরবন গড়ে উঠেছে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে যার মধ্যে ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশের মেধ্যে বাঁকি ৩৪ শতাংশ ভারতের মধ্যে।১৯৯৭ সালে সুন্দরবন “বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী” স্থান হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। 
সুন্দরবন
সুন্দরবনে দেখার মতো জায়গাগুলো হচ্ছে জামতলা সৈকত, মান্দার বাড়িয়া সৈকত, হিরন পয়েন্ট ও দুবলার চর। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে খুলনা শহরে এসে অবস্থান করে, বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অনায়াসেই বেড়াতে যেতে পারেন সুন্দরবনে।

সেন্টমার্টিন

একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্রমনের জন্য খুব প্রিয় স্থান। এই দ্বীপটি মুল ভুখন্ড কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার দুরে ১৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়।অপরুপ সৌন্দর্যের এই দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। 
সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে হলে আপনাকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে।তারপর টেকনাফ থেকে সমুদ্র রুটে আসা যাওয়ার জন্য কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল ও সুন্দরবন নামে যে জাহাজগুলো রয়েছে তাতে করে ভ্রমন করতে পারেন।

কক্সবাজার

অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজার। শুধু বাংলাদেশেরই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আসেন এ কক্সবাজার ভ্রমন করার জন্য। চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা হলো এই কক্সবাজার যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পুর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। কক্সবাজারের আয়তন ১৫৫ কিলোমিটার। 
কক্সবাজার
কক্সবাজারে বেড়ানোর জন্য যে সকল জায়গাগুলোতে আপনারা যেতে পারেন সেগুলো হলো, লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানি বীচ ইত্যাদি। এখানকার সারি সারি ঝাউ বন, নরম বালুর বিছানা ও বিশাল সমুদ্র মনকে করে তোলে আবেগময় ও বিস্ময়াভুত। 

এছাড়া ছোট ছোট দ্বীপ যেমন:মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী ও সেন্টমার্টিন কক্সবাজারকে করে তুলেছে আর্কষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

সাজেক ভ্যালি

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসেবে খ্যাতো এই সাজেক। রাঙ্গামাটি জেলার সর্ব উত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত এই সাজেক ভ্যালি। দেখার মত অনেক জায়গা রয়েছে যেমন রুইলুই পাড়া, কমলক ঝর্ণা, কংলাক পাড়া, হাজা ছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার। উত্তরে সাজেক ভ্যালিতে রয়েছে দুইটি পাড়া রুইলুই এবং কংলাক পাড়া। 
সাজেক ভ্যালি
রুইলুই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৮৫ সালে এই পাড়াটি ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব ৩৫১ কিলোমিটার। সাজেক ভ্যালিতে একটি ব্যতিক্রমী ব্যাপার আছে সেটি হল ২৪ ঘন্টায় প্রকৃতির তিনটি রুপি এখানে দেখতে পাওয়া যায় যেমন কখনো প্রচন্ড গরম হঠাৎ বৃষ্টি তার কিছুক্ষন পরে আকাশে মেঘের খেলা।

রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ

ঢাকা থেকে প্রায় ৩০৮ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটি জেলার অবস্থান। রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ এই জেলা ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ। এই ঝুলন্ত ব্রিজের একটি বিশেষ নাম রয়েছে একে “সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি” হিসেবে ডাকা হয়। এই ব্রীজটি বানানো হয়েছিল কাপ্তাই লেকের বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। 
ঝুলন্ত ব্রীজ
এই ব্রীজ দিয়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে খুব সহজেই যাতায়াত করা যায়। ব্রীজটি মূলত কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত হয়। এটি প্রায় ৩৩৫ ফুট লম্বা। এই ঝুলন্ত ব্রীজ দেখতে এসে আপনারা আরো অনেক নয়নাভিরাম কিছু জিনিষ দেখতে পাবেন।

যেমন: শেখ রাসেল এভিয়ারী ইকো পার্ক, শুভলং ঝর্না, কাপ্তাই লেক, উপজাতীয় জাদুঘর, ঝুম রেস্তোরা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, চিৎমরম গ্রাম ও যমচুক টাওয়ার।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন ভ্রমনের জন্য বিখ্যাত জায়গাগুলো সম্পর্কে। তাই দেরি না করে কোথায় বেড়াতে যাবেন তা এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার পছন্দের জায়গাটি নির্বাচন করুন।

উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩