মঙ্গল গ্রহে মানুষ কিভাবে বাস করবে - মঙ্গল গ্রহে প্রথম কে গিয়েছিল

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে মঙ্গল গ্রহে মানুষ কিভাবে বাস করবে এবং আরোও আলোচনা করা হয়েছে মঙ্গল গ্রহে প্রথম কে গিয়েছিলো সেই সম্পর্কে। মানুষ বহুদিন থেকে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার জন্য ইচ্ছে পোষন করে আসছে।সেই পথে তারা আনেকদুর এগিয়েও গেছে। এখন তাদের আপেক্ষার পালা।
মঙ্গল গ্রহে মানুষ কিভাবে বাস করবে - মঙ্গল গ্রহে প্রথম কে গিয়েছিল

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন মানুষ মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। প্রথম কে মঙ্গল গ্রহে যাবে এবং তিনি কিভাবে কি ধরনের প্রশিক্ষন গ্রহন করছেন, মঙ্গল গ্রহে যেতে কতো সময় লাগবে সেখানে অক্সিজেনের পরিমান কিরুপ আছে। কোন কোন দেশ মঙ্গল যাত্রার সাথে জড়িত আছে ইত্যাদি।

মঙ্গল গ্রহে মানুষ কিভাবে বাস করবে

মানুষের মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার ইচ্ছা অনেক দিনের এবং মঙ্গল হবে তাদের ‍দ্বিতীয় পৃথিবী। বিজ্ঞানীরা এই অশ্বাস দিচ্ছেন বহুদিন থেকে। তাই বসবাস করার আগে আমাদের জানতে হবে কিভাবে আমরা সেখানে যাবো। ১৯৭১ সালে প্রথম ২রা ও ৩রা মার্চ মঙ্গল গ্রহে দুটো রোবট পাঠানো হয়েছিলো যা ভুমি ছোঁয়া মাত্র তা ভেঙ্গে পড়ে এবং মিশন ফেল করে। 

পুনরায় ১৯৭৬ সালে ”ভাইকিং ১” নামে আরেকটি রোবট পাঠায় এবং তা মাটি স্পর্শ করে ও মিশন সফল হয়। এই সফল মিশনের মাধ্যমে মানুষ প্রথম মঙ্গল গ্রহের ছবি দেখতে পাই। ঠিক ২১ বছর পর “সজনা” নামে আরেকটি রোবট পাঠায় যা মঙ্গল গ্রহে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম হয়। এরপর Sprint ও Opportunity নামে আরো দুটো রোবট পাঠায়। 
এই মিশনটি মঙ্গল গ্রহে ৯০ দিনের মতো ছিলো কিন্তু মঙ্গল গ্রহে বাতাস বেশি থাকায় রোবটের উপর জমে থাকা সব ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সুর্যের আলো থেকে Solar system এর মাধ্যমে চার্জ হতে থাকে। ফলে এই মিশন ৬ বছর পর্যন্ত টেকশই হয়। মঙ্গলগ্রহের চরমভাবাপন্ন মাটির কারনে রোবট দুটি ধ্বংশ হয়ে যায়। 

এরপর NASA “কিওরিসেকি”নামে আরেকটি রোবট পাঠায় যেখানে Solar panel এর পরিবর্তে Nuclear generator ব্যবহার করা হয়। ফলে এই রোবটটি ১৩ বছর পর্যন্ত মঙ্গলের মাটিতে টিকেছিলো। “স্প্রিন্ট”, “অপরচুনিটি” ও “কিওরিসেকি” এই তিনটি রোবট কেবলমাত্র ৪১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পেরেছিলো। 

যে ছবিগুলো তারা পাঠিয়েছিলো তা দ্বারা জানতে পারা যায় যে মঙ্গল গ্রহেও মানুষ বসবাস করতে পারে। NASA এবং SPACEX নামে দুটি প্রতিষ্ঠান কয়েকজন মহাকাশচারীকে নিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাবার জন্য বিজ্ঞানীরা এক ধরনের বিশেষ যান আবিষ্কার করছেন যা অচিরেই আমরা দেখতে পাবো। এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন ২০৩০ সালের মধ্যে মানুষ মঙ্গল গ্রহে যেতে পারবে।

এবং বসবাস করতে সক্ষম হবে। SPACEX এর বিজ্ঞানীরা বলছেন একটি রকেট বুস্টারের মাধ্যমে SPACE SHIP কে মহাকাশে ছেড়ে দিয়ে আবার তা পৃথিবীতে ফিরে আসবে।আবার রকেট বুস্টারের সাথে ফুয়েল ট্যংক জুড়ে দিয়ে মহাকাশের দিকে যাত্রা করবে এবং SPACE SHIP এর সাথে ফুয়েল ট্যাংকটি জুড়ে দেওয়া হবে। 

ফলে পর্যাপ্ত ফুয়েল নিয়ে SPACE SHIP টি মঙ্গলের দিকে যাত্রা করবে এবং ৪ মাসের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাবে। এই SPACE SHIP টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বারবার ব্যবহার করার জন্য যোগ্য করে তোলা হবে।ফলে এই SPACE SHIP টিকে পৃথিবী ও মঙ্গলের মাঝে যাওয়া আসার যান হিসেবে ব্যবহার করা হবে। 

মঙ্গল গ্রহে বসবাস করতে হলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যার প্রথমটি হলো পানির সমস্যা এবং দ্বিতীয়টি হলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন মঙ্গল গ্রহে যথেষ্ট পানি রয়েছে। কারণ এই গ্রহের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বরফের পাহাড় জমে আছে। অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহের উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু বরফের খনি বলা যেতে পারে। 

যা থেকে আমরা পানির অভাব মেটাতে পারবো। তবে বিজ্ঞানীরা আরো ধারণা করছেন মঙ্গল গ্রহের মাটির নীচেও পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। এই জন্যই বিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন পৃথিবীর মতো মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা মঙ্গল গ্রহে রয়েছে। আর যেখানে পানি রয়েছে সেখানে অক্সিজেনও রয়েছে। 

কারণ আমরা জানি পানি তৈরি হয় অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের মিশ্রনে। তবে মঙ্গল গ্রহে মানুষকে জলবায়ুর খারাপ প্রভাব এর মধ্যে পড়তে হতে পারে। কারণ এই গ্রহের বায়ুমন্ডলের স্তর খুবই পাতলা যার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারে এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম থাকার কারণে উল্কাপিণ্ড খুব সহজেই মঙ্গল গ্রহে এসে পড়তে পারে। 

তবে বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বলছেন মানুষ মাটির ৯ ফুট নীচে বসতি স্থাপন করবে অথবা মঙ্গল গ্রহ থেকে পাওয়া প্রচুর আয়রন ও সিলকন দিয়ে ছাদ নির্মাণ করা হবে যা ক্ষতিকারক রশ্মি এবং বাইরের উল্কাপিণ্ড থেকে মানববসতিকে রক্ষা করবে। মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের আরেকটি বড় অন্তরায় হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণের অভাব। 
কারণ পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ ৬২ শতাংশ কম এটা একটা বড় সমস্যা হতে পারে যারা মহাকাশচারী মহাকাশে থাকার ফলে তার প্রতি মাসে ২ শতাংশ হাড়ের ঘনত্ব কমে যাবে তাহলে মঙ্গল গ্রহে বসবাসকারী মানুষেরা খুব সহজেই হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যায় করে পঙ্গু হয়ে যাবে।তবে বিজ্ঞনীরা মোটামুটি একটা সমাধান বের করেছেন।

যেমন: পানি ভর্তি একটি পাত্রকে যদি উল্টিয়ে দেয় তাহলে পাত্রের মাধ্যাকর্ষন শক্তি কমে যেয়ে সব পানি পড়ে যাবে। কিন্তু পানি ভর্তি পত্রটিকে নিয়ে যদি জোরে ঘুরাতে থাকেন তাহলে সেখানে মহাকর্ষীয় বল তৈরি হবে আর এই মহকর্ষীয় বলের প্রভাবে পানি আর পাত্র থেকে পড়বে না। তাই বাড়ী ঘর যদি এভাবে ঘোরানো যায় তাহলে সেখানে মাধ্যাকর্ষীয় বলের প্রভাব অনুভুত হবে। 

এটি সম্ভব একমাত্র সেন্টিফিউজ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে। এই কারনে বিজ্ঞানীরা “সেন্টিফিউজ সিটি” তৈরির কথা ভাবছেন।তবে এই “সেন্টিফিউজ সিটি” বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে যেমন কেউ যদি উপরের দিকে তাকায় তাহলে দেখবে আকাশ ঘুরছে এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তাই বিজ্ঞানীরা সিটির উপর ছাদ কিভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে গবেষনা পরিচালনা করছেন। 

আরেকটি বড় সমস্যা হলো খাবারের সমস্যা। ফসল ফলানোর জন্য পানি, অক্সিজেনের সাথে প্রয়োজন সুর্যের আলোর। মঙ্গলগ্রহে সুর্যের আলোর অভাব বেশ প্রকট। কারন এই গ্রহে গরমের সময় থাকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং শীতের সময় থাকে মাইনাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। 

তাই গরমের সময় সোলার প্যানেলে সাহায্যে বিদ্যেুৎ সংরক্ষন করে রাখতে হবে এবং শীতকালে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে ফসর ফলাতে হবে। যদিও উপরোক্ত বিষয়গুলো বেশ কঠিন তবে অসম্ভব নয়।

মঙ্গল গ্রহে প্রথম কে গিয়েছিল

যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার হ্যামন্ডে ২০০১ সালের ১০ ই মার্চ জন্ম গ্রহন করেন অ্যালিসা। ৩ বছর বয়স থেকে তিনি অ্যানিমেটেড কার্টুন দেখতে খুব ভালোবাসতেন।“দ্য ব্যাক ইয়ার্ডিগান্স” নামের কার্টুন সিরিজের “মিশন টু মার্স” পর্বটি তার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে সেখানে দেখা ‍যায় ৫ জন বন্ধু মিলে লালচে গ্রহ মঙ্গলে ঘুরতে গিয়েছে। 

এরপর থেকেই ছোট অ্যালিসার মনে লাল গ্রহ জয়ের স্বপ্ন জাগ্রত হয়ে উঠে। তার এই স্বপ্নের কথা বাবাকে জানালে বাবা বের্ট কারসন মেয়ের স্বপ্নকে সমর্থন করেন এবং অনুপ্রেরনা যোগাতে থাকেন।অ্যালিসার বাবা ৭ বছর বয়সে অ্যালিসাকে “অ্যালাবামার হান্টস ভ্যালিতে” একটি স্পেস ক্যাম্পে নিয়ে যান।সেখানে গিয়ে অ্যালিসার লাল গ্রহ জয়ের স্বপ্নটা আরোও দৃঢ় হয়। 

এবং জানার আগ্রহ আরোও বেড়ে যায়। মাত্র ১২ বছর বয়সে কুইবেক ও তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়া বেস ক্যাম্পের প্রত্যেকটিতে অংশগ্রহন করে রেকর্ড গড়েন। ২০১৪ সালে ৯ টি রাজ্যে “নাসার” ১৪ টি সেন্টার পরিদর্শন করেন এবং প্রোগ্রামের প্রথম স্থান অধিকার করে ছিনিয়ে নেন নাসার পাসপোর্ট।
ফলে লালিত স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যান নাসার MIR বা মঙ্গল অভিযানে ডাক পেয়ে। শুরু হয় স্বপ্ন পুরনের আরেক অধ্যায়।তিনি স্বপ্নপুরনের জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শুরু করেন যেমন: ভারবিহীন স্থানে থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল, রোবোটকস পদ্ধতি সহ আরোও নানা বিষয়ে প্রশিক্ষন চলতে থাকে। 

নাসার পক্ষ থেকে CALL NAME দেওয়া হয় BLUE BERRY. বিভিন্ন দেশের ভাষা শিখেন যেমন: ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, চাইনিজ ও স্প্যানিস। ২০১৬ সালে অ্যালিসা (Project Popular Suborbital Science in the Upper Mesos) এ অংশ গ্রহন করেন।

ফলে ১৮ বছর বয়সে পেয়ে যান পাইলট লাইসেন্স।বর্তমানে তিনি ফ্লোরিডার ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে অ্যস্ট্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশুনা করছেন। যদিও নাসা বলেছে অ্যালিশার সাথে কোনো মিশনের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক কথা বার্তা হয়নি।

তবে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি জার্নালে এবং সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অ্যালিসা কোন প্রকার যৌনতা, বিয়ে, সন্তানধারন, সংসার বা প্রেমে না জড়ানের অঙ্গিকারবদ্ধ হয়ে নাসার চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছেন।তার ইচ্ছে তিনি যদি অভিযান সফল করে ফিরে আসেন তাহলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন। 

আর যদি ফিরে আসতে না পারেন তাহলে যেন তাকে স্বরন করা হয় গ্যালাক্সি যোদ্ধা হিসেবে।

পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহে যেতে কত সময় লাগে

পৃথিবীর বাইরে যতগুলো গ্রহ আছে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই।প্রযুক্তির উৎকর্ষতার প্রভাবে ভীন গ্রহে যাওয়া এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।তবে মঙ্গল গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রহ বেশী।কারন বিজ্ঞনীরা মনে করেন পৃথিবীর বাইরে যদি কোন গ্রহে প্রান থাকে তাহলে মঙ্গল গ্রহে থাকা সম্ভব।বর্তমানে মঙ্গল গ্রহে যেতে সময় লাগে ৯ মাস। 

তাই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা সহ আরোও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন যাতে খুব কম সময়ের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানো যায়। তারা চেষ্টা করছেন এই সময়টা কিভাবে ৩ মাসে নামিয়ে আনা যায়। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন সৌরশক্তি ব্যবহার করে মানুষ পাঠানোর আগে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠানো যেতে পারে। 

তবে এতে জ্বালানী কম লাগলেও সময় অনেক বেশি লাগবে এটা ২ থেকে ৩ বছর লাগতে পারে।অন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন মঙ্গলে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য নিউক্লিয়ার থার্মাল ইলেকট্রিক প্রোপালশন বা পরমানু শক্তিচালিত রকেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।এছাড়া আরো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে যার নাম ইলেকট্রিক আয়ন প্রোপালশন।

নিউক্লিয়ার থার্মাল ইলেকট্রিক প্রোপালশন

প্রথমে রকেট উৎক্ষেপন করা হবে রাসায়নিক জ্বালানী দিয়ে।নভোচারীদের নিয়ে প্রথমে যাওয়া হবে ওরায়ন ক্যাপসুলে যার নির্মান কাজ চলছে। আগে থেকেই এটি চাঁদের কক্ষপথে থাকা গেটওয়ে নামের একটি স্পেস স্টেশনের সাথে যুক্ত হবে। এই ওরায়ন ক্যাপসুলটির সাথে যুক্ত হবে আরেকটি ট্রান্সফার ভেহিকালের।এই নভোযানটি হবে পারমানবিক বৈদ্যুতিক রকেট। 

একটি ট্রান্সপোর্ট মডিউলের সাথে থাকবে ক্র-ক্যাপসুল যেখানে থাকবেন নভোচারীরা।এই পারমানবিক বৈদ্যুতিক রকেট এই ক্র-ক্যাপসুল ও ট্রান্সপোর্ট মডিউলকে মঙ্গলের কাছাকাছি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। মঙ্গলের কক্ষপথে আগে থেকেই থাকবে আরেকটি প্রদক্ষিনরত নভোযান যাতে থাকবে একটি ল্যান্ডার বা মাটিতে অবতরনকারী যান এর সাথে যুক্ত হবে পারমানবিক বৈদ্যুতিক রকেট।

এর পরই নভোচারীরা নামবে মঙ্গলের মাটিতে।অ্যারোজেট রকেটডাইন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জো ক্যাসিডি বলছেন নিউক্লিয়ার থার্মাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পারমানবিক বৈদ্যুতিক রকেট চলবে।অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেল টমাস এরকম একটি মহাকাশ রকেট ডিজাইনের কাজ করছেন। 
তিনি বলছেন,“ল্যাবরেটরি পরীক্ষা থেকে মনে হচ্ছে আমরা হয়তো মঙ্গলে যাত্রার সময়টা ৩ মাসে কমিয়ে আনতে পারবো।এটা করতে বেশ সময় লাগবে।তবে রাসায়নিক জ্বালানিচালিত রকেটের থেকে এক-তৃতীয়াংশ সময় কম লাগবে।

তবে বোয়িং কম্পানী বলছে পারমানবিক রিঅ্যাক্টরযুক্ত মহাকাশযানের কারনে নভোচারীদের ক্ষতি হতে পারে।প্রকৃত সমস্যা হলো এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করা পৃথিবীতে বেশ কঠিন।

ইলেকট্রিক আয়ন প্রোপালশান

এই প্রযুক্তি হলো বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জযুক্ত পরমানু বা অনুতে দ্রুত গতির সঞ্চার করে তা থেকে বিপরীতমুখী ধাক্কা তৈরি করা, যাতে রকেট সামনের দিকে এগুতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি মহাকাশে উপগ্রহ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।কিন্তু গতি খুব কম।ভাসিমার নামে একটি উচ্চগতি সম্পুর্ন থ্রাস্টার তৈরি করছে অ্যাড অ্যাস্ট্রা নামক একটি প্রতিষ্ঠান।

তারা চাইছে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ যেন উৎপাদন হয় পারমানবিক রিঅ্যাক্টর থেকে। একটি মহাকাশযান এর ওজন যদি ৪০০ থেকে ৬০০ মেট্রিকটন হয় এবং ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে তাহলে মহাকাশযানটি ৩৯ দিনে মঙ্গলগ্রহে পৌঁছাবে। তবে ডেল টমাস বলছেন এটা এখনো ল্যাবরেটরি পর্যায়ে রয়েছে।

আলোক প্রযুক্তি

ক্যালিফোর্নিয়ার একদল পদার্থবিদ গবেষনার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন আলোক প্রযুক্তি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে মঙ্গল ভ্রমনের যাত্রার সময়কাল কমিয়ে আনা সম্ভব।অধ্যাপক লুবিন এই ফুটোনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ যানগুলোর মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করছেন।এই প্রযুক্তিটি তুলনামুলক সহজ।

কারন এখানে একটি লেজার রশ্মি থেকে নির্গত ফোটন কনাকে মহাকাশযান চালিত করতে ব্যবহার করা হয়।বিপরীতদিকের আগুন বিচ্ছুরনের মাধ্যমে মহাকাশযান সাধারনত উপরের দিকে ধাবিত হয়।এই পদ্ধতিতে মহাকাশযানটি বেশ ভারী হয়ে যায় ফলে গতি অনেক কমে যায়। ফুটোনিক প্রযুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবর্তে মহাকাশযান লেজার আলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। 

এতে কোনো ভর যুক্ত হয়না ফলে মহাকাশযানের গতি কমে না।অধ্যাপক লুবিন এই ফুটোনিক প্রযুক্তিতে আলোর গতি কততে পৌঁছাবে এর অনুপাত উল্লেখ করেন নি।যদিও তিনি বলেছিলেন এই প্রযুক্তিতে আলোর গতি এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

মঙ্গল গ্রহে কি অক্সিজেন আছে

“পারসিভেয়ারেন্স রোভার” নামে একটি মহাকাশযান পাঠানো হয়েছিলো মঙ্গল গ্রহে যাতে ছিলো একটি ছোট যন্ত্র যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে অক্সিজেন তৈরি করে।এই ছোট্ট যন্ত্রটি আকারে পাউরুটি সেঁকার টোস্টারের মতো। যার নাম (MARS OXYGEN IN-SITU RESOURCE UTILIZATION EXPERIMENT) বা সংক্ষেপে MOXIE. 

এই যন্ত্রটি ৫ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করতে পেরেছিলো যা দিয়ে মঙ্গলগ্রহে একজন মানুষ ১০ মিনিট শ্বাস নিতে পারবে। বড় আকারের MOXIE দিয়ে আরো বেশী পরিমানে অক্সিজেন তৈরি করা সম্ভব যা দিয়ে নভোচারিরা অভিযানের পুরোটা সময়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে পারবে। মহাকাশে যাওয়ার জন্য যে রকেট ব্যবহার করা হয় তাতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।

অক্সিডাইজারের জ্বালানী পুড়িয়ে রকেট সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এই অক্সিডাইজারের অক্সিজেনকে সাধারন অক্সিজেন হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রায় ৯৬ শতাংশ, অক্সিজেন ০.১৩ শতাংশ।আর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ২১ শতাংশ। MOXIE নামক এই যন্ত্রটি কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অনু থেকে অক্সিজেন বের করতে পারে। 

কার্বন-ডাই-অক্সাইডের প্রতিটি অনুতে থাকে একটি কার্বন ও দুইটি অক্সিজেন পরমানু। এখান থেকে একটি অক্সিজেন বের করে নেওয়া হয় এবং কার্বন মনো অক্সাইডকে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দেওয়া হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা MOXIE এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্নভাবে গবেষনা চালিয়ে যচ্ছে। 

তারা আশা করছে ১ ঘন্টায় ১০ গ্রাম পর্যন্ত অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব হবে।নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশন এর টেকনোলজি বিষয়ক পরিচালক ট্রাডি কোর্টেস বলেন, MOXIE যে ভীনগ্রহে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রথম যন্ত্র।

কেবল তাই নয়, এটি হচ্ছে এ ধরনের প্রথম প্রযুক্তি যা ভবিষ্যতের অভিযানগুলোকে ভিন্ন কোনো গ্রহে সেখানকার পরিবেশের উপাদান ব্যবহার করেই বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে।

মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা কত

পৃথিবীর চেয়েও ঠান্ডা মঙ্গল গ্রহ। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের কাছাকাছি আর্কটিক অঞ্চলে শীতকালে হয়ে থাকে। আসলে মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে তাই সূর্যের তাপ মঙ্গল গ্রহে খুব কম পৌঁছায়। মঙ্গল গ্রহে একটি পাতলা বায়ুমন্ডল রয়েছে যাতে ৯৬ শতাংশই কার্বন ডাই অক্সাইড। 
বিভিন্ন কারণে মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা কম থাকে।কখনো কখনো তাপমাত্রা মাইনাস ১২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মতামত অনুযায়ী পৃথিবীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এর্ন্টারটিকায় মাইনাস ৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পৃথিবীর বুকে পারদ এর চেয়ে বেশি নামতে পারিনি। মজার ব্যাপার মঙ্গল গ্রহে গ্রীষ্মকালেও পৃথিবীতে শীতের শুরুর মতো আবহাওয়া থাকে। 

মঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গল গ্রহে এত ঠান্ডা হওয়ার কারণ হলো মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় ১০০ গুণ পাতলা তাই মঙ্গল গ্রহ কোন তাপশক্তি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে না।

মঙ্গল গ্রহের রহস্য

নাসার দেওয়া একটি তথ্য কয়েক বছর আগে বিশ্বজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। তারা বলেছিলো মঙ্গলের মাটির নীচে পানির অস্তিত্ব রয়েছে। সেই পানি বরফ আকারে মাটির নীচে আছে। গবেষকরা বলছেন পানির অস্তিত্ব থাকার অর্থই হলো মঙ্গলে ছোট বা ক্ষুদ্র আকারের প্রানী থাকার সম্ভাবনার কথা। এরই মাঝে বেশ কয়েকটি মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হয়েছে। 

এই মহাকাশযানগুলি মঙ্গল গ্রহের আজব কিছু ছবি পাঠিয়ে চমকে দিয়েছে। “কিউরিসিটি” ও “পারসিভারেন্স” রোভার নামের দুটি মহাকাশযান কয়েক বছরে অসংখ্য ছবি পাঠিয়েছে। সেগুলোর মাঝে এমন কিছু দেখা গেছে যা দেখে গ্রহটিতে প্রানীর অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে UFO বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সম্পতি কিউরিসিটি মহাকাশ যানটি কিছু ছবি পাঠিয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে একটি পাথরে দরজার মতো অবয়ব, যা দেখতে অবিকল দরজার মতো। সুন্দর করে পাথর কেটে দরজা করেছে কেউ। তবে নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি আসলে ১১ ইঞ্চি বাই ১৭ ইঞ্চি আয়তনের একটি অবয়ব, যা এক ধরনের দৃষ্টিভ্রম। মঙ্গলে এই ধরনের দৃষ্টিভ্রম অহরহ হয়ে থাকে। 

ভাইকিং-১ একবার একটা ছবি পাঠিয়েছিলো যা দেখতে অবিকল মানুষের চেহারার মতো। পরে নাসার বিজ্ঞানীরা জানান এটি আসলে একটি পাহাড়ের উপরের অংশ,যা আস্তে আস্তে আকার পাল্টেছে।রোভার স্পিরিট একটি ছবি পাঠায় যা দেখতে একটি নারীর মতো। কিউরিসিটির পাঠানো আরেকটি ছবিতে দেখা যায় একটি মাছের ফসিলের ছবি। 

এভাবে মঙ্গলে চামচ, বল, সাপের মতো নানা অবয়ব দেখা গেছে।পারসিভারেন্সের পাঠানো ছবিতে অ্যালিয়েনের মাথার খুলির ছবি দেখা গেছে বলে অনেকে দাবি করেন। এগুলো সবই ছিলো দৃষ্টিভ্রম।

মঙ্গল গ্রহে কোন কোন দেশ গিয়েছে

মানুষ প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখে ১৯৬৯ সালে এরপর থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বাইরে সম্পর্কে জানার প্রচেষ্টা মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় সেই উৎসাহ থেকেই শুরু হয় মঙ্গল গ্রহের জানার অভিযান। বিশ্বের এখন পর্যন্ত বহু দেশ মঙ্গল অভিযানে মহাকাশযান পাঠিয়েছে তবে মঙ্গল গ্রহের বেশিরভাগ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

রাশিয়া: রাশিয়ার মার্শ-৩ নভোযান প্রথম ১৯৭১ সালে সফলভাবে মঙ্গলগ্রহে অবতরন করে। অবতরণের পর পরই নভোযানটি ছবি পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু দুই তিন মিনিটের মধ্যে নভোযানের সব মেশিন বিকল হয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে ছিল ভয়ংকর ধূলি ঝড়। ধারণা করা হয় ঐ ধুলিঝড়ে নভোযানের সব মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। 
এরপর রাশিয়া আরো ৫ বার মঙ্গল গ্রহে নভোযান পাঠানোর পর সফলতার মুখ দেখে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো কয়েকটি দেশ মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে মহাকাশযান পাঠাতে পেরেছে কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই তালিকায় নাম লেখিয়েছে। 

চীন: চীনের “তিয়ানওয়েন-১” নামে একটি মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে পাঠানো হয়েছে। এই মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের ইউটোপিয়া প্ল্যানেশিয়া নামের একটি অংশে অবতরন করেছে। চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গল গ্রহের মাটি, পাথর তুলে আনবে সেখানে পানি আছে কিনা তা খুঁজে দেখবে।

যুক্তরাষ্ট্র: মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নাসা এমন একটি প্রতিষ্ঠান যাদেরকে মহাকাশ গবেষণায় রাজা বলা হয়।নাসার নতুন অভিযানের অংশ হিসেবে “প্রিজার্ভারেন্স” নামে একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছে যা সবার প্রথমে মঙ্গল গ্রহের পাথর ও মাটি নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবে এবং পরীক্ষা করে দেখা হবে অনুজীবের অস্তিত্ব আছে কিনা।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন মঙ্গল গ্রহে বসবাস করার প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩