কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ - কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ ও কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।বর্তমানে এই সমস্যা বাংলাদেশে মারাত্মক আকার ধারন করেছে।দেশের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন এই রোগে আক্রান্ত।তবে প্রাথমিক অবস্থাতে কিডনি রোগ ধরা পড়লে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ - কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কিডনি খারাপ হওয়ার লক্ষনগুলো কিকি, আপনার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে কিভাবে বুঝবেন।এছাড়াও আরোও আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে কিডনির ব্যাথাজনিত সমস্যা থেকে ‍মুক্তি পাবেন।

তবে কিডনির সমস্যা হলে কি খাবেন, কি কি লক্ষন দেখলে বুঝতে পারবেন যে আপনার কিডনি সুস্থ আছে এবং কোন ওষুধের প্রভাবে কিডনির ক্ষতি হয় ইত্যাদি।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি হলো আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপুর্ন একটি অঙ্গ।এই অঙ্গটি আমাদের শরীরে ছাঁকুনীর কাজ করে।এটি রক্তকে ছেঁকে দুষিত পদার্থকে প্রসাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এটি সোডিয়ার ও পটাসিয়ামের মাত্রার ভারসাম্যতা বজায় রাখে।প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে,হরমোন তৈরী করে ও ক্যালসিয়াস শোষনে সহায়তা করে।সমুদয় রক্ত আমাদের শরীরে ৪০ বার প্রতিদিন প্রবাহিত হয়।
আপনার কিডনির সমস্যা হলে প্রস্রাব তুলনামূলকভাবে কম হবে ও ব্যাথা লাগবে। কিডনিতে ছাঁকনির সমস্যা হওয়ার কারনে রাতের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব লাগবে ও প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হবে।কিডনিতে সাধারণত পাথর হলে প্রসবের সাথে রক্তের কোষ বলিও বের হয়ে যায়। 

এছাড়াও প্রস্রাব যদি ফেনাযুক্ত হয় তাহলে বুঝতে হবে যে প্রোটিন বের হয়ে যাচ্ছে।এটি হয়ে থাকে মূলত অ্যালবামিন নামক একটি প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে।

Energy ঘাটতি হলে

কিডনি তার কাজগুলো সঠিকভাবে করতে না পারার কারণে শরীরে টক্সিন এর পরিমাণ বেড়ে যায়।ফলে শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায় এবং কোন কাজে মনোনিবেশ করা সম্ভব হয়না। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রাতে ঘুম হয়না

কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে শরীর থেকে বজ্র পদার্থ গুলো বের করতে পারে না। ফলে বিভিন্ন ধরনের দূষিত পদার্থ শরীরের মধ্যে জ্বমতে থাকে। এতে রাতের বেলা ঘুমের ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে। তাই হঠাৎ করে যদি দেখেন যে রাতের বেলা ঘুম ঠিক মতো হচ্ছে না তাহলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন নতুবা এই সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে।

পায়ের পাতা যদি ফুলে যায়

কিডনির সমস্যা হলে সে তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে ফলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায় এতে পা গোড়ালী ফুলে ওঠে।

খাবারে অরুচি

আপনি যদি দেখেন খাবার খাচ্ছেন কিন্তু একটা বমি বমি ভাব মনে হচ্ছে, এটা যদি দীর্ঘ মেয়াদি হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার কিডনির সমস্যা হয়েছে। কারণ শরীরে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন তৈরি হওয়ার কারণে ঘন ঘন বমি ভাব লাগে।

ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়

আপনি যদি কিডনি জড়িন রোগে আক্রান্ত হন তাহলে দেখবেন আপনার ত্বক সবসময় শুষ্ক হয়ে আছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হতে পারে। এইরকম সমস্যার মধ্যে যদি আপনি পড়েন তাহলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মাংসেপেশিতে টান

আপনি যদি কিডনির রোগে আক্রান্ত হন তাহলে আপনার শরীরের ইলেকট্রোলাইট যেমন:সোডিয়াম ও পটাশিয়াম এর ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। ফলে মাঝে মাঝে মাংসপেশিতে টান অনুভুত হয়। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

শ্বাস ছোটো হয় 

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের তরল জমা হতে পারে। এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং ছোট ছোট করে শ্বাস নিতে হয়। এই ধরনের সমস্যা অনুভূত হলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়

কিডনির ব্যাথা সাধারনত কোমর,পাজর,নিতম্বের জয়েন্ট,উপরের পেটে বা উরুর ভেতরের দিকে হয়ে থাকে। এই ব্যাথা কখনই পায়ের দিকে যাবে না।কিডনির ব্যাথায় সব সময় বমি বমি ভাব লাগে ও জ্বর হয়। এই ব্যাথা চিন চিন করে বা জমে থাকা ব্যাথার মতো অনুভুত হয়। এটির ব্যাথা কখনই শরীরের অবস্থা পরিবর্তনে কম বেশী হয় না।

কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়

আমাদের কোমরে ব্যথা হলে খুব চিন্তায় পড়ে যায়।আমরা বুঝতে পারি না কোনটা কিডনির ব্যথা আর কোনটা কোমরের ব্যথা। সাধারণত কিডনি থাকে আমাদের শরীরের ডান ও বাম পাশে বুকের পাজর এবং কোমরের হাড়ের মাঝখানে। এই জায়গায় ব্যথা হলে ধরে নেওয়া যায় এটা কিডনি জনিত ব্যথা।তাই দেরি না করে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পানি: কিডনির ব্যথা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ পানির মাধ্যমে শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের দুষিত পদার্থ,টক্সিন, সংক্রামক উপাদান বের হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ লিটার পানি পান করা উচিত।

রসুন: কিডনির ব্যথা দূর করতে রসুন বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি আপনি দুই তিন কোয়া রসুন রাখতে পারেন তাহলে কিডনির ব্যথাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। রসুনে রয়েছে অ্যালিসিনে নামক এক ধরনের পদার্থ যা ব্যথা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও আ্যন্টি-ফাঙ্গাল উপাদান কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে।

হলুদ: হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা মাইক্রোব তৈরিতে বাধা দেয় যা কিডনির ইনফেকশনের জন্য দায়ী। এটি কিডনির ইনফেকশন দুর করে ফলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।আমরা এটি মশলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার করে থাকি। তাই প্রতিদিনের রান্নায় আমাদের হলুদ ব্যবহার করা উচিত।তবে বেশী পরিমানে খেলে কিডনিতে পাথর হয়।

আদা: আদাতে আছে জিনজেরোলস নামক এক ধরনের উপাদান যা খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।এটি কিডনির ইনফেকশন দুর করে ফলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তাই আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক টুকরা আদা চাবিয়ে খাওয়া উচিত আদা যদি চিবিয়ে খেতে না পারেন তাহলে আদা চা পান করতে পারেন।

তবে যাদের হৃদরোগ ,ডায়াবেটিস ও গলব্লাডারের সম্যা আছে তারা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।প্রতিদিন ৪ গ্রামের বেশী আদা খাওয় উচিত নয়।

আপেল: আপেলের মধ্যে রয়েছে অ্যাসকরবিক এবং ম্যালিক এসিড যা কিডনিতে এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।এছাড়া এটি কোমর ও পেটে ব্যথার দুর করে। এই ফল কিডনির ইনফেকশন দুর করে ফলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তাই প্রতিদিন ১ টা করে আপেল খাওয় অত্যন্ত জরুরী।

হারবাল চা: এই চা যদি নিয়মিত খান তাহলে কিডনির ইনফেকশন থেকে দুরে থাকবেন এবং ব্যথাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।ক্যামোমাইলটি ,হিবিসকাস টি,গ্রিন টি কিডনির বিভিন্ন সমস্যা ও দুর করতে সিদ্ধহস্ত।

আপেল সিডার ভিনেগার: এতে ম্যালিক এসিড ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়ার উপাদান থাকার কারণে কিডনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও ইনফেকশন থেকে মুক্ত থাকে। ফলে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এটি নিয়মিত খেতে হবে। এছাড়া এটি ইউরিনারী ব্লাডার ইনফেকশনের ব্যথাও দুর করে।

প্রতিদিন এই ভিনেগার এক গ্লাস পানির সঙ্গে ২ চামচ করে মিশিয়ে পান করলে কিডনির ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অ্যালোভেরা: কিডনির ব্যথাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। অ্যালোভেরা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। প্রতিদিন এক গ্লাস এলোভেরা জুস আমাদের সকলের খাওয়া উচিত। অ্যালোভেরার নির্যাস দুই গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর এতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে।

বেকিং সোডা: বেকিং সোডা কিডনিতে বায়ো-কার্বনেট লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। শরীরের মধ্যে যে সকল ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে বেকিং সোডা তা বের করে দেয়। কিডনিতে যদি ইনফেকশন জনিত ব্যথা হয় তাহলে এক গ্লাস পানির সঙ্গে আধা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে কিডনির ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কিডনির সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত

কিডনি রোগীর সংখ্যা বর্তমানে মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। খাদ্যে ভেজাল, জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন ও আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে এই রোগ দিন দিন বাড়তে আছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। খুব অল্প বয়সি মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হচেছ। যদি কিডনির সমস্যা হয়েই যায়।
তাহলে জীবন যাপনে বেশ কিছু পরিবর্তন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাবার গ্রহন করতে হবে। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধিকে কমিয়ে আনতে রোগি ভেদে পথ্য নির্ধারন করতে হবে। রক্তে ইলেকট্রোলাইটসের পরিমাণ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ,ইউরিয়া ও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ,রক্তে ইউরিন ও অ্যালবুমিনের মাত্রার উপর নির্ধারন করে পথ্য সাজাতে হবে।

সবজি: রক্তে পটাসিয়াম,ইউরিক এসিডের মাত্রা,ফসফরাস ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কোন কোন সবজি খাবেন তা নির্ধারন করা হয়।যাদের কিডনির সমস্যা হয়ে গেছে তারা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ শাক-সবজি,পিচ্ছিল ও গাঢ় লাল রংয়ের শাক-সবজি থেকে ‍দুরে থাকবেন।তবে চালকুমড়া,চিচিঙ্গা,ঝিঙ্গা ইত্যাদি পানি জাতীয় সবজি কিডনি রোগীদের জন্য খুব উপকারী।

এই উপকারি সবজিগুলো পরিমিত পরিমানে খেতে পারবেন।কাাঁচা সবজির সালাত ও সবজির স্যুপি এড়িয়ে চলাই ভালো।

ফল: কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ফল খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যা স্বাস্থ্য সম্মত বিধি নয়। ফল খাওয়ার সময় জানতে হবে ফলটিতে পটাশিয়ামের মাত্রা কিরুপ আছে। কারণ রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বিবেচনা করে ফল খাওয়া উচিত।অক্সালিক এসিড,ইউরিক এসিড,পটাসিয়াম ইত্যাদি বিবেচনা করে ফল খেতে হবে।

আপেল,পাকা পেঁপে,পেয়ারা ফলগুলি রোগী ভেদে সিমীত আকারে দেওয়া যেতে পারে।

লবন: আপনি যদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে লবন খাওয়ার ক্ষেত্রে খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।লবনের পরিমাপ করা হয় রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা,প্রেশার,ইডিমা বা শরীরের পানি পরিমাপের উপর ভিত্তি করে।আপনার কিডনির অবস্থার উপর ভিত্তি করে খাদ্যে ২ থেকে ৫ গ্রাম লবন নির্ধারন কর হয়।

খাবার খাওয়ার সময় আলাদাভাবে লবন খাওয়া যাবেনা এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত খাবার যেমন:চিপস,চানাচুর,পাঁপড় বর্জন করতে হবে।

তরল বা পানীয় জাতীয় খাবার: আপনার কিডনির অবস্থার উপর নির্ভর করে চা,দুধ,পানি সহ আরো অনেক তরল খাবার দেওয়া হয়।দুধকে জাল দিয়ে ঘন করে পান করা যাবে না।কিডনি রোগীর ইডিমা,হিমোগ্লোবিন,সোডিয়াম, ই.জি.এস.আর এর মাত্রার উপর ভিত্তি করে এক থেকে দেড় লিটার কখনও কখনও দুই লিটার তরল বরাদ্দ করা হয়।

পরিমানের অতিরিক্ত পানি পান করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।কিডনি রোগীরা এ ধরনের খাবারের পরামর্শ মেনে চললে কিডনি রোগের মারাত্মক জটিলতা থেকে মুক্তি পাবে।

কিডনি রোগীর খাবার: চিচিঙ্গা,লাউ ,করলা শসা, সাজনা ডাটার শাক, লাল শাক,কচু শাক ঝিংগা, পেঁপে,হেলেঞ্চা শাক খেতে পারবেন।তবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক ,কচু, মুলা, পুঁইশাক, গাজর কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি ,মুলা শাক ইত্যাদি সবজি খাবার তালিকা থেকে বাদ দিবেন।মাছ,মাংস,দুধ,ডিম ইত্যাদি সিমীত পরিমানে খাবেন।
ডাব,কলা,আঙ্গুর একেবারেই খাবেন না। কারন এতে পটাসিয়াম রয়েছে।তবে কম পটাসিয়াম যুক্ত ফল যেমন:আপেল,পেঁয়ারা,পাকা পেঁপে,নাসপাতি ইত্যাদি খেতে পারবেন।রোগীর ক্রিয়েটিনিন,শরীরের ওজন,ডায়ালাইসিস করেন কিনা তার উপর ভিত্তি করে প্রেটিনের মাত্রা নির্ধারন করা হয়।

যেমন:কিডনি রোগীদের ক্ষত্রে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে প্রেটিনের প্রয়োজন ০.৫ থেকে ০.৮ গ্রাম।অতএব এসব নির্দেশনা মেনে খাদ্য গ্রহন করলে কিডনি রোগ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

সুস্থ কিডনির লক্ষণ

কিডনির সমস্যা হলে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যেমন:পা ফুলে যায়, কোন কাজে এনার্জি পাওয়া যায় না, ঘন ধন প্রসাব হয়,প্রসাবে জালাপোড়া হয়,রক্ত বের হয়,ঘনঘন হয়, প্রসাব ফেনা যুক্ত হয় খাবারে অরুচি হয়, বমি বমি ভাব লাগে, মাংসপেশিতে টান ধরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়,রাতে ঘুম হয় না ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি হয় ,প্রসাবের পরিমাণ কমে যায়।
কতগুলো Test করলে বোঝা যায় আপনার কিডনির অবস্থা সম্পর্কে।এই Test এর রিপোর্টগুলো যদি ভালো থাকে আবার রোগের লক্ষনগুলো না থাকে তাহলে ধরে নেয়া যায় আপনার কিডনি সুস্থ আছে।

Test গুলো নিম্নরুপ
  • Hemoglobin test
  • Urea Creatinine test
  • Sodium test
  • Potassium test
  • Calcium test
  • Phosphorus test
  • Venous blood bicarbonate test
  • Urine microscopic examination test
  • Urine ACR test
  • Ultrasound test

কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

বাংলাদেশে ২০২২ সালে কিডনি বিষয়ক একটা সমীক্ষা প্রকাশীত হয় তাতে দেখা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন এই সমস্যায় ভুগছেন অথচ তিনি জানেন না।সারা বিশ্বে এই রোগে ২৩ শতাংশ আক্রান্ত।সাধারনত দুটি কিডনি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আগে কোনে লক্ষন দেখা যায় না।তবে শুরুতেই নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
  • খুব দুর্বল অনুভূত হয়।
  • খাবারে অরুচি দেখা দেয়।
  • খাবার দেখলেই বমি ভাব লাগে।
  • কোনরকম চর্মরোগ ছাড়াই শরীর চুলকায় এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়।
  • প্রসাবে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়।
  • প্রস্রাবে বেশি বেশি ফেনা হয়।
  • ঘন ঘন প্রসাব হয় কিন্তু পরিমানে কম হয়।

যেসকল ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে

বিভিন্ন কারনে মানুষ ওষুধ খেয়ে থাকে।সর্দি,কাশি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো অসুখের জন্য মানুষ ওষুধ খায়।ওষুধ খেলে রোগ সেরে যায় ‍কিন্তু ঐ সকল ওষুধের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারনে শরীরের অন্যান্ন অঙ্গগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে ।১০ থেকে ২০ কিডনির সমস্যা হয় ওষুধের কারনে।কিছু ওষুধ আছে যা কিডনিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে ফলে কিডনি Failure হতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক 

সিপ্রোফ্লক্সাসিন, মেথিসিলিন, ভ্যানকোমাইসিন, আমাইগ্লাইকোসাইড জাতীয় ওষুধ যেমন: জেন্টামাইসিন, ক্যানামাইসিন ইত্যাদি,সেফালোস্পোরিন গ্রুপের ওষুধ যেমন: সেফুরক্সিম, সেফটাজিডিম, সেফাক্লোর, সেফালেক্সিন, সেফাড্রক্সিল ইত্যাদি, অ্যামফোটেরিসিন বি,ব্যাসিট্রেসিন ও সালফোনামাইড, ম্যারোপেনাম।এই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

ব্যাথানাশক

আমরা কোন চিকিৎশকের পরামর্শ ছাড়াই ব্যাথানাশক ওষুধ গুলো সেবন করে থাকি।এই ব্যাথানাশক ওষুধগুলো নিজের ইচ্ছামতো খাওয়ার কারনে কিডনি নষ্ট হয়ে থাকে। ব্যাথানাশক ওষুধগুলো হচেছ NSAID গ্রুপ, আইবুপ্রুফেন, ন্যাপ্রেক্সিন ইত্যাদি।বাজারে প্রচলিত ব্যাথানাশক ওষুধগুলো ছাড়াও আরোও বিভিন্ন ধরনের ব্যাথানাশক ওষুধ পাওয়া যায়।

যা কিডনি বিকলের জন্য দায়ী।বাজারে বর্তমানে নতুন কিছু ওষুধ এসেছে যেমন:সেলিকক্সিব, রোফেকক্সিব,ভ্যালডেকক্সিব জাতীয় যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।বিশ্বের বহু দেশে এসকল ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গ্যাসের ওষুধ

পেটে গ্যাস হলেই আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্যাসের ওষুধ খেয়ে থাকি।এই সকল ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যখন তখন খাওয়া যায় বলে মনে করি।কিন্তু ওমিপ্রাজল, ল্যানসোপ্রাজল, র‌্যাবিপ্রাজল, ইসোমেপ্রাজল ওষুধ গুলো প্রেশক্রিপসন ছাড়া খেলে কিডনির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়াও অ্যান্টিভাইরাল,উচ্চ রক্তচাপ,বাতজ্বর,মানসিক রোগের ওষুধ,কেমোথেরপি,অস্টিওপরোসিস, হাইপাক্যালসেমিযার ওষুধ,কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ বেশি ‍দিন সেবন করলে ক্ষতি হতে পারে।এছাড়া আইভিইউ, NGO গ্রাম ও CITY SCAN করালে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কিডনির ক্ষতি হতে পারে।তাই উপরেল্লিখিত ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন কি ধরনের লক্ষন দেখলে বুঝবেন যে আপনার কিডনি ক্ষতির মধ্যে রেয়েছে ও এই রোগের সমস্যা কিভাবে বুঝবেন।আপনি যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে পারেন তাহলে কিডনি বিকল হওয়াকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।


যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩