যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে খেজুর - দিনে কয়টা খেজুর খাবেন জেনে নিন
বন্ধুরা,আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে খেজুর কিভাবে অবদান রাখে।আরোও আলোচনা করা হয়েছে দিনে কয়টা খেজুর খাবেন,খেজুরে খেলে কি ধরনের উপকার পাবেন।যদিও খেজুর আমাদের দেশের ফল নয় তার পরেও বাংলাদেশে সারা বছরই বাংলাদেশের বাজারগুলোতে এই ফলটি পাওয়া যায়।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কি ধরনের নিয়ম মেনে খেজুর খেতে হয়,খালি পেটে খেজুর খেলে কি উপকার হয়,কখন খেজুর খাবেন,দিনে কয়টা করে খেজুর খাবেন ,এই ফলটি ভিজিয়ে খেলে কি উপকার হয়,ডায়াবেটিস রোগীরা কি খেজুর খেতে পারবেন? কোন ধরনের খেজুর খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় ইত্যাদি।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা - যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে খেজুর
খেজুরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ থাকায় তা সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। আপনারা যদি প্রতিদিন আপনাদের কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়ার আগে দুটো করে খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনি কর্মক্ষেত্রে কর্মচঞ্চল ও প্রাণবন্ত থাকবেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনার ওপর অর্পিত কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারবেন।
খেজুর যে শুধু সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় তা নয় এই ফলটি পুরুষদের যৌন শক্তি বাড়াতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে: বীর্যের ঘনত্ব বাড়াতে খেজুরের ভুমিকা অনস্বীকার্য।প্রচুর পুষ্টিগুন সম্পুর্ন ফল হলো এই খেজুর।এই ফল যদি প্রতিনিয়ত খান তাহলে আপনার বীর্যের ঘনত্ব বাড়বে সন্দেহাতীতভাবে।আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বীর্যের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য কতোই না প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু কোন ফল হয়নি।
কখনো কি খেজুর খেয়ে দেখেছেন ? যদি না খেয়ে থাকেন তাহলে আজকে থেকেই খাওয়া শুরু করুন দেখবেন ২ মাসের মধ্যে অবশ্যই ফল পাবেন।খেজুর যেহেতু আঁশ জাতীয় খাদ্য সেহেতু এটি খাদ্য হজমে সহায়তা করে।হজমশক্তি যদি আপনার ভালো থাকে তাহলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে যা যৌন জীবনকে করবে স্বাস্থ্যকর ও মধুময়।যৌনজীবন সুস্থ হলে বীর্যের ঘনত্ব থাকবে অটুট।
শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে জিঙ্ক যা আপনার শুক্রানু বাড়াতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।খেজুরে থাকা ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম ও খনিজ উপাদানগুলো যৌন জীবনকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।যৌন জীবন সুস্থ হলে আপনার বীর্যে শুক্রানুর আনুপাতিক হার স্বভাবিক থাকবে।
যৌন স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।যার প্রভাবে বীর্যে শুক্রানু উৎপাদনের পরিমান কমে যায়।খেজুরে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে কমিয়ে দেয়।ফলে শুক্রানুর সংখ্যা বেড়ে যায় ও গুনগত মানসম্পর্ন শুক্রানু উৎপাদিত হয়।
যৌন ক্রিয়ায় আগ্রহ বাড়ায়: নারী পুরুষ উভয়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যৌন কর্ম করার ইচ্ছা কমে যায়।খেজুরের মধ্যে থাকা ভিটামিন গুলি আপনার যৌন ইচ্ছা বাড়ায় এবং এই ভিটামিনগুলি পুরুষদের যৌনাঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় ফলে যৌনাঙ্গ থাকে লৌহ দন্ডের ন্যায় শক্ত এবং এর স্থায়ীত্ব থাকে অনেকক্ষন ফলে আপনার যৌন জীবন হয় অত্যন্ত সুখের ও মধুময়।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম - খেজুরের পুষ্টিগুন
খেজুরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।যা আমাদের রোগা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় গঠনে সহায়তা করে,রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে।তাই গর্ভবতী মায়েদের ও সাধারনের প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে খেজুর খাওয়া উচিত। “রোগ থেকে বাঁচতে চান রোজ খেজুর খান” এটাই আমাদের শ্লোগান।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
- আপনার যদি দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে ২ কাপ দুধের সাথে ২/৩ টি বীজ ছাড়ানো খেজুর দিয়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট ভালো করে ফুটিয়ে নিন।তার উপর কিছু কিসমিস ছিটিয়ে পান করুন।
- প্রতিদন সকালবেলা সকালের নাস্তা খাওয়ার পর ২/৩ টি খেজুর খেতে পারেন তাহলে শরীরে বেশ শক্তি পাবেন।
- যারা ডায়েট করছেন তারা প্রতিদিন ৩ টি করে খেজুর খাওয়া উচিত।ডায়েট করার পর শরীর বেশ দুর্বল থাকে।খেজুর খেলে শরীরে শক্তি ফিরে আসে।
- আপনি যদি সরাসরি খেজুর খেতে না পারেন তাহলে খেজুরের নাড়ু বানিয়ে খেতে পারেন।
- ডায়াবেটিস রোগীরা চিনি খেতে পারেন না।কিন্তু চিনির অভাব খেজুর দিয়ে পুরন করতে পারেন।কারন খেজুর হলো প্রাকৃতিক চিনির আঁধার।
- ২/৩ টা খেজুর সালাতের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- আপনি যদি ওট মিলের সাথে খেজুর মিশিয়ে খান তাহলে সেই খাবারের পুষ্টিগুন অনেক বেড়ে যায়।এবং খাবারটি সুস্বাদু হয়।
- খেজুরের চাটনি বানিয়ে খেতে পারেন।এই চাটনিটাকে সুস্বাদু করার জন্য তেঁতুল মিশিয়ে তেঁতুল খেজুরের চাটনি বানাতে পারেন।
- চা কিংবা কফিতে চিনি ব্যবহার না করে চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুরের পেষ্ট দিয়ে চা কিংবা কফি বানিয়ে খেলে শরীর মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
- আপনাদের মধ্যে যাদের শরীর খুব ক্ষীনকায় তার প্রতিদিন ৫ টা করে খেজুর খেলে ২ মাসের মধ্যে ওজন বেড়ে যাবে।
খেজুরের পুষ্টিগুন
প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে
- ক্যালোরি - ২৮২ কি. ক্যাল
- কার্বোহাইড্রেট - ৭৫ গ্রাম
- শর্করা - ৬৬ গ্রাম
- ফাইবার - ৬.৭ গ্রাম
- প্রোটিন - ১.৮ গ্রাম
- ফ্যাট - ০.২ গ্রাম
- ভিটামিন বি৬ - ০.২ মি.গ্রা.
- ভিটামিন কে - ২.৭ মাইক্রোগ্রাম
- পটাসিয়াম - ৬৫৬ মি.গ্রা.
- ম্যাগনেসিয়াস - ৫৪ মি.গ্রা.
- কপার - ০.৪ মি.গ্রা.
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়
প্রতিদিন সকালবেলা যদি খেজুর খাওয়া যায় তাহলে তা দেহের শক্তি বাড়ায় এবং সারাদিন শরীরকে রাখে চনমনে ও কর্মক্ষম। এছাড়াও ব্যায়াম করার আধাঘন্টা আগে খেজুর খেলে শরীরে যে শক্তির যোগান হয় তা ব্যায়ামের মাধ্যমে BURN করা যায়। ফলে শরীরে কোন ক্লান্তি বোধ হয় না। খেজুর খাওয়ার পর ব্যায়াম করলে পেট থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়।
রাতে ঘুমানোর আগে যদি খেজুর খান তাহলে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং শরীরকে সতেজ করে তুলবে। এছাড়াও রাতের বেলা পানিতে ভিজিয়ে খেজুর খেলে পারে যারা শারীরিকভাবে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই শারীরিকভাবে যারা ক্ষীনকায় তারা পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেজুর খেতে পারেন।
সকালে খালিপেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর আমাদের দেশে একটি সুপরিচিত ফল। রমজান মাসে আমরা প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেয়ে থাকি। যদিও এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে উৎপাদন হয় তারপরেও বর্তমানে এই ফলটি সারা বছরই আমাদের দেশে পাওয়া যায়। আপনারা প্রতিদিন সকালে যদি দুটি করে খেজুর খেতে পারেন তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
খেজুরে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ,ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রন। আপনারা প্রতিদিন ক্লান্তি দূর করতে এই ফলটি পেতে পারেন। পাকা খেজুরে রয়েছে আশি শতাংশ চিনি জাতীয় উপাদান যা প্রতিদিন খেলে আপনাদের কর্মশক্তি বেড়ে যাবে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:মানুষের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ উপাদান। ঐ উপাদানগুলো খেজুরের মধ্যে বিদ্যমান থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারীতা বাড়িয়ে দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের কর্মদক্ষতা অন্যদের অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
কর্মশক্তি বৃদ্ধি: শর্করা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় যাতে আমরা কর্মদক্ষ হয়ে উঠি।খেজুরে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা আমাদের শরীরে দ্রুত শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন যদি আপনি ৩ টি করে খেজুর খান তাহলে শরীরের দুর্বলতা কমে যাবে এবং অলসতা বা কাজের প্রতি অনীহা কেটে যাবে।আপনি হয়ে উঠবেন প্রনবন্ত ও কর্মচঞ্চল।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কোন রোগের কারণে যদি আপনার যকৃত সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত খেজুর খান তাহলে দেখবেন যকৃতের সংক্রমন দ্রুত উপশম হয়েছে। খেজুর গলা ব্যথা বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডাতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপনারা যারা অ্যালকোহলে আসক্ত তাদের শরীর নানারকম বিষক্রিয়ায় আবদ্ধ থাকে।
খেজুর এই বিষক্রিয়াগুলো শরীর থেকে বের করে দেয়। ভেজানো খেজুর বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে। এছাড়াও নিয়মিত খেজুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
দৃষ্টিশক্তি প্রখর: খেজুর কে বলা হয় ভিটামিনের “পাওয়ার হাউস”। এই ফলটিতে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ প্রচুর পরিমানে রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এই ফলটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। সেই সাথে রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে নিয়মিত খেজুর খান তাহলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।
যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:খেজুর ফুলের মধ্যে যে পরাগরেনু রয়েছে তা পুরুষের শুক্রানু বৃদ্ধি করে। যাতে বন্ধাত্ব দুর হয়।তাই যৌন অক্ষমতা ও বন্ধাত্ব দুর করতে আমাদের খেজুর খাওয়া উচিত।তাই আদিকাল থেকে বিবাহের অনুষ্ঠানে খেজুর বিতরনের রিতী চলে আসছে।খেজুরের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে ও যৌন ক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী করতে সহায়তা করে।
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়: বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।সাধারনত ধমনীর গায়ে খারাপ কোলেস্টোরল জমা হয়ে Blockage তৈরী করে।যারফলে আপনি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।খেজুর এই খারাপ কোলেস্টোরল কমিয়ে ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
পরিপাকে সহায়তা করে: সাধারণত দেখা যায় ৩০ পার হলে হজম শক্তি কমতে থাকে।তাই নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।খেজুরের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবিগুলোকে ধ্বংশ করতে সাহায্য করে।খেজুরে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
এছাড়াও এ ফলটি কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে ও ক্যন্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ত্বক ও হাড়ের সুরক্ষায় কাজ করে: ত্বকের উপর বয়সের ছাপ আগে গিয়ে পড়ে। খেজুর কে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে। খেজুর ত্বকের বলি রেখা ও চামড়া ভাঁজ হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। খেজুর ত্বকের ফ্যাকাসেভাব ও হরমোনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
এছাড়া এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াস থাকায় হাড়কে মজবুত রাখে।
হিমোগ্লোবিনের সামঞ্জস্যতা ও পেশী মজবুত করে: খেজুরে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকায় তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।নিয়মিত খেজুর খেলে রক্তস্বল্পতা দুর করে এবং হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখে।খেজুর প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি ফল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশীর নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।
তাই খেজুর নিয়মিত খেলে পেশীর দুর্বলতাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
খালি পেটে খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
- সামগ্রিক বিচারে খেজুরের খুব একটি অপকারিতা পাওয় যায় না।তবে প্রতিটি জিনিষ অতিরিক্ত খেলে তার কিছু খারাপ প্রভাব থাকে।
- আপনি যদি শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেজুর খান তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত খেজুর খেলে কিডনির উপর প্রভার পড়তে পারে।কারন এতে যথেষ্ট পরিমানে পটাসিয়াম রয়েছে।
- যদি আপনার শরীরে এলার্জি থাকে তাহলে অতিরিক্ত খেজুর গ্রহন ডায়রিয়ার কারন হতে পারে।
- পরিমিত পরিমানে খেজুর খেলে ডায়াবেটিসের কোন ক্ষতি করেনা কারন এটিতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যাকে বলা হয় Fructose. তবে অতিরিক্ত পরিমানে খেলে তা ডায়াবেটিস বৃদ্ধির কারন হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি খেজুর খেতে পারবেন
খেজুর মিষ্টি জাতীয় একটি ফল।এই ফলে প্রচুর পরিমানে আঁশ,খনিজ,মিনারেল ও ভিটামিন রয়েছে।বিভিন্ন স্বাস্থ্য গবেষনা প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষনা করে দেখেছেন খেজুর খেলে রক্তে শর্করা বাড়ে না।কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীরা ১ থেকে ২ টি খেজুর প্রতিদিন খেতে পারেন।চিনির বিকল্প হিসেবে এই মিষ্টি ফলটি খেতে পারেন।তবে অতিরিক্ত পরিমানে খেজুর খেলে ক্ষতি হতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের উপর খেজুর খাওয়া নিয়ে একটি গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যাতে দেখা যায় ১০ জনকে ৪ সপ্তাহে ১০০ গ্রাম করে খেজুর খাওয়ানোর পর তাদের রক্তে Glucose বাড়েনি এবং কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রনে ছিলো। গবেষনায় বলা হয় আজওয়া খেজুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী।বয়স্ক মানুষরাও আজওয়া খেজুর খেতে পারেন।
কোন খেজুরে উপকার বেশি
পৃথিবীতে প্রায় ৬০০রকমের খেজুর পাওয়া যায়। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে খেজুর বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এই খেজুরগুলো যেমন সুস্বাদু তেমন পুষ্টিকর।এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ উপাদান যা আমাদের প্রত্যহ কর্মজীবনকে প্রাণবন্ত ও কর্ম চঞ্চল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আজওয়া: এই খেজুরটি দেখতে কালো রঙের নরম এবং খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ ও খেতে বেশ সুস্বাদু। মূলত সৌদি আরবের মদিনা আল মনোয়ারা তে এ খেজুরের চাষ করা হয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই খেজুর খুব পছন্দ করতেন। এটি হৃদপিণ্ডকে সক্রিয় রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক রোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়াম যা হার্টের Blockage রোধে সহায়তা করে।
এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা দাঁত ও হাড়কে মজবুত রাখে। এর মধ্যে থাকা Glucose, Fructose ও Sucrose শরীরের শক্তি বাড়ায়। এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা এটি নিঃশঙ্খচিত্তে খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মেজুল: পৃথিবীর একটি জনপ্রিয় খেজুর হলো এই মেজুল। এটি মূলত মরক্কোতে চাষ করা হয়। বর্তমানে আমেরিকা সহ অনেক দেশেই এই খেজুরটি পাওয়া যায়। আকারে বড় এবং বাদামী রঙের হয়ে থাকে এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত খাদ্য হজমে সহায়তা করে।
আরোও পড়ুনঃ
এই খেজুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও হাড়কে মজবুত করে। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু হয়।এছাড়া আরও বিভিন্ন জাতের খেজুর রয়েছে যেমন:ওমানি, ডেগলেট নুর, হালাউয়ি, মাজাফাতি ইত্যাদি।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিন কতগুলি খেজুর খাওয়া উচিত তা ব্যক্তি বিশেষে ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে।তবে একেবারে অধিক পরিমানে খেজুর না খাওয়ায় ভালো। কারন খেজুরে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে।
যা বেশি পরিমানে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে এবং ডায়ারিয়াজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে ডায়েটে কি পরিমান খেজুর খাবেন তা পুষ্টি বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে পারেন। তবে সাধারনত প্রতিদিন ৩ থেকে ৬টি পর্যন্ত খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, আমিষ, শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও সালফার।নিয়মিত আপনি যদি খেজুর খান তাহলে হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন খেজুর ভিজিয়ে খেলে নিম্নলিখিত উপকারগুলো পাবেন
- খেজুর যদি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন তাহলে এর মধ্যে থাকা ট্যানিন ফাইটিক অ্যাসিড বের হয়ে যায়। ফলে এর পুষ্টিগুনকে সহজে শোষণ করে ফেলে। এছাড়াও ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে এই ফল সহজে হজম হয়।
- খেজুরের যে পুষ্টিগুন রয়েছে তা শোষণ করে নিতে চাইলে খাওয়ার আগে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে খালি পেটে খেলে সারাদিন কর্মক্ষেত্রে সতেজ ও প্রানবন্ত থাকবেন।খেজুর দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
- ভিজিয়ে রাখা খেজুর ওজন কমাতে বেশ কার্যকর ভুমিকা পালন করে।কারন এতে থাকা ফাইবার ক্ষুধা কমায় এবং দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা যায় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন যৌন শক্তি বাড়ানের হাতিয়ার হিসেবে খেজুরের ব্যবহার সম্পর্কে।এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন খেজুর বিভিন্ন উপায়ে খেলে আপনি কিভাবে এই ফল দ্বারা উপকৃত হবেন। আপনি যদি নিয়মিতভাবে খেজুর খেতে পারেন তাহলে শারীরিকভাবে থাকবেন প্রানবন্ত ও সতেজ।
উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url