চিনা বাদামের উপকারিতা - বাদামের লাল খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

বন্ধুরা,আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে চিনা বাদামের উপকারিতা নিয়ে আরোও আলোচনা করা হয়েছে বাদামের লাল খোসার উপকারিতা নিয়ে।বাদাম খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। নিয়মিত এ খাবারটি খেতে পারলে আপনার শরীর থাকবে সুস্থ ও সতেজ।আপনার কর্মক্ষেত্রে শরীরের এই সুস্থতা আপনাকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবে।
চিনা বাদামের উপকারিতা - বাদামের লাল খোসার উপকারিতা

ভুমিকা

আজকের আর্টিকেলটি যদি নিয়মিত পড়েন তাহলে জানতে পারবেন চিনা বাদাম খেলে কি উপকার পাবেন,আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত খেলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে।কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে এই বাদামটি খাবেন,ছোলা ও বাদাম একসাথে খেলে আপনার শরীরে এর প্রভাব কি সে সম্পর্কে।তাহলে আসুন বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে পড়ি।

চিনা বাদামের উপকারিতা

বাদাম বলতে আমরা চিনা বাদাম কে বুঝিয়ে থাকি। সারা পৃথিবীতে এটি বাদাম নামে পরিচিত। অন্যান্য বাদামের মতো এই বাদামেও নানাবিদ পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি উন্নত বিশ্বে একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। ১৮ শতকের শুরু থেকেই এই বাদামের চাষ করা হয়ে থাকে। চিনা বাদাম মাটির নীচের একটি শস্য দানা। 

উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা উদ্ভিদ জগতকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আলাদা আলাদা ভাবে শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। সে অনুযায়ী বাদাম বলতে বোঝায় বড় কোন গাছে ধরে এমন তৈলাক্ত বীজ অথবা ফল। যেমন: কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট ইত্যাদি। তাহলে বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আমরা যাকে বাদাম বলে থাকি তা আসলে বাদাম নয়।

চিনা বাদামের পুষ্টিগুন: আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার এর তথ্য অনুযায়ী ১০০ গ্রাম বাদামে নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে।

পুষ্টি সমুহ
  • শক্তি - ৫৬৭ ক্যালোরি
  • প্রোটিন - ২৫.৮ গ্রাম
  • শর্করা - ১৬.১৩ গ্রাম
  • ফাইবার - ৮.৫ গ্রাম
  • চিনি - ৪.৭২ গ্রাম
  • মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট - ২৪.৪৩ গ্রাম
  • পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট - ১৫.৫৬ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট - ৬.২৮ গ্রাম
খনিজ সমুহ
  • পটাসিয়াম - ৭০৫ মি.গ্রা.
  • ফসফরাস - ৩৭৬ মি.গ্রা.
  • ম্যাগনেসিয়াম - ১৬৮ মি.গ্রা.
  • ক্যালসিয়াম - ৯২ মি.গ্রা.
  • সোডিয়াম - ১৮ মি.গ্রা.
  • আয়রন - ৪.৫৮ মি.গ্রা.
  • জিঙ্ক - ৩.২৭ মি.গ্রা.
ভিটামিন সমুহ
  • ভিটামিন বি১ (থায়ামাইন) - ০.৬২ মি.গ্রা.
  • ভিটামিন বি২(রিবোফ্লেবিন) - ০.১৪ মি.গ্রা.
  • ভিটামিন বি৩(নায়াসিন) - ১২.০৭ মি.গ্রা.
  • ভিটামিন বি৬(পাইরিডক্সিন) - ০.৩৫ মি.গ্রা.
  • ভিটামিন বি৯(ফলেট) - ২৪০ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন ই (আলফা-টোকোফেরল) - ৮.৩৩ মি.গ্রা.
উপরে উল্লেখিত ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টি উপাদান ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফাইটো কেমিক্যাল এবং আরজিনিন সামান্য পরিমাণে কপার, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ডি।

চিনা বাদামের উপকারিতা
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রন করে: চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট এবং ক্যালোরি থাকায় আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন যে এটি শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়। এই ব্যাপারে একটি গবেষণা কর্ম পরিচালনা করেন কিছু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। উক্ত গবেষণায় যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে বাদাম ৮ সপ্তাহ ধরে খাওয়ানো হয়।

  • পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয় যে তাদের শরীরের কোন ওজন বাড়েনি বরং বাদামের মধ্যে যে চর্বি আছে তা ৩কেজি ওজন কমিয়ে দিয়েছে। মূলত ওজন কমানোর পিছনে কিছু কারণ দেখানো হয়েছে যা নিম্নরুপ
  • আপনি যদি চিনা বাদাম খান তাহলে দেখবেন যে আপনাদের ক্ষুদা কম লাগছে।কম ক্ষুদা শরীরর ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • নাস্তা হিসেবে যদি ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে বাদাম খান কিংবা বাদাম দিয়ে তৈরি কোন খাবার খান তাহলে সেটা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে ন।
  • বাদামের প্রতিটা অংশ পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে শোষিত হয় না। কিছু অংশ মলত্যাগের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
  • বাদামের মধ্যে যে প্রোটিন ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে তা খাবার হজম করতে প্রচুর ক্যালরি খরচ করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। সেটিও ওজন কমাতে সহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে: বিশ্বব্যাপী হার্টের রোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারন।প্রতিটি ঘরে ঘরে আজ উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি আর্টারি ডিজিজ ও হার্ট অ্যাটাক দেখা যাচ্ছে। একজন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম পরিমাণ চিনা বাদাম খেতে পারেন তাহলে তার হার্ট ভালো থাকবে। 

প্রচুর পরিমাণে গুণগত মানের ফ্যাট(মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট) রয়েছে যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। চিনা বাদামের মধ্যে সামান্য পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে কিন্তু মারাত্বক ক্ষতিকর ট্র্যান্স ফ্যাট নেই।চিনা বাদামে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। 

এই বাদাম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে কপার,নায়াসিন,ফলিক এসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি যা হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে: আপনাদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবারগুলো খুবই স্বাস্থ্যকর বলে গণ্য করা হয়। কারণ তাতে সুগারের মাত্রা কম থাকে। চিনা বাদাম খুব ভালো মানের লো স্লাইসিমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ একটি খাবার যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। 

এতে শর্করার পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং প্রোটিন, ভালো ফ্যাট ও ফাইবারের পরিমান যথেষ্ট পরিমানে থাকে।প্রতিনিয়ত যদি আপনারা চিনা বাদাম খেতে পারেন তাহলে টাইপ ২ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

পিওথলিতে পাথর রোধে সহায়তা করে: আপনাদের মধ্যে যারা বয়ো বৃদ্ধ এবং মহিলা তাদের পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি।এই রোগটি হলে প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।তাই প্রতিনিয়ত চীনা বাদাম খেতে পারলে পিত্রথলীতে পাথর হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

চিনা বাদামের মধ্যে ফিজিটোষ্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। ‍যা পিত্তথলিতে পাথর রোধে সহায়তা করে।

প্রদাহ নাশক: চিনা বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ফাইবার,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটো কেমিক্যাল রয়েছে যা প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে।তাই আপনাদের মধ্যে যারা রিউমাটয়েড আর্থ্রারাইটিস,পাকস্থলীতে আলসার ও বাতের ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ খাচেছন তারা যদি পাশাপাশি বাদাম খেতে পারেন তাহলে দেখবেন প্রদাহ নাশে এই খাবারটি কতটা কার্যকর।

ক্যান্সার প্রতিরোধে: চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে যে কোন ধরনের রোগ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ঠিক তেমনিভাবে পাকস্থলী ক্যান্সারে যারা ভুগছেন তারা যদি নিয়মিত বাদাম খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন।

যৌন ক্ষমতা বাড়ায়: চিনা বাদামে আরজিনাইন নামক উপাদান আছে যা লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা লিঙ্গকে করে তোলে লৌহদন্ডের ন্যায় শক্ত।এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থ যা শুক্রানুর মাত্রা বাড়ায় এবং গুনগত মান বৃদ্ধি করে।তাই প্রতিটি মানুষের উচিত প্রতিনিয়ত বাদাম খাওয়া। 

এছাড়াও চীনা বাদাম প্রতিনিয়ত খেলে জয়েন্ট এর বিভিন্ন ব্যথা উপসম হয়। ত্বকের মশৃনতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়, খুশকি দূর করে, চুল গজাতে সাহায্য করে।

বাদামের লাল খোসার উপকারিতা

বাদাম খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই খাবারটি প্রতিদিনের খাদ্য আমাদের তালিকায় রাখা উচিত। বাদাম এমনিতে খুব উপকারী তবে সারারাত ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে এটি যদি খেতে পারেন তাহলে অতিরিক্ত কিছু উপকার পাওয়া যাবে। তবে শুধু বাদামের কোয়া নয় বাদামের খোসাও সমান ভাবে উপকারী।

চাটনি তৈরি করা যায়: বাদামের খোসা দিয়ে সুস্বাদু চাটনি বানিয়ে দিতে পারেন। তাই প্রথমে বাদামের খোসা গুলি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভেজানো খোসা গুলি মিতি করে কবটে নিন। এবার কড়াইয়ে তেল ঢেলে পেঁয়াজ, গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে একসাথে ভেঁজে নিনন।

তারপর একটু ঠান্ডা হওয়ার পর বাদামের খোসা বেটে নুন,তেঁতুলের রস কারিপাতা ইত্যাদি ‍দিয়ে মিশিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু চাটনি।

ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়: ত্বক পরিচর্যায় বাদামের খোসা ব্যবহার করা যায়। বাদামের খোসা দিয়ে তৈরি বডি ওয়াশ আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দান করে।

গাছের সার হিসেবে: বাদামের খোসা গাছের সার হিসেবে খুবই কার্যকর একটি পদার্থ। এটিতে অক্সিডেন্ট এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টিভাইরাল এবং কিছু প্রোবায়োটিক থাকায় তা গাছের মেটাবলাইট ও ভিটামিন ই এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বাদামের খোসা ভালো করে শুকিয়ে নিলে সার তৈরি করা যায়। এছাড়াও বাদামের খোসা থেকে তৈরি খাবার মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত করা যায়।

খালি পেটে আমন্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা 

আপনারা যদি আমন্ড বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খান তাহলে ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম , প্রোটিন, ফাইবার, রিবোফ্লেবিন।এই বাদাম শুধুমাত্র হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় না মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
  • আপনি যদি আমন্ড বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খান তাহলে সারাদিন আপনার কর্মক্ষেত্রে কর্ম চঞ্চল ও প্রাণবন্ত থাকবেন।
  • এই খাবারটি আপনাকে অনিয়মিত মাসিক রোধে সহায়তা করে।
  • প্রতিনিয়ত এই খাবারটি যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার হজম শক্তির উন্নতী ঘটবে।
  • এছাড়া মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • এর মধ্যে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন রয়েছে তা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • এই খাবারটি রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনীর গায়ে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে পারে না এতে হার্ট ভালো থাকে।

আমন্ড বাদামের উপকারিতা

আমাদের দেশে এটি কাঠবাদাম হিসেবে পরিচিত। এই বাদাম মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশি হয়। এই বাদামটি কাঁচাও খাওয়া যায় আবার রোষ্ট করেও খাওয়া যায়। আদিম কাল থেকেই এই বাদামটির চাষাবাদ হয়ে আসছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে জর্ডানে আমন চাষ করা হতো। 

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফাইবার ও খনিজ আমন্ড বাদােম দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা যায় যেমন: আমন্ড দুধ, মাখন, তেল ও ময়দা ইত্যাদি।

আমন্ড বাদামের পুষ্টিগুন

১ মুঠো আমন্ড বাদামে রয়েছে
  • ক্যালোরি - ১৬৫গ্রাম
  • প্রোটিন - ৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট - ৬ গ্রাম
  • ফাইবার - ৩.৫ গ্রাম
  • ফ্যাট - ১৪ গ্রাম
  • আমন্ড বাদাম আমাদের শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় প্রতিদিন ১/৩ কাপ পরিমাণ এই বাদামটি খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।
  • আমাদের প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ক্যালসিয়ামের এই বাদামে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের শরীরকে রাখে প্রাণবন্ত। প্রতিদিন ১/৩ কাপ বাদাম খেলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।
  • আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেতে পারেন না। গরুর দুধের পরিবর্তে যদি আমন্ড বাদামের দুধ খেতে পারেন তাহলে তা দুধের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। আমন্ডে দুধে কোন ল্যাকটোজ নেই ফলে অনায়াসেই এটি খাওয়া যায়।
  • এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ব্লাডে সুগার কমাতে ও হার্টের সমস্যা রোধে সহায়তা করে।
  • এই বাদাম ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের মেটাবলিজমকে ভারসাম্যপূর্ন রাখে। এছাড়াও বাদামটি খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত কোন ক্ষিদা লাগে না।ফলে অন্য খাবার খাওয়ার তেমন কোন চাহিদা থাকেনা এতে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে।
  • এটি মস্তিষ্কের সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রাতে ভালো ঘুম আসে।
  • এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • আমন্ড বাদাম দিয়ে যে তেল তৈরি হয় তা মাথার খুশকি ও চুল পড়া রোধে সহায়তা করে।
  • এই বাদাম শরীরে ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় আর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
  • এই বাদামে আয়রন ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকায় রক্তস্বল্পতা দুর হয়। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • এই বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকায় তা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

আমন্ড বাদাম খুবই উপকারী একটি খাবার ।এই খাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং হার্ট ভালো থাকে, ত্বক থাকে লাবণ্যময় মাথার চুল পড়া বন্ধ হয়, স্মৃতিশক্তি থাকে প্রখর। কিন্তু প্রতিটা জিনিসই নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হয় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সেটা উপকারের চেয়ে অপকার বেশি করে। তাই পুষ্টিবিদদের দেওয়া মাপেই নিয়মিত এই বাদামটি খেতে হবে।
  • এই বাদামে অক্সালেট নামে একটি উপাদান থাকে যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যদি আপনার কিডনি জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে এই বাদামটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • আমন্ডিন নামে একটি প্রোটিন বাদামে রয়েছে ।এই প্রোটিনের প্রভাবে এলার্জির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • এই বাদাম অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বদহজম, এসিডিটি ,পেট ফাঁপা এমনকি ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
  • এই বাদামে হাইড্রোসায়ানিক এসিড পাওয়া যায়।আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমানে এই বাদাম খান তাহলে শ্বাসকষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আমন্ড বাদাম খাওয়ার পদ্ধতি

আমন্ড বাদামটি যদি আপনি কিছু নিয়ম মেনে খেতে পারেন তাহলে তা আপনার শরীরের সর্বোচ্চ পুষ্টি প্রদান করতে সক্ষম হবে। তাই প্রথমে এই বাদামকে সারারাত হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন তারপর খুব সকালে উঠে সব বাদামের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে তারপর এটি কিসমিস ও খেজুর যোগ করে খেতে পারেন।প্রতিদিন অন্তত ১০ টি করে বাদা খেতে পারেন। 

তবে তা অবশ্যই ভরা পেটে খেতে হবে। ফল ও সবজির সাথে খেতে পারলে বেশি ভালো হয়।

ছোলা ও বাদাম একাসাথে খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা এবং বাদাম দুটোই খুবই পুষ্টিকর খাবার। ছোলায় রয়েছে ভিটামিন সি, বি, ম্যাগনেসিয়াম ,আয়রন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা আমিষের অভাব দূর করতে সহায়তা করে। অপরদিকে বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়াম ইত্যাদি। 

পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিনের খাবারে যদি ছোলা ও বাদাম রাখতে পারেন তাহলে তা শরীরের জন্য খুবই উপকার। ছোলা ও বাদাম একসাথে খেলে আপনার পেশি সুগঠিত হবে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এছাড়াও এই খাবারটি বয়ঃসন্ধি কালে নারীদের অনিয়মিত মাসিক রোধে সহায়তা করে। এছাড়াও এ দুটি খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এই দুটি খাবার একসাথে খেলে আমিষ ও এন্টিবায়োটিক এর চাহিদা পূরন হয়। ছোলাতে থাকা সালফার হাত পায়ের জ্বালাপোড়া রোধ করতে সহায়তা করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই ছোলা কিংবা বাদাম ছিলে খেতে পছন্দ করেন। 

কিন্তু খোসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলের প্রাচুর্যতা রয়েছে। তাই খাবার দুটি খোসা ছাড়িয়ে খেলে সর্বোচ্চ পুষ্টির উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়। তাই পুষ্টিবিদেরা বলছেন এক বাটি ছোলাতে ১০ থেকে ১২ টি বাদাম মিশিয়ে খেতে হবে।

লেখকের শেষকথা

উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন বিভিন্ন ধরনের বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে।এছাড়া আরোও জানতে পেরেছেন বাদাম বিভিন্ন উপায়ে খেলে আপনি কিভাবে এই ফল দ্বারা উপকৃত হবেন। আপনি যদি নিয়মিতভাবে বাদাম খেতে পারেন তাহলে শারীরিকভাবে থাকবেন প্রানবন্ত ও সতেজ।

উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩