রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার - আলু খেলে কি মোটা হয় জেনে নিন
বন্ধুরা,আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে রুপচর্চায় আলুর ব্যবহার নিয়ে।আমাদের প্রায় সকলের মনে একাট প্রশ্ন জাগে যে আলু খেলে কি মোটা হয়? আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের ভাতের পরে প্রধান খাবার হচ্ছে আলু।আলু আমাদের দেশে খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং দামে খুব সস্তা।এই সবজিটির পুষ্টিমান খুব উচুঁমানের।
ভুমিকা
আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন আলুর বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক সম্পর্কে যা মেয়েরা ত্বক উজ্জল করতে ব্যবহার করে থাকে।আলু খুবই পুষ্টিমান সম্পুর্ন একটি খাবার এতে ভিটামিন, খনিজ, মিনারেলগুলো কি পরিমানে আছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আরও আলোচনা করা হয়েছে আলু নির্দিষ্ট পরিমানে খেলে কি উপকার পাওয়া যায় এবং অতিরিক্ত খেলে কি ক্ষতি হয়,মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও এটি কিভাবে খাবেন সেই সম্পর্কে।
রূপচর্চায় আলুর ব্যবহার
আলু আমাদের দেশে তৃতীয় প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।চাল, গমের পর আলুর অবস্থান।আলুকে গরীবের সব ধরনের ভিটামিন যেমন: ভিটামিন বি, সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, খনিজ,ফসফরাস যুক্ত পুষ্টিকর সবজি বলা হয়।কারন সব সবজির থেকে এই সবজিটির দাম সবচেয়ে কম।
আলুকে অলরাউন্ডার সবজি বলা হয় কারন এটি শুধু আমাদের পুষ্টির চাহিদা মিটায় না বরং রুপচর্চাতেও দারুন পারদর্শীতার পরিচয় দেয়।চীন, জাপান, কোরিয়ানরা রুপচর্চায় ব্যাপকভাবে আলু ব্যবহার করে থাকে।
আলুর ফেস প্যাক
আলু ও লেবুর রস
- গ্রেট আলু - ১ চা চামচ
- লেবুর রস - ১/২ চা চামচ
উপরোক্ত উাপাদানগুলো খুব ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু,টমেটো ও টক দই
- গ্রেট আলু - ১ চা চামচ
- টমেটো পেষ্ট - ১ চা চামচ
- টকদই - ১ চা চামচ
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু টমেটো দুধের স্বর
- গ্রেট আলু - ১ চা চামচ
- টমেটো পেষ্ট - ১ চা চামচ
- দুধের স্বর - ১/২ চা চামচ
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু স্ট্রবেরি ও মধু
- গ্রেট আলু - ২ চা চামচ
- স্ট্রবেরি - ১ টা
- মধু - ১/২ চা চামচ
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু,মুলতানি মাটি ও গোলাপজল
- গ্রেট আলু - ১ টেবিল চামচ
- মুলতানি মাটি - ১/২ টা
- গোলাপ জল - ১ চা চামচ
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।এই মাস্কটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব কার্যকর। তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু,টকদই ও হলুদ
- গ্রেট আলু - ১ টেবিল চামচ
- টক দই - ১ চা চামচ
- হলুদ - ১ চিমটি
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু,কাঁচা দুধ ও আমন্ড অয়েল
- গ্রেট আলু - ১ টেবিল চামচ
- কাঁচা দুধ - ১ চা চামচ
- আমন্ড অয়েল - ২/৩ ফোঁটা
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
আলু কাঁচা দুধ ও গ্লিসারিন
- গ্রেট আলু - ১ টেবিল চামচ
- কাঁচা দুধ - ১ চা চামচ
- গ্লিসারিন - ২/৩ ফোঁটা
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
- গ্রেট আলু - ১ টেবিল চামচ
- কাঁচা দুধ - ১ চা চামচ
- মধু - ১/২ চা চামচ
আলু ও শসা
- গ্রেট আলু - ১ কাপ
- শসা - ১ কাপ
উপরোক্ত উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে একটা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেষ্ট তৈরী করুন।তারপর এটিকে ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন ত্বকের উজ্জলতা কতোটা বেড়েছে।
উপরোক্ত ফেসপ্যাকগুলো নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। বর্তমান যুগে আমরা নানারকম কাজের চাপে দুশ্চিন্তায় থাকি। যার ফলে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়না এতে চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল বা কালো দাগ তৈরী হয়।এই প্যাকগুলো ব্যবহার করলে চোখের নীচের কালো দাগ দুর হবে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের বলিরেখা দেখা যায়।
ফেসপ্যাকগুলি নিয়মিত ব্যবহার করলে বলিরেখা দুর হয়।আপনাদের অনেকে ফর্সা হওয়ার জন্য ব্লিচ ব্যবহার করেন।এই ব্লিচ দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বকের মারাত্বক ক্ষতি হয়।এক্ষেত্রে আলু প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে।ব্লিচ যেভাবে ত্বকে ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবে আলুর রস ব্যবহার করলে নিমিষেই ত্বক ফর্সা হয়ে যাবে।এছাড়া আলুর প্যাকগুলো ব্যবহার করলে ত্বকের পোড়া ভাব দুর হয়।
আলুর পুষ্টি উপাদান
সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সবজিটি হলো আলু। একটা সময় আমাদের দেশে শ্লোগান ছিলো বেশি করে আলু খান ভাতের উপর চাপ কমান। আলু এমন একটি সবজি যা সব খাবারেই ব্যবহার করা যায়।আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ প্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সাথে আলু খেয়ে থাকেন।ভাতের পরে কোন প্রধান খাদ্য যদি থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে আলু।
যুক্তরাষ্ট্রের State Department of agriculture অনুসারে ১০০ গ্রাম আলুতে রয়েছে
- কিলোক্যালোরি - ৯৭ ভাগ
- পানি - ৭৪.৭ গ্রাম
- শর্করা - ২২.৬ গ্রাম
- আমিষ - ১.৬ গ্রাম
- চর্বি - ০.৬ গ্রাম
- আঁশ - ০.৪ গ্রাম
- ক্যালসিয়াস-১১ মি.গ্রা.
- আয়রন - ০.৭ মি.গ্রা.
- ভিটামিন সি - ১০ মি.গ্রা.
- ভিটামিন বি১ - ০.৩ মি.গ্রা.
আলুতে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।একটি মাঝারি সাইজের আলুতে ২৭ মিলিগাম ভিটামিন সি থাকে।এছাড়াও আলুতে রয়েছে পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন ইত্যাদি।এর ভিটামিন বি৬ মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।মন ভালো রাখার জন্য সেরোটোনিন, ডোপামিন নামক দুটি হরমোন আছে।
ভিটামিন বি৬ তা নিঃসরনে সহায়তা করে।আলুতে রয়েছে কুকোয়া-মাইনাস নামের এক ধরনেরউপাদান যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার আছে যা হজমে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।আলুতে ভিটামিন সি,বি কমপ্লেক্স থাকায় তা ত্বকের পোড়া ভাব দুর করে।
এছাড়াও রয়েছে গ্লকোজ,অক্সিজেন, অ্যামাইনো এসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা মস্তিষ্ককে সচল ও কার্যক্ষম রাখতে সহায়তা করে।
আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা
আলু মুলত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি।এটি একটি সাধারণ সবজি হলেও এর বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তবে সবচেয়ে বেশি ভারত উপমহাদেশে পেরু ও বলিভিয়ার জনগোষ্টি এই সবজি খেয়ে থাকে।
আলুর উপকারিতা
হজম শক্তি বাড়ায়: আলুতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম থাকায় তা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।পেটে কোন ধরনের ব্যাথা অনুভুত হলে বা কোন পেটের গোলমাল হলে সারাতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।অনেক বাচ্চা আছে যারা সহজে খাবার হজম করতে পারেনা,তাদের যদি খাবারের সাথে আলু খাওয়ানো যায় তাহলে তা হজমে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে: উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আলুর ভুমিকা অনবদ্য। এই সবজিটিতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।আলুতে যে ফাইবার আছে তা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।তবে এটাও ঠিক যে অতিরিক্ত পরিমানে আলু খেলে শরীরে চিনির পরিমান বেড়ে যায় ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধক: আলুতে প্রচুর পরিমানে ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ থাকায় তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষনায় পাওয়া গেছে আলুতে কোয়ারসেটিন নামে একটি যৌগ রয়েছে যা টিউমার প্রতিরোধে সহায়তা করে।শরীরে টিউমার না হলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
মস্তিষ্কের কার্যক্রম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে: আলুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স , গ্লকোজ, ওমেগা-৩ ও অ্যামাইনো এসিড থাকার কারনে তা মস্তিষ্কের কার্যক্রম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পরিমানে আলু খাওয়া।ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে আলু খাওয়ানো উচিত।
এটি যেহেতু খুব সহজে পাওয়া যায় তাই মস্তিষ্ক বিকাশে উপরিল্লিখিত ভিটামিনের জন্য অনায়াসেই আলুর উপর নির্ভর করা যায়।
হৃদরোগ থেকে রক্ষা: সাধারনত হৃদরোগ হয়ে থাকে ধমনী চিকন হয়ে যাওয়ার কারনে।ধমনী চিকন হয় যখন এর দেওয়ালে খারাপ কোলেস্টোরল জমা হয়।আলুর মধ্যে এমন কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা ধমনীর দেওয়ালে খারাপ কেলেস্টোরল জমতে বাঁধা দেয়।ফলে ধমনীতে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।
ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়: আলুর ফেস প্যাকগুলো যা উপরে রুপ চর্চায় আলুর ব্যবহার নামক সুচপিত্রে বর্ননা করা হয়েছে। এগুলো যদি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে রং ফর্সা হবে, চোখের নীচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে বলিরেখা পড়ে তা থেকে মুক্তি দেয়।
এর মধ্যে যে ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম রয়েছে তা ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিকে সহায়তা করে।
ডায়রিয়া থেকে মুক্তি: আলু খুবই হালকা একটি খাবার যা সহজেই হজম হয়।কেউ যদি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে আলু খাওয়ালে দুর্বল শরীরকে সবল করতে সহয়তা করে কারন প্রচুর পরিমানে স্টার্চ আছে যা শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।তাই ডায়রিয়া হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমানে আলু খাওয়াবেন ।
কিডনিতে পাথর রোধে সহায়তা করে: আপনারা যদি অতিরিক্ত পরিমানে প্রোটিন খান তাহলে আপনার কিডনিতে পাথর হতে পারে।তাই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পরিমানে আলু খেলে এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম পাথর হওয়া রোধে সহায়তা করবে।
ওজন বৃদ্ধি করে: ওজন বাড়াতে আলু খুব পারদর্শী। এতে প্রোটিন কম থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। কার্বোহাইড্রেট ওজন বাড়াতে ও কমাতে সহায়তা করে। আলুতে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ডি থাকার কারণে কার্বোহাইড্রেট কে শোষণ করতে সহায়তা করে। আপনি যদি ক্ষীনকায় হয়ে থাকেন তাহলে ওজন বাড়াতে প্রতিদিন একটি করে আলু সিদ্ধ খান।
বাতের ব্যথা দুর করতে: আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের মতামত অনুযায়ী আলুতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্য গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এতে যে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তা আর্থ্রাইটিস রোগীদের ব্যথা উপশমে সহায়তা করে।
আলুর অপকারিতা
- আলু খেলে উপকার হয় এটা সত্যি কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে পরিমিত খাওয়ার চেয়ে বেশি খেলে তা শরীরের অপকারিতাও ডেকে আনে।
- আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলু খান তাহলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- পঁচে যাওয়া কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়া আলু কখনোই খাবেন না এটি শরীরের জন্য খুবই বিষাক্ত।
- কাঁচা আলু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর তবে ভাজা আলু খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত আলু খেলে রক্তে শর্করার ভারসাম্যতা নষ্ট হয়। এতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব হাই।তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন এবং ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত আলু খাওয়া খুব ক্ষতিকর।
- সবুজ আলু কখনোই খাবেন না কারণ এতে এক ধরনের বিষাক্ত সোলেনিন ও আর্সেনিক আছে যা আমাদের শরীরের জন্য ঝুঁকিপুর্ন।
মিষ্টি আলুর উপকারিতা
মিষ্টি আলু একটি অতি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এই সবজিটিতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ , ফাইবার বিভিন্ন খনিজ ও মিনারেল রয়েছে ।এতে প্রচুর পরিমাণে একটি অক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আছে। USDA এর তথ্য মোতাবেক ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুতে ৮৬ কিলো ক্যালরি ও 0.১ গ্রাম ফ্যাট রয়েছে।
এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে। মিষ্টি আলু প্রচুর আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি সবারই জন্য নিরাপদ। বিশেষ করে যারা স্থুলতা ও টাইপ২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা নিশ্চিন্তে এই খাবারটি খেতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মিষ্টি আলুতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিন নামক দুটি উপাদান যা আমাদের শরীরকে ফ্রি-র্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।ত্বক ও চুলের যত্নে এটি খুব কার্যকর।মিষ্টি আলুর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা শুধুমাত্র এর ক্যারোটিনয়েডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এতে অ্যান্থোসায়ানিনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা বেগুনি রংয়ের ফল ও সবজির মধ্যে বেশি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: মিষ্টি আলু মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীরা এটি খেতে চান না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন মিষ্টি আলুতে গ্লাসেমিক ইনডেক্স কম থাকে এবং এতে প্রচুর ফাইবার থাকে এটিতে যে স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট থাকে তা রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আমেরিকান ডায়াবেটিস সোসাইটির মতে ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি আলু একটি সুপার ফুড।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন থাকায় তা আমাদের চোখ ভালো রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এই উপাদান আমাদের চোখকে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাই কেউ যদি নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে মিষ্টি আলু খেতে পারেন তাহলে তার দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
হজমে সহায়ক: মিষ্টি আলুতে বিভিন্ন ধরনের মিনারেল ও ভিটামিন বি থাকায় তা পেট ফাঁপা, এসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে, যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা নিয়মিতভাবে এই মিষ্টি আলু খেতে পারেন। নিয়মিতভাবে যদি আপনারা মিষ্টি আলু খেতে পারেন তাহলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
ওজন নিয়ন্ত্রন: আপনাদের ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে ওজন কমাতে মিষ্টি আলু খেতে পারেন। কারণ এই সবজিটিতে খুব অল্প পরিমাণে ক্যালরি এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তাই দীর্ঘ সময় এই খাবারটি পেটে থাকায় ওজন বৃদ্ধি করে না। এই সবজিটি যদি আপনারা নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে ওজন কমে আসছে।
মিষ্টি আলু কিভাবে খাবেন
মিষ্টি আলুতে ভিটামিন এ প্রয়োজনীয় খনিজ ও ফািইটো-নিউট্রিয়েন্টের মত উপকারী উপাদান রয়েছে। প্রতি ৩০০ গ্রাম মিষ্টি আলু থেকে ৫৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়তা করে।সারা শীতকাল জুড়ে এই সবজিটি বাজারে পাওয়া যায়। তাই এই সবজি দিয়ে বিভিন্ন পদের রেসিপি তৈরি করে খেতে পারেন।
মিষ্টি আলুর হালুয়া: প্রথমে মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে নিন। এরপর এটিকে হাত দিয়ে চেপে ভালোভাবে চটকে নিন।তারপর এতে এক চামচ ঘি,দুধ ও গুড় ভালোভাবে মিশিয়ে একটি সমান থালাতে রেখে চেপে চেপে দিন । তারপর এটিকে বরফির মতো কেটে শুকাতে দিন।শুকিয়ে আসলে এর উপর ড্রাই ফ্রূটস দিয়ে পরিবেশন করুন।
মিষ্টি আলুর চাট: মিষ্টি আলুগুলোকে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর আলুগুলোকে স্লাইস করে কেটে এর উপর চাট মসলা, লেবুর রস, গোলমরিচের গুড়া, ভাজা জিরার গুড়া, ধনেপাতা কুচি, টমেটো কুচি এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে তৈরি করে ফেলুন মিষ্টি আলুর চাট।
ম্যাশ সুইট পটেটো: মিষ্টি আলু গুলোকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে চটকিয়ে নিন। তারপর চটকানো মিষ্টি আলুতে মাখন, ১ চা চামচ ম্যাপেল সিরাপ, দারুচিনি গুড়া আর সামান্য লবন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এটিকে গ্রিল চিকেন এর সাথে পরিবেশন করুন।
Baked sweet potato: প্রথমে মিষ্টিআলু গুলোকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর মত কেটে রাখুন। তার আগে ইলেকট্রিক ওভেনটিকে ১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রি-হিট করে নিন। তারপর বেকিং ট্রেতে আলুগুলো রেখে তার ওপর অলিভ অয়েল পালিশ করুন। তারপর এর ওপর রসুন কুচি, রোজমেরি, ওরিগ্যানো, চিলি ফ্লেক্স, গোল মরিচের গুঁড়া দিন।
এবার ৩৫ মিনিট বেক করুন তারপর ওভেন থেকে বের করে চা কিংবা কফির সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।
মুখে আলু দেওয়ার অপকারিতা
বাঙালির সঙ্গে আলুর সম্পর্ক খুব নিবীড় কারন বাঙালীর ঘরে অন্য কোন সবজি না থাকলেও আলু থাকবেই।আলু যেমন খাবার হিসেবে খুব সুস্বাদু ঠিক তেমনি রুপচর্চাতেও খুব পারদর্শী।ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আলুর বিভিন্ন ফেসপ্যাক ব্যবহার করা হয়।তবে ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত ব্যবহার তা ক্ষতির কারন হতে পারে।যেমন:ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়,ত্বক ফেটে যায় ইত্যাদি।
আলু খেলে কি মোটা হয়
সারা পৃথিবীতে আলুর জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত কারণ এর সহজলভ্যতা ও দামে সস্তার কারণে। বিভিন্ন ধরনের ভাজাভুজি থেকে শুরু করে নানারকম মুখরোচক খাবার তৈরীতে আলুর ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা আলু খেতে চান না তাদের ধারণা আলু খেলে মোটা হয়ে যেতে পারে।
আরোও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তালিকা মেনে চলেন এবং ফাস্ট ফুডের নামে জাঙ্ক ফুড খাওয়া বাদ দেন তাহলে আলু ও মিষ্টি আলু দুটোই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।ভিটামিন সি আলুতে থাকায় তা ওজন কমাতে সহায়তা করে।এছাড়া আলুতে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার রয়েছে।
আলুতে রয়েছে পটাসিয়াম যা পেশি গঠনে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।এতে চর্বি খুব কম পরিমানে থাকে। আলুতে যে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।এটা খুবই আশ্চর্যের একটি বিষয়।তবে ক্রিম,পনির,মাখনের সাথে যদি আলু খান তাহলে তা ওজন বাড়িয়ে দেয়।এক প্যাকেট চিপস যদি নিয়মিত খান তাহলে আপনার কোলেস্টোরল বাড়িয়ে দিবে।
আলু খেলে ওজন বাড়ে তা নির্ভর করে এটা কার সাথে কিভাবে খাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে।তবে রান্না বা সিদ্ধ আলু যদি খান তাহলে আপনার ওজন বাড়বে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।আমরা সাধারনত জানি আলু খেলে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়।প্রকৃতপক্ষে গ্লাইসিমিক জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রন করে।
আলু একটি মাঝারি ধরনের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স জাতীয় খাবার। তাই আলু খেলে রক্তে শর্করার পরিমান বাড়ে না এটা নির্ভর করে আলু রান্নার পদ্ধতির উপর।আলু যদি তেলে ভেজে খান তাহলে ওজন বাড়াবে আর যদি সিদ্ধ করে খান তাহলে ওজন কম রাখতে সাহায্য করবে।
লেখকের শেষকথা
উপরের বিস্তারিত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গেছেন কিভাবে আলু দিয়ে বিভিন্ন মাস্ক তৈরী করে ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ব্যবহার করে থাকে।এছাড়া বিভিন্ন ধরনের আলুর উপকারীতা এবং অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।আলু খেলে যে মোটা হয় না সে ভুলটিও ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url