ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। এবং এই সজনে পাতার গুড়া করার পদ্ধতি ও উপকারিতা নিয়েও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।মনোযোগ দিয়ে পড়লে অনেক তথ্য এই আর্টিকেলটিতে পাবেন।
আপনারা হয়তো সজনে ডাটার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কিন্তু এটা কি জানেন ?সজনে পাতার উপকারিতা সজনে ডাটার চেয়েও বেশি তাই এটাকে ডায়াবেটিস রোগের মহৌষধ বলা হয়।
ভূমিকা
এই অলৌকিক খাবারের মধ্যে আছে কমলালেবুর থেকে সাত গুণ বেশি ভিটামিন C ,দুধের থেকে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম,গাজরের থেকে চার গুণ বেশি ভিটামিন A, দই এর থেকে দুই গুণ বেশি প্রোটিন এবং কলার থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম।
তাহলে আজকের আর্টিকেলটিতে সজনে পাতার উপকারিতা,সজনে পাতা কিভাবে খেতে হয়,এই পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানাবো ,এছাড়াও ওজন কমাতে এই পাতার জুড়ি নেয়।আরও জানাবো ওষুধী গুন সম্পূর্ন এই পাতার জুস সম্পর্কে। আসুন বিষয়গুলো নিয়ে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করি।
সোজনে পাতার উপকারিতা
বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে অলৌকিক এই পাতার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
- সজনে পাতায় এমন এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে যা ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয় এবং কার্বোহাইড্রেট কে শোষণ করে নেয়,ফলে রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া রোধ করে। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- দীর্ঘদিন ধরে সজনে পাতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় যা ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করে দেয়।ফলে ক্যান্সার নিরাময়ে সহায়তা করে।
- Niazimicin নামে এক ধরনের যৌগ রয়েছে এই সজনে পাতায় যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে ধ্বংস করে দেয়। বিশেষ করে প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে কাজ করে।
- এতে রয়েছে ভিটামিন A,ভিটামিন C ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে কোষগুলোকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং কোষের আন ন্যাচারাল বৃদ্ধি কে রোধ করে ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
- এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে।
- সজনে পাতায় কোলেস্টরেল লোয়ারিং ইফেক্ট রয়েছে যা রক্তে কোলেস্টরেল কমাতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত সজনে পাতা খেলে HMG coA Reductase নামে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যা লিভারকে কোলেস্টরেল তৈরিতে বাধা দেয় ,ফলে রক্তে কোলেস্টোরেল এর মাত্রা কমে যায়।
- সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, তাই সজনে পাতা খেলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে সোডিয়াম কমিয়ে দেয় ফলে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক থাকে।
- নিয়মিত সজনে পাতা খেলে রক্তে Oleic Acid-Monounsaturated omega-9 fatty acid তৈরি হয় যা ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
- সজনে ডাটার মধ্যে যে বীজ থাকে তা দিয়ে এক ধরনের তেল তৈরি হয় যা ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা আপনার ত্বকের ব্রণ ও রিংকেল রোধে সহায়তা করে। এতে অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্য থাকায় সময়ের আগে চুল পেকে যাওয়া চুল ঝরে যাওয়া রোধ করে এবং ঘন কালো চুলের অধিকারী করে তোলে।
- এতে Isothiocyanates Anti inflammatory বৈশিষ্ট্য থাকায় কোথাও কেটে গেলে বা কোথাও ব্যাথা পেলে তা নিরাময়ে সহায়তা করে।
- সজনে পাতা খেলে আমাদের Cortisol লেভেল টা ঠিক ঠাক মতো থাকে। ফলে বিভিন্ন ধরনের Stress, Depression, Anxiety থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
- এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্ত স্বল্পতা রোধে সহায়তা করে।
- এতে Non soluble calcium oxalate থাকায় কিডনির কোন ক্ষতি করেনা। ফলে কিডনিতে পাথর তৈরী হয় না।
- এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়া,আলসার ও পেটফাঁপা থেকে বাঁচতে সহায়তা করে।
আপনারা উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয় এখন জানতে পারলেন এই পাতার উপকারিতা সম্পর্কে।
সজনে পাতা কিভাবে খেতে হয়
এক চামচ সজনে পাতার পাউডার মুখের মধ্যে নিয়ে হালকা গরম পানি চুমুক দিয়ে চায়ের মত করে খেতে পারেন। সকালবেলায় সকালের নাস্তা খাওয়ার পর এটি খাবেন। এছাড়া চা,কফির সাথে মিশিয়েও এটা খাওয়া যায়। সজনে পাতার পাউডার ভাত,সবজি ,সালাতের উপর ছিটিয়েও খাওয়া যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ থেকে ৪ চামচ এই পাতার জুস খালি পেটে খেতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ গ্রাম কাঁচা পাতা আদা কুচির সাথে মিশিয়ে ফুটন্ত পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে সেই পানি চায়ের মতো করে খেতে পারেন।
যদি পাউডার ফর্মটি খেতে চান তাহলে ২ চামচ পাউডার ১/২ চামচ চা ও আদা কুচির সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে এর সাথে খাটি মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
বন্ধুরা নিশ্চয় এখন খুশি হয়েছেন সোজনে পাতা কিভাবে খেতে হয় এই তথ্যটি জেনে।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
- এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।যা কার্বোহাইড্রেটকে কমিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- এতে Glycemic load কম থাকায় সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
- এতে ক্যালরি কম থাকায় মোটা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। আর আপনারা খুব ভালো করেই জানেন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মোটা হওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
- সুগার কমানোর ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই এই পাতায় সোডিয়ামের থেকে পটাশিয়াম বেশি থাকায় তা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে।
- লো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও লো কোলেস্টরেল থাকায় সুগার কমাতে সহায়তা করে।
- এতে ক্যালসিয়াম ১৯%, আইরন ৩১%, ম্যাগনেসিয়াম ৪১%, ম্যাঙ্গানিজ ১৭%, জিংক ৬% এই খনিজগুলো থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- এতে রয়েছে ভিটামিন এ ৪৭% ভিটামিন সি ৬২% ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে রক্তে সুগারের মাত্রা কমায়।
- এতে রয়েছে Cholorogenic, Quercercetin এগুলো এন্টি ডায়াবেটিস উপাদান যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
সজনে পাতার গুড়া করার পদ্ধতি ও উপকারিতা
প্রথমে গাছ থেকে কচি পাতার ডালগুলো ভাঙতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গাছের মোটা ডালগুলো যেন ভেঙে না যায়,কারণ সজনে গাছের ডাল অত্যন্ত নরম হয়।এরপর পাতাগুলো বালতিতে রাখা পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ এই পাতার মধ্যে অনেক ময়লা, ধুলোবালি থাকতে পারে।
এখন প্রতিটি ডাল থেকে পাতা আলাদা করে নিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে পাতার সাথে যেন ডাল চলে না যায়।এরপর পাতাগুলো একটি নীল বা সাদা পলিথিনের উপর অথবা থালার উপর পাতলা করে নেড়ে দিতে হবে।
বাড়ির আঙিনায় অথবা বাড়ির ছাদে রেখে ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে।বিভিন্ন ময়লা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মার্কিন পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।পাতা যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে তখন পাতার উপর হাত দিলে একটা মুচমুচে শব্দ হবে। যখন এই মুচমুচে শব্দ হবে তখন বুঝবেন পাতা পাউডার হওয়ার উপযোগী হয়ে গেছে।
এরপর এই মুচমুচে পাতাগুলোকে ভালোভাবে পাটা অথবা ব্লেন্ডারে কয়েকবার দিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।গুড়ো সজনে পাতা ও কাঁচা পাতার খাওয়ার উপকারিতা একই রকম যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন এই পাতার গুড়া করার পদ্ধতি ও উপকারিতা।
সজনে পাতার জুস
এই জুস কাঁচা পাতা ও পাউডার দুই ভাবেেই বানিয়ে নিতে পারবেন।নিয়মিত এই জুস যদি আপনারা পান করেন তাহলে ডায়াবেটিসে রোগীদের আর ওষুধ খেতে হবেনা।
কাঁচা পাতার জুস বানানোর নিয়ম
প্রথমে ১৫ থেকে ২০ গ্রাম কাঁচা পাতা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর এই পাতা কুচি আদার সাথে মিশিয়ে সামান্য পরিমাণ বিট লবন ও পানি দিয়ে মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর ছাকুনি দিয়ে ছেকে একটি পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
পাউডারের জুস বানানোর নিয়ম
- পানি-৩০০ মিলি
- গুড়ো পাউডার-২ চামচ
- বিট লবণ-১/২ চামচ
- খাঁটি মধু-১ চামচ
উপরোক্ত নিয়মে সজনে গুড়োর জুস বানিয়ে নিতে পারেন।
সজনে পাতার ব্যবহার
- এতে রয়েছে ভিটামিন A ও C যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি করে এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- এতে এক ধরনের প্রোটিন আছে যা ইনসুলিন সিক্রেশন বাড়িয়ে দিয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ করে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- এতে এক ধরনের এনজাইম রয়েছে যা ভালো কোলেস্টেরল তৈরিতে সহায়তা করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়।
- সজনে পাতায় পটাসিয়াম থাকায় তা রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কে কমিয়ে দিয়ে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
- এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যামাইনো এসিড যাতে রোগ প্রতিরোধে বৃদ্ধি করে।
- এছাড়াও সজনে পাতা রূপচর্চাতেও ব্যবহৃত হয়। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি এজিং এজেন্ট ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ব্রণ,রিংকেল প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
বন্ধুরা এখন আপনারা নিশ্চিত হয়েছেন এই পাতার ব্যবহার সম্পর্কে।
ওজন কমাতে সজনে পাতা
সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যেমন ভিটামিন A ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিন C আরো রয়েছে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন:ক্যালসিয়াম,আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বন্ধুরা এখন আপনারা জেনে গেছেন কিভাবে ওজন কমাতে এই অলৈাকিক পাতা কাজ করে।
লেখকের মতামত
বন্ধুরা উপরের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিতভাবে বর্ননা করার চেষ্টা করেছি কিভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা সজনে পাতা খেলে উপকার পাবেন, এই পাতা কিভাবে খেতে হয়,এর জুস তৈরী করার নিয়ম ও বিভিন্ন কাজে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।এখন নিশ্চয় আপনি খুশি হয়েছেন সজনে পাতার সঠিক ও সত্য তথ্যগুলো পেয়ে।
উপরের আর্টিকেল থেকে যদি আপনি এতটুকু পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url