ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত ভাবে
বন্ধুগণ আপনারা কি ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ সম্পর্কে জানেন যদি জেনে না থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন ভিটামিন ডি সম্পর্কে।আসুন আর দেরি না করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি।
ভূমিকা
আজকের এই আর্টিকেলটিতে বর্ণনা করা হয়েছে ভিটামিন ডি এর অভাবে কি ধরনের লক্ষণ শরীরে দেখা দিতে পারে।এর অভাব হলে আমরা কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।ভিটামিন ডি বেশী পরিমাণে খেলে কি হয় তার ক্ষতিকর প্রভাব কি সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া আলোচনা করা হয়েছে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার সমূহ সম্পর্কে আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানির যেসব ভিটামিন ডি ট্যাবলেট অথবা ক্যাপসুল পাওয়া যায় তাদের নাম দেওয়া হয়েছে এছাড়াও ভিটামিন ডি টেস্ট করতে কত খরচ হয় সেই বিষটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিটামিন ডি অভাবের লক্ষণ
আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে নানান ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে। আপনার যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো আপনার শরীরে দেখা দেয় তাহলে বসে না থেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ এই লক্ষণগুলো যদি পুষে রাখেন তাহলে দিন দিন শরীর খারাপ হতে থাকবে কোন কাজে মন বসবে না।
- যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়ার পরেও অসুস্থতা বোধ করেন এবং প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- সব সময় আপনার মধ্যে একটা বিষন্নতা কাজ করে আপনার মনে হয় যেন চারিদিক হাহাকার করছে। তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- সব সময় জ্বর,সর্দি ,কাশি যেন লেগেই আছে অর্থাৎ বুঝতে হবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, এটা মূলত ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত লক্ষণের কারণে হয়ে থাকে।
- আপনার শরীরের যা ওজন তা থেকে হঠাৎ করে দেখবেন যেন ওজন বেড়ে গেছে। তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- আবার হঠাৎ করে দেখবেন আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে চুল পড়ে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- আবার খেয়াল করে দেখবেন যেন আপনার হজম শক্তি কমে গেছে তাহলে বুঝবেন আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- শরীরের কোন একটা জায়গাতে ব্যথা পেলে দেখা যাবে সেই ব্যথাটি অনেকদিন ধরে আছে ঠিক হচ্ছে না, তাহলে বুঝবেন আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- আবার দেখবেন হাত-পা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে এই অনুভূতির কারণ ভিটামিন ডি এর অভাব ছাড়া আর কিছু নয়।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে হয় যেন শরীরের হাড় ও পিঠে সব সময় ব্যথা অনুভুত হচ্ছে, এটাও ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত লক্ষণ।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ক্ষয় প্রাপ্ত হয় এটা বুঝা যায় হাটু যখন ব্যথা করে।
- আপনাদের মধ্যে অনেকের পেশীতে ব্যথা করে এবং দুর্বলতা অনুভূত হয় তাহলে আপনি বুঝবেন আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে।
- ভিটামিন ডি এর অভাব হলে ঘুম সহজে আসতে চায় না অনিদ্রা ভাব থাকে সবসময়।
ভিটামিন ডি এর অভাব হলে করণীয়
আপনারা যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে ,আপনাদের ভিটামিন ডি এর অভাব হয়েছে, তাহলে অবশ্যই নীচে বর্ণিত বিষয়গুলো ভালোভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।আপনারা যদি নিয়মিত এগুলো গ্রহণ করতে পারেন তাহলে ভিটামিন ডি অভাব থেকে দূরে থাকবেন।
সূর্যের আলো: আমরা সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পেয়ে থাকে। সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন হয়ে থাকে। যাদের শরীরে মেলানিনের মাত্রা বেশি তারা ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকায় যথেষ্ট। আর যাদের শরীরে মেলানিনের মাত্রা কম অর্থাৎ ফর্সা রঙের তারা ১৫ থাকলেই যথেষ্ট।
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে সাথে সাথে সামুদ্রিক খাবার খেতে হবে। এছাড়া চর্বিযুক্ত বিভিন্ন ধরনের মাছ খেলেও ভিটামিন ডি এর অভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। প্রতিদিনের খাবারে ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছ যদি আমাদের খাবার মেনুতে রাখতে পারি তাহলে ভিটামিন ডি এর অভাব অনেকটাই দূর করা যাবে।
ডিম: ডিম একটি সুষম খাবার এই খাবারে পুষ্টির জন্য আমাদের শরীরে যা যা দরকার তার সবকিছুই ডিমে রয়েছে আমরা অনেক সময় কোলেস্ট্ররল বেড়ে যাবে বলে ডিম খেতে চায় না কিন্তু এটা ভুল ধারণা, প্রতিদিন একটি করে ডিম সকলেই খাওয়া উচিত এতে করে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর হবে।
দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার গ্রহণ: যারা নিরামিষভী তারা মাছ-মাংস খেতে চান না তাতে কোন সমস্যা নেই তারা যদি দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন তাহলে তাদের ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করা সম্ভব হবে। কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে। তাই আমাদের প্রতিদিন এক গ্লাস পরিমাণ দুধ খেতে হবে। প্রতিদিন কর্ম চঞ্চল থাকতে হলে দুধ খেতে হবে কারণ দূর আমাদের শরীরে মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।
বাদাম সয়াবিন কমলার রস: প্রতিদিন আমরা যদি খাবারের তালিকায় বাদাম সয়াবিন কমলার রস জাতীয় খাবার রাখতে পারি তাহলে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর হবে। কারণ উক্ত খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
কৃত্রিম আলট্রা ভায়োলেট আলো: কৃত্রিম আলট্রাভায়োলেট আলোর মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করা যায়। বর্তমান যুগে ভিটামিন ডি এর দোকানের জন্য কৃত্রিম আলট্রা ভায়োলেট আলোর ব্যবহার করা হয়। ১৫ মিনিট এই আলোতে থাকলে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর হয়।
ভিটামিন ডি বেশী খেলে কি হয়
বন্ধুরা আমরা অনেকেই মনে করি যে ভিটামিন ডি শুধু উপকারীই করে কোন ক্ষতি করে না ,মনে রাখবেন প্রতিটি জিনিসই অতিরিক্ত গ্রহণ করা ঠিক নয় ,মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এই ভয়াবহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
- অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি খেলে তা রক্তে থেকে যায় যা কিডনির ক্ষতি করে।
- ভিটামিন ডি বেশি খেলে বমি বমি ভাব হয় ফলে পেট ব্যথা করে। খাবার সহজে হজম হয় না ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- ভিটামিন ডি শরীরে বেশি হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- ভিটামিন ডি বেশী খেলে খাবারে রুচি কমে যায় ফলে হঠাৎ করে কম খাবার গ্রহণ করার ফলে ওজন কমে যায়।
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার সমূহ
লাল মাংসঃ লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।তাই প্রতিদিন একজন মানুষকে ওজন অনুযায়ী লাল মাংস গ্রহন করতে হবে।যেমন:একজন মানুষের যদি ৫০ কেজি ওজন হয় তাকে ৫০ গ্রাম লাল মাংস খেতে পারে।তবে কারো যদি কিডনি বা অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে পরিমান কম করে খেতে হবে।
লাল মাংস |
সেলমন ফিসঃ তৈলাক্তএই সামুদ্রিক মাছটিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে।এই মাছটি সপ্তাহে অন্তত ৪ আউন্স খাওয়া যেতে পারে।তবে গর্ভবতি মায়েদের ক্ষেত্রে পরিমানের ভিন্নতা দেখা যায়।এই মাছ খেলে হৃদরোগ,স্ট্রোক,ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
সেলমন ফিস |
কলিজাঃ কলিজাতেও ভিটামিন ডি থাকে।৪০ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত কলিজা খাওয়া যেতে পারে,তবে ৪০ বছর বয়স পার হয়ে গেলে পরিমিত হারে খাওয়ায় ভালো।
কলিজা |
ডিম: একজন মানুষ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারে,তবে ডিমের কুসুম দুই তিনটি খেলে কোন সমস্যা হবে না । তবে বয়স যদি ৪০ পার হয়ে যায় তাহরে তিনি সপ্তাহে দুটো ডিম খেতে পারবেন তবে ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ সপ্তাহে চার দিন খেতে পারবেন।
ডিম |
মাশরুম: এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সপ্তাহে প্রতিদিন মাসুম খেতে পারে।
মাশরুম |
কর্ড লিভার অয়েল:
- ১থেকে ১২ মাস= প্রতিদিন আধা চা চামচ
- ১থেকে ৪ বছর= প্রতিদিন ১ চা চামচ
- ৪ বছরের উর্ধ্বে= ১.৫ চা চামচ
- প্রাপ্তবয়স্ক= প্রতিদিন ২ চা চামচ সিরাপ পানি,দুধের সাথে খেতে পারেন।
কর্ড লিভার অয়েল |
দুধ: দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেতে পারেন।
দুধ |
পনির: একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পনির খাওয়া উচিত এতে হজম শক্তির উন্নতি ঘটে ,হার্ট ভালো থাকে ,হাড় শক্ত হয়, মস্তিষ্কে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
পনির |
দই: একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষের ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম দই খাওয়া যথেষ্ট। এই পরিমাণ দই খেলে আপনার ভিটামিন ডি এর অভাব দূর হবে ।তবে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না কারণ বেশি খেলে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম বেড়ে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন জটিল দেখা দিতে পারে।
দই |
টুনা মাছ: একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ এক কৌটা টুনা মাছ সপ্তাহে খেতে পারেন। এই থেকেই তার শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি মিলবে।
টুনা মাছ |
ভিটামিন ডি ক্যাপসুল
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ডি ট্যাবলেট অথবা ক্যাপসুল পাওয়া যায় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন নামে তাদের ভিটামিন ডি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গুলো বাজারজাত করে থাকে। বন্ধুগণ ভিটামিন ডি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্যাপসুল খাবেন ।
কারণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেলে শরীরের উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।নিম্নে ট্যাবলেট গুলোর নাম দেওয়া হল:
- Square Pharma -D balance
- Beximco Pharma-D rise
- Ibn sina Pharma-D 40000
- Incepta Pharma-Austio d
- Drau Pharma-D cap
ভিটামিন ডি টেষ্ট করতে কত খরচ হয়
বাংলাদেশে ভিটামিন ডি টেস্ট অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি টেস্ট। সাধারণত গরিব মানুষের জন্য এটা অত্যন্ত কষ্ট কর একটি টেস্ট গ্রামে খুব একটা করা হয় না, তবে শহরাঞ্চলের এই টেষ্ট নিয়মিত করা হয় সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
- ভিটামিন D(25-OH) খরচ = ৩০০০ টকা
- ভিটামিন D2/D3 খরচ = ৬০০০ টাকা
উপরোক্ত খরচটি ২০২৩ সাল অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে।
লেখকের কথা
বন্ধুগণ উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারলেন ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কি করতে হবে এর লক্ষণ গুলো দেখা দিলে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেলে এর কি প্রভাব হয় শরীরে। বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধের নাম গুলো জানতে পারলেন। আরো জানতে পারলেন এই টেস্টে কত খরচ হতে পারে। তথ্যগুলো পেয়ে আপনারা খুশি হয়েছেন আশাকরি।
উপরের আর্টিকেল থেকে যদি আপনি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url