দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন
আদা চা এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিনবন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো।শুধুমাত্র খাবার খেলেই হবেনা খাবারটা যেন পুষ্টিকর হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে সকল খাদ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে আমরা পুষ্টিকর খাদ্য বলে থাকি। প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের বয়স,চাহিদা ওপরিশ্রম অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
ভূমিকা
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আলোচনা করেছি পুষ্টিকর খাবারগুলো নিয়ে। এছাড়াও পৃথিবীতে যে সকল অতি পুষ্টিকর খাবার রয়েছে তা নিয়েও আলোচনা করেছি ।আরো বর্ননা করেছি আমরা যে খাবারগুলো খায় তা কতটুকু উপকার বহন করে আমাদের শরীরে।
সারাদিন আমরা কোন কোন পুষ্টিকর খাবারগুলো খাবো এবং বয়স অনুযায়ী আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের যে তালিকা তা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করা হয়েছে এই আর্টিকেলটিতে।
দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা
দৈনিক শুধু মাত্র খাবার খেলেই হবে না আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে কি পরিমাণে খাচ্ছি এবং ওই খাদ্যে কি পরিমাণ পুষ্টিগুন আছে তা জানতে হবে। এবং এই খাবার দ্বারা আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটছে কিনা তাও ভালভাবে বুঝতে হবে। দৈনিক খাবারে চাহিদা অনুযায়ী খাবারকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ
শরীর গঠনে প্রোটিন জাতীয় খাবার
মাছ: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি তে মাছের ভূমিকা অপরিসীম। তৈলাক্ত মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা শরীর গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ফসফরাস ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম ও আয়োডিন। দৈনিক একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৭০ থেকে ৭৫ গ্রাম মাছ খেতে হবে। কারণ মাছ খাটের অসুখ ও মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে।
এছাড়া মাছ মস্তিষ্ক সহ শরীরের যে কোষ প্রাচীর রয়েছে তা গঠন করতে সহায়তা করে। গবেষকরা বলছেন কেউ যদি সপ্তাহে তিন দিন বা তার বেশি মাছ খায় তাহলে তাদের মস্তিষ্কের যে নিউরন কোষ রয়েছে তা সুস্থ থাকে।
মাংস:মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।তাই প্রতিদিন একজন মানুষকে ওজন অনুযায়ী লাল মাংস গ্রহন করতে হবে।যেমন:একজন মানুষের যদি ৫০ কেজি ওজন হয় তাকে ৫০ গ্রাম লাল মাংস খেতে পারে।তবে কারো যদি কিডনি বা অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে পরিমান কম করে খেতে হবে।
১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে রয়েছে
- পানি-৭৪%
- ক্যালোরি-১২১গ্রাম
- প্রোটিন-২০গ্রাম
- চর্বি-৪গ্রাম
- ক্যালসিয়াম-১৪ মি.গ্রা
- লৌহ-০.৭ মি.গ্রা
- ভিটামিন বি১-০.১মি.গ্রা.
- ভিটামিন বি২-০.১৬মি.গ্রা
- নায়াসিন-১১.৬মি.গ্রা
১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে
- পানি-৬৭%
- ক্যালোরি-১৮০গ্রাম
- প্রোটিন-২১গ্রাম
- চর্বি-১৪গ্রাম
- ক্যালসিয়াম-৬ মি.গ্রা
- লৌহ-২.৩ মি.গ্রা
- ভিটামিন বি১-০.০৮মি.গ্রা.
- ভিটামিন বি২-০.২৬মি.গ্রা
- নায়াসিন-৮.২মি.গ্রা
১০০ গ্রাম খাসির মাংসে রয়েছে
- পানি-৭৫%
- ক্যালোরি-২৯৪গ্রাম
- কোলেষ্টরেল-৯৭মি.গ্রা
- চর্বি-১৪গ্রাম
- সোডিয়াম-৭২ মি.গ্রা
- লৌহ-৪.৩ মি.গ্রা
- ভিটামিন বি১-০.০৭মি.গ্রা.
- ভিটামিন বি২-০.২৭মি.গ্রা
- নায়াসিন-৭.২মি.গ্রা
ডিম: ডিম পেশি ও হার গঠনে সহায়তা করে। একজন মানুষ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারে,তবে ডিমের কুসুম দুই তিনটি খেলে কোন সমস্যা হবে না । তবে বয়স যদি ৪০ পার হয়ে যায় তাহলে তিনি সপ্তাহে দুটো ডিম খেতে পারবেন তবে ডিমের কুসুম ছাড়া সাদা অংশ সপ্তাহে চার দিন খেতে পারবেন।
১ টি ডিমে রয়েছে
- ক্যালোরি-১৪৩ এনার্জী
- কার্বোহাইড্রেট-০.৭২গ্রাম
- প্রোটিন-১২.৫৬গ্রাম
- চর্বি-৯.৫১গ্রাম
- ফসফরাস-১৯৮ মি.গ্রা
- পটাসিয়াম-১৩৮ মি.গ্রা
- জিংক-১.২৯ মি.গ্রা
দুধ: দুধ অতি পুষ্টি সমৃদ্ধ একটা সুষম খাদ্য। এই খাবারটিতে মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান রয়েছে।দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেতে পারেন।
১ গ্লাস দুধ এ রয়েছে
- পানি- ৮৬.৫ শতাংশ
- ফ্যাট - ৪.৮ শতাংশ
- ক্যালসিয়াম-৪.৫ শতাংশ
- প্রোটিন -৩.৫ শতাংশ
- ভিটামিন ও খনিজ -০.৭ শতাংশ
প্রাণিজ দুধ ছাড়াও সয়া ও বাদামের দুধ খুব পুষ্টিকর ।বিভিন্ন দুধের পুষ্টিগুণ বিভিন্ন রকম যেমন
গরুর দুধ:গরুর দুধে তিনটি উপাদান বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। যেমন: ক্যালসিয়াম ভিটামিন পটাশিয়াম ননীতলা দুধে রয়েছে ৯০ ভাগ ক্যালরি। ও শূন্যভাগ চর্বি ওজন কমানোর জন্য এটা অত্যন্ত আদর্শ একটি খাবার।এক শতাংশ নানিযুক্ত দুধে রয়েছে ১০২ ক্যালরি, ১.৫ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট। ননিযুক্ত দুধে আসে ৩. ৫ ভাগ চর্বি।
চকলেট দুধ: শিশুদের অত্যন্ত পছন্দের খাবার এই চকলেট দুধ এই দুধ টি সাধারণত ব্যায়াম করার পরে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের অনুপাত হচ্ছে চার অনুপাত এক ভাগ।
ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ: আপনাদের মধ্যে অনেকেরই হজমে অসুবিধা হয়। এটিকে প্রাকৃতিক সুগার বলা হয় তবে যারা ল্যাক্টোজ এর সমস্যায় ভুগেন তাদের এই দুধ খেলে গ্যাস পেট ফোলা বাবু ডায়রিয়া হতে পারে এটি গরুর দুধের মতই পুষ্টিকর একটি খাবার ।সাধারণত এটি ভেঙে চিনিতে রূপান্তরিত হয় বলে স্বাদে একটু বেশি মিষ্টি হয়ে থাকে।
ছাগলের দুধ: এক গ্লাস ছাগলের দুধে সাধারণত প্রোটিনের পরিমাণ ৯ গ্রাম।। এটি অত্যন্ত উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম ও চর্বি বহন করে। গরুর দুধের চেয়ে ছাগলের দুধে ১৭০ গ্রাম বেশি ক্যালোরি ও ৭ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
তবে গবেষণা করে দেখা গেছে গরুর দুধের থেকে আলাদা কোন পুষ্টি ছাগলের দুধে পাওয়া যায়ন। ছাগলের দুধ খেলে কোন এলার্জি হয় না যেটা গরুর দুধে হয়ে থাকে।
সয়া দুধ: এই দুধ সাধারণত সয়াবিন থেকে তৈরি করা হয়। এই দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে।এটি গরুর দুধের মতই পুষ্টিকর একটি দুধ।১ কাপ সয়া দুধে ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। যারা নিরামিষভোজী বা যাদের ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে অথবা এলার্জির সমস্যা আছে তারা এই দুধ খেতে পারেন।
কাঠবাদাম দুধ: এক মুঠ কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এই দুধ তৈরি হয়ে থাকে। কাঠবাদাম দুধে ক্যালোরির পরিমাণ রয়েছে ৩০ ভাগ,ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকে ৪৫০ মিলিগ্রাম। তাছাড়া আরও রয়েছে প্রোটিন এবং ভালো চর্বি কারো যদি এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা থাকে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন।
ভাতের দুধ: এই দুধ ভাত ও পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তৈরি করা হয়। এই দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রায় কার্বোহাইড্রেট, এতে কোন প্রোটিন নেই। যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন এই দুধ হজম প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত কার্যকর।
কাজু বাদামের দুধ: এই দুধ খুব ফ্লেভারফুল ও ক্রিম যুক্ত। এতে রয়েছে ক্যালরি ও সামান্য পরিমাণে চর্বি। ১ কাপ কাজুবাদাম দুধে রয়েছে ২৫ ভাগ ক্যালরি। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন।
নারকেল দুধ: বর্তমানে নারকেল দুধ এখন অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে। ১ কাপ নারিকেল দুধে ১২ গ্রাম চর্বি ৪৫ গ্রাম ক্যালোরি ও ৪ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে ।এ টি বেশ ক্রিম যুক্ত একটি খাবার।যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন।
ফ্ল্যাক্সিড দুধ:যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন। এই দুধে রয়েছে ২৫ ভাগ ক্যালেরি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
হেল্প সীড দুধ: এটি প্রায় ছয় দুধের মত ক্রিমযুক্ত হয়ে থাকে।যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন। এক কাপ দুধে রয়েছে ওমেগা থ্রি ওমেগা সিক্স ফ্যাট ক্যালরির পরিমাণ ৮০ গ্রাম।
ম্যাকাডেমিয়া: এটি কে উদ্ভিজ্জ দূত বলা হয়ে থাকে।যাদের এলার্জির সমস্যা থাকে বা ল্যাকটোজ সমস্যা রয়েছে কিংবা নিরামিষভোজী তারা এই দুধ খেতে পারেন। এক কাপ দুধে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
শক্তি উৎপাদনকারী শর্করা
সকল শস্যজাতীয় খাদ্য যেমন চাল ,আলু, ভুট্টা ,গম থেকে যে ভাত ,রুটি ,চিড়া, মুড়ি ,খই ইত্যাদি তৈরি হয় তা সবই এই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। আমাদের শরীরে ক্যালোরির অর্ধেকেরই বেশি পূরণ হয় এই এই খাবারগুলো থেকে।
এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শক্তি উৎপাদনকারী উপাদান ফলে আমরা কর্মজীবেনে সবসময় কর্মক্ষম থাকি।এছাড়াও দেহের বৃদ্ধিতে এই খাবারের প্রয়োজন রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধকারী শাকসবজি ও ফলমূল
মুলা :মুলা অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি আমাদের দেশে দুই ধরনের মুলা পাওয়া যায় সাদা মুলা ও লালমুলা। এটা এমন একটি খাবার যা রান্না করে খাওয়া যায় আবার কাঁচাও খাওয়া যায় অথবা সালাতেও এটি ব্যবহৃত হয়।মূলা তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C ও ভিটামিন A থাকে। এই সবজির ব্যাপক ঔষধি গুন রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এই সবজিটি দারুন কাজ করে।
এছাড়াও এতে বিটা ক্যারোটিন থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আলসার ও বদহজম প্রতিরোধে সহায়তা করে ও ওজন কমাতেও এর তুলনা নেই।সাধারণত কিডনি ও পিত্তথলিতে যে পাথর হয় তা প্রতিরোধে সহায়তা করে এই সবজিটি। এতে ক্যারোটিন থাকায় চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে মূলা খাওয়ালে রক্তের বিলোরোবিন এর মাত্রা কমে যায়।
মুলা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। অর্শ রোগ ,শ্বেত রোগে এই সবজির কার্যকারিতা ব্যাপক। বিভিন্ন রকম ক্ষত সারাতেও এটি বেশ কার্যকর।
ফুলকপি:শীতের সবজি গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম পুষ্টিকর একটি সবজি। এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A,B ও C রয়েছে ।এছাড়াও রয়েছে এতে উচ্চমাত্রায় আয়রন ,ফসফরাস ,পটাশিয়াম সালফার ।শরীরের রক্ত তৈরিতে আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা গর্ভবতী মা বাড়ন্ত শিশুদের জন্য একটি উপকারী সবজি ।
ফুলকপি কোলেস্টোরল মুক্ত সবজি হওয়ায় আমাদের শরীর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।এই সবজি মূত্রথলি এবং প্রোস্টেট, স্তন, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C থাকায় সর্দি,কাশি,জ্বর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
বাঁধাকপি:এটিও একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শীতকালীন সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, মিনারেল,অ্যামাইনো এসিড রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন C ও E। বাঁধাকপিতে যে ভিটামিন C রয়েছে তা হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। বয়স্ক মানুষ যারা বাঁধাকপি খায় তাদের হাড়জনিত সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়।
এটি ওজন কমাতেও সহায়তা করে কারণ বাঁধাকপি সালাত খেয়েই সারা বেলা থাকা যায়। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এই সবজিতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় আলসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিম :আমিষের অন্যতম উৎস হলো এই সবজি।শিমের মধ্যে যে বীজ রয়েছে তার ডাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে আমিষ,খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শিমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় শরীরকে কোষ্ঠকাঠিন্য মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
শিম রক্তে ভালো কোলেস্টোরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টোরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। শিশুদের পুষ্টি জড়িত রোগ, মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সমাধান এই সবজি সহায়তা করে ।শিমের ফুল সাধারণত রক্ত আমাশার ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
গাজর: এই সবজিও অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু এবং আঁশযুক্ত খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে বিটাক্যারোটিন আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ।এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।
গাজরে থাকার ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ত্বকের খসখসে ভাব ও রোদে পোড়া ভাব দূর ত্বককে রাখে মসৃন । গাজরের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে মাখলে ত্বক উজ্জল হয়।
টমেটো: টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C আছে ।কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতেই এই সবজি ফলটি খাওয়া যায় বলে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। টমেটোতে যে ভিটামিন C আছে তা ত্বক ও চুলের রুক্ষতা দূর করে। বিভিন্ন চর্মরোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে ।টমেটোতে লাইকোপেন নামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অতি বেগুনি রশ্মির যে খারাপ প্রভাব রয়েছে তা থেকে মানুষের চামড়াকে রক্ষা করে। টমেটোতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের মাংসপেশিকে মজবুত রাখে। দেহের ক্ষয় রোধ করে ।দাঁতকে শক্ত মজবুত করে।
পালং শাক: এ সবজিটি অত্যন্ত উচ্চমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বহন করে। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ,ফলিক এসিড ,আয়রন ,ফসফরাস রয়েছে তাই বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে এটি সহায়তা করে ।এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার ওভারিয়ান ক্যান্সার ,আর্থারাইটিস অষ্টিওপরোসিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে তোলে এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ব্রুকলি: এটি একটি কপি জাতীয় সবজি।এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড ফাইবার ও এন্টি অক্সিডেন্ট হয়েছে। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি সবজি। বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন রাতকানা,চোখের আরও বিভিন্ন রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ধনেপাতা: ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন A ও C, ফলিক এসিড যা চুলের ক্ষয় রোধ করে। ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে ।এই সবজিতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে ।এই সবজিটি শরীরকে চর্বিমুক্ত রাখতে সহায়তা করে ।এই সবজিতে কোন কোলেস্টেরল না থাকাই হার্টের রোগ থেকে মুক্তি।
এই সবজি ঠোট ফাঁটা, জ্বর, সর্দি ,কাশির বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখে। এটি একটি ওষুধি গুণসম্পূন্ন সবজি।
আম: বাংলাদেশের এটি একটি জনপ্রিয় জনপ্রিয় ফল। এই ফল খায় না এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকেই আম পাওয়া যায় এবং মে মাসের শুরু থেকে আম পাকতে শুরু করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও সোডিয়াম। এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।ক্যান্সার কোষ কে মেরে ফেলে।
আমে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। আমে খেলে দৃষ্টি শক্তি ভালো থাকে।যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের কাঁচা আম খাওয়া উচিত ।এটি বাইন নামে এক ধরনের এসিড নিঃসরণ করে যা অন্ত্রের মধ্যে খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে হত্যা করে নতুন রক্ত উৎপাদনের সহায়তা করে।
এছাড়াও এতে রয়েছে খনিজ লবণ ভিটামিন বি, ই সেলেনিয়াম ,এনজাইম ,সাইট্রিক এসিড। আম খেলে মুখের ত্বক মসৃণ থাকে, চুল পড়া কমে,হজমের সমস্যা দূর হয় ,চোখের যে নানারকম রোগ রয়েছে তা দূর হয় এছাড়া এই ফলটি দিয়ে জ্যাম জেলি আচার তৈরি হয়।
কাঁঠাল: এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় ফল কাঁঠাল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায় ১০০ গ্রাম কাঁঠালের রয়েছে ৯০ গ্রাম ক্যালরি খনিজ লবণের পরিমাণ ০.৯ গ্রাম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ডায়াবেটিকস রোগীদের কাঁচা কাঁঠাল খুব উপকারী ।
এছাড়াও রয়েছে থায়ামিন,রিবোফ্লেবিন,ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,আয়রন,সোডিয়াম জিংক এবং নায়াসিন। এই ফলে ভিটামিন এ থাকায় এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এছাড়া এই ফলটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
লিচু: লিচু সাধারণত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। লিচুর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা টিউমার প্রতিরোধে সহায়তা করে এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শক্তি শর্করা আমিষ ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি আয়রন রয়েছে।
জাম: বমি বমি ভাব খাবারে অরুচি ইত্যাদি নিরাময়ে জামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জামে প্রচুর পরিমাণে শর্করা ,আমিষ ,ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি ,ক্যারোটিন রয়েছে। এই ফল শরীরের হাড়কে মজবুত করে ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময় করতে সহায়তা করে । জাম ত্বককে ভালো রাখে স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের মধ্যে এমন এক ধরনের নির্যাস আছে যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে।
পেয়ারা: পেয়ারা এমন একটি ফল যা বাংলাদেশে সারা বছরই পাওয়া যায়।একটি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৫১ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, শর্করা ১১.২০ গ্রাম ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আর ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে।
সফেদা: সফেদায় প্রচুর পরিমাণে গ্লকোজ থাকে। এ ছাড়া এর মধ্যে যে ক্যালসিয়াম ,আয়রন রয়েছে তা হাড় দাঁতকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সফেদা অনিদ্রা,মানসিক টেনশন,উদ্বেগ,বিষন্নতা দূর করতে সহায়তা করে।
এতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ,ভিটামিন এ ,ভিটামিন সি, ই, ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস, কপার ,আয়রন সহ বহু প্রয়োজনীয় পুষ্টি এই ফলে রয়েছে।
তরমুজ: তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই ফলটি মানুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার,কলোন ক্যান্সার,ফুসফুসের ক্যান্সার,স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় গরমের দিনে মানুষ পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা পায় ফলে শরীর সুস্থ সতেজ থাকে।
এছাড়া এর মধ্যে যে ক্যারোটিন রয়েছে তার চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে।
আমড়া: একটি ১০০ গ্রাম আমড়াতে রয়েছে ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি ১৫গ্রাম শর্করা, ১.১০ আমিষ ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম আয়রন ও ৮০০ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন ,৮৩.২০ শতাংশ পানি। এটি পিত্ত ও কফ নিবারক এবং রুটি বর্ধক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া আমড়া কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
আমলকি: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এই ফলটি ঠান্ডা মৌসুমে সর্দি ,কাশি নিবারনে সহায়তা করে ।এছাড়া এই ফলটি রুচি বাড়াতে সহায়তা করে ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখে, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
বাতাবি লেবু: বাতাবি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, থায়ামিন ,ক্যারোটিন ,আয়রন, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস ,পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে। পেশি শক্তির দুর্বলতা ও ব্যাথা বেদনা দূর করতে বাতাবিলেবু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পেশির দুর্বলতা ও ব্যথা দূর করতে বাতাবি লেবু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া এই ফলটি ওজন ও এসিডিটি কমাতে সহায়তা করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এ ফলটির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কামরাঙ্গা: কামরাঙ্গা ক্ষতিকর কোলেস্ট্রল কমাতে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় স্কার্ভি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
গাব: গাবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ,কার্বোহাইড্রেট ,ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই ফলটি ওজন হীনতা ও লো প্রেসারে যারা ভুগছেন তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল ।এই ফলটি খেলে দুর্বলতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়।
অতি পুষ্টিকর খাবারের তালিকা ঃ
আমাদের খাদ্য তালিকায় যে সকল খাদ্যগুলো রয়েছে যেমন:বিভিন্ন ধরনের ফল ,শাকসবজি,মাছ,মাংশ ইত্যাদি সবকিছুতেই পুষ্টি রয়েছে। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু খাবার রয়েছে যার পুষ্টিগুণ খুব বেশি এবং এদেরকে সুপারফুড বলে চিহ্নিত করা হয় । নিয়মিত এই সকল পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যদি খাওয়া যায় তাহলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং রোগবালা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এই খাবারগুলি দেহের প্রতিটি অংশের চাহিদা মিটিয়ে থাকে ।এর মধ্যে কিছু সুস্বাদু খাবার রয়েছে আবার স্বাদহীন খাবার রয়েছে ।যদি সুস্বাদু খাবারের সাথে সাথে স্বাদহীন খাবারগুলোকেও খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে আপনি সুস্থ থাকবেন।
মাছ: মাছ খেতে আমরা সকলেই কম বেশি ভালোবাসি। তবে পৃথিবীতে এমন দুটি মাছ রয়েছে যার পুষ্টিগুণ সবার উপরে ।এই মাছ গুলির নাম হচ্ছে সালমন ও সার্ডিন ।এই দুইটি মাছে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হৃদপিণ্ড কে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই মাছগুলি যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।এছাড়া নিয়মিত এই মাছগুলো খেলে হতাশা ও স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাবেন।
রসুন: শতাব্দী ধরে আমাদের রান্নায় রসুন একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা এবং রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। রসুনে রয়েছে ভিটামিন বি, সি ,ক্যালসিয়াম ,পটাশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়াম। রসুনের এই উপাদান গুলো আমাদের দাঁত ও মস্তিষ্কের বিকৃতি থেকে রক্ষা করে।রসুনের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে।
রসুন কোলন ক্যান্সার ও পেটের ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে। এতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকার কারণে এটি ভেষজ চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মশলা।
বাদাম: বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই তামা ম্যাগনেসিয়াম ও রিবোফ্লেবিন। এছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক, ভিটামিন বি, নায়াসিন থায়ামিন এবং ফলিক এসিড।বাদাম যে কোন উপায়ে খাওয়া যায় তবে এটি ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
বাদামে বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড থাকায় খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। বাদামের মধ্যে যে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে তা হাড় গঠনে এবং হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে। এর মধ্যে যে সেলেনিয়াম আছে তা আমাদের স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে।ভিটামিন ই কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে এটি আপনার জন্য খুবই উপকারী কারণ এতে যে ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে তা সুগারের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে।
কোপি: বাঁধাকপি,ফুলকপি এবং ব্রকলিকে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী কারণ এই সবজিগুলোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইটোনিট্রিয়েন্টস,ফোলেট, ভিটামিন ই এবং ফাইবার যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এটি সাধারণত শীতকালে হয়ে থাকে কারণ শীতকালে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় যার কারণে ওই সকল জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে এই সবজিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চিয়া বীজ: চিয়া বীজে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো এসিড ও প্রোটিন রয়েছে যা মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করে।এছাড়াও এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,শর্করা এবং ফাইবার,ক্যারসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য।কেউ যদি নিয়মিত চিয়া বীজ খায় তাহলে সে হার্টের বোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।এটি দুগ্ধজাত পণ্যের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
এটিতে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা রক্তে সুগারের মাত্রাকে কমিয়ে ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে।
কালো রাজমা: খুব মানুষ কালো রাজমা সস্পর্কে জানেন।এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার এবং প্রোটিন।এই উপাদানগুলো হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের জয়েন্টগুলিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।এর উাপদান রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
আখরোট: বাদাম গোত্রের একটি খাবার।এতে রয়েছে প্রেটিন, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা হার্টের রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে এমন উপাদান রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে।খারাপ কোরলষ্টরেল মাত্রা কমায়।
দই: দই আমাদের শরীরে প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। দই অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায় এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া কমায়। এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় গঠনে সহায়তা করে। দই পেটকে ঠান্ডা রাখে।
পুষ্টিকর খাবারের উপকারিতা
আমাদের দেশের মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগে সঠিক খাদ্যাভাসের জ্ঞানের অভাবে। অনেকে মাছ মাংস শাকসবজি ফলমূল কিনতে পারেনা আর্থিক অভাবের কারণে। অথচ আমাদের আশেপাশে অনেক পুষ্টিকর খাবার রয়েছে যার ব্যাপারে আমরা সচেতন নই। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন গড়ে ২১০০ কিলোক্যাল প্রয়োজন হয়।
দেখা যায় মানুষ পেট পুরে খাচ্ছি ঠিকই কিন্তু পুষ্টির চাহিদা মিলছে না এর কারণ সঠিক পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে।পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার মস্তিষ্ক বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ব্রেনের প্রোটিন ও এনজাইম নিউরো ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে কিছু হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে ও স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য কে উন্নত করতে সহায়তা করে।
পুষ্টিকর খাওয়ার শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রের ভেতরের অবস্থাকে সুস্থ রাখে ফলে অন্তরের প্রদাহ কমে যায়। প্রধা মানুষের চিন্তাধারা ও মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে ফলে পরিপাকতন্ত্রে সেরাটোনিন উৎপাদন হয়।
আর এই সেরাটোনিন মস্তিষ্কের স্নায়ু কে সংযোগকারী নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের মেজাজ আনন্দ চিন্তা ঘুম প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
ওমেদা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের মুডকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা সাধারণত সামুদ্রিক মাছে পাওয়া যায় যেমন: ইলিশ ,টুনা ,সালমন,সার্ডি ন ইত্যাদি মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি রয়েছে এছাড়াও আখরোট তিশির তেল ,সয়াবিন, সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি এসিড।
প্রতিদিন নিয়মিত ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার যদি খাওয়া যায় তাহলে শরীরে রক্ত প্রবাহের মাত্রা ঠিক থাকে এবং প্রদাহ কমে যায়।
কাঠবাদাম, গ্রিন টি ,লাল আটা, বাদাম প্রভৃতি খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ক্লান্তি দূর করে এবং প্রানোচ্ছলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে এছাড়া স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন সি ,ই ও বিটা ক্যারোটিন যা স্মৃতিশক্তি জনিত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
দুধ ,ডিম ,পনির ,দই ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন বি ১২ যা ক্লান্তি ,অবসাদ, বিরক্তি, মানসিক চাপ ও হতাশা থেকে রক্ষা করে ।এই ভিটামিন বি১২ ঘাটতির কারণে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়। কারণ এর অভাবে অ্যালঝাইমার বা ভুলে যাওয়া রোগ বৃদ্ধি পায়। তাই স্মৃতিশক্তিকে উন্নত রাখতে ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা প্রত্যেকের খুবই জরুরী।
কমলা ,আমলকি ,জাম্বুরা ,মালটা, বরই ,কাঁচামরিচ ,জাম ,আঙ্গুর ,পেঁপে, পেয়ারা ,সবুজ শাকসবজি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলাজিন কলার রয়েছে যা দ্রুত ঘা শুকাতে সাহায্য করে ।
এছাড়া ভিটামিন সি বিষণ্যতা রোধে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্কের যে কোষ গুলোর মধ্যে নিউরোট্রান্সমিটার ঘটে বা তথ্য আদান-প্রদান ঘটে থাকে তা সঠিক রাখতে সহায়তা করে। এটি সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে যার ফলে আবেগ ,মেজাজ ,ব্যথা বেদনা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
গরু বা খাসির কলিজা, লাল মাংস, ডিম, ছোলা, আটা, শিমের বিচি,গুড় ,খেজুর, কিসমিস, কলা, জাম আমড়া, তরমুজ ,মেথি ,পুঁইশাক ,ছোলা শাক ,কালো কচু শাক ,পালং শাক প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এই আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়ে থাকে। এই আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের তৈরি হয় না যা শরীরে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে।
তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারগুলো থাকা উচিত।
সারাদিনের খাবার তালিকা
সকালের খাবার: সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর অন্ততপক্ষে ২০ মিনিট পরে নাস্তা খাওয়া উচিত।সকালে দুটো লাল আটার রুটি ,এক কাপ সবজি একটি কলা, ৫ টা কাঠবাদাম অথবা দুটো পাউরুটি, ডিমের স্যান্ডউইচ মাখন ছাড়া সাথে থাকবে একটি আপেল এবং ৫টা কাঠবাদাম।।
একটি ডিম ও শসা খেতে পারেন বিশুদ্ধ ঘি যদি থাকে তাহলে আধা চা চামচ খেতে পারবেন। তবে মাখন বাদ দেওয়ায় ভালো কারণ এতে ওজন বৃদ্ধি পায়।
দুপুরের খাবার: ১ কাপ সবজি, ১ পিস মুরগির মাংস অথবা ১টা সেদ্ধ ডিম সঙ্গে থাকবে ২টা রুটি অথবা ২কাপ ভাত অথবা মুরগির মাংস দিয়ে স্যান্ডউইচ ১ টা সেদ্ধ ডিম ১ কাপ রান্না করা সবজি।
বিকেলের নাস্তা: তেলে ভাজা খাবার যেমন: পিয়াজু ,বেগুনি, পুড়ি এসব ২টার বেশি খাবেন না ১ কাপ চা এই সময় খেতে পারেন । যদি ওজন বেশি থাকে তাহলে তেলেভাজা খাবারগুলো সপ্তাহে অন্তত ৩দিন খেতে পারবেন তবে প্রতিদিন ১ কাপ দুধ ১ বাটি শসা ও টমেটোর সালাদ খেতে পারেন।
রাতের খাবার: ১ কাপ ভাত ১কাপ সবজি ১ পিস মাছ বা মাংস খেতে পারেন ।রাতের বেলা ভাত রুটি কম খাওয়াই ভালো ভাত বা রুটি এই পরিমাণ কম খাবেন যাতে পেট পরিপূর্ণভাবে ভরে না যায়। রাত ৮ টার আগেই রাতের খাবার শেষ করবেন অর্থাৎ ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩ ঘন্টা আগে খাবার সেরে নিবেন।
বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা
কিশোর-কিশোরির প্রতিদিনের খাবার তালিকা
প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকা
লেখকের শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে এতক্ষণ নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন পুষ্টিকর খাবারগুলো সম্পর্কে এবং কিভাবে খেতে হবে ,কত পরিমাণে খেতে হবে একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা মহিলা কি পরিমান খাবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এই তথ্যবহুল আর্টিকেলটি পড়ে জীবন পরিচালনা করলে সুস্থ থাকবেন ইনশাআল্লাহ।উপরের আর্টিকেল থেকে আপনারা নিশ্চয় উপকৃত হয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেল থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url