চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য যাদের মাথার চুল পড়ে মাথার তালু ফাঁকা হয়ে গেছে। আজকের আর্টিকেলটিতে আমি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। সাধারণত চুল পড়ার সমস্যাটা তৈরি হয় তখনই যখন আমরা চুলের প্রতি যত্ন কম নেই।
ভূমিকা
মানুষের শরীরের সৌন্দর্যের অনেক অংশ রয়েছে তার মধ্যে চুল একটি অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ। তবে এই চুল কখনো কখনো মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৫ জন মানুষই চুল পড়া সমস্যায় ভুগেন। বিভিন্ন শারীরিক কারণে চুল পড়ে থাকে। চুলের একটা নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল রয়েছে।
প্রতিদিন একটি মানুষের গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পরতে পারে একটি চুল গজানোর পর তার আয়ুষ্কাল ১০০০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে তারপর সেই চুল ঝড়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। ঝড়ে পড়া চুলের জায়গায় আরেকটি নতুন চুল গজিয়ে তার স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে অনেক সময় চুল পড়া অতিরিক্ত বেড়ে যায় ফলে মাথার চুলের পরিমাণ কমতে থাকে।
শরীরের পুষ্টিকর খাবারের অভাব,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ,পানিতে ক্ষারের পরিমাণ বেশি থাকলেও চুল পড়তে পারে।চুল নতুন করে গজানোর ঘরোয়া উপায়গুলো কি,চুল গজানোর জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যে তেল তৈরী হয় তার বর্ননা করা হয়েছে। সাথে বিভিন্ন ওষুধের তথ্যও এই আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে।
কি কারণে চুল পড়ে
বিভিন্ন কারণে চুল পড়ে যেতে পারে তাই কারণগুলো চিহ্নিত করে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো হরমোন আর এই হরমোনটির নাম হল এন্ড্রোজেনিক হরমোন। এই হরমোনের প্রভাব শরীরে বেড়ে গেলে চুল পড়ে যায় ।
পুরুষের মধ্যে এই এন্ড্রোজেনিক হরমোনের প্রভাব বেশি তাই পুরুষের মাথায় টাক পড়ে।কেউ যদি দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকে তাহলে তার চুল পড়ে যেতে পারে।কারণ দুশ্চিন্তা করলে স্ট্রেস বেড়ে যায় এবং কর্টিসল হরমোন নিঃসরন বেড়ে যায়।এতে প্রদাহ সুষ্টি হয় এবং চুলের বৃদ্ধি কমে তা আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে।
শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাব হলেও চুল পড়ে যেতে পারে।যেমন:থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমবেশি হলে চুল পড়ে যেতে পারে।ক্যান্সার চিকিৎসায় যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তাতে চুল পড়ে যেতে পারে তবে এটা স্থায়ী নয়।থেরাপী দেওয়া শেষ হলে আবার চুল গজায়।
বিভিন্ন রোগের কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে যেমন অ্যানিমিয়া টাইফয়েড জন্ডিস ম্যালেরিয়া ডায়াবেটিস ইত্যাদি।ওষুধের পার্শ্বপ্রক্রিয়ায় চুল পড়ে যেতে পারে যেমন:জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ,প্রেসারের ওষুধ ,রক্ত তরল করার ওষুধ, হরমোন ওষুধ ও মানসিক সুস্থতার ওষুধ ইত্যাদি।বংশগত কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে।
ক্ষতিকর UV রশ্মির কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে।চুলে অতিরিক্ত হিট দিলে অথবা কেমিক্যাল যেমন:সালফেটস,প্যারাবেনস ও অ্যালকোহল যুক্ত প্রসাধণী ব্যবহার করলে চুল পড়ে যেতে পারে।চুল যদি টাইট করে সব সময় বেঁধে রাখা হয় সে ক্ষেত্রে চুল পড়ে যেতে পারে।ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ালে চুল পড়ে যেতে পারে।
চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
চুল ঘন কালো ও মজবুত রাখতে প্রয়োজন পুষ্টির ।আরএই পুষ্টি আমরা পেয়ে থাকি বিভিন্ন খাবার থেকে এই খাবরগুলো সস্পর্কে নীচে বিস্তারিত বর্ননা করা হলো যা আমাদের শরীরের ভিতর থেকে চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
বাদাম: চিনাবাদাম, কাঠবাদাম ,কাজুবাদাম ,পেস্তা বাদাম ইত্যাদি এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাক্ট যাকে বলা হয় ওমেগা ৬ ফ্যাট। এই ফ্যাট চুল লম্বা করে ও চুলের গোড়া সুস্থ ও সতেজ করে। এর অভাবে চুলের রং হালকা হয় হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যায়। তাই প্রতিদিন আমাদের পরিমাণ মতো বাদাম খাবার তালিকায় রাখা যেতে পারে।
সবজি ও ফলমূল: মিষ্টি আলু,গাজর,আম,পেঁপে,মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি এগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A যা চুলের গোড়ার ফলিকল কে সতেজ রাখে এবং তাকে ঠিকমতো কাজ করতে সহায়তা করে।
তৈলাক্ত মাছ: আমাদের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে যে ওমেগা-থ্রি শুধুমাত্র সামুদ্রিক মাছেই আছে যেমন স্যামন,ভেটকি,টুনা ইত্যাদি।আমাদের দেশীয় মাছ যেমন মলা ,চাপিলা ,কই ,ইলিশ ইত্যাদি মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি রয়েছে।
ডিম: আমাদের চুল শক্ত মজবুত ও ঘন করতে ডিমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।চুল শর্করা বা ফ্যাট দিয়ে তৈরী নয় বরং প্রোটিন দিয়ে তৈরী আর গবেষনা করে দেখা গেছে যে খাবারে যদি প্রোটিন এর অভাব থাকে তাহলে চুল পড়ে যায়। আমাদের দেশের মানুষের খাবার তালিকায় প্রোটিন খুব কম থাকে ভাতের পরিমাণটাই বেশি থাকে অর্থাৎ প্রোটিনের তুলনায় শর্করাই বেশি থাকে।
তাই চুলকে ঘন ও কালো রাখতে খাবার তালিকায় প্রতিদিন ডিমকে রাখতে হবে। এতে আরো রয়েছে বায়োটিন ,সেলেনিয়াম ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি যা চুলকে করে ঘন ,কালো ও মজবুত।
পালং শাক: চুলকে ঘন কালো রাখতে পালং শাক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সবজি। এতে ভিটামিন A ভিটামিন C আয়রন ও ফলেট আছে যা চুলের ভেতরে পুষ্টির যোগান দেয়।যাতে চুল হয়ে ওঠে ঘন কালো সুন্দর ও মজবুত।
ডাল:আপনি যদি সুন্দর চুল পেতে চান তাহলে অবশ্যই খাবার তালিকায় ডাল রাখবেন। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও আয়রন রয়েছে।আয়রন আমাদের মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ করে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন সরবরাহ করে।
গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে আয়রনের অভাবে চুল পড়ে যায়। এছাড়াও ডালে প্রচুর পরিমাণে জিংক, ফলেট রয়েছে। এই উপাদানগুলো আমাদের চুলকে করে ঘন কালো ও মজবুত।
বীজ: চিয়া সিডস, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি, তিশির বীজ এগুলোতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা চুলকে রাখে সুন্দর ঘন কালো ও মজবুত। যেমন:চিয়া সিডসে আছে প্রচুর পরিমাণে আলফা লিনো লিনিক এসিড এটা এক প্রকার ওমেগা থ্রি ফ্যাট। মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে জিঙ্ক,বায়োটিন ও তিশির বীজে আছে সেলেনিয়াম।
এগুলোর অভাবে চুল পড়ে যায়। এগুলোকে বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন:ভাত খাওয়ার সময় তরকারির উপর একটু বীজ ছিটিয়ে দিয়ে খাবেন। রাতে দুধ অথবা টক দইয়ের সাথে চিয়া সিড মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে সকালে বিভিন্ন ফলের সাথে খেতে পারেন।
ছোলা: তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে এই ছোলার মধ্যে এগুলো হলো প্রোটিন ,আয়রন, জিঙ্ক। এই তিনটির যেকোনো একটি অভাব যদি দেখা দেয় তাহলে চুল পড়ে যেতে পারে। তাই চুল কে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান রাখতে মাঝে মাঝে ছোলা খাবেন।
টক দই: টক দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এছাড়া আরো রয়েছে জিঙ্ক।চুলের গঠনে টক দইয়ের এই উপাদানগুলো খুবই প্রয়োজন।
টক ফল: কমলা,মাল্টা,লেবু,পেয়ারা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। চুলের সৌন্দর্যের জন্য ভিটামিন সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ।শরীরে যদি ভিটামিন সি এর অভাব হয় তাহলে চুল বেঁকিয়ে পেঁচিয়ে যেতে পারে।
মেডিকেলের ভাষায় এটাকে বলে corks crew hair। শরীরে যদি ভিটামিন সি এর অভাব হয় তাহলে শরীর আয়রন শোষণ করতে পারে না ফলে চুল পড়ে যায়। আমরা জানি শরীর নিজে থেকে কোন ভিটামিন C তৈরী করতে পারেনা তাই বাইরে থেকে এর সরবরাহ করতে হয়।
চুল গজানোর তেলের নাম
চুলকে ঘন কালো মজবুত ও নতুন চুল গজানোর জন্য শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেলেই হবে না বাইরে থেকেও বিভিন্ন পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
পাম্পকিন সিড অয়েল বা কদুর তেল: এই তেলটা যদি কেউ তিন মাস ব্যবহার করে তাহলে মাথায় নতুন চুল গজায় এবং চুল হয় ঘন কালো ও মজবুত। তাই আপনারা কুদুর তেল ব্যবহার করতে পারেন।
অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলে রয়েছে ভিটামিন এ ও ই যা চুলকে নমনীয় রাখতে সহায়তা করে এতে চুল ভালো থাকে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- ডিমের সাদা অংশ -১টা
- অলিভ অয়েল -৩ টেবিল চামচ
- টক দই -১ টেবিল চামচ
উপরোক্ত মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে হাত দিয়ে চুলের গোড়াতে লাগাতে হবে। তারপর মাথায় গরম তোয়ালে বেঁধে বিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালো হবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে গোসল করে নিতে হবে।
কাঠবাদামের তেল: কাঠ বাদামের তেলে রয়েছে ভিটামিন ডি ও ই যা চুলকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। কাঠ বাদামের তেল কয়েক ফোঁটা নিয়ে ত্বকে ঘষলে চুল উজ্জ্বল হয় এবং চুলকে করে তুলে মজবুত ঘন কালো ও মসৃণ। এই তেল দ্রুত চুল গজাতে সহায়তা করে। মাথায় খুশকি ও মৃত কোষ দূর করে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- ডিমের সাদা অংশ -১টা
- কাঠবাদামের তেল -৩ টেবিল চামচ
- মধু -১ টেবিল চামচ
উপরোক্ত মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে হাত দিয়ে চুলের গোড়াতে লাগাতে হবে।তারপর মাথায় গরম তোয়ালে বেঁধে একঘন্টা অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে গোসল করে নিতে হবে।
ক্যাস্টার অয়েল: ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে anti inflamatory উপাদান ও risinoleik acid যা চুলকে নরম কোমল রাখতে সহায়তা করে এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুরে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- ডিমের সাদা অংশ -১টা
- ক্যাস্টর অয়েল -২ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল -১ টেবিল চামচ
- মধু -১ টেবিল চামচ
উপরোক্ত মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে হাত দিয়ে চুলের গোড়াতে লাগাতে হবে। তারপর মাথায় গরম তোয়ালে বেঁধে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালো হবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে গোসল করে নিতে হবে।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: ল্যাভেন্ডার অয়েলে রয়েছে anti inflammatory ও anti microbial উপাদান যা চুলকে নরম কোমল রাখতে সহায়তা করে এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুলে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- ডিমের সাদা অংশ -১টা
- ল্যাভেন্ডার অয়েল -২ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল -১ টেবিল চামচ
- টক দই -১ টেবিল চামচ
উপরোক্ত মিশ্রণটিকে ভালোভাবে মিশিয়ে হাত দিয়ে চুলের গোড়াতে লাগাতে হবে। তারপর মাথায় গরম তোয়ালে বেঁধে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে গোসল করে নিতে হবে।
পেঁয়াজের তেল: পেঁয়াজের তেলে ভিটামিন b ভিটামিন c ,পটাসিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ও anti microbial উপাদান রয়েছে যা চুলকে নরম কোমল রাখতে সহায়তা করে এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
কয়েক ফোঁটা পেঁয়াজের তেল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুলে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- পেঁয়াজ-২ টি মিডিয়াম সাইজের
- মেথি দানা-১ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল-১ কাপ
- রসুন-১/৪ কাপ
- সরিষার তেল-১/৪ কাপ
- কারিপাতা-১/২ কাপ
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল-৫ টি (ছোট আকারের)
প্রথমে পেঁয়াজ,মেথি দানা, রসুন,কারিপাতা,ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোভাবে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।তারপর নারকেল তেল ও সরিষার তেল মিশিয়ে মিশ্রণটিকে একটি চুলার উপর কড়াই বসিয়ে তাতে দিয়ে ভালোভাবে অনবরত নাড়তে হবে।
তারপর উক্ত মিশ্রণটিকে একটি কাপড় দিয়ে ছেঁকে তেল বের করে নিতে হবে এবং ঘন মাস্ক আলাদা করে সংরক্ষন করতে হবে।
জবা কুসুম তেল: জবা কুসুম তেলে রয়েছে anti inflammatory ও anti microbial উপাদান যা চুলকে নরম কোমল রাখতে সহায়তা করে এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুলে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- জবা ফুল -১০ টা
- কারি পাতা -২০ টা
- নারিকেল তেল -৪০০ গ্রাম
প্রথমে জবা ফুল ও কারি পাতা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।এরপর একটি পাত্রে নারিকেল তেল ভালো করে গরম করে নিয়ে পাত্রে জবা ফুল ও কারি পাতা একসঙ্গে তেলের উপরে দিয়ে ১০ মিনিট হালকা আঁচে গরম করে নিতে হবে।এমন ভাবে গরম করতে হবে যেন পুঁড়ে না যায়।
এরপর মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং ছেঁকে নিয়ে কাঁচের শিশিতে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে।প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই তেল দিয়ে চুলের গোড়া পাঁচ মিনিট মাসাজ করুন।যদি ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে তাহলে এই কাজটি দিনের বেলা করুন। দেখবেন দুই মাসের মধ্যে একটা ভালো ফল পাবেন।
আমলার তেল: আমলকি চুলের যত্ন নিতে দারুণ একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এই তেল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চুল থাকে ঘন কালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল। এই তেল চুলের রুক্ষতা দূর করে ।চুলে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- আমলকি থেকে বীজ বের করে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিতে হবে।
- তারপর রস বের করে তা নারিকেল তেলের সাথে মিশাতে হবে।
- মিশ্রণটিকে অল্প আছে গরম করতে হবে।
- ওই তেল মাথায় কালুতে দিয়ে প্রতিদিন রাতে মেসেজ করতে হবে তাহলে নতুন করে চুল গজাবে।
মেথির তেল:এই তেল নিয়মিত মাখলে চুল কালো হয় ,চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ থাকে, নতুন চুল গজায় ,চুল হয় ঘন কালো উজ্জ্বল এবং মশৃণ।এই তেল চুলের রুক্ষতা দূর করে ।চুলে আর্দ্র ভাব থাকে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- মেথি -১ টেবিল চামচ
- সরিষা -১ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল-২ টেবিল চামচ
মেথি ও সরষে একসাথে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর ২/৩ চামচ উষ্ণ পানি মেশাতে হবে।এরপর এর সাথে যোগ করতে হবে নারিকেল তেল।এরপর এই মিশ্রণটি মাথার তালুতে ভালোভাবে মেসেজ করে পনেরো মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।মেথিতে প্রচুর পরিমাণে লেসিথিন আছে যে চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে শক্ত করে।
মেহেন্দি পাতার তেল: আগে চুল রং করার জন্য মেহেন্দি পাতা ব্যবহার করা হতো এই মেন্দি পাতা চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উদ্ভিদ। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়।মেহেন্দির তেল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুলে আর্দ্র ভাব বজায় থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- মেহিন্দির গুঁড়া-১/২ কাপ
- নারকেল তেল-২ টেবিল চামচ
উষ্ণ গরম পানি মেহেদী পাউডারের সাথে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করতে হবে।এরপরে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল দিয়ে মিশাতে হবে।এই মিশ্রণটি মাথার তালুতে ভালোভাবে মেসেজ করে ৪০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতিটি মাসে দুইবার যদি করতে পারেন তাহলে ভালো ফল পাবেন।
তুলসী পাতার তেল: তুলসী তেল সাধারণত বাইরের দূষিত দূষণের হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে খুব প্রাচীনকাল থেকেই এই তুলসীর তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে।এই তেল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুরে আর্দ্র ভাব থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- তুলসী পাতা-২০/৩০ টা
- লবঙ্গ-২/৩টা
- নারকেল তেল পরিমান মত
প্রত্যেকটা উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে তারপর অল্প আঁচে ফুটিয়ে দিতে হবে এতে যদি অল্প কিছু পরিমাণ মেথির বীজ দেওয়া যায় তাহলে বেশ ভালো হয়।এরপর উক্ত মিশ্রণটি চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে কাঁচের পাত্রে রাখতে হবে। ব্যবহার করার সময় তেলটি একটু গরম করে ব্যবহার করলে ভালো হয়।
এই তেল চুলের গোড়ায় মেসেজ করলে ব্যাকটেরিয়া এবং ইনফেকশন হয় না ফলে চুলের গোড়া মজবুত থাকে।
নিমের তেল: নিমের তেলে রয়েছে anti inflamatory ,anti microbial ও anti oxident উপাদান যা চুলকে নরম কোমল রাখতে সহায়তা করে এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মাথার তালুতে ঘষলে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয় ।চুলকে করে তোলে মজবুত ঘন কালো এবং মশৃণ । এতে চুলের রুক্ষতা দূর হয়।চুলে আর্দ্র ভাব থাকে ও খুশকি মুক্ত করে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- পরিষ্কার নিম পাতা-১ কাপ
- অ্যালোভেরা-১কাপ
- নারকেল তেল-১কাপ
প্রথমে নিমপাতা ও অ্যালোভেরা একসাথে মিশিয়ে দুই মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে তারপর এতে নারিকেল তেল দিয়ে ১৫ মিনিট নাড়াচাড়া করতে হবে। তারপর একটি ছাঁকুনি দিয়ে ছেঁকে তেলগুলো আলাদা করে নিতে হবে এবং একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। এই নিম পাতার তেল যদি প্রতিদিন রাতের বেলা মাথায় মেসেজ করা যায় তাহলে চুলে কোন খুশি থাকবে না।
তিলের তেল: তিলের তেল চুলের যত্ন নিতে দারুণ একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এই তেল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চুল থাকে ঘন কালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল। এই তেল চুলের রুক্ষতা দূর করে ।চুলে আর্দ্র ভাব থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- তিল-৪ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল-২ কাপ
মিশ্রণটিকে একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর পেজটিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা হিটে জাল দিতে হবে। জাল দেওয়ার শেষ হলে মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিয়ে তেল বের করে একটি কাঁচের পাত্রে রাখতে হবে।রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তেলটিকে চুলের গোড়ায় দিয়ে মেসেজ করতে হবে কিছুক্ষণ। পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
রোজমেরী এসেনশিয়াল অয়েল: আমলকি চুলের যত্ন নিতে দারুণ একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এই তেল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় এবং চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চুল থাকে ঘন কালো ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল। এই তেল চুলের রুক্ষতা দূর করে ।চুলে আর্দ্র ভাব থাকে।
উপকরণ ও ব্যবহারবিধি
- নারকেল তেল-২ টেবিল চামচ
- রোজমেরী এসেনশিয়াল-২/৪ ফোঁটা
প্রথমে মিশ্রণগুলো ভালো করে মিশিয়ে হালকা আছে গরম করে নিয়ে তেলটি মাথায় খুব ভালোভাবে মেসেজ করিনি, তারপর এটি কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রাখার পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
চুল গজানোর ঔষধ
চুল পড়া চিকিৎসায় দুটো ওষুধ প্রচলিত আছে। একটি হচ্ছে মেনোক্সিডিল যা পুরুষ ও মহিলা উভয়ে ব্যবহার করে আরেকটি হচ্ছে ফিনাস্টেরাইড এটা শুধু পুরুষদের জন্য। তবে এ দুটি ওষুধের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।সর্বক্ষেত্রেই এটা সমান ভাবে কার্যকর হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যার নাম কনসার্ট ফার্মাসিউটিক্যাল এই ওষুধটির একটা পরীক্ষা চালিয়েছে।
এই ওষুধটি যদি দিনে দুইবার সেবন করা হয় তাহলে চুল পড়া কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে । এই পরীক্ষাতে দেখা যায় ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের ৮০ শতাংশ চুল এক বছরের মাথায় নতুন করে গজিয়েছে। সর্বশেষ একটি পরীক্ষায় ৭০৬ জন রোগীকে ২৪ সপ্তাহের জন্য বাছাই করে নেয়া হয়।
এই রোগীদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা ও ইউরোপে বসবাসরত ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। এইসব রোগীর চুলের পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ। এই টাক রোগীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলকে ৮ মিলিগ্রাম করে দুই ডোজ দিনে দ্বিতীয় দলকে ১২ মিলিগ্রাম করে দুই ডোজ বড়ি এবং তৃতীয় দলটিকে প্লাসিবো যা মূলত ওষুধ নয় দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে যাদেরকে প্লাসিবো দেওয়া হয় তাদের তুলনায় যাদেরকে বড়ি দেওয়া হয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তির মাথায় চুল গজাতে দেখা গেছে। রোগীদের মধ্যে ৪১ শতাংশ দেখেন তাদের মাথায় ৮০ শতাংশ আবার চুল গজিয়েছে।
এই পরীক্ষায় কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে যেমন কিছু কিছু রোগীর মাথা ব্যথা হয় ব্রণের সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দেখা দেয়।
লেখকের কথা
আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা এতক্ষণ বুঝে গেছেন চুল গজানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে। আমাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, চুল গজানোর জন্য যে সকল তেলের বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করতে হবে।
চুল গজানোর জন্য যে ওষুধ বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তা যদি ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমরা চুলের সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো। বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন তথ্য নির্ভর এই আর্টিকেল পড়ে।
উপরের আর্টিকেল থেকে যদি আপনারা সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না।আবারও এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন আমাদের এই সাইটটিতে।
সব মিলবে ডট কমের নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা যায়
comment url